, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

জনপ্রিয় ছাত্রনেতা ভিপি নুরের গল্প

প্রকাশ: ২০১৯-০৩-১২ ১৩:৩২:৩৭ || আপডেট: ২০১৯-০৩-১২ ১৩:৩২:৩৭

Spread the love

ঢাকাঃ সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে তার সামনে আসা। সর্বশেষ গতকালের নির্বাচনে দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হওয়া। গল্পটা খুব বড় না হলেও আমরা একটু দেখে নেয়ার চেষ্টা করব সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের এ সৈনিকের জীবনচিত্র।

নুরুল হক নূর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এ শিক্ষার্থী ডাকসু নির্বাচনের ঘোষণার পর থেকেই আলোচনায় ছিলেন। গতকাল দিনভর নানা অনিয়মের মাধ্যমে শেষ হয় ডাকসু নির্বাচন। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ ছাড়া সব প্রার্থীই বয়কট করে এ নির্বাচন। কিন্তু রাত তিনটার দিকে সবাইকে চমকে দিয়ে ভিপি হিসেবে নূরকে জয়ী ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মো: আখতারুজ্জামান।

সোমবার গভীর রাতে নির্বাচন কমিশন যখন ভোটের ফল ঘোষণা করে, তখন হাসপাতালের বেডে শয্যাশায়ী শিক্ষার্থীদের জনপ্রিয় এ মুখ। দিনে ছাত্রলীগের আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন তিনি।

২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে অন্য সব পদে ছাত্রলীগের প্যানেল নিরঙ্কুশ জয় পেলেও সর্বোচ্চ পদে চমক দেখিয়েছেন নুরুল হক নুর। এ নেতা জয়ী হয়েছেন বিপুল ভোটে।

ডাকসু নির্বাচনে নুরের প্রাপ্ত ভোট ছিল ১১ হাজার ৬২টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হেভিওয়েট প্রার্থী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন পেয়েছেন ৯ হাজার ১২৯ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে ১৯৩৩ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হন নুর। শিক্ষার্থীরা বলছেন ভিপি পদে নীরব ভোট বিপ্লব হয়েছে।

ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত নুরুল হক নূর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক। তার বাড়ি পটুয়াখালীতে। এর আগে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে হামলা, মামলা ও কারাবরণের মুখোমুখি হন।

সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছেন নুরুল হক নুর। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা শুরু করেন আর দশজন ছেলের মতো। ক্যাম্পাস জীবনের শুরুতে তার তেমন কোনো পরিচিতিই ছিল না। কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর তিনি তাকে জড়ান। শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করেন। হাসান আল মামুন, রাশেদসহ অন্য সহপাঠীদের নিয়ে গড়ে তোলেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এই পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক হন রাশেদ।

এই পরিষদে অন্তর্ভুক্তিই তার ব্যাপক পরিচিতি এনে দিয়েছে। এই পরিষদের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা হলেও মূল কার্যক্রম নূরকে ঘিরেই পরিচালিত হয়েছে।

তুমুল কোটা আন্দোলন চলাকালে প্রশাসন ও ছাত্রলীগের অব্যাহত হামলার মুখে দমে যাননি নূর। কর্মসূচি দিয়েছেন, মাঠে থেকেছেন এবং একাধিকবার মারও খেয়েছেন। তবু কোটা আন্দোলন থেকে পিছু হটেননি।

নূর কোটা সংস্কার আন্দোলন করতে গিয়ে হামলা, মামলা ও কারাবরণের মুখোমুখি হন। শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি কোটাব্যবস্থা সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। জয় হয় নূরসহ কোটা আন্দোলনকারী নেতাদের।

শুধু কোটা সংস্কার আন্দোলন নয়, পরবর্তী সময়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনেও সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেন নূর। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে তুলে ধরেন দেশবাসীর কাছে। কোটা আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে যুক্ত করেন।

এই দুটি আন্দোলন নূরকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা যেখানে নিজ দলের লেজুড়বৃত্তি করে, সেখানে নূর শিক্ষার্থীদের প্রকৃত দাবিগুলো নিয়ে আন্দোলন করেন। এটিই অন্যদের চেয়ে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ।

সবশেষ সোমবার ডাকসু নির্বাচন চলাকালে নির্বাচনে রোকেয়া হলকেন্দ্রে ভোটের অনিয়মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হয়ে সংজ্ঞা হারান নূর। তার পরও তাকে দমিয়ে রাখা যায়নি। শেষ পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়ে তাকেই নেতা নির্বাচিত করেছেন।

হাসপাতালের বেডে শুয়েই ভিপি পদে জয়ের খবর পান নূর। ‘প্রহসনের ভোটে’ প্যানেলের সব প্রার্থীর পরাজয়ের মাঝে ভিপি পদে এ জয় যে তাকে খুব একটা খুশি করতে পারেনি, সেটি বোঝা গেল তার কথায়।

সোমবার রাত ৩টার পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় নূর বলেন, এ রকম নির্বাচন আমাদের কারোরই প্রত্যাশা ছিল না। প্রায় তিন যুগ পর এই নির্বাচন হলো। সারা দেশের মানুষ তাকিয়ে ছিল এই ভোটে। কিন্তু প্রত্যাশিত ভোট হয়নি। ডাকসু নির্বাচন কলঙ্কের ইতিহাস সৃষ্টি করল।

‘জাতীয় নির্বাচনের পর নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর মানুষের যে অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছিল— আমরা ভেবেছিলাম সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সেখানে আশার আলোর সঞ্চার করা হবে’-যোগ করেন নুর।

কারচুরি অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, প্রশাসনের সহায়তায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ যে কারচুপি করেছে তা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, পুরো দেশকে হতাশ করেছে। আমরা মনে করি, ১১ মার্চের নির্বাচন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়।

ডাকসু নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি, জালভোট, ব্যালটবাক্স ছিনতাই ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোটের দিন দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে বর্জনের ঘোষণা দেয় নুরুল হক নূরের নেতৃত্বাধীন প্যানেল। বর্জন করা ভোটেই জয় পান নূর।

শপথ নেবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হক নূর বলেন, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বাদে বাকি সব সংগঠন এই নির্বাচন বর্জন করেছে। তাই তাদের সাথে কথা বলেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এদিকে, রাতে ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। তারা ভিপি পদের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে এ পদে পুনরায় নির্বাচন দাবি করে। এমনকি একটি ‘প্রতিক্রিয়াশীল সংগঠনের’ সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে নূরের বহিষ্কারও দাবি করেন তারা।

আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে ছাত্রলীগ। টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করেছে সংগঠনটি। উৎসঃ নয়া দিগন্ত।

Logo-orginal