rtm
প্রকাশ: ২০১৯-০১-১০ ০৮:৩০:৪৩ || আপডেট: ২০১৯-০১-১০ ০৮:৩০:৪৩
৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও এবার অবৈতনিক শিক্ষার আওতায় আসছে। ফলে দেশের ২২ হাজারেরও বেশি স্কুলে ক্লাস সিক্সে অধ্যয়নরত প্রায় ২৫ লাখ শিক্ষার্থী এই সুফল ভোগ করবে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে তা দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত চালু করা হবে। দেশে শিক্ষার হার বাড়ানো এবং ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে প্রাথমিক স্তর (১ম থেকে ৫ম শ্রেণি) পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা চালু রয়েছে। ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নরত ছাত্র- ছাত্রীদের বেতন পরিশোধ করতে হয় না। সরকারের পক্ষ থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত পাঠ্যবইও ফ্রি দেয়া হয়। বছরের প্রথম দিন ছাত্রছাত্রীরা এসব বই পাচ্ছে। তাই বছরের প্রথম দিনটি তাদের কাছে উৎসবের দিনে পরিণত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, সরকার নারী শিক্ষার উন্নয়নে প্রাথমিকের পরও ছাত্রীদের নানাভাবে অবৈতনিক অধ্যয়নের সুযোগ করে দিয়েছে। সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাইরে বসবাসকারী ছাত্রীদের একটি বড় অংশ উপবৃত্তির আওতায় রয়েছে। যেকোনো মাধ্যমিক স্কুলের ৩০ শতাংশ ছাত্রী এবং ১০ শতাংশ ছাত্রকে উপবৃত্তির মাধ্যমে অধ্যয়নের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। নারী শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিতও হয়েছে।
শিক্ষাবিদরা জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাস করা হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী প্রতি বছর ঝরে পড়ে। তাদের আর ক্লাস সিক্সে পড়ার সুযোগ হয় না। এদের অনেকে শুধু পড়ালেখার খরচ যোগানোর অভাবে স্কুল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ঝরে পড়া এসব শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ শিশু শ্রমে জড়িয়ে পড়ে। ফলে ভবিষ্যতে একটি শিক্ষিত, দক্ষ ও কর্মঠ জনগোষ্ঠি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অন্তরায় সৃষ্টি হচ্ছে। এই অবস্থা রোধ করতে সরকার ফ্রি শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ঝরে পড়া ছাত্রছাত্রীদের স্কুলমুখী করার উদ্যোগ নিয়েছে।
শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, দেশে মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা সাড়ে ১৮ হাজার। এরমধ্যে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩ হাজার ৭০৮টি। নিম্নমাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা ৪৩২২টি। সারা দেশে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে ৪০৩টি। এই বিপুল সংখ্যক স্কুলে ক্লাস সিক্সে অধ্যয়ন করে প্রায় ২৫ লাখ শিক্ষার্থী।
সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা জানান, বিগত পিইসি পরীক্ষায় দেশে ২৭ লাখেরও বেশি ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন গ্রেডে পাশ করেছে। এদের মধ্যে ২৫ লাখের মতো ক্লাস সিক্সে ভর্তি হলেও বাকিরা ঝরে পড়ছে। প্রাথমিক পর্যন্ত বাধ্যতামূলক ফ্রি শিক্ষা সকলে গ্রহণ করলেও অনেকে বেতন-ফি’র দিতে না পেরে এরপর স্কুল ছাড়ছে। স্কুল ভেদে ক্লাস সিক্স থেকে প্রতি শিক্ষার্থীকে ৫০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত মাসিক বেতন পরিশোধ করতে হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফিও থাকে। ফলে যারা এসব টাকা দিতে অপারগ হয় তারা ঝরে পড়ে। এই অবস্থায় সরকার ক্লাস সিক্সেও ফ্রি অধ্যয়নের সুযোগ করে দিচ্ছে। এখন থেকে দেশের সব ছাত্রছাত্রী ক্লাস সিক্স পর্যন্ত ফ্রি অধ্যয়নের সুযোগ পাবে। এবং ক্রমান্বয়ে তা দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা হবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পর সরকার নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেছে। নবগঠিত মন্ত্রিসভা শপথ নিলেও এখনো পর্যন্ত তাদের অফিসিয়াল কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়নি। তবে আগামী সপ্তাহ নাগাদ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ক্লাস সিঙ পর্যন্ত অবৈতনিক লেখাপড়ার সুযোগ সম্বলিত প্রজ্ঞাপন জারি হতে যাচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেন, লেখাপড়ার ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। একটি শিক্ষিত জাতি গঠনে সরকার বহুমুখী সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে যাচ্ছে। বিগত সরকারের সময় অনেকগুলো স্কুল কলেজ জাতীয়করণ করা হয়েছে। এবারও সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেবে। তবে সবার আগেই ক্লাস সিক্স পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষার প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানান তিনি।