admin
প্রকাশ: ২০১৮-০৮-১৪ ১৯:৫০:৪১ || আপডেট: ২০১৮-০৮-১৪ ১৯:৫০:৪১
তুরস্কে আটক একজন আমেরিকান যাজককে নিয়ে কূটনৈতিক বিবাদের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র তুর্কি ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়ম আমদানির ওপর দ্বিগুণ শুল্ক আরোপ করার পর ডলারের বিপরীতে লিরার মূল্যমান ক্রমাগত কমছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের জবাবে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান মার্কিন সব ধরনের ইলেকট্রনিক্স পণ্য বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে তার ক্ষমতাসীন জার্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি ১৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এই ঘোষণা দেন। খবর সিএনএনের।
এরদোগান বলেন, ‘বর্তমানে আমরা বিদেশ থেকে যেসব পণ্য কিনছি তার চেয়েও ভাল মানের পণ্য এখানে রপ্তানি করতে চাচ্ছে। ফরে আমরা মার্কিন ইলেকট্রনিক্স পণ্য বয়কট করতে যাচ্ছি।’
‘তাদের কাছে যদি আইফোন থাকে অন্যদিকে স্যামসাং আছে। আর আমাদের আছে Venus এবং Vestel আছে’, বিশেষ করে তুরস্কে প্রস্তুত ফোন ব্র্যান্ড Vestel এর উল্লেখ করেন তিনি।
‘আমরা যা করতে পারি তা আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি। বিদেশ থেকে যা যা আমরা পাচ্ছি তা আমরা এখানে করবো।’ বলে তিনি।
তবে এটা স্পষ্ট নয় যে এটি একটি সরকারিভাবে বয়কট, না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য কেনা বন্ধ করার জন্য তুর্কি জনসাধারণের প্রতি কেবল একটি আহ্বান।
এর একদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তিক্ত বিবাদকে কেন্দ্র করে তুরস্কের মুদ্রা লিরার মূল্যমানে ধস নামার পর প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, ‘কৌশলগত মিত্র হয়েও আমেরিকা আমাদের পিঠে ছুরি মেরেছে।’
তুরস্কে আটক একজন আমেরিকান যাজককে নিয়ে কূটনৈতিক বিবাদের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র তুর্কি ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়ম আমদানির ওপর দ্বিগুণ শুল্ক আরোপ করার পর ডলারের বিপরীতে লিরার মূল্যমান ক্রমাগত কমছে। এশিয়ার বাজারে এক পর্যায়ে লিরার দাম ৭ দশমিক ২৪-এ নেমে যায়। তবে এখন তা কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট এরদোগান আমেরিকার আচরণকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যায়িত করে বলেন, তুরস্ক ‘জিম্মি হয়ে পড়েছে।’
ট্রাবজন শহরে সমর্থকদের এক সভায় প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, যারা সারা বিশ্বের বিরুদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধ চালাচ্ছে – তাদের প্রতি আমাদের জবাব হবে নতুন নতুন বাজার এবং মিত্র বের করার পথে এগিয়ে যাওয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তারা ধাতু এবং ইস্পাতের ওপর ট্যারিফ বাড়িয়েছে। এটা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মের মধ্যে পড়ে না।’
তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিমধ্যেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবসা সহজতর করা এবং যত তারল্য দরকার তা দেবার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু সুদের হার বাড়ায় নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, তারা দেশটির অর্থখাতের স্থিতিশীলতার ধরে রাখতে সবরকম পদক্ষেপই নেবে।
প্রেসিডেন্ট এরদোগানের একজন মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন যেন তারা এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনায প্রবৃত্ত না হন।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই বলেছে, তারা সামাজিক মাধ্যমের ৩৪৬টি একাউন্টের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিচ্ছে, যারা তাদের ভাষায় ‘উস্কানিমূলক ভাবে লিরার দর পড়ে যাওয়া নিয়ে মন্তব্য করেছিল।’
আমেরিকার সাথে বিবাদের কারণ
তুরস্কের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিবাদের কারণ হলো, গত দু বছর ধরে তুরস্কে একজন আমেরিকার ধর্মযাজক বন্দী আছেন যাকে এরদোগানবিরোধী অভ্যুত্থান এবং কুর্দি ওয়ার্কার্স পার্টির সাথে সংশ্লিষ্টতার জন্য অভিযুক্ত করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র তার মুক্তি দাবি করলেও তুরস্ক তাকে ছেড়ে দিতে অস্বীকার করে। এর পরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তুরস্কের ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেন, আর তার আগে তুরস্কের দু’জন মন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
এরদোগান বলেছেন, তার দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। তুরস্ক সেই ব্যর্থ অভ্যুথানের পেছনে ফেতুল্লাহ গুলেনের আন্দোলন জড়িত ছিল বলে দাবি করে, যিনি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় অবস্থান করছেন।
গুলেনকে বিচারের জন্য তুরস্কের হাতে তুলে দেবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র – যা এরদোগানের ক্ষুব্ধ হবার আরেকটি কারণ।
সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কুর্দি বিদ্রোহী গ্রুপগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে ।এটাও তুরস্কের পছন্দ নয় – কারণ তুরস্ক নিজেই তাদের ভুখন্ডে কুর্দি বিদ্রোহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।
এরদোগান এ ছাড়াও ইদানিং রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছেন, তাদের কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার চুক্তি করেছেন।
কিন্তু তুরস্ক হচ্ছে রাশিয়ার শত্রু ন্যাটো জোটের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং সেখানকার ইনজারলিক বিমান ঘাঁটিটি আইএস বিরোধী লড়াইয়ে ন্যাটো ব্যবহার করছে। তাই রাশিয়ার সাথে এরদোগানের ঘনিষ্ঠতা নেটোর জন্য এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরী করেছে।
এ ছাড়া ইনজারলিক বিমান ঘাঁটি বন্ধ করে দেবার জন্য তুরস্কের ভেতর থেকে এরদোগানের ওপর চাপ রয়েছে।