rtm
প্রকাশ: ২০১৯-০৭-১৩ ০৯:২৩:১৪ || আপডেট: ২০১৯-০৭-১৩ ০৯:২৩:১৪
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। পুরো সাতকানিয়া এখন বন্যার পানিতে ভাসছে।
সাতকানিয়া পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
এদিকে, কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের সাতকানিয়ার বাজালিয়া বড়দুয়ারা এলাকায় সড়কের উপর দিয়ে এখনো ৩-৪ ফুট উঁচু উচ্চতায় বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সাথে টানা পাঁচদিন ধরে চট্টগ্রামের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া কেরানীহাট-বাঁশখালী সড়কের আনুফকিরের দোকান থেকে চর পাড়া পর্যন্ত এলাকায় সড়কের উপর দিয়ে কয়েক ফুট উঁচুতে প্রবাহিত হচ্ছে বন্যার পানি। ফলে কেরানীহাট-বান্দরবান সড়ক ও কেরানীহাট-বাঁশখালী সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া পুরো সাতকানিয়ার অধিকাংশ এলাকার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। শঙ্খ ও ডলুনদীর পানি বেশির ভাগ এলাকায় তীর উপচে প্রবাহিত হচ্ছে।
শঙ্খনদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে গত ৪ দিনে ৩০টির বেশি বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
গতকাল শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকালে চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী উত্তর সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া, কালিয়াইশ, বাজালিয়া ও ধর্মপুর এলাকায় বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন ও বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।
সরেজমিন পরিদর্শন ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পুরো সাতকানিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। বন্যাকবলিত সব এলাকায় গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পানির উচ্চতা কয়েক ফুট বেড়েছে। নতুনভাবে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে অনেক এলাকা।
কেঁওচিয়া, বাজালিয়া, ছদাহা, পুরানগড়, ধর্মপুর, কালিয়াইশ, খাগরিয়া, নলুয়া, ঢেমশা, আমিলাইষ, চরতি, পশ্চিম ঢেমশা, এওচিয়া ও সাতকানিয়া পৌর এলাকাসহ প্রায় পুরো সাতকানিয়া বন্যার পানিতে ভাসছে। এসব এলাকার অন্তত তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
বন্যাকবলিত এলাকার শত শত বসতঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ফলে তারা ঘরে খাবার রান্না করতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এসব এলাকার অভ্যন্তরীন সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বেশির ভাগ সড়কের উপর দিয়ে কোমর সমান উঁচু বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে, পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে শঙ্খনদীর ভাঙ্গন। গত চারদিনের ব্যবধানে শঙ্খনদীর ভাঙ্গনে উপজেলার আমিলাইষ, দ্বীপ চরতি, দক্ষিণ চরতি ও তুলাতলি এলাকার ৩০টির অধিক বসত ঘর নদীতে হারিয়ে গেছে।
চরতি ইউপি চেয়ারম্যান মুহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। এলাকার অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গ্রামীন সব রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অনেক বসতঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় পরিবারের সদস্যরা খাবার নিয়ে খুবই সংকটের মধ্যে রয়েছে। কোনো কোনো ঘরে কেউ ত্রাণসামগ্রী দিলে তা রাখার মতো পরিস্থিতিও নাই।
তিনি আরো জানান, গত চারদিনের ব্যবধানে দ্বীপ চরতি, দক্ষিণ চরতি ও তুলাতলি এলাকায় শঙ্খের ভাঙ্গনে বেশ কিছু বসতঘর নদীতে হারিয়ে গেছে। বসতঘর হারানো এসব মানুষ অত্যন্ত মানবেতর কালযাপন করছে।
বাজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্ত জানান, পুরো বাজালিয়া এখন পানির নিচে। কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের বাজালিয়া বড়দুয়ারা এলাকায় এখনো সড়কের উপর দিয়ে ৩-৪ ফুট উঁচু হয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সড়কের বুড়ির দোকানের পশ্চিম পার্শ্বও বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কে যান চলাচল বন্ধ। এতে করে টানা চার দিন ধরে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
তিনি আরো জানান, বাজালিয়ার ৮৫ ভাগ মানুষ এখন পানিবন্দী। এসব এলাকার সব রাস্তা-ঘাট পানির নিচে। ফলে নৌকাই এখন তাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। বন্যাকবলিত এলাকার অনেক বসতঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এসব পরিবার খাবার নিয়ে খুব কষ্টের মধ্যে রয়েছে।
কেঁওচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মনির আহমদ জানান, কেঁওচিয়ার অধিকাংশ এলাকা এখন পানির নিচে। বিশেষ করে তেমুহনি, কেঁওচিয়া, জনার কেঁওচিয়া এলাকার সব মানুষ পানিবন্দি। এখানে অনেক বসতঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে তারা।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন জানান, সাতকানিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে বন্যাকবলিত সব এলাকায় পানির উচ্চতা কয়েক ফুট বেড়েছে। শঙ্খের ভাঙ্গনে আমিলাইষ ও চরতি এলাকায় বেশ কয়েকটি বসতঘর নদীতে হারিয়ে গেছে। বন্যাকবলিত এলাকার জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বরাদ্দকৃত ২৫ মেট্রিক টন চাউল ও শুকনো খাবার ইতিমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমি বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। পানিবন্দী মানুষগুলো অনেক কষ্টের মধ্যে রয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে আমি আজ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছি। বন্যার্তদের জন্য ইতিমধ্যে সরকারিভাবে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। আরো অধিক ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসককে বলা হয়েছে।’
সূত্র: প্রবাসীর দিগন্ত