, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

মোহাম্মদ (সাঃ) এর দাওয়াতে গীর্জা হয়েছিল মসজিদ, এখন সালমানরা বানাচ্ছে সেই গীর্জা

প্রকাশ: ২০১৮-০৫-০৫ ১৭:০৫:০৬ || আপডেট: ২০১৮-০৫-০৫ ১৭:০৫:৩১

Spread the love

মোহাম্মদ (সাঃ) এর দাওয়াতে গীর্জা হয়েছিল মসজিদ, এখন সালমানরা বানাচ্ছে সেই গীর্জা
রিয়াদ: সৌদি আরব এখন তার ইমেজকে দেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের বাইরে পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান দেশটিতে সামাজিক সংস্কারের একটি হাই-প্রোফাইল তালিকা উন্মোচন করেছেন। ইতোমধ্যে দেশটিতে সিনেমা হল চালু করা, নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতিসহ ধর্মীয় পুলিশের রাশ টেনে ধরার প্রদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

এইসব কিছুই করছে ক্ষমতা হারানোর ভয়ে । এইদিকে গীর্জা বানানোর অনুমোদন দিয়ে বেশ আলোচিত হচ্ছেন মিঃ সালমান ।

উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে খ্রিস্টান উপাসনালয় বা গির্জা নেই, এমন দেশ হিসেবে আর থাকছে না সৌদি আরব।
দেশটিতে গির্জা প্রতিষ্ঠা করতে স্থানীয় এক ওয়াহাবি নেতা ও ভ্যাটিকানের কার্ডিনালের মধ্যে ইতিমধ্যে একটি চুক্তি সই হয়েছে।-খবর আরটি অনলাইনের।

এক জ্যেষ্ঠ ক্যাথলিক কর্মকর্তা বলেন, এটা হবে আমাদের সম্পর্ক পুর্নস্থাপনের শুরু। সৌদি কর্তৃপক্ষ দেশটিকে এক নতুন পরিচয় ও রূপে হাজির করতে চাচ্ছেন, এটা তারই আলামত। আন্তঃধর্মীয় সংলাপের জন্য গঠিত বিশপ পরিষদের প্রধান জন লুইস তাওরিন গত মাসে এক সপ্তাহের জন্য সৌদি সফরে গিয়েছিলেন।
তার এ সফর নিয়ে সৌদি আরবের স্থানীয় সংবাদমধ্যমগুলো অনেক সংবাদ পরিবেশন করলেও আন্তর্জাতিক পত্রিকাগুলো নিশ্চুপ ছিল।

রিয়াদ সফরে লুইস তাওরিন সৌদি সিংহাসনের উত্তরসূরি মোহাম্মদ বিন সালমানসহ বেশ কয়েকজন ধর্মীয় নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন।
সৌদি আরবের অন্যতম ওয়াহাবি এনজিও মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের মহাসচিব শেখ মোহাম্মদ বিন আবদেল কারিম আল ইসসা ও লুইস তাওরিনের মধ্যে এই চুক্তিটি সই হয়েছে।

তারা কেবল একটি উপাসনালয় নির্মাণ করেই ক্ষান্ত হবেন না, প্রতি দুই বছর পর পর মুসলিম-খ্রিষ্টান সম্মেলনের আয়োজন করারও পরিকল্পনা করেছেন। গত কয়েক দশকে সৌদি আরবে বহু অমুসলিম অভিবাসী আশ্রয় নিয়েছেন। দেশটিতে এখন প্রায় ১৫ লাখ অভিবাসী রয়েছেন, যাদের অধিকাংশ ফিলিপাইন থেকে এসেছেন।

একটি কৌশলগত হাতিয়ার
সৌদি আরবের ইতিহাস ও রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ইসলাম। আধুনিক যুগের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার সময়ে, উপজাতীয়দের ও আঞ্চলিক বিভাজন রুখতে সৌদ পরিবার নিজেই মোহাম্মদ ইবনে আবদুল-ওয়াহাবের অনুগতদের সঙ্গে মিত্রতার সম্পর্ক তৈরি করেছিল।

তাদের এই কৌশলটি সেসময় কাজ করেছিল: ওয়াহাবি যোদ্ধারা সৌদি আদিবাসী শক্তিকে শাসন ও প্রেরণা দিয়েছিল। আলেমরা বাদশার প্রতি আনুগত্যস্বরূপ আরব উপদ্বীপের বিভিন্ন উপজাতি ও অঞ্চলে ধর্মের কথা প্রচার করেছিল।

রাজতন্ত্রের অধীনে সৌদি সাম্রাজ্যের সুরক্ষা প্রতিষ্ঠিত হলে ওয়াহাবি যোদ্ধারা সৌদি বাদশাদের জন্য কৌশলগত দায়বদ্ধতায় পরিণত হন। তাদের ধর্মীয় দৃঢ় বিশ্বাসের গভীরে যোদ্ধারা নিকটবর্তী কুয়েত ও ইরাকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চেয়েছিল -এই দ্বন্দ্ব সহজেই সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করতে পারত। এটি এড়ানোর জন্য সৌদিরা ১৯২৭ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত ওয়াহাবি যোদ্ধাদের ‘ইখওয়ান’ বিদ্রোহের অভিযোগে তাদের শক্তিকে ধ্বংস করেন। আর এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো আধুনিক সৌদি আরব তার কৌশলগত চাহিদা অনুযায়ী ইসলামকে ব্যবহার করে।

