, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

সিলেট সিটি নির্বাচনঃ ২০ বছরে জামায়াতের শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্ত”

প্রকাশ: ২০১৮-০৭-২২ ০০:১৮:১৫ || আপডেট: ২০১৮-০৭-২২ ০০:১৮:১৫

Spread the love

সিলেট সিটি নির্বাচনঃ ২০ বছরে জামায়াতের শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্ত”
নুর মোহাম্মদ,মতামতঃ সিলেট সিটি নির্বাচন আগামী দিনের রাজনীতির গতিপথ এঁকে দিবে। জামায়াত বিগত ২০ বছরে যতগুলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার মধ্যে সিসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে যথেষ্ট ম্যাচিউড এবং বোল্ড সিদ্ধান্ত মনে হয়েছে।

ভোটের ফলাফল কী হবে, সেই আলোচনায় না গিয়ে আমি কেবল একটা রাজনৈতিক স্ট্যান্ড নিয়ে আলোচনা করতে চাই।

প্রথমত, গত ১০ বছরে জামায়াতের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে অফলাইনে-অনলাইনে স্পষ্টতই কর্মীরা অসন্তোষ জানিয়েছে, বিতর্ক করেছে। আপনারা খেয়াল করেছেন নিশ্চয়, সিসিক নির্বাচনে অংশগ্রহনের সিদ্ধান্তকে জামায়াতের শতভাগ নেতাকর্মী স্বাগত জানিয়েছে। সিলেটসহ সারাদেশের জামায়াত কর্মীরা সবাই বেশ উচ্ছ্বসিত। একটা রাজনৈতিক দলকে কর্মীবান্ধব সিদ্ধান্ত নিতে হয়; জামায়াতের এই সিদ্ধান্তকে আমি কর্মীবান্ধব সিদ্ধান্ত বলে বিবেচনা করছি। গণমানুষকে নিয়ে রাজনীতি করতে হলে, কর্মীদের নিয়ে সাংঠনিক মজবুতি অর্জন করতে হলে কর্মীবান্ধব সিদ্ধান্ত খুব জরুরি। জামায়াত সিসিক নির্বাচন ইস্যুতে তৃণমূলের কর্মীদের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে পেরেছে।

দ্বিতীয়ত, ১৮ বছরের জোটে বিএনপি যা যা বলেছে, জামায়াত হালকা নেগোশিয়েট করে একটা পর্যায়ে আত্মসমর্পণ করেছে। জোটের বড় দল বিএনপি ধরেই নিয়েছিল, জামায়াত মোটামুটি তাদের একটা অঙ্গসংগঠন। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার পরে বিএনপি সেই অর্থে জামায়াত নেতৃত্বকে পাত্তাই দেয়নি। সাবেক আমির, সেক্রেটারি জেনারেল, এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল, নির্বাহী পরিষদ সদস্যের ৫ জনকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করার পরে বিএনপি ধরেই নিয়েছিল জামায়াত রাজনৈতিক মাঠে আর নাই। ক্ষমতার রাজনীতিতে মত্ত দলগুলো যেমন ব্যক্তিকেন্দ্রিক বৃত্তের মাঝে চলে, জামায়াতকেও সেভাবেই মূল্যায়ন করে। সিসিক নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীতা রাজনীতির মাঠে একটা স্পষ্ট ম্যাসেজ। জামায়াতের নিজস্ব চেইন অব কমান্ড আছে, নেতা আছে, তারেক রহমানের ফোন উপেক্ষা করার মতো নেতাও জামায়াতে আছে। জামায়াত তাদের আমির, সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় কমিটিকে রি-শ্যাপল করে যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সিসিক নির্বাচন তার বড় প্রমাণ হতে যাচ্ছে।

