, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

আখিরাতে কি নিয়ে যাবেন!

প্রকাশ: ২০১৮-০৯-২৬ ১৬:১৯:৫১ || আপডেট: ২০১৮-০৯-২৬ ১৬:১৯:৫১

Spread the love

আখিরাতে কি নিয়ে যাবেন

আখিরাতে কি নিয়ে যাবেন!
কবরের প্রতীকি ছবি,

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ
وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ

মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ তা’আলাকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামী কালের জন্যে সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা। আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা’আলা সে সম্পর্কে খবর রাখেন।

وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ نَسُوا اللَّهَ فَأَنسَاهُمْ أَنفُسَهُمْ أُوْلَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ

তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা আল্লাহ তা’আলাকে ভুলে গেছে। ফলে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে আত্ন বিস্মৃত করে দিয়েছেন। তারাই অবাধ্য।

لَا يَسْتَوِي أَصْحَابُ النَّارِ وَأَصْحَابُ الْجَنَّةِ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ هُمُ الْفَائِزُونَ

জাহান্নামের অধিবাসী এবং জান্নাতের অধিবাসী সমান হতে পারে না। যারা জান্নাতের অধিবাসী, তারাই সফলকাম

আলহামদুলিল্লাহে রাব্বুল আলেমিন। ওয়াচ্ছালামু আলা রাসুল (সঃ)। সমস্ত আম্বিয়ায়ে-কেরাম, সালেহীন, শহীদ,ছিদ্দিক ও সমস্ত মজলুম মানবতার প্রতি রবের করুনা বর্ষিত হউক” আমিন।

ভুমিকাঃ আসুন জেনে নিই, আখিরাত শব্দের অর্থ পরকাল, যেমন কুরআনের ভাষায় সুরা আলাতে আখিরাতকে সর্বোত্তম জীবন হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَى(অথচ পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী)।

ব্যাখ্যাঃ ১. আখিরাত কী?

কুরআন-হাদিসে আখিরাত এবং বেহেশত ও দোযখের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।

মানুষের জীবনে আখিরাতের জীবনটাই আসল। আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনটা একেবারেই তুচ্ছ। যেমন মহাসমুদ্রের তুলনায় এক ফোটা পানি একেবারেই তুচ্ছ।

এক ফোটা পানি মহাসমুদ্রের কতো ভাগের এক ভাগ এটা যেমন কারো পক্ষে হিসাব করে বের করা সম্ভব নয়, তেমনি পরকালের তুলনায় দুনিয়ার জীবনটা কতো ভাগের এক ভাগ তাও কারো পক্ষে হিসাব করে বের করা সম্ভব নয়। সুতরাং পরকালের তুলনায় দুনিয়ার জীবনটা একেবারেই তুচ্ছ নগণ্য।

আখিরাত মানে- মৃত্যুর পরবর্তী জীবন। মানুষের মৃত্যুর পর থেকেই তার আখিরাত শুরু হয়ে যায়। আখেরাতের কয়েকটি অধ্যায় রয়েছে। মৃত্যু পর সে অধ্যায়গুলো মানুষের জীবনে একটির পর আরেকটি আসে। অধ্যায়গুলো হলো : ১. মৃত্যু ২. আলমে বরযখ ৩. কিয়ামত ৪. হাশর ও বিচার ৫. জান্নাত বা জাহান্নাম।

২. মৃত্যু

পার্থিব জীবন থেকে পরকালীন জীবনে পা বাড়াবার মাধ্যম হলো মৃত্যু। মৃত্যুই মানুষকে পরকালের দিকে টেনে নিয়ে যায়। দুনিয়ার জীবন কেউ ধরে রাখতে পারে না। মরণকে বরণ করতেই হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন :

كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۖ ثُمَّ إِلَيْنَا تُرْجَعُونَ

অর্থ : ‘প্রতিটি জীবকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।’ -সূরা ২৯ আন কাবুত : ৫৭।

قُلْ إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِي تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مُلَاقِيكُمْ

অর্থ : ‘হে নবী, এদের বলে দাও: যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালাচ্ছো সে তোমাদের নাগাল পাবেই।’ -সূরা ৬২ জুমু’আ : আয়াত ৮।

أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِكْكُمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنْتُمْ فِي بُرُوجٍ مُشَيَّدَةٍ

অর্থ: ‘তোমরা যেখানে যে অবস্থায়ই থাকো না কেন,মৃত্যু তোমাদের ধরবেই। যতো মজবুত কিল্লার মধ্যেই তোমরা অবস্থান করো না কেন।’ -সূরা নিসা : ৭৮।

অতপর কুরআন আরো বলেছে যে, মৃত্যু কোনো ব্যক্তির ইচ্ছানুযায়ী, তার সুবিধে মতো সময় এবং পছন্দনীয় স্থানে আসবে না। বরঞ্চ তা আসবে আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী তাঁরই নির্ধারিত সময় ও স্থানে :

وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَنْ تَمُوتَ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ

অর্থ : ‘কোনো প্রাণীই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মরতে পারে না। মৃত্যুর সময়টাতো নির্দিষ্টভাবে লিখিতই রয়েছে।’ -সূরা ৩ আলে ইমরান : ১৪৫।

وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ

অর্থ : ‘কোনো প্রাণীই জানে না কোথায় এবং কিভাবে তার মৃত্যু হবে।’ -সূরা ৩১ লুকমান : আয়াত ৩৪।

৩. আলমে বরযখ

আলম মানে- জগত। বরযখ মানে- আড়াল। সুতরাং আলমে বরযখ মানে- আড়ালের জগত।

মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত মানুষের আত্মাসমূহকে যে জগতে রাখা হয়, তাকেই বলা হয় আলমে বরযখ। সাধারণ ও প্রচলিত অর্থে আলমে বরযখকে কবর বলা হয়।

