, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

নির্বাচনী সহিংসতায় বৃহত্তর চট্টগ্রামে নিহত ৪

প্রকাশ: ২০১৮-১২-৩১ ১৩:৫১:৪২ || আপডেট: ২০১৮-১২-৩১ ১৩:৫১:৪২

Spread the love

চট্টগ্রাম: নির্বাচনী সহিংসতায় বৃহত্তর চট্টগ্রামে চারজন প্রাণ হারিয়েছে। পটিয়া, বাঁশখালী, চকরিয়া এবং রাঙামাটির কাউখালীতে এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া সারাদেশে অন্তত আরও ১২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার খবরে এদের ৮ জনই আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থক বলে জানানো হয়েছে। সংবাদ দৈনিক আজাদীর ।

আমাদের বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, ভোট গ্রহণের আগের দিন রাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে কাথরিয়া বরইতলী এলাকার নওশা মিয়ার পুত্র আহমদ কবির (৫০) মারা যান। এ ঘটনায় ৫জন পুলিশ সদস্য সহ আরো বেশ কয়েকজন আহত হয় । তার মধ্যে দুই পুলিশ সদস্য আবু সুফিযান (২২) ও ফরহাদ হোসেনকে (২৩) আশংকাজনক অবস্থায় চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে ।

জানা যায় কাথরিয়া ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্র বরইতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্বাচনের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা যাওয়ার পর থেকে কিছুক্ষণ পর পর ঢিল ছুটতে থাকে কিছু লোক । নির্বাচনী কর্মকর্তারা সেটা বাশঁখালী প্রশাসনকে জানালে প্রশাসনের লোকজন রাত তিনটার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সহ সেখানে যাওয়ার জন্য রওনা হয়। তারা ভোট কেন্দ্রের পাশে পৌঁছালে স্থানীয় একটি মসজিদ থেকে ভোট ডাকাতি করার জন্য লোক জড়ো হয়েছে বলে মাইকে ঘোষণা দেয়। এ সময় চারদিক থেকে লোক এসে পুলিশের উপর হামলা শুরু করে । এ সময় পুলিশের ২টি শর্টগান ও রাইফেল লুট হয়। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয় নওশা মিয়ার পুত্র আহমদ কবির (৫০)। রাতে তাকে বাশঁখালী হাসপাতালে আনা হলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন । একই ঘটনায় আরো আহত হয় এস আই বিমল দাশ (৪০), এ.এস. আই আবু সালেহ (৩৫), পুলিশ সদস্য বুলবুল আহমদ(২৪) সহ আরো অনেকে । রাতেই ঘটনায় লুট হাওয়া অস্ত্র গুলি সকালে কেন্দ্রের পাশে একটি জমিতে পাওয়া যায় । নিহত আহমদ কবিরের সুনিদিষ্ট রাজনৈতিক পদবী না থাকলেও তাকে জাতীয় পার্টির কর্মী হিসাবে দাবি করা হচ্ছে । আর রাতের ঘটনার উস্কানি দাতা হিসাবে জামায়াত শিবিরকে দায়ী করা হলেও তারা সেটার জন্য দায়ী নয় বলে জানিয়েছে।

ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ কামাল হোসেন বলেন, আহত পুলিশ সদস্যদের চমেক ও বাশঁখালীতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ।

পটিয়ায় জিরি ইউনিয়নের পশ্চিম মালিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আবু সাদেক (১৫) নামে এক মাদ্রাসা ছাত্র নিহত হয়। জানা গেছে, সকাল ১০টায় পশ্চিম মালিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী এবং বিএনপির সংঘর্ষের মাঝে পড়ে আবু সাদেক ইটপাটকেলের আঘাতে নিহত হয়। সে দক্ষিণ মালিয়ারা এলাকার আবুল কাশেম মেম্বারের ছেলে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে ফিরোজ মুন্না (২৪) ও জিয়া উদ্দীন (২৫) নামে আরো দুইজন আহত হয়। আবু সাদেকের পরিবার জানায়, সে কোন রাজনীতির সংগঠনের সাথে জড়িত নয়। কিন্তু আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও ইসলামী ফ্রন্ট তাকে নিজেদের কর্মী বলে দাবী করে।

আমাদের চকরিয়া প্রতিনিধি জানায় : পেকুয়ার রাজাখালী ইউনিয়নের মাতব্বর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে সাড়ে এগারটার দিকে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন ছাত্রলীগ কর্মী নিহত ও আরো কয়েকজন আহত হয়। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল থেকেই পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের মাতব্বরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছিল। কিন্তু সকাল সাড়ে এগারটার দিকে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান নেয়। এ সময় উভয়পক্ষে সংঘর্ষ বাঁধলে গুলিতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় রাজাখালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ কর্মী আবদুল্লাহ আল ফারুক (২২)। সে ইউনিয়নের উলুদিয়া পাড়ার নুরুল আবচারের পুত্র। এ সময় আহত হন আওয়ামীলীগ কর্মী একই এলাকার আবু তালেব (৩২), রবি আলম (২৪), মাতব্বর পাড়ার রুহুল কাদের (৩০)। আহতদের মুমূর্ষ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পেকুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

আমাদের রাঙামাটি প্রতিনিধি জানায় : রাঙামাটি কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের রাঙ্গীপাড়া এলাকায় আওয়ামীলীগ ও বিএনপি সংঘর্ষে ঘাগড়া ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ বাছির উদ্দীন (৩২) নিহত হন এবং উভয় পক্ষের সংঘর্ষে ১৩ জন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন, আব্দুল মোতালেব (৫০), শাহেদা বেগম (৪০), আব্দুল আল মামুন (১৮), মো: আলমগীর (৩২), মনির হোসেন (৩৮), শহীদুল ইসলাম (৪৫), হানিফ (২২), নািসর উদ্দিন (৩২), বেলাল হোসেন (২৮), মাকছুদ আলী (৩২), সাজ্জাদ (৩০), মো: শাহীন (৩০) ও ওমর ফারুখ। আহতরা সকলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে ভর্তি আছে। রবিবার সকালে উপজেলার রাঙ্গীপাড়া এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন ভোট কেন্দ্রে যাওয়াকে কেন্দ্র করে রবিবার সকাল সাতটার দিকে আওয়ামীলীগ এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে বিএনপি অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের কথা কাটাকাটি এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় যুবলীগ নেতা বাছির উদ্দীনের মাথায় আঘাত লাগে এবং উভয়পক্ষের ১৩ জন আহত হয়। আহত অবস্থায় বাছিরকে উদ্ধার করে কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে নিলে কর্মরত ডাক্তার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্রগ্রামের একটি বেসরকারি হাসাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনজুর আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

Logo-orginal