, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

চার হাজার শয্যার সরকারি হাসপাতাল হচ্ছে চট্টগ্রামে

প্রকাশ: ২০১৯-০৩-২১ ১৫:৫০:৩২ || আপডেট: ২০১৯-০৩-২১ ১৫:৫০:৩২

Spread the love

চট্টগ্রামঃ সরকারি পর্যায়ে চট্টগ্রামে চার হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল স্থাপনে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর এই হাসপাতাল স্থাপনে উদ্যোগী হয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রকল্পের প্রজেক্ট-প্রোফাইল প্রস্তুতকরণের জন্য ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী। সংবাদ দৈনিক আজাদীর ।

নির্দেশনা পাওয়ার তথ্য আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) অধ্যক্ষ ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। তথ্যমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে তা চমেক হাসপাতালের পরিচালককে অবহিত করেছেন বলেও জানান চমেক অধ্যক্ষ। বিষয়টি চমেক অধ্যক্ষের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন আহমদ।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়- গত বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে চমেক অধ্যক্ষকে ফোন করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এসময় চার হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল স্থাপনে নিজের উদ্যোগের কথা জানিয়ে একটি প্রজেক্ট প্রোফাইল প্রস্তুতের নির্দেশনা দেন তথ্যমন্ত্রী। জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গতকাল আজাদীকে বলেন, ‘এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমার প্রাথমিক আলাপ হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথেও এ নিয়ে কথা বলেছি। তাঁরা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যেতে বলেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় একটি প্রজেক্ট প্রোফাইল প্রস্তুত করে তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে বলেছি।’

তথ্যমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে এখন গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে হাসপাতাল প্রশাসন প্রজেক্ট প্রোফাইল প্রস্তুতকরণের কাজ করবে বলে জানিয়েছেন চমেক অধ্যক্ষ ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। আর চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন আহমদ বলছেন, চার হাজার শয্যার হাসপাতাল মানে বিশাল ব্যাপার। কোন জায়গাটাতে হাসপাতালটি স্থাপন করা যায়, সেটিও আমাদের দেখতে হবে। রিলেটেড সবকিছু বিবেচনা করে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে প্রজেক্ট প্রোফাইল প্রস্তুতের কাজ হাতে নেয়া হবে বলেও জানান হাসপাতাল পরিচালক।

প্রসঙ্গত, মাত্র ৫০০ শয্যার অবকাঠামোতে নির্মিত বিদ্যমান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বর্তমান শয্যা সংখ্যা ১ হাজার ৩১৩।

প্রশাসনিক আদেশে বেশ কয়েক বছর আগে এই শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হলেও বাড়েনি জনবল। অধিকন্তু ১ হাজার ৩১৩ শয্যার বিপরীতে প্রতিনিয়ত প্রায় ৩ হাজার রোগী ভর্তি থাকছে গরিবের হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত এই হাসপাতালে। তবে এই তিন হাজার রোগীর সেবা চলছে সে-ই ৫০০ শয্যার জনবলেই। তাছাড়া ৪২টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট এই হাসপাতালে স্থান সংকটও চরম পর্যায়ে। শয্যা ছাড়িয়ে মেঝে, বারান্দা, করিডোর এমনকি সিঁড়িতেও রাখতে হচ্ছে রোগীকে। জনবল ও স্থানের এমন চরম সংকট নিয়ে এতদঞ্চলের বিশাল সংখ্যক রোগীর চাপ যেন আর নিতে পারছে না হাসপাতালটি। সব মিলিয়ে গরীবের এ হাসপাতালটি বর্তমানে রোগীর ভারে বিপর্যস্ত।