আলমে বরযখের দুইটি ভাগ আছে: ইল্লীন ও সিজ্জীন। ইল্লীন মানে- সম্মান ও মর্যাদার জায়গা। সিজ্জীন মানে- হাজতখানা। যারা প্রকৃত মুসলিম ও নেককার হিসেবে ইনতিকাল করবে, তাদের আত্মা থাকবে ইল্লীনে। আর যারা আল্লাহর হুকুম অমান্যকারী পাপিষ্ঠ হিসেবে মারা যাবে তাদের আত্মা থাকবে সিজ্জীনে।

ইল্লীন হলো আরামের জায়গা, আর সিজ্জীন হলো দুঃখ কষ্টের জায়গা।

ইল্লীনে রাখা আত্মাদের সকাল সন্ধ্যা জান্নাত দেখিয়ে বলা হবে, কিয়ামত ও বিচার অনুষ্ঠিত হবার পরে এই জান্নাতেই তোমাদের থাকতে দেয়া হবে। এ সংবাদ শুনে তাদের খুশি ও আনন্দ বেড়ে যাবে।

সিজ্জীনের আত্মাদের সকাল সন্ধ্যা জাহান্নাম দেখানো হবে। বলা হবে, বিচারের পর এই জাহান্নামেই তোমাদের ফেলা হবে। তখন তাদের মানসিক কষ্ট ও যাতনা বেড়ে যাবে।

এভাবে কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত মৃত লোকদের আত্মাসমূহ আলমে বরযখের ইল্লীন ও সিজ্জীনে অবস্থান করবে। কেউ সেখানে সুখে থাকবে, আবার কেউ থাকবে দুঃখের মধ্যে।

৪. তিনটি প্রশ্নের জবাব

কার আত্মা ইল্লীনে থাকবে, আর কার আত্মা সিজ্জীনে থাকবে- মৃত্যুর পর পরই তা ঠিক করা হবে। তা ঠিক করা হবে তিনটি প্রশ্নের জবাবের ভিত্তিতে।

মৃত্যুর পর মানুষের মরদেহ কবরে রাখা হোক, পুড়িয়ে ফেলা হোক, কিংবা অন্য কোথাও ফেলে দেয়া হোক বা কোথাও পড়ে থাকুক, তাতে কিছু যায় আসে না। মানুষের আত্মা বা রূহটাই হলো আসল। আত্মার মৃত্যু নেই। দুনিয়াতে মানুষের যে মৃত্যু হয়, তা হয় দেহের মৃত্যু। আল্লাহর ফেরেশতারা মানুষের দেহ থেকে আত্মাকে বের করে নিয়ে যায়। সেজন্যেই মানুষের মৃত্যুকে ‘ইনতিকাল’ বলা হয়। ইনতিকাল মানে- স্থানান্তর।

অর্থাৎ মানুষের আত্মাকে তার দেহ থেকে আলমে বরযখে স্থানান্তর করা হয়।

এখানে ইল্লীন বা সিজ্জীনে নেয়ার আগে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তিনটি প্রশ্ন করা হয়। প্রশ্নগুলো হলো:

১. তোমার রব অর্থাৎ স্রষ্টা, প্রভু, প্রতিপালক ও মালিক কে?

২. তোমার দীন অর্থাৎ জীবন যাপনের পদ্ধতি কী ছিলো?

৩. আর তোমাদের কাছে আল্লাহ তায়ালা যে ব্যক্তিকে (রসূল বানিয়ে) পাঠিয়েছিলেন, তিনি কে? তাঁর সম্পর্কে তোমার বক্তব্য কী?

যারা এই তিনটি প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারে,তাদেরকে ইল্লীনে রাখা হয়। আর যারা সঠিক জবাব দিতে ব্যর্থ হয়, তাদেরকে রাখা হয় সিজ্জীনে। প্রশ্ন তিনটির সঠিক জবাব হলো:

জবাব-১: আল্লাহ আমার রব। অর্থাৎ আমার স্রষ্টা,প্রভু, প্রতিপালক ও মালিক হলেন আল্লাহ তায়ালা।

জবাব-২: আমর দীন হলো ইসলাম। অর্থাৎ আমি আল্লাহর দীন ইসলামের ভিত্তিতে জীবন-যাপন করে এসেছি।

জবাব-৩: তিনি মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সা.। আমি আমার জীবনের সমস্ত কাজে তাঁকে অনুসরণ ও অনুকরণ করে এসেছি।

– যারা খাঁটি মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করে ইনতিকাল করেন, তারাই এই তিনটি প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারেন।

যারা ইসলাম অনুযায়ী নিজেদের গোটা জীবনকে পরিচালিত করেনি এবং আল্লাহর রসূল মুহাম্মদ সা. কে অনুসরণ করেনি, তারা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারে না। তারা বলে: ‘হায়, আমিতো কিছুই জানি না।

শিক্ষণীয়ঃ
قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّى
নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয়

وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّى
এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করে, অতঃপর নামায আদায় করে।

بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
বস্তুতঃ তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও,

وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَى
অথচ পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী।

إِنَّ هَذَا لَفِي الصُّحُفِ الْأُولَى
এটা লিখিত রয়েছে পূর্ববতী কিতাবসমূহে;

صُحُفِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى
ইব্রাহীম ও মূসার কিতাবসমূহে। [ সুরা আলা ১৪-১৯ ]

সুরা আলার শেষ ৫টি আয়াতের আলোকে শিক্ষা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে পরকালে মুক্তি নিশ্চিত ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ-তায়ালা আমাদের তৌফিক দিন। আমিন।
লেখক ও সংকলকঃ আবুল কাশেম ( প্রবাসী কলামিস্ট)

Logo-orginal