১৯৭৯ সালে ইরানের বিপ্লব, আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন এবং সুন্নি মিলিট্যান্ট কর্তৃক মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ অবরোধের ঘটনা সৌদির শাসকদের আবারো নাড়িয়ে দেয়। এসব ঘটনা সৌদি আরব আরো একবার তার কৌশল পরিবর্তনে বাধ্য হন। ওই সময় সুন্নিদের অভিযোগ ছিল-সাম্রাজ্য ইসলামি আদর্শ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে।

সুতরাং, ইরানের হুমকি, সাম্যবাদের বিপদ এবং সাম্রাজ্যের সুন্নিদের মোকাবেলা করতে সৌদি নেতৃত্ব এটি সমর্থন করতে শুরু করেন এবং ইসলামের আরো রক্ষণশীল ফর্ম জোরদার করেন। কৌশলটি প্রায় ৪০ বছর ধরে সৌদি রাজতন্ত্রকে নিরাপদে ক্ষমতায় রেখেছে। কিন্তু এটি এখন অত্যাচারের লক্ষণ দেখাতে শুরু করেছে।

পরিবর্তনের উপকারিতা
জনজীবনে ইসলামের ভূমিকা পরিবর্তন রিয়াদকে অসংখ্য সুবিধা এনে দিয়েছে। তারমধ্যে একটি হচ্ছে- এটি বাদশাকে তার শাসন জোরদার করতে সক্ষম করবে। সৌদি রাজতন্ত্রের ক্ষমতার প্রথাগত কোনো ধারা নেই, তবে রাজকীয় পরিবার এবং আলেম শ্রেণি ঐতিহ্যগতভাবে এ বিষয়ে কিছু বলেছে।

২০১৭ সালের জুন মাসে ক্রাউন প্রিন্স হওয়ার পর সালমান তার পরিবারের প্রভাব ধীরে ধীরে দুর্বল করে ফেলেছেন এবং রাজকীয় কর্তৃত্বের সর্বশেষ অনানুষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা আলেম শ্রেণিও তাদের ত্যাগ করার পথে।

জনসাধারণের ক্ষেত্রে ইসলামি আইনের শিথিলতা এবং পশ্চিমা স্ট্যাইলে ধর্মানুশীলনে উত্সাহিত করায় তাদের ক্ষমতার প্রভাব কমিয়ে দিবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পশ্চিমা স্ট্যাইলে যাতে জনগণ খাপ খাইয়ে নিতে পারে তার জন্য ইতোমধ্যে সরকার ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে।

তাদের কর্তৃত্ব সঙ্কুচিত হয়ে গেছে ফলে আলেমরা এখন অবশ্যই আরো বেশি করে মসজিদের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে। যদিও সৌদি সমাজে গত কয়েক দশকের পরিবর্তনগুলো এর প্রতিপত্তিকে অনেকটা হ্রাস করেছে।

বিন সালমানসহ ১৯৮০ সাল থেকে জন্ম নেয়া সৌদির তরুণরা তাদের বাবা-মা ও দাদা-দাদীদের থেকে ভিন্ন পরিবেশে বড় হয়েছেন। প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তন তাদের জীবনের একটি নিত্য বৈশিষ্ট্য। এটি ছোট বয়স থেকেই বিদেশি জীবনযাত্রা এবং সংস্কৃতির সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়েছে।

এর ফলস্বরূপ তরুণ প্রজন্ম বাকি বিশ্বের দিকে ধাবিত হয়েছে এবং সাম্রাজ্যের সামাজিক ও ধর্মীয় বিষয়গুলোর প্রতি কম আবদ্ধ হয়েছে। ২০১৬ সালের ‘আরব ইয়ুথ সার্ভে’ থেকে দেখা যায়, উপসাগরীয় অঞ্চলের ৬২ শতাংশ তরুণ মনে করে দৈনন্দিন জীবনে ধর্ম বড় ভূমিকা পালন করে।

এই প্রবণতার আলোকে, সাম্রাজ্যে ধর্মের স্থান পরিবর্তনে সরকারের প্রচেষ্টা তরুণ সৌদিদের সম্ববত আকৃষ্ট করেছে। বর্তমান সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে খাপ খাইয়ে চলার দোহাই দিয়ে সাম্রাজের নীতিমালা পরিবর্তন করা হচ্ছে।

সৌদির তরুণদের সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক লাভকে সর্বাধিক করার জন্য বাদশা ও ক্রাউন প্রিন্স মুসলিম ব্রাদারহুডের কঠোর ধর্মীয় আইন এবং অতীতের মৌলবাদী স্কুল পাঠ্যক্রমের জন্য সংগঠনটিকে ‘বলির পাঠা’ হিসেবে ব্যবহার করবে। এছাড়াও, মুসলিম ব্রাদারহুডকে দোষারোপ করার মাধ্যমে এটি বাদশার বৈধতা আরো শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।

Logo-orginal