admin
প্রকাশ: ২০১৯-০২-০৩ ১২:২৩:৪২ || আপডেট: ২০১৯-০২-০৩ ১২:২৩:৪২
চট্টগ্রামঃ রেলের জায়গার দখল নিয়ে বিরোধের পাশাপাশি এক রিক্সাওয়ালার কন্যাকে যৌন হয়রানির বিচারের জের ধরেই খুন হন যুবলীগ কর্মী মাসুদ। স্থানীয় দখলদার হিসেবে চিহ্নিত আবদুল জলিলের দখলদারিত্বে বিরোধীপক্ষের সাথে মিছিলে যোগ দেয়ার পাশাপাশি জনৈক রিক্সাওয়ালার কন্যাকে যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত বেলালের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করতে গিয়েই বিরোধে জড়ান মাসুদ। যার জের ধরে তাকে খুন করা হয়। খবর দৈনিক আজাদীর।
আলোচিত এই হত্যাকান্ডের ব্যাপারে নিহত মাসুদের স্ত্রী নুর নাহার বাদী হয়ে ১৩ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরো দশ বারোজনকে আসামি করে থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলার চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে
আকবর শাহ থানা পুলিশ রেলের জায়গা নিয়ে বিরোধের তথ্যটি নিশ্চিত হয়েছে। অপরদিকে গতকাল দুই দফা নামাজে জানাজা শেষে মাসুদের লাশ মীরসরাইর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নিহত মাসুদের স্ত্রী নুর নাহারের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা এবং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুদের একমাত্র কন্যার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
পুলিশ বলেছে, আকবর শাহ এলাকায় রেলের বিপুল পরিমান জায়গা দখল করে রেখেছে আবদুল জলিল নামের এক দখলদার।
১৩টি বিয়ে করেছে আবদুল জলিল। যার মধ্যে নয়টি বউ বর্তমানে রয়েছে। অসংখ্য সন্তান সন্ততির পিতা আবদুল জলিলের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস করে না। কেউ কিছু বললে তার ছেলে মেয়ে এবং মেয়ে জামাই মিলে বিশাল একটি গ্রুপ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে ফেলে। আবদুল জলিলের ছেলেপুলেদের অনেকেই আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগের রাজনীতির সাথেও জড়িত। পুরো গ্রুপটি এলাকায় নানা অপকর্ম চালাচ্ছে বহুদিন ধরে। আবদুল জলিলের এই দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি গ্রুপ তৎপর। এই গ্রুপের পক্ষ নিয়ে মাসুদ উদ্দীন বিভিন্ন সময় শোডাউনে যোগ দিতেন।
দিন কয়েক আগে এলাকায় জনৈক রিঙাচালকের মেয়েকে যৌন হয়রানি করে বেলাল নামের এক যুবক। বেলালের বিরুদ্ধে এলাকায় বিচার বসে। তাকে জরিমানা করা হয়। এই জরিমানার টাকাও বেলাল পরিশোধ করেনি। এই নিয়েও এলাকায় দুই পক্ষের বিরোধ সৃষ্টি হয়। যার এক গ্রুপের সাথে ছিল মাসুদ উদ্দীন। অপর গ্রুপের নেতৃত্বে ছিল আবদুল জলিলের ছেলে বক্কর, রেজাউল করিম এবং মেয়ে জামাই আবদুল ওহাবসহ অন্যান্যরা। এসব নিয়ে আবদুল জলিলের সাঙ্গপাঙ্গদের সাথে মাসুদের বিরোধ তুঙ্গে উঠে। আর এরই জের ধরে শুক্রবার রাতে আকবর শাহ্ থানাধীন বেলতলী ঘোনায় যুবলীগ কাযালয়ে হামলা চালিয়ে ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে খুন করা হয় যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ মাসুদ উদ্দিনকে।
মাসুদ আকবর শাহ এলাকায় বসবাস করলেও তার গ্রামের বাড়ি মিরসরাই । তিনি কাটাছড়া ইউনিয়নের আবুর হাট এলাকার আবুল বশরের ছেলে।
রেলওয়ের পানির ঠিকাদার মোহাম্মদ মাসুদ পরিবেশ অধিদপ্তরের বিপরীত পাশের জিল্লু কন্ট্রাক্টরের বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করতো। বাবা মা ছাড়াও মাসুদের স্ত্রী ও একটি শিশুকন্যা রয়েছে। গতকাল মাসুদের স্ত্রী নুর নাহার বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এতে আবদুল জলিল, তার ছেলে বক্কর ও রেজাউল করিম এবং মেয়ের জামাই আবদুল ওহাবসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ এবং ১০/১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামী হিসেবে পুলিশ সাদ্দাম হোসেন প্রকাশ জামাই সাদ্দাম, আবদুল ওহাব, রাজু এবং রেজাউল করিমকে গ্রেপ্তার করে। আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিমউদ্দিন গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানান, অন্যান্য আসামীদেরও গ্রেপ্তারের লক্ষে পুলিশের অভিযান চলছে।
এদিকে গতকাল বাদ আসর পাহাড়তলী সৃজনী মাঠে মোহাম্মদ মাসুদের নামাজে জানাজায় এলাকার শত শত মানুষ অংশগ্রহন করেন। এই সময় সন্ত্রাসীদের ফাঁসি দাবি করা হয়। জানাজার নামাজের পূর্বে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ৯নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ জহুরুল আলম জসিম বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন নিহত যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ মাসুদ উদ্দিনের স্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছেন। কাউন্সিলর মোঃ জহুরুল আলম জসিম বলেন, আমি মাসুদ উদ্দীনের একমাত্র কন্যার শিক্ষা জীবনের যাবতীয় খরচের দায়িত্বভার বহন করবো। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানিয়েছেন।