, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

৩৫ মামলায় কী অভিযোগ এনেছেন বিএনপি প্রার্থীরা?

প্রকাশ: ২০১৯-০২-১৪ ১৯:৫২:৪৭ || আপডেট: ২০১৯-০২-১৪ ১৯:৫২:৪৭

Spread the love

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুলভাবে হেরে যাওয়ার পর দলের বেশকিছু প্রার্থী বিশেষ নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মোট ৩৫ মামলা দায়ের করেছেন। প্রতিবেদন বিবিসি বাংলার ।

বিএনপির একজন নেতা জানিয়েছেন যে মামলার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। মামলাগুলো পরিচালনা করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে আইনজীবীদের একটি প্যানেল গঠন করা হয়েছে।

ঢাকার যেসব প্রার্থী মামলা দায়ের করেছেন, সেই মামলাগুলোর পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন আইনজীবী প্যানেলের সদস্য রুহুল কুদ্দুস কাজল।

তিনি বিবিসি বাংলাকে জানান, “প্রতিটি নির্বাচনী আসনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা যে বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়েছে, সে সম্পর্কে কতগুলো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ যেগুলো আমরা আমাদের প্রার্থীদের কাছে থেকে পেয়েছি, সেগুলো আমরা আদালতের দৃষ্টিতে এনেছি।”

মামলায় যেসব অভিযোগ করা হয়েছে

উদাহরণ হিসেবে একটি মামলার অভিযোগের বিবরণ দিয়ে এই আইনজীবী বলেন, ঝিনাইদহ ৪ আসনে বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ করেছেন যে একটি কেন্দ্রে মোট ভোটার ২২৬২ জন। সেখানে ভোট পড়েছে ২২৫১টি। সেখানে ভোটার তালিকা থাকা ২৫ জন এরই মধ্যে মারা গেলেও রিটার্নিং অফিসারের হিসেবে দেখা গেছে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হননি ভোটার তালিকায় থাকা মাত্র ১১ জন ব্যক্তি।

“তাহলে ১৪ জন মৃত ব্যক্তি কি ভোট দিয়েছেন? তা নাহলে এই অংক তো মেলার কথা না। কে কবে মারা গেছে সেটা আমরা আদালতের সামনে উপস্থাপন করেছি,” বলছিলেন রুহুল কুদুস কাজল।

মৌলভীবাজারে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান যে আসনে নির্বাচন করতেন, সেই আসনে বিএনপি প্রার্থী ছিলেন তাঁর ছেলে। তিনিও মামলা করেছেন বলে জানান আইনজীবীরা।

মামলার একটি অভিযুক্ত পক্ষ করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে
রুহুল কুদ্দুস কাজল বলছেন, ওই আসনের বেশ কটি কেন্দ্রে একশো’ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দেখানো হয়েছে। “একটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী একাই সব ভোট পেয়েছেন। এটা অকল্পনীয়।”

আইনজীবীরা বলছেন, নির্বাচনের আগের রাতে অধিকাংশ কেন্দ্রে ব্যালটবাক্স ভরে রাখা, নির্বাচনের দিন বিএনপির পোলিং এজেন্ট ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনে বাধা, ভোটারদের ভয় দেখানো, প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে নৌকায় সিল মারতে বাধ্য করা ইত্যাদি নান অভিযোগ আনা হয়েছে মামলাগুলোয়।

নির্বাচনের আগে বিএনপির সমর্থকদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’ দিয়ে প্রচারণায় বাধা দেয়া হয়েছে – এমন অভিযোগও আনা হয়েছে বিএনপি প্রার্থীদের দায়ের করা কোন কোন মামলায়।

মামলাগুলো কাদের বিরুদ্ধে?

যে কটি মামলা হয়েছে, সেগুলোর বাদী ঐ নির্দিষ্ট আসনের বিএনপি দলীয় প্রার্থী।
আর এসব মামলায় এক নম্বর বিবাদী করা হয়েছে সরকার দলীয় অর্থাৎ আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে নির্বাচিত হওয়া প্রার্থীকে।

এছাড়া নির্বাচন কমিশনকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।

রুহুল কুদ্দুস কাজল জানিয়েছেন, মামলায় উল্লেখ করা আসনগুলোর দায়িত্ব থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নামও মামলায় প্রতিপক্ষ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “সাধারণভাবে বিভিন্ন সময়ে আমরা নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করে যে প্রতিকার পাইনি এবং নির্বাচন কমিশনের উপর একটা ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচন করার যে দায়িত্ব ছিল, সেই দায়িত্ব তারা পালন করতে পারেনি – সেই কথাগুলো মামলার আর্জিতে তুলে ধরেছি।”

মামলায় এক নম্বর অভিযুক্ত ওইসব আসনে বিজয়ী ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী
বিএনপি প্যানেলের আইনজীবী জানিয়েছেন, তারা নানা তথ্য-প্রমাণ ও কাগজপত্র সংগ্রহ করেছেন, যা আদালতে উপস্থাপন করা হবে। রয়েছে প্রচুর ভিডিও এবং দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর।

বিএনপি’র বক্তব্য

গত ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে মামলা করার ব্যাপারে আগেই বিএনপির দলীয় ফোরামে আলোচনা হয়েছে।

আগামীকাল ১৫ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার বাধ্যবাধকতা ছিল বলে জানা গেছে।

রুহুল কবির রিজভী বলছেন, সবগুলো ধাপ দেখতে চান তারা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, প্রতিটি জেলা থেকেই অন্তত একজন বিএনপি প্রার্থীর এই মামলা করার কথা, তবে এই সংখ্যা একাধিকও হতে পারে।

মামলা দায়েরের কারণ সম্পর্কে মি. রিজভী বলেন, “একটা শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের যে ধাপগুলো, এর সবগুলোই আমরা দেখতে চাই। এই মামলাও সেই সংগ্রামের একটা অংশ।”

তিনি আরও বলেন, “শেষ ভরসা হিসেবে উচ্চতর আদালতে গিয়ে আমরা দেখতে চাই, এখান থেকে আমরা কি ধরনের প্রতিকার পাই।”

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অবশ্য আগেই নির্বাচন নিয়ে ওঠা অভিযোগগুলো নাকচ করে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সরকারের একাধিক মন্ত্রী বলেছেন যে নিজেদের ভুলের কারণেই বিএনপি নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে।

নির্বাচনে যে অল্প সংখ্যক অনিয়মের অভিযোগ ছিল, সেগুলোর বিষয়ে নির্বাচন কমিশন দ্রুতই ব্যবস্থা নিয়েছে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া

বিএনপি’র দায়ের করা মামলাগুলোর প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ বলেছেন, “যেকোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আদালতে মামলা করতে পারেন। মহামান্য হাইকোর্ট যদি কোন বিষয়ে আমাদের জবাব দিতে বলেন, তাদের আর্জির ভিত্তিতে আমরা জবাবটা দিয়ে দেবো।”

তিনি আরও বলেন, “তাদের তথ্য-প্রমাণ থাকুক। আমাদেরও তথ্য-প্রমাণ আছে।” সচিব আবারও দাবি করেন যে ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।

Logo-orginal