এই পরিস্থিতি হতে পরিত্রাণ পেতে হলে সরকারি পর্যায়ে চট্টগ্রামে আরো একাধিক হাসপাতাল (চমেক হাসপাতালের ন্যায়) স্থাপন জরুরি বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের। তাছাড়া ঢাকা শহরে সরকারি পর্যায়ে ১৪টি বিশেষায়িত হাসপাতাল থাকলেও এ পর্যন্ত একটি বিশেষায়িত হাসপাতালও পায়নি চট্টগ্রাম শহর। এটিকে বঞ্চনার চোখেই দেখছেন চট্টগ্রামবাসী। আর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে সরকারি পর্যায়ে আরো স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে বারংবার দাবি জানিয়ে আসছেন এ অঞ্চলের মানুষ।

চট্টগ্রাম শহরে বিশেষায়িত আরো তিনটি হাসপাতাল স্থাপনে ২০১৭ সালেও প্রস্তাবনা দেয় চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চমেক হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জালাল উদ্দিনের স্বাক্ষরে ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

সরকারি পর্যায়ে বিশেষায়িত হিসেবে একটি শিশু হাসপাতাল, একটি হৃদরোগ হাসপাতাল এবং অপর একটি ট্রমা (অর্থোঃ সার্জারি) হাসপাতাল স্থাপনের প্রস্তাব দেয়া হয় চিঠিতে। একই সাথে বিদ্যমান হাসপাতালের জন্য ১ হাজার শয্যা ধারণ ক্ষমতার নতুন একটি ভবন নির্মাণেরও প্রস্তাব দেয়া হয়।

মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়- শুধু চট্টগ্রাম মহানগরেই অর্ধকোটিরও বেশি মানুষের বসবাস। এর বাইরে চট্টগ্রামসহ এতদঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবায় চমেক হাসপাতাল একমাত্র ভরসাস্থল। শিল্পায়ন, সড়ক দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন কারণে হাসপাতালে দিন দিন রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে নির্দিষ্ট কিছু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ সহনীয় মাত্রার বাইরে।

এর মধ্যে শিশু স্বাস্থ্য ওয়ার্ডে প্রতিনিয়ত প্রায় ৬ শতাধিক, হৃদরোগ ওয়ার্ডে ৩৫০, অর্থোপেডিক (ট্রমা) ওয়ার্ডে ৩ শতাধিক এবং নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে প্রতিনিয়ত ২ শতাধিক রোগী ভর্তি থাকে। এসব ওয়ার্ডের প্রতিটির রোগীর সংখ্যা একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালের রোগীর সংখ্যারও বেশি। এর প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগরীতে বিশেষায়িত একটি শিশু হাসপাতাল, একটি হৃদরোগ হাসপাতাল এবং অপর একটি ট্রমা (অর্থোঃসার্জারি) হাসপাতাল গড়ে তোলার অপরিহার্যতার বিষয় তুলে ধরা হয় চিঠিতে।

বিশেষায়িত তিনটি হাসপাতালের প্রস্তাব প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জালাল উদ্দিন আজাদীকে বলেছিলেন, জনবল ও স্থান সংকটের কারণে হাসপাতালে বিপুল সংখ্যক রোগীর কাঙ্ক্ষিত সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া নির্দিষ্ট কয়েকটি ওয়ার্ডে রোগীর চাপ এত বেশি যে, তা ওয়ার্ডের সহনীয় মাত্রার বাইরে। এর মধ্যে শিশু ওয়ার্ড, হৃদরোগ ওয়ার্ড, অর্থোপেডিক ও নিউরোসার্জারি ওয়ার্ড উল্লেখযোগ্য।

এসব ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ একটি করে বিশেষায়িত হাসপাতাল অতি জরুরি। অভিমত প্রকাশ করে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, সেটি হলে এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবা আরো উন্নত হবে। রোগীরাও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবে। পাশাপাশি চমেক হাসপাতালের উপর চাপ কিছুটা হলেও কমবে।

এসব বিবেচনায় নিয়ে পৃথক তিনটি বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয়কে লিখিত প্রস্তাব দেয়া হয় বলে জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জালাল উদ্দিন। তবে এ প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এখনো পর্যন্ত কোন জবাবের তথ্য পাওয়া যায়নি। এরই মাঝে চার হাজার শয্যার নতুন হাসপাতাল স্থাপনে উদ্যোগী হয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

Logo-orginal