তৃতীয়ত, জামায়াতের কোনো পর্যায়ের নেতৃত্বই আসলে জনসমর্থনের ব্যাপারটা নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলতে পারবে না। বিগত উপজেলা নির্বাচনকে আমি জনমতের একমাত্র প্যারামিটার ভাবতে রাজি নই। ২০১৪ সালে তখন সরকার বিরোধি জাগরণ চারদিকে। মানুষ সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। জামায়াত-ছাত্রশিবির তখন রাজপথের হিরো, অন্যদিকে সাধারণ ভোটাররাও বুঝতে পারছিল বিএনপির নিষ্ক্রিয়তায় ৫ জানুয়ারি ভোট ঠেকানো গেল না। তখন মানুষ গণহারে জামায়াতের প্রতি আস্থা জানিয়ে উপজেলা নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। আমার বাড়ি বগুড়া। বগুড়াতেও মানুষ বিএনপিকে উপেক্ষা করে জামায়াতকে ভোট দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা এখন ভিন্ন। বিরোধী মত, চিন্তাকে দমিয়ে সরকার মোটামুটি ভালোভাবেই স্ট্যাবল। বিএনপি দল হিসেবে নিজেরাও ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে। ঠিক এমতাবস্থায় জামায়াতের সমর্থন আসলে কতটুকু, তা বুঝার টেস্ট কেস সিসিক নির্বাচন হবে বলে আমার বিশ্বাস।

চতুর্থত, সিসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জামায়াত রাজনৈতিকভাবে সেরা ঝুঁকিটা নিয়েছে। ১৯৯৬ সালের পরে জামায়াত জোটগত নির্বাচনের কারণে জনমতের হিসাবটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে উপস্থাপন করতে পারেনি। সিসিক নির্বাচনে জামায়াতের ভোট প্রাপ্তি অনেক প্রশ্নের উত্তর এনে দিবে। বাস্তবে জামায়াতের রাজনৈতিক সমর্থন কতটুকু তা সিসিক নির্বাচন থেকে স্পষ্ট হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সিসিকে খারাপ করলে জামায়াতকে নিঃসন্দেহে অনেকবেশি মূল্য দিতে হবে। ন্যুনতম ১০ শতাংশের কম ভোট পেলে চড়া মূল্য গুণতে হবে।

পঞ্চমত, জামায়াত ১৫% ভোট কনফার্ম করতে পারে, আমার ধারণা জাতীয় রাজনীতিতে একটা ঝড় বইয়ে যাবে। সরকার জামায়াতকে অল আউট ডিফেন্ড করার পরেও যদি ১৫% ভোট পায়, তাহলে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয়ে নতুন করে জামায়াতকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য হবে। স্বাভাবিকভাবেই জামায়াত তার সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরেছে। নির্বাচন হচ্ছে রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনে, তার মধ্যে সিলেট সবচেয়ে ছোট সিটি কর্পোরেশন। তবুও দেশজুড়ে কেবল সিসিক নির্বাচন নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা। কেন? উত্তর জানার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার খুব দরকার আছে কি? অথচ, মিডিয়া ও জামায়াত বিরোধীদের চোখে ‘রাজনীতির অচল মাল জামায়াত’। জামায়াতের সব শেষ হয়ে গেছে, সবাই জামায়াতকে ঘৃণা করে। কিন্তু, কিন্তু, কিন্তু…।

ষষ্টত, মিডিয়ার মাধ্যমে প্রায়শই শোনা যায়, বিএনপির নেতাকর্মীদের বড় একটা অংশ নাকি জামায়াতমুক্ত জোট চায়। মিডিয়া জানে না, বিএনপি নেতা-কর্মীরাও জানে না, জামায়াতের তৃণমূলের কর্মীদের একটা বড় অংশ বিএনপি জোটে থাকতে চায় না। এ ব্যাপারে জামায়াত নেতৃত্ব খুব প্রেসারে আছে। দিনেরাতে কর্মীদের প্রশ্নবাণের মুখোমুখি হতে হয়। জোট রক্ষার একমাত্র দায়িত্ব জামায়াতের নয়- এটা স্পষ্ট ম্যাসেজ। জোট হয় ত্যাগ ও কুরবানির মাধ্যেমে। আন্দোলনের বেলায় জামায়াত, আর ভোটের বেলায় বিএনপি, এটা হতে পারে না। সিসিক নির্বাচন প্রথম ম্যাসেজ, এতে শিক্ষা না হলে বড় ধরণের ম্যাসেজের অপেক্ষায় থাকতে হবে। সবাইকেই মনে রাখা দরকার, জামায়াত অনেককিছু হারিয়েছে, হারানোর আর কিছু নাই।

সাত, জামায়াত নিজের স্টাইলে রাজনীতি করে, কারও প্রেসক্রিপশনে নয়। সিলেট নির্বাচনের পরে অনেককিছুর হিসাব-নিকাশ হবে। আপাতত, ৩০ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নাই। কথা হবে ৩০ তারিখের পর ইনশাআল্লাহ্‌।
#সংগৃহীত #ফেইচবুক থেকে।

Logo-orginal