, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

কন্ঠ মিলিয়ে গানে গানে মেতেছেন আইয়ুব বাচ্চুর ভক্তরা

প্রকাশ: ২০১৮-১০-২৭ ১০:৩৬:৪৬ || আপডেট: ২০১৮-১০-২৭ ১০:৩৬:৪৬

Spread the love

কন্ঠ মিলিয়ে গানে গানে মেতেছেন আইয়ুব বাচ্চুর ভক্তরা
ছবি, দৈনিক আজাদী
চট্টগ্রামঃ এই রূপালি গিটার ফেলে, সেই তুমি, ফেরারি মন, এক আকাশে তারা, হাসতে দেখো গাইতে দেখো-সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তি ব্যান্ড সঙ্গীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর কালজয়ী এসব গানের সাথে উচচ্ছ্বাসে মেতেছেন গান পাগল তরুণ প্রজন্ম। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জামালখানে মোড়ে স্থাপিত ডিজিটাল এলইডি স্ক্রিনে এসব গান শুনতে ভিড় করেন আইয়ুব বাচ্চুর ভক্তরা। স্ক্রিনে প্রদর্শিত ভিডিও গানে আইয়ুব বাচ্চুর সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে তরুণরা যেন জানান দিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু এখনো বেঁচে আছেন। গিটারের সুরের সাথে সাথে কয়েকজন তরুণকে আইয়ুব বাচ্চুর শূন্যতায় হা-হুতাশ করতে দেখা যায়। এদের একজন মুরাদপুরের ইমরান হোসেন বলেন, প্রিয় শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর গান বড় পর্দায় উপভোগ করার জন্য আজকে জামালখান মোড়ে এসেছি। তিনি চট্টগ্রামের গর্ব ছিলেন। তাই তার স্মরণে এখানে গান বাজানো হবে শুনে ছুটে এসেছি। তিনি সত্যিই একজন লিজেন্ড। তিনি শুধু বাংলাদেশের নন, পুরো ভারতীয় উপমহাদেশে সেরা একজন গিটারিস্ট ছিলেন। তার প্রস্থানে সঙ্গীতাঙ্গনের জন্য বড় ক্ষতি হলো।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আকিল আহমেদ বলেন, প্রতিদিন জামালখান মোড়ে বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডা দিই। আগে থেকে জানতাম না এখানে আইয়ুব বাচ্চুর স্মরণসভা ও গান বাজানো হবে। তাই সন্ধ্যায় আসার পরে এটা আমার জন্য বিশাল একটা সারপ্রাইজ হয়ে রইল। একই কথা বললেন বেসরকারি চাকরিজীবী ইমরান বিন তাহের। তিনি বলেন, টেম্পো করে কাজীর দেউড়ি যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে দেখলাম মোড়ে অনেক জটলা। আইয়ুব বাচ্চুর স্মরণসভা হচ্ছে দেখে নেমে গেলাম। দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে বড় পর্দায় প্রিয় শিল্পীর অনেক গান উপভোগ করলাম। এদিকে বড় পর্দায় গান প্রদর্শনের পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে মোড়ে আয়োজিত স্মরণসভায় যোগ দেন আইয়ুব বাচ্চুর ছোটবেলার বন্ধু ও একসময়কার সোলস ব্যান্ড দলের সদস্য মোহাম্মদ আলী, সোলস ব্যান্ডের সাবেক সদস্য সুব্রত বড়ুয়া রনি, বাংলা গানের তারকা শিল্পী তপন চৌধুরী এবং সোলস ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আহমেদ নেওয়াজ। স্মরণসভায় মোমবাতি প্রজ্বলন ও এক মিনিট নীরবতা পালন করে আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরণ করা হয়।

