, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

মহালয়া কি ? কেন এই মহালয়া ?

প্রকাশ: ২০১৮-১০-০৮ ১৭:১৩:৩৭ || আপডেট: ২০১৮-১০-০৮ ১৭:১৩:৩৭

Spread the love

মহালয়া কি ? কেন এই মহালয়া ?
সংগৃহীত ছবি।
মহালয়া কি ? কেন এই মহালয়া ?
সুজন দাশ,লোহাগাড়া,চট্টগ্রামঃ
শুভ মহালয়া , শুভ মহালয়া আজ অনেক শুনেছেন । কিন্তু কেন এই মহালয়া !

সবাই নিশ্চিত মহালয়া মানে দূর্গাপূজার দিন গোনা , মহালয়ার ৬ দিন পর মহাসপ্তমি , তাই দেবিকে আমত্রন ইত্যাদি।মহালয়ার তার চেয়ে বড় গুরুত্ব আছে , সেটা কেউ কেউ জানেন , কেউ কেউ জানেন না ।

ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র অকালে দেবিকে আরাধনা করেছিলেন লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধারের জন্য আসল দূর্গা পূজা হলো বসন্তে , সেটাকে বাসন্তি পূজা বলা হয় । শ্রীরামচন্দ্র অকালে-অসময়ে পূজা করেছিলেন বলে এই শরতের পূজাকে দেবির অকাল-বোধন বলা হয় ।

সনাতন ধর্মে কোন শুভ কাজ করতে গেলে , বিবাহ করতে গেলে প্র্রয়াত পূর্বরা, যাদের পিতা-মাতা তাদের পিতা-মাতার জন্য , সাথে সমগ্র জীব-জগতের জন্য তর্পণ করতে হয়, কার্যাদি-অঞ্জলি প্রদান করতে হয় । তর্পণ মানে খুশি করা । ভগবান শ্রীরাম লঙ্কা বিজয়ের আগে এদিনে এমনই করেছিলেন

সেই অনুসারে এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপূরূষের স্মরন করে, পূর্বপূরুষের আত্নার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন । সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্নাদের মত্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়, প্রয়াত আত্নার যে সমাবেশ হয় তাহাকে মহালয় বলা হয় । মহালয় থেকে মহালয়া ।পিতৃপক্ষের ও শেষদিন এটি ।

সনাতন ধর্ম অনুসারে বছরে একবার পিতা-মাতার উদ্দেশ্যে পিন্ড দান করতে হয় , সেই তিথিতে করতে হয় যে তিথিতে উনারা প্রয়াত হয়েছেন । সনাতন ধর্মের কার্যাদি কোন তারিখ অনুসারে করা হয় না । তিথি অনুসারে হয় ।

মহালয়াতে যারা গঙ্গায় অঞ্জলি প্রদান করেন পূর্বদের আত্নার শান্তির জন্য , তাহারা শুধু পূর্বদের নয় , পৃথিবীর সমগ্র কিছুর জন্য প্রার্থনা ও অঞ্জলি প্রদান করেন ।

পিতৃপক্ষের অবসান এবং দেবীপক্ষের পূর্ববর্তী অমাবস্যাকে ‘মহালয়া’ বলা হয়। ‘মহ’ বলতে বোঝায় পূজা বা উৎসব । আবার মহালয় বলতে বোঝায় মহান + আলয় = মহালয় । মহালয় হচ্ছে পূজা বা উৎসবের আলয় বা আশ্রয় । অন‍্যদিকে ‘মহালয়’ বলতে , ‘পিতৃলোককে’ বোঝায় – যোখানে বিদেহী পিতৃপুরুষ অবস্থান করছেন । তা যদি হয় তাহলে পিতৃলোককে স্মরণের অনুষ্ঠানই মহালয়া। মহালয়া শব্দটি মহালয় শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ। তাহলে পিতৃপক্ষের অবসানে, অন্ধকার অমাবস্যা থেকে আমরা যখন আলোকময় দেবীপক্ষের আগমনকে প্রত্যক্ষ করি – তখনই সেই মহা লগ্নটি আমাদের জীবনে ‘মহালয়ার’ বার্তা বহন করে আনে । এক্ষেত্রে স্বয়ং দেবীই হচ্ছেন সেই মহান আশ্রয়, তাই উত্তরণের লগ্নটির নাম মহালয়া। একটি অর্থ অনুসারে মহান আলয়টি হচ্ছে পিতৃলোক । সংবদ্য ও বেদান্ত দর্শন অনুসারে সমস্ত লোকের মধ্যে পিতৃলোকও একটি। এই পিতৃলোকে পিতৃ, ঋষি ও প্রজাপতিরা বাস করেন । তাঁদের সঙ্গেই পিতৃতর্পণের মাধ্যমে আমরা মানসিক ও আত্মিক সংযোগ স্থাপন করি, তাঁদেরই প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও প্রণাম নিবেদন করি । আশ্বিন মাসের এই কৃষ্ণপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনায় যে অমাবস্যাকে আমরা মহালয়া হিসেবে চিহ্নিত করি, সেই দিনটি হচ্ছে পিতৃপূজা ও মাতৃপূজার সন্ধিলগ্ন । পিতৃপূজা ও মাতৃপূজার মাধ্যমে এই দিনটিতে আমরা আমাদের এই মানব জীবনকে মহান করে তুলতে প্রয়াসী হই বলেই এই পূণ্যলগ্নটি আমাদের জীবনে বারবার মহালয়ারূপেই দেখা দেয় ।

যে-অবান্ধবা বান্ধবা বা যেন্যজন্মনি বান্ধবা – অর্থাৎ যারা বন্ধু নন, অথবা আমার বন্ধু ও , যারা জন্ম জন্মাত্নরে আমার আত্নীয় বন্ধু ছিলেন , তারা সকলেই আজ আমার অঞ্জলি গ্রহন করুন

যাদের পুত্র নেই , যাদের কেউ নেই আজ স্মরন করার তাদের জন্য ও অঞ্জলী প্রদান করতে হয় ।

যেযাং, ন মাতা, ন পিতা, ন বন্ধু – অর্থাৎ যাদের মাতা-পিতা-বন্ধু কেউ নেই আজ স্মরন করার তাদেরকে ও স্মরন করছি ও প্রার্থনা করছি তাদের আত্না তৃপ্তিলাভ করুক ।

Logo-orginal