, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

Avatar rtm

কাল রামু জোয়ারিয়ানালা হাই স্কুল মাঠে ‘বৈশাখী ওয়াজ মাহফিল’

প্রকাশ: ২০১৯-০৪-১৩ ১৯:৪৭:১৩ || আপডেট: ২০১৯-০৪-১৩ ১৯:৫০:৪৫

Spread the love

সুস্থ ধারা ও ইসলামিক মূল্যবোধকে সমন্নিত করতে প্রতিবছরের মত আগামীকাল পহেলা বৈশাখে অনুষ্ঠিত হবে বৈশাখী ওয়াজ মাহফিল।

বিগত অর্ধ শতাব্দির ও বেশি সময় ধরে বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে ঐতিহ্যবাহী এই ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ দিন সূর্যোদয়ের পর এশরাকের নামাজ পড়ার পর সারা বছরের ভাল কামনা করে নতুন বছরের সূচনা করার মাধ্যমে ইসলামি মৌলিক সংস্কৃতিকে মুসলমানদের মধ্যে গেঁথে নেওয়ার আহবান জানানো হয়েছে এ মাহফিলের আমন্ত্রণ পত্রে।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেছে, বৃটিশ বিরোধী আজাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ “খাদেমুল ইসলাম” উপাধিপ্রাপ্ত জোয়ারিয়ানালার মরহুম এরশাদ আলী চৌধুরী কতৃক বাংলা নববর্ষের দিন এই ওয়াজ মাহফিল সূচনা করা হয়। প্রতিবারের ধারবাহিকতায় মরহুম গোলাম কাদের চৌধুরী ও মরহুম মাহাবুবর রহমান চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের আয়োজনে এবারের মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য, মরহুম গোলাম কাদের চৌধুরী ও মরহুম মাহাবুবর রহমান চৌধুরী উনার পুত্র ও পৌত্র হন। আগামি রবিবার বাদ জোহর থেকে এশার নামাজ পর্যন্ত এ মাহফিল জোয়ারিয়ানালা হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। এতে দেশের ইসলামি স্কলারগণ ও গণ্যমান্য আলেমগণ বক্তব্য রাখবেন। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করবেন ওআইসি বাংলাদেশের প্রতিনিধি বিশিষ্ট ইসলামি স্কলাম মুখলেসুর রহমান চৌধুরী।

আয়োজক কমিটির পক্ষ হতে মুজিবুর রহমান চৌধুরী জানান, ষষ্টদশ শতাব্দির মাঝামাঝি সময়ে বাশখালি থানার পাইরাং নামক গ্রাম থেকে মোমেন খন্দকার জোয়ারিয়ানালায় বসবাস শুরু করেন। তাঁর তৃতীয় বংশধর মরহুম হাজী এরশাদ আলি মুসলমানদের আত্নমর্যাদা ও নিজস্ব চালচলনকে ইসলামি চিন্তাধারায় সমন্বিত করতে এ ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

এতদাঞ্চলের প্রবাদ পুরুষ মরহুম এরশাদ আলির জীবন কাহিনীর বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি জোয়ারিয়ানালার প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক আব্দুল হাকিম পন্ডিত কতৃক রচিত ১৯৪৬ সালে জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের তদানীন্তন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব মৌলভী আমিনুল্লাহ সিকদার (জোয়ারিয়ানালার সাবেক চেয়ারম্যান, মোতাহারুল হক সিকদারের পিতা, সে সময় চেয়ারম্যানকে প্রেসিডেন্ট বলা হত) কতৃক প্রকাশিত একটি পুস্তিকার রেফারেন্স দেন।

এই পুস্তিকাতে লিখা আছে, ব্রিটিশ বিরোধী আজাদী আন্দোলনে এ অঞ্চলের যে কয়েকজন সাহসী ব্যক্তিত্ব ভূমিকা রেখেছিলেন মরহুম হাজী এরশাদ আলী তাঁর মধ্যে অন্যতম। ১৮ নং পৃষ্ঠায় দেখা যায় তিনি খেলাফত আন্দোলনের সাংগঠনিক কাজ চালাতে গিয়ে কারাবন্দি হয়েছিলেন। তৎকালীন খেলাফত আন্দোলনের কলকাতাস্থ কার্যালয় হইতে মরহুম এরশাদ আলী চৌধুরীকে ‘‘খাদেমুল ইসলাম’’ উপাধিতে সম্মানিত করেন।

পন্ডিত আব্দুল হাকিম কাব্যিক ছন্দে লিখেন-
“ধার্ম্মিক নন্দন তিনি ধর্র্ম্ম দৃষ্টে মন।
নিজ গুনে যোগদিলেন খেলাফত আন্দোলন।
“কেপ্টেইন” হইয়া দেশে দেশে বক্তৃতা করিতেন।
“স্বরাজ” জিনিষটা কি বুঝাইয়া দিতেন”।
—-
“খেলাফতের কেন্দ্র অফিস ছিল কলিকতা।
কমিটির নামে পাঠাইত চাঁদা সব তথা।
খেলাফত কমিটি এবে কর্ম্মিকে চিনিল।
“খাদেমুল ইসলাম” নাম তাঁহাকে বকশিল।
খেলাফত লাগিয়া তিনি জেলে গিয়েছেন।
এই ছবরে খোদা তাঁকে মেহের করেছেন।”

মরহুম হাজী এরশাদ আলী চৌধুরীর হাত দিয়ে শুরু হওয়া স্বকীয় মহিমা ও স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট বজায় রেখে বাংলা বর্ষ বরণ উদযাপন করে আসছে প্রায় শতাব্দী কাল ধরে। তিনি ১৯৫২ সালে হজ্বে গেলে সেখানেই ইন্তেকাল করেন। তার অবর্তমানে এই মাহফিল যাতে অব্যাহত থাকে তার জন্য তিনি জমিও ওয়াক্ফ করে যান।

ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে তার বড় পুত্র জোয়ারিয়ানালা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী মরহুম আলহাজ্ব গোলাম কাদের চৌধুরী। তিনি সরকারী দায়িত্বে থাকার কারণে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত এ মাহফিলে সার্বক্ষনিক সহযোগিতা করতেন জোয়ারিয়ানালা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক মরহুম মাওলানা ক্বারী মোঃ ফেরদাউস (রহঃ)। প্রচলিত প্রচার মাধ্যম এ ধরনের ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠানের প্রতি গুরুত্ব না থাকলেও বরাবরের মত এবারো এ মাহফিলের মাধ্যমে সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চা অক্ষুণ্ণ রাখার আহবান জানানো হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, জোয়ারিয়ানালায় এশরাকের নামাজ পড়ার মধ্যদিয়ে বাংলা নব বর্ষকে বরণ করার এই উদ্যোগ সুস্থধারার সংস্কৃতি চর্চায় যথার্থ সংযোজন।

জোয়ারিয়ানালার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এ আয়োজনে উপস্থিত থাকার জন্য আহবান জানানো হয়েছে।

Logo-orginal