, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

jamil Ahamed jamil Ahamed

ঢাকার পর বান্দরবানের প্রতিও নজর পড়েছে সেই ডন জি কে শামীমের

প্রকাশ: ২০১৯-০৯-২৫ ১০:৩৫:৩৬ || আপডেট: ২০১৯-০৯-২৫ ১০:৩৫:৩৬

Spread the love

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, বান্দরবানঃ অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত পার্বত্য জেলে বান্দরবানের প্রতিও নজর পড়েছে আলোচিত ডন জি কে শামীমের । বিনোদনের নামে শতাধিক একর দখলের অভিযোগ এই ডনের বিরুদ্ধে ।

জেলা সদর থেকে গাড়ি নিয়ে রুমা-থানচি সড়ক ধরে পাঁচ কিলোমিটার এগোলেই পাহাড়চূড়ায় নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র। তা পেরিয়ে আরেকটু সামনে গেলেই চোখে পড়ে একটি সাইনবোর্ড। এতে লেখা ‘ক্রয় সূত্রে এই জায়গার মালিক সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা সেন্টার’।

সাইনবোর্ডের আওতাধীন এই অংশের দেড় শ গজের মধ্যেই রয়েছে একটি পুলিশ ফাঁড়ি। তবে সেই দূরত্বও আরেকটু কমেছে। কারণ সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা বান্দরবান জেলা পুলিশকে এই ফাঁড়ির জন্য প্রায় সাড়ে ১৮ শতক জমি দান করেছে। ফাঁড়ির জন্য সেখানে একটি দ্বিতল ভবনও করে দেওয়া হচ্ছে।

এই সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার পরিচালকদের একজন ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়া টেন্ডার মাফিয়া যুবলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম)। অগাধ বিত্ত-বৈভব আর প্রভাবশালী এই যুবলীগ নেতার আয়ের টাকা বিনিয়োগ হয়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানেও। কম্পানি গঠন করার মধ্য দিয়ে বান্দরবান সদরের মৌজায় প্রায় ৬০ একর জমি কেনা হয়েছে সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেডের নামে।

জি কে শামীম এখানেও কায়েম করেছেন তাঁর দখলদারি। সাইঙ্গ্যা মারমা পাড়া, হাতিভাঙা ত্রিপুরা পাড়া ও লাইমী (বম) পাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড এখানে কমপক্ষে ১০০ একর জমি জবরদখল করেছে। নানাভাবে নাজেহাল করা হচ্ছে স্থানীয় লোকজনকে। পাশাপাশি প্রশাসনকে নিজের স্বার্থসিদ্ধির কাজে লাগাতে পুলিশ ফাঁড়ির জন্য জমি দান করে সেখানে পাকা ভবনও করে দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতল ভবনটি নির্মাণের কাজ এখন অনেকটাই এগিয়ে গেছে। শিগগিরই এই ভবনে পুলিশ ফাঁড়ি স্থানান্তরিত হওয়ার কথা রয়েছে বলে জেনেছে স্থানীয় লোকজন।

সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার পরিচালকদের সভার একটি রেজল্যুশন কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। কম্পানির রেজল্যুশন কপির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেডের একটি বোর্ড মিটিং বান্দরবান সদরের ৩১৩ নম্বর রেজি. অফিসে অনুষ্ঠিত হয়। তবে কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই কম্পানির কোনো অফিস বান্দরবান সদরে নেই। এ কারণেই মূলত বান্দরবান সদরের ৩১৩ নম্বর মৌজা এলাকায় রেজি. অফিস ঠিকানা দেওয়া হয়েছে।

রেজল্যুশনের তথ্য অনুযায়ী, ওই দিন কম্পানির চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন মন্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল করিম চৌধুরী স্বপন, পরিচালক গোলাম কিবরিয়া (জি কে) শামীম, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক জামিল উদ্দিন শুভ, অপর চার পরিচালক যথাক্রমে এস এইচ এম মহসিন, উম্মে হাবিবা নাসিমা আক্তার, জিয়া উদ্দিন আবির ও জাওয়াদ উদ্দিন আবরার উপস্থিত ছিলেন।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেডের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন মন্টুকে বান্দরবান সদরের ৩১৩ মৌজার ৮০৭ নম্বর হোল্ডিংয়ের ০.১৮৩৭ একর (প্রায় সাড়ে ১৮ শতক) তৃতীয় শ্রেণির জমি বিক্রি সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদনে ক্ষমতা প্রদান করা হয়।

পরে এই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে ওই জমি দান করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আবার বোর্ডসভায় ‘পুলিশ সুপার, বান্দরবান পার্বত্য জেলা’কে জমি হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হলেও বাস্তবে রেজিস্ট্রিকৃত দলিলে ‘মোহাম্মদ জাকির হোসেন মজুমদার, পুলিশ সুপার, বান্দরবান পার্বত্য জেলা’ বরাবরে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে ‘পুলিশ সুপার’ পদের বিপরীতে রেজিস্ট্রেশন না করে ব্যক্তি ‘মোহাম্মদ জাকির হোসেন মজুমদার’ লেখা হয়েছে।

আবার এই কম্পানির বোর্ডসভায় জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত হলেও ‘দান’ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি এবং সেই জমিতে পুলিশ ফাঁড়ির জন্য ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে জমি দানের পর কম্পানির টাকায় ভবন নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে বলে বান্দরবান জেলা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

এই রিসোর্টের পাশে থাকা তিন পাড়ার লোকজন জানায়, এই রিসোর্টের কারণে তিনটি পাড়ার বাসিন্দারা উচ্ছেদ হওয়ার আতঙ্কে আছে। এ নিয়ে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের মামলা-মোকদ্দমা চলছে। কিন্তু রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় লোকজন তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। অধিকন্তু কম্পানির কাছ থেকে জমি ও ভবন গ্রহণ করায় ওই তিন পাড়ার মানুষ মনে করছে, জেলা পুলিশ মূলত এই কম্পানির আশ্রয়দাতা হিসেবে কাজ করছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, জি কে শামীম সিন্ডিকেটের প্রতিষ্ঠানটি শুরুতে ৬০ একর জমি কেনার কথা প্রচার করে। কিন্তু এখন কম্পানির দখলে আছে প্রায় ১০০ একর জমি। বর্তমানে সেখানে প্রতি একর জমির গড় মূল্য প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। সেই হিসাবে বাড়তি ৪০ একর জমি দখল করে প্রায় দুই কোটি টাকার জমির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে কম্পানি। তারা আরো দখলপ্রক্রিয়া চালাচ্ছে।

সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা কম্পানির জমি ও ভবন গ্রহণ বিষয়ে