, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

চট্টগ্রামে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা

প্রকাশ: ২০১৯-০১-২৩ ০৯:৫৭:৪৪ || আপডেট: ২০১৯-০১-২৩ ০৯:৫৭:৪৪

Spread the love

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, পরীক্ষার আগের দিন অভিভাবকদের ব্যস্ত থাকার কথা সন্তানকে নিয়ে, সন্তানের পড়ালেখার প্রস্তুতি নিয়ে। কিন্তু সেটি না করে কোনো কোনো অভিভাবক যখন টাকা নিয়ে প্রশ্ন খোঁজেন, তা লজ্জাজনক। আর প্রশ্ন ফাঁসের সাথে শিক্ষকদের জড়িত থাকার বিষয়টি যখন সামনে আসে, তা লজ্জাজনক তো বটেই, খুব দুঃখজনকও।

গতকাল মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম কলেজ অডিটরিয়ামে ‘শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) আয়োজিত এ সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর। মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন মাউশি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলাম ও চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল হাসান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের কথা থাকলেও তাঁরা সেখানে মনোযোগী না হয়ে নিজের কাছে প্রাইভেট পড়তে শিক্ষার্থীদের এক প্রকার বাধ্য করেন। আবার প্রাইভেট না পড়লে ওই শিক্ষার্থীকে ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করিয়ে দেন। এ ধরনের ঘটনা যে ঘটছে না, তা কিন্তু নয়। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে এসব অনৈতিকতা বন্ধ করতে হবে।

গণমাধ্যমগুলোতে দুঃসংবাদগুলোই যেন বেশি করে প্রচার হয় মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সুসংবাদগুলো সেভাবে প্রচার পায় না। যেমন, গতবার এইচএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় কিন্তু প্রশ্নফাঁস হয়নি। সে খবরটা কিন্তু ভালোভাবে প্রচার পেয়েছে বলে মনে হয় না। গত দুটি পরীক্ষার মতো এবারও যাতে প্রশ্নফাঁস না হয়, সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তীক্ষ্ন গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। কোনো দুর্বৃত্ত এ ধরনের প্রশ্নফাঁসের চেষ্টায় থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রশ্নফাঁসমুক্ত, নকলমুক্ত ও সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠানে সকলের সহযোগিতা কামনা করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা আয়োজন ও গ্রহণে মূল কাজ কিন্তু শিক্ষাবোর্ডের। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শুধু সংশ্লিষ্ট সকল দফতরকে নিয়ে সমন্বয়টা করে থাকে।
শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে চিন্তা থেমে থাকেনি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এই চিন্তার ফসলই কিন্তু আজকের মতবিনিময় সভা। গত এক দশকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে শিক্ষায় বিশাল বিশাল অর্জন কিন্তু আমরা দেখেছি। অতীতের এই অর্জনগুলো ধরে রাখা এবং সামনে আসা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করাই আমাদের লক্ষ্য। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কিন্তু আপনাদের সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আপনাদের সকলকে সাথে নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, বর্তমান সরকারের গত দুই মেয়াদে শিক্ষায় যে অর্জন হয়েছে, সেটি ধরেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশে আজ যে পরিবর্তন এসেছে, শিক্ষায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন না হলে এটি কিন্তু সম্ভব হতো না। শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়। মেরুদণ্ড শক্ত না হলে কিন্তু অর্থনীতি এতটা শক্ত হতে পারত না। তিনি বলেন, ক্লাসরুমে মনোযোগী না হয়ে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে কোচিংয়ে বাধ্য করানো কিন্তু অনৈতিক। শিক্ষা প্রশাসনে যদি দুর্নীতি থাকে, অনৈতিকতা থাকে, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চট্টগ্রামেরই কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ আসছে জানিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, সরকার নির্ধারিত নীতিমালার বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে যারা নানাভাবে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আমরা যতটুকু কঠোর হওয়ার, হব।

ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, মন্ত্রীরাও ছাড় পাবেন না। যেখানে মন্ত্রীরাও ছাড় পাবেন না, সেখানে অন্য কারো ছাড় পাবার প্রশ্নই আসে না।

বক্তব্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, শীঘ্র্রই প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চমৎকার ভবন দিয়ে গড়ে দেবে সরকার। সরকারি চাকরিজীবীদের সাথে একমাত্র বেসরকারি শিক্ষকরাই দ্বিগুণ বেতনের সুবিধা পেয়েছেন। তাই সরকারও নিশ্চয় আপনাদের কাছে কিছু চায়। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়নে বদ্ধ পরিকর। এই লক্ষ্য অর্জনে নিজেদের অবস্থান থেকে নিজের দায়িত্বটুকু আন্তরিকভাবে পালন করতে হবে।

মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সচিব মো. আলমগীর বলেন, সাধারণ শিক্ষায় বাংলাদেশের যে সংখ্যক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে, তা অন্য কোনো দেশে করে না। শুধু ভারতে কিছু থাকতে পারে। দক্ষ মানবসম্পদ গড়তে কারিগরি শিক্ষায় জোর দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
গুণগত শিক্ষার সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করে শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যে কয়েক দফা নির্দেশনা দেন মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন ওই এলাকার সবচেয়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন প্রতিষ্ঠান হয়। আর শিক্ষার্থীরাই নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করবে। আমরা ৬ মাসের মধ্যে এটির বাস্তবায়ন চাই। জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীরা যেন নেতৃত্বে আসে। অনার্স কলেজগুলোতে প্রতিটি বিভাগে বছরে যেন অন্তত একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। শিক্ষায় গুণগত দিক দিয়ে দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখতে চান বলে মন্তব্য করেন তিনি।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলাম বলেন, গতবারের এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ছিল। কিন্তু পরে প্রমাণিত হয়েছে, সবটাই ছিল পরিকল্পিত। তবে পরবর্তী এইচএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় এ ধরনের কোনো গুজবও ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবারও সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে প্রশ্ন ফাঁসহীন পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারব বলে আমরা আশা করছি। এ কাজে সকলের সহযোগিতা চান তিনি।

স্বাগত বক্তব্যে নিজ কার্যালয়ে জনবল স্বল্পতার দিকটি তুলে ধরেন মাউশি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী। একই সাথে চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরকারি স্কুলের অপ্রতুলতার বিষয়টিও তুলে ধরেন।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে কয়েক দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল হাসান। তাঁর প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে, জেলা শহরে আলাদা পরীক্ষা কেন্দ্র নির্মাণ করা। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ দেওয়া, নামি সরকারি কলেজগুলোতে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সাথে আরো কম জিপিএ পাওয়াদের একটি অংশ ভর্তি করানো, কলেজগুলোতে ডাবল শিফট চালু করা। এছাড়া ছাত্রদের আবাসনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বন্ধ থাকা হোস্টেলগুলো খুলে দেওয়ারও প্রস্তাব দেন তিনি। উৎসঃ দৈনিক আজাদী।

Logo-orginal