, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

ঠাকুরগাঁওয়ে সরকারি নীতিমালা ছাড়াই চলছে কোচিং ব্যবসা

প্রকাশ: ২০১৮-১১-০৫ ১৬:০৮:৪২ || আপডেট: ২০১৮-১১-০৫ ১৬:০৮:৪২

Spread the love

ঠাকুরগাঁওয়ে সরকারি নীতিমালা ছাড়াই চলছে কোচিং ব্যবসা
হাসেম আলী, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: কোচিং সেন্টার চালিয়ে কোচিং ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।সরকারি কোনো নীতিমালা ছাড়াই চলছে এসব কোচিং সেন্টারগুলো।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোচিং সেন্টারগুলো শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেয়ার চেয়ে অর্থ উপার্জনকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। এটিকে একদিক দিয়ে কোচিং বাণিজ্যও বলা যেতে পারে।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভাধীন গোয়ালপাড়া, সরকারপাড়া, বসিরপাড়া, ঘোষপাড়া, হাজিপাড়া আশ্রমপাড়াসহ শহর ও উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে কোচিং সেন্টার। শুধু ঠাকুরগাঁও নয় সারাদেশে ব্যাঙের ছাতা গজিয়ে উঠছে কোচিং সেন্টারগুলো।

এসব কোচিং সেন্টারগুলো ওপর সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যক্তি মালিকানাধীন এসব কোচিং সেন্টারের ইচ্ছামাফিক বিজ্ঞাপন ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে করছে প্রতারণা।

এসব কোচিং সেন্টারগুলোতে ভর্তি বা কোর্স ফিও নিচ্ছে ইচ্ছেমত এবং প্রতিবছর তা বেড়েই চলছে।

আগামী কয়েক মাসের মধ্যে শুরু হতে যাচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। আর এ সময়টিকে কাজে লাগিয়ে কোচিং সেন্টারগুলো শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। এ বছর দেখা যায় কোচিং সেন্টারগুলোতে ভর্তি বা কোর্স ফি ছয় হাজার থেকে শুরু করে আট হাজার পর্যন্ত। যা গত বছরের তুলনায় দিগুণ বেশি।

প্রত্যেক বছরে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মডেল টেস্ট পরীক্ষার শেষ মুহূর্তে দেখা যায় বিজ্ঞাপন, দেয়ালে দেয়ালে বাহারি পোস্টার, ব্যানার লাগিয়ে প্রচারণা করছে কোচিং মালিকরা।

দেখা গেছে, এক একটি কোচিং সেন্টারে দিনে প্রায় তিন থেকে চারটি ব্যাচ পড়ানো হয়। প্রত্যেকটি ব্যাচে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থীকে পড়ানো হয়।

কোচিং সেন্টারগুলোতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক রয়েছে। আর কোচিং সেন্টারগুলোতে একটি ব্যাচ এক থেকে দেড় ঘণ্টা পড়ানো হয়। এক একটি ক্লাস ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর্যন্ত নেয় কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা।

দেখা যায়, দেশে কোচিং সেন্টার চালু করার জন্য সরকারের কোনো অনুমোদন নিতে হয় না। যে কেউ ইচ্ছামতো, যখন খুশি কোচিং সেন্টার চালু করতে পারে।

এর ফলে ব্যাঙের ছাতার মতো এখানে সেখানে গজিয়ে উঠছে কোচিং সেন্টার। শিক্ষার মহান সেবার ব্যানারে এক শ্রেণীর মুনাফালোভীরা হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।

অবশ্য এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন কোচিং ব্যবসায়ীরা। এক কোচিং সেন্টারের মালিক জানান, তারা শতভাগ শিক্ষা সেবার জন্যই কাজ করছেন, কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশে নয়।

অন্যদিকে অভিভাবকরা জানান, আমাদের সন্তানদের আমরা বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছি শিক্ষা লাভের জন্য। প্রতি মাসেই আমাদের বিদ্যালয়ে মাসিক বেতন প্রদান করতে হয়। কিন্তু সে অনুযায়ী আমাদের সন্তানরা বিদ্যালয় থেকে তেমন শিক্ষা লাভ করতে পারছে না। তাই আমাদের সন্তানদের শিক্ষা লাভের জন্য আমরা কোচিং সেন্টার গুলোর শরণাপন্ন হচ্ছি। কিন্তু এখানেও দেখা যায় একত্রে অনেক শিক্ষার্থীর ক্লাস নেওয়ার কারণে আমাদের সন্তানরা তাদের সমস্যাগুলো শিক্ষকদের কাছে বুঝিয়ে নিতে পারছে না। যার ফলে আমাদের সন্তানরা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে।

অভিভাবকরা আরো জানান, সরকার যদি কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ করতে পারে তাহলে হয়তো বিদ্যালয় ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। কোচিং সেন্টার বা প্রাইভেটের কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গাঁ ছেড়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়। এর জন্য আমাদের সন্তানরা বিদ্যালয় থেকে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না।

শিক্ষার্থীরা জানান, স্কুলে পড়াশোনা ঠিকমতো হতো না, আর প্রাইভেটের পড়াশোনা দিয়ে আসলে এসএসসির প্রস্তুতি সম্পন্ন হয় না। তাই বাধ্য হয়েই আমরা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হই।

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার ভূপেন্দ্র নাথ মুখার্জী জানান, কোচিং সেন্টারে একসঙ্গে এতোগুলো শিক্ষার্থী কখনোই কিছু শিখতে পারবে না। শিক্ষার্থীদের শেখবার মূল স্থান হলো বিদ্যালয়। কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীদের পড়ার কোনো প্রয়োজন মনে করি না। তবে এসএসসি চলাকালীন কোনো কোচিং সেন্টারে কার্যক্রম চালু থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালায় বারবার কোচিং সেন্টার বন্ধের কথা শোনা গেলেও আজ অব্দি সেটার বাস্তবায়নের টু চেষ্টাও করা হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এসব কোচিং বা সেন্টারগুলোর প্রতি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কিনা সে বিষয়ে শিক্ষা অফিসারের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

Logo-orginal