, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

লোহাগাড়া ও চন্দনাইশে নৌকা পেতে মরিয়া এলডিপির দুইনেতা

প্রকাশ: ২০১৯-০১-২৮ ২১:৫৪:২৭ || আপডেট: ২০১৯-০১-২৮ ২১:৫৪:২৭

Spread the love

চট্টগ্রামঃ পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছেন এলডিপির দুই সাবেক নেতা। গতকাল দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে লোহাগাড়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল ও চন্দনাইশের বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল জব্বার চৌধুরী চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার আবেদন করেছেন। এরা দুইজনই এক সময় এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত থাকলেও এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে টার্গেট করে আওয়ামী লীগমুখি হয়েছেন।খবর দৈনিক পুর্বদেশের।

জানা যায়, পৌরসভা নির্বাচনে এলডিপি সমর্থিত প্রার্থীর বিরোধীতা করায় তাঁকে এলডিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল জব্বার চৌধুরী স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীর হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। সেদিন উপজেলার গাছবাড়িয়া নিত্যনন্দ গৌরিচন্দ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগ জনসভার আয়োজন করেছিল।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় জানতে চাইলে চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল জব্বার চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমি এলডিপি করি না। আমি আওয়ামী লীগ করি। আওয়ামী লীগে যোগদান করেছি। আশা করি আমি মনোনয়ন পাব। এরপরও জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতারা যাকেই মনোনয়ন দিবেন তার পক্ষে কাজ করবো।’

লোহাগাড়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও এলডিপি সভাপতি জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল চলতি মাসের ১৫ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এর আগে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী না দেয়ায় দলীয় নেতাকর্মীরা বাবুলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। নির্বাচনে জয়ী হন জামায়াত প্রার্থী ফরিদ উদ্দিন খান।

গতকাল বিকালে জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের বর্ধিতসভায় বক্তব্যকালে জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চাই। এরপরও দল যাকেই প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করবে তাকেই সমর্থন করবো।’

এই দুই নেতার আওয়ামী লীগে যোগদান নিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা এলডিপি সভাপতি এড. কফিল উদ্দিন চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘এই দুই নেতা এলডিপিতে গেলে আমাদের তেমন প্রভাব পড়বে না। এমনিতেই রাজনীতিতে নৈতিকতা চলে গেছে। প্লেয়ারের মতো খেলছে সবাই। আজ এ দল, কাল অন্য দল। রাজনীতি কোনপথে তাঁরাই ভালো বুঝবেন।’

এদিকে নির্বাচনে সামনে রেখে এলডিপির সাবেক এই দুই নেতার তৎপরতা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তাঁরা দলের পক্ষে ত্যাগী ও যোগ্যতাসম্পন্ন নেতাদেরকেই প্রার্থী চান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চন্দনাইশ আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘দলীয় সভানেত্রী নিজেই দলীয় সভায় নিজেই বলেছেন ১২বছর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থাকলে মনোনয়ন দেয়া হবে না। চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান কবে যোগদান করেছেন সবাই জানে। জেলার নেতাদেরও বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। তবেই তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দলীয় যাকেই মনোনয়ন দিবে মেনে নিবে।’
গত ২০ জানুয়ারি লোহাগাড়ায় বর্ধিতসভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলে অনুপ্রবেশকারী কাউকে মনোনয়ন নয়, দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মনোনয়ন দিতে হবে। দলে সদ্য যোগ দেয়া বসন্তের কোকিল কিংবা অনুপ্রবেশকারী কাউকে মনোনয়ন দেয়া হলে তা প্রতিহত করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।’
এদিকে গতকাল চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আওতাধীন সাতটি উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোটযুদ্ধে নামতে চান ৭৭ নেতা-নেত্রী। এরমধ্যে শুধুমাত্র চেয়ারম্যান পদেই প্রার্থী হতে চান ৩৫জন। ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ ২৬জন ও মহিলা ১৬জন আবেদন করেছেন।

গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত প্রার্থীরা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নিজেদের প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করেন। পরে প্রার্থী চেয়ে আবেদন করা চন্দনাইশ, বোয়ালখালী, লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ার নেতাদের নিয়ে পৃথকভাবে তৃণমূলের বর্ধিতসভা অনুষ্ঠিত হয়।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান প্রত্যেক প্রার্থীর কথা শুনেন। প্রার্থীরাও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী যেভাবেই প্রার্থী ঘোষণা দিবেন, সেভাবেই দলের পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দেন।
তৃণমূলের বর্ধিতসভায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নেত্রীর ওপর সকল প্রার্থীকে আস্থা রাখতে হবে। আমাদেরও সুযোগ আছে। সকল সম্ভাব্য প্রার্থী সর্বসম্মত হলে একক প্রার্থীর নাম পাঠাবো কেন্দ্রে। আর যদি সমঝোতায় না আসে তাহলে দুই থেকে তিনজন প্রার্থীর নাম পাঠাবো। কেন্দ্র যেভাবেই সিদ্ধান্ত দিবে, আমরা সে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবো।’
প্রার্থী হতে চান যারা : গতকাল দিনভর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে চেয়ারম্যান ও পুরুষ-মহিলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে আবেদন করেছেন ৭৭জন। এরমধ্যে চন্দনাইশে ১৬জন, বোয়ালখালীতে ২৫জন, লোহাগাড়ায় ১৪জন ও সাতকানিয়ায় ২২জন। আবেদনকারীদের মধ্যে বোয়ালখালীতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে চান নুরুল আলম, আহমদ হোসেন, বোরহান উদ্দিন এমরান, আবদুল কাদের সুজন, মোহাম্মদ আবুল বশর, রেজাউল করিম বাবুল, মোহাম্মদ শফিউল আলম, খোরশেদ খন্দকার, রেজাউল করিম রাজা, নুরুল ইসলাম, এসএম জহিরুল আলম জাহাঙ্গীর, মোহাম্মদ বেলাল হোসেন।

পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে এসএম সেলিম, মো. শাহাদত, রতন চৌধুরী, রিদুয়ানুল হক টিপু, সুভাষ চৌধুরী টাকু, মো. সেলিম উদ্দিন, হারুন মিয়া, কার্তিক শীল, মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শামীম আরা, সুপর্না ভঞ্জ, নমিতা বসু, ফারজানা আক্তার প্রার্থী হতে চান।

চন্দনাইশে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে চান একেএম নাজিম উদ্দিন, নুরুল আলম, এম নাজিম উদ্দিন, মীর মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, শেখ টিপু চৌধুরী, মো. আবদুল জব্বার চৌধুরী, হাবিবুর রহমান চেয়ারম্যান।

পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে মাহমুদুল হক বাবুল, মো. সেলিম হোসেন, মোহাম্মদ তাওহিদুল আলম, এসএম মুসা তসলিম এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সঞ্চিতা বড়ুয়া, এড. কামেলা খানম রুম্পা, শাহনাজ বেগম, জন্নাতুল ফেরদৌস, রুনা আকতার চৌধুরী প্রার্থী হতে চান।
লোহাগাড়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে চান মৌলভী নুরুল আবছার, আনোয়ার কামাল, খোরশেদ আলম চৌধুরী, জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয় কুমার বড়ুয়া, দিল মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান, এসএম মামুন, রতন দাশ, গণি সম্রাট, রিদুয়ানুল হক সুজন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পারভীন আক্তার, রোকছানা, জেসমিন আক্তার প্রার্থী হতে চান।
সাতকানিয়ায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে চান বশির আহমদ, গোলাম ফারুক ডলার, একরামুল করিম, আবু ছালেহ, আবদুল মোনাফ, ফয়েজ আহমদ, জসীম উদ্দিন, মোস্তাক আহমদ আঙ্গুর, ডা. মিনহাজুর রহমান, কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, নুরুল আবছার চৌধুরী, সরওয়ার উদ্দিন চৌধুরী। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে হোসেন কবির, নজরুল ইসলাম সিকদার, মো. মনজুর, সাহেদ উদ্দিন সিকদার, মোহাম্মদ শাহজাহান, রুপক কুমার নন্দী, জসীম উদ্দিন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নার্গিস আক্তার মুন্নি, আনজুমান আরা, শিকু আরা বেগম, জান্নাত আরা বেগম প্রার্থী হতে চান।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক বিজয় কুমার বড়ুয়া পূর্বদেশকে বলেন, ‘প্রথমদিন চার উপজেলায় ৭৭জন প্রার্থী হতে আবেদন করেছেন। আগামী ২৯ জানুয়ারি পটিয়া, বাঁশখালী ও আনোয়ারার প্রার্থীরা আবেদন করবেন। তৃণমূলের বর্ধিতসভায় সবার কথা শুনার পর জেলা নেতৃবৃন্দরা কেন্দ্রে তালিকা পাঠাবেন।’

Logo-orginal