, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

ইউএস বাংলার বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশি পাইলটের আচরণকে দায়ী করল নেপালের তদন্ত কমিটি

প্রকাশ: ২০১৮-০৮-২৭ ১৯:২১:২৫ || আপডেট: ২০১৮-০৮-২৭ ১৯:২১:২৫

Spread the love

ইউএস বাংলার বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশি পাইলটের আচরণকে দায়ী করল নেপালের তদন্ত কমিটিকাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশি পাইলটের আচরণকে দায়ী করা হয়েছে নেপালের এক সরকারি তদন্ত রিপোর্টের ফাঁস হওয়া খসড়া রিপোর্টে। সংবাদ বিবিসি বাংলার।

নেপালের প্রভাবশালী ইংরেজী দৈনিক কাঠমান্ডু পোস্ট এবং বার্তা সংস্থা এএএফপি এই খসড়া রিপোর্টের বিস্তারিত প্রকাশ করেছে।

রিপোর্টে দাবি করা হচ্ছে ইউএস-বাংলার ঐ ফ্লাইটের পাইলট সেদিন “বেশ আবেগতাড়িত ও মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন এবং কাঁদছিলেন।” তিনি সেদিন বিমানের ককপিটে দায়িত্বরত অবস্থায় ধূমপানও করছিলেন বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

উল্লেখ্য ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান ছিলেন সেদিনের ঐ ফ্লাইটের পাইলটের দায়িত্বে। তাঁর সঙ্গে কো-পাইলট হিসেবে ছিলেন প্রিথুলা রশিদ। দুর্ঘটনায় তারা দুজনসহ বিমানের মোট ৫১ জন যাত্রী এবং ক্রু নিহত হন। ২০ জন প্রাণে বেঁচে গেলেও তাদের অনেকের আঘাত ছিল গুরুতর।

রিপোর্টে যা আছে:

পাইলট আবিদ সুলতান এবং তাঁর স্ত্রী আফসানা খানম। দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যুর মাত্র দু সপ্তাহ পর স্ত্রী আফসানা খানমও অসুস্থ হয়ে মারা যান।

কাঠমান্ডু পোস্ট এবং বার্তা সংস্থা এএফপি সরকারি তদন্ত রিপোর্টের যে খসড়া ফাঁস করেছে, তাতে সেদিনের ফ্লাইটের ককপিটে কি ঘটেছিল তার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

মূলত ফ্লাইটটির ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে ধারণ করা কথোপকথন এবং ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যেসব কথাবার্তা হয়েছে, তার ভিত্তিতেই তদন্তকারীরা পাইলট সম্পর্কে এসব কথা বলেছেন। রিপোর্টে বলা হয়:
সেই বিমান
পাইলট আবিদ সুলতান সেদিন খুবই আবেগতাড়িত এবং মারাত্মক মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন। তিনি সেদিন একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নেন, যার কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।

বিমানটি ল্যান্ড করার মাত্র ছয় মিনিট আগে পাইলট আবিদ সুলতান জানিয়েছিলেন প্লেনটির ল্যান্ডিং গিয়ার নামানো অবস্থায় আছে, কিন্তু কো-পাইলট প্রিথুলা রশিদ যখন ফাইনাল ল্যান্ডিং চেকলিস্ট দেখছিলেন, তখন দেখতে পান ল্যান্ডিং গিয়ার আসলে নামানো হয়নি।
পাইলট আবিদ সুলতান ঢাকা-কাঠমান্ডু যাত্রাপথে বার বার ধূমপান করছিলেন। তিনি যে ধূমপায়ী ছিলেন সেটি তিনি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের কাছে গোপন করেছিলেন।

ককপিটের ভয়েস রেকর্ডারে কো-পাইলটের সঙ্গে তার প্রায় এক ঘন্টার কথোপকথন ধারণ করা আছে। এসব কথা শুনে বোঝা যায় তিনি সেদিন বেশ উত্তেজিত অবস্থায় ছিলেন এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে তার সুস্পষ্ট ধারণার মারাত্মক অভাব ছিল।
ইউএস-বাংলার বিমানটি ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণের মাত্র তিন মিনিট আগে পাইলট আবিদ সুলতান একটি সিগারেট ধরান। যদিও তখন বিমানটি কোন দিক থেকে রানওয়েতে অবতরণ করবে তা নিয়ে মারাত্মক বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে।
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সেদিন বিমানবন্দরের রানওয়ের দুই প্রান্ত নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছিল। তবে রিপোর্টে দাবি করা হচ্ছে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে এর কোন প্রভাব ছিল না।

এএফপি দাবি করছে তারা নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে এই রিপোর্টের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে। তবে এই রিপোর্ট সম্পর্কে বিবিসির নেপালি সার্ভিসের অনুসন্ধানের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রিপোর্টটি এখনো “অসম্পূর্ণ।”

যেভাবে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল

এ বছরের ১২ মার্চ কাঠমান্ডুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার বম্বার্ডিয়ার ড্যাশ এইট কিউ-ফোর হানড্রেড বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি শেষ মূহুর্তে অবতরণের গতিপথ পরিবর্তনের চেষ্টা করছিল। বিমানটি মাটিতে পড়ে যাওয়ার ছয় সেকেন্ডের মাথায় এটিতে আগুন ধরে যায়। মূলত আগুনে পুড়েই মারা যান বেশিরভাগ আরোহী।

ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এই দুর্ঘটনা ছিল ১৯৯২ সালের পর নেপালের সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা।

১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে ঐ বিমানবন্দরেই পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৬৭ জন। তার মাত্র দুই মাস আগে থাই এয়ারওয়েজের একটি বিমানও বিধ্বস্ত হয়। সেই ঘটনায় নিহত হন ১১৩ জন।

নেপালের বিমান চলাচল নিরাপত্তার মান খুবই দুর্বল বলে মনে করা হয়। মূলত রক্ষণা-বেক্ষণের দুর্বলতা এবং অদক্ষ ব্যবস্থানাকেই এর জন্য দায়ী করা হয়।

দুর্বল নিরাপত্তা মানের কারণে নেপালের এয়ারলাইন্সগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের আকাশসীমায় উড্ডয়নের অনুমতি পায় না।

নেপালের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হচ্ছে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। পাহাড়ের উপত্যকায় এই বিমানবন্দরটি বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দরগুলোর একটি।

Logo-orginal