স্মরণসভায় আইয়ুব বাচ্চুর স্মৃতিচারণ করে সুব্রত বড়ুয়া রনি বলেন, বাচ্চু আমাদের সোলস ব্যান্ড দলে দীর্ঘ ১০ বছর কাজ করেছে। তার মৃত্যুর পর থেকে বিভিন্ন মিডিয়ায় স্মৃতি রোমন্থন করে বক্তব্য দিতে হচ্ছে। স্মৃতি রোমন্থন সবসময় কঠিন। এতে লুক্বায়িত কষ্ট আরো বেড়ে যায়। শুধু একটা কথাই বলব, বাচ্চু ছিল একজন আন্তর্জাতিক মাপের গিটারিস্ট। গিটারের প্রতি অনুরাগের কারণেই সে নিজেকে সেরা গিটারিস্টের আসনে বসাতে পেরেছে।

মোহাম্মদ আলী বলেন, বাচ্চু আমার ছোটবেলার বন্ধু। তার সাথে আমার ৪০ বছরের সম্পর্ক ছিল। সেই ১৩-১৪ বছর বয়স থেকে আমরা একসাথে অনেক ঘুরাঘুরি করেছি। শবে বরাতের রাতে রিকশায় করে রাত তিনটা পর্যন্ত ঘুরতাম। বাচ্চু অসম্ভব মানবিক একজন মানুষ ছিল। তার মধ্যে কখনো অহংকার দেখিনি। যেকোনো মানুষের অসুবিধায় সে ছুটে যেত। সঙ্গীতে এরকম লিজেন্ড আর ফিরে আসবে বলে আমার মনে হয় না।
আহমেদ নেওয়াজ বলেন, ১৯৭৪ সালে আমরা সোলস শুরু করি। আইয়ুব বাচ্চু সোলসের একজন গিটারিস্ট ছিল। আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যু সঙ্গীতাঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। সে চট্টগ্রামকে নিয়ে খুব গর্ব করত। বলত, চিটাইঙ্গা পোয়া, মেডিত পইরলি লোয়া। বাচ্চুর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য আমাদের একাডেমি করা উচিত।

তপন চৌধুরী বলেন, যতদিন বাংলা গান থাকবে ততদিন আইয়ুব বাচ্চু থাকবে। বাংলাদেশের ব্যান্ড যতদিন থাকবে ততদিন আইয়ুব বাচ্চু থাকবে-এটা আমি গ্যারান্টি দিতে পারি। এই জামালখান এলাকা থেকেই বলা যায় সোলসের যাত্রা শুরু। আমি আশা করব, জামালখান মোড়ে যেভাবে বাচ্চুকে স্মরণ করে অনুষ্ঠান হচ্ছে, সেইভাবে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানগুলো যেন এই চত্বর থেকে করা হয়। তাহলে এখানে একটি উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক মঞ্চ তৈরি হবে। সেই মঞ্চের নাম যদি আইয়ুব বাচ্চুর নামে হয়, তাহলে আমরা সবাই খুব খুশি হব।

স্মরণসভার আয়োজক জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বলেন, যতদিন গিটারের টুং টাং শব্দ থাকবে, ততদিন আইয়ুব বাচ্চু আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। আপনারা এখানে আইয়ুব বাচ্চুর স্ট্যাচু কিংবা আইয়ুব বাচ্চুর নামে উন্মুক্ত মঞ্চ তৈরির দাবি জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমি মাননীয় মেয়র মহোদয়ের সাথে কথা বলব। একটা কথা বলতে পারি, মেয়র মহোদয় আজ পর্যন্ত আমার কোনো কথা ফেলেননি।

তাই আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আগামী কিছু দিনের মধ্যে আপনারা জামালখানে আইয়ুব বাচ্চুর স্ট্যাচু কিংবা তার নামে একটি মঞ্চ দেখতে পাবেন।
গত ১৮ অক্টোবর সকালে নিজ বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়ায় আইয়ুব বাচ্চুকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জানানো হয়, হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন। উৎসঃ আজাদী।

Logo-orginal