, শনিবার, ৪ মে ২০২৪

jamil Ahamed jamil Ahamed

সৌদিতে গাড়িচাপায় নিহত সুমনের বাড়িতে শোকের মাতম

প্রকাশ: ২০১৯-০৭-৩০ ১৯:০৭:৩২ || আপডেট: ২০১৯-০৭-৩০ ১৯:০৭:৩২

Spread the love

অজপাড়া গায়ের কৃষক পরিবারের সন্তান সুমন। কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। স্ত্রী, তিন কন্যা সন্তানসহ মা-বাবার ভরন-পোষণের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন তিনি। দিনদিন কঠিন হয়ে পড়ছিল সংসার জীবন। তাই তো ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে সিদ্ধান্ত নেন বিদেশ যাওয়ার। সাড়ে চার লাখ টাকায় জমি বিক্রি করে আট মাস আগে পাড়ি জমান স্বপ্নের সৌদি আরব।

কিন্তু বিধিবাম। সৌদি যাওয়ার আট মাসের মাথায় গত সোমবার বিকেলে গাড়িচাপায় নিহত হন সুমন।
সুমনের মৃত্যুর সঙ্গে পরিবারে নেমে আসে অনিশ্চয়তা। সুমন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চ-িপাশা ইউনিয়নের ঘাগড়া নদীপাড় গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত আট মাস আগে সুমন মেসার্স খান ওভারসীজ (আর এল-৯১৫) এজেন্সির মাধমে মেসার্স আসনাদ আল ওয়াহা কনট্রাকটিং কোম্পানীর অধীনে সৌদি আরবে যান। তার পাসপোর্ট নম্বর-বিডব্লিউ-০০৩৪৪০১। ভিসা নম্বর-৬০৫৩৩৭৫৬৯৮। সৌদি আরব যাওয়ার পর আট মাস পার হয়ে গেলেও কোম্পানী সুমনকে কোন কাজ দেয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি গত শনিবার সিজার সার্ভিস নামের একটি কোম্পানীতে বলদিয়ার (পরিচ্ছন্নকর্মী) কাজে যোগ দেন।

গত সোমবার বিকেলে কোম্পানীর একটি গাড়িতে করে ময়লা নিয়ে জেদ্দার একটি মরুভূমিতে ফেলতে যান তিনি। সেখানে ময়লা ফেলার সময় অসাবধানতাবশত: গাড়ির ঢাকনার নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

সোমবার রাতে সৌদি প্রবাসী একই এলাকার হিমেল নামের একজন মুঠোফোনে সুমনের পরিবারকে তার মারা যাওয়ার খবরটি জানান। সুমনের মারা যাওয়ার এ খবরে শোকের ছায়া নেমে আসে তার পরিবারে।

সরজমিনে আজ মঙ্গলবার সকালে সুমনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল পুরো পরিবার। বাকরুদ্ধ হয়ে বাড়ির আঙিনায় বসে রয়েছেন সুমনের বৃদ্ধ পিতা গিয়াস উদ্দিন। তাকে সান্তনা দিচ্ছেন পাড়া-প্রতিবেশী। বাড়ির ভেতরে নারীদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠছে চারপাশ। একমাত্র ভাইকে হারিয়ে বিলাপ করে কাঁদছেন সুমনের বোনেরা। স্বামীকে হারিয়ে চিৎকার করে কাঁদছেন স্ত্রী শান্তা। প্রিয়া(৮), তমা (৪) ও নাজিফা (১.৫) নামে সুমনের তিন অবুঝ কন্যা বাড়িতে আসা লোকজনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।

সুমনের স্ত্রী শান্তা বিলাপ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, গত রোববার বিকালে মুঠোফোনে তার সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। সোমবার রাতে শুনি উনি মারা গেছেন। উনার মৃত্যুতে আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেল। অবুঝ তিন মেয়েকে নিয়ে আমি এখন কিভাবে বাঁচবো।

সুমনের বোন মাজেদা আক্তার জানান, তারা তিন বোন। একমাত্র ভাই সুমন, সবার ছোট। জমি বিক্রি করে ভাইকে বিদেশ পাঠিয়েছিলেন। একমাত্র ভাইয়ের এভাবে চলে যাওয়া কোনভাবে মানতে পারছেন না।

সুমনের বৃদ্ধ পিতা গিয়াস উদ্দিন একমাত্র ছেলের লাশটি যাতে দ্রুত দেশে আনার ব্যবস্থা করা হয় সেজন্য সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন। উৎসঃ মানবজমিন ।

Logo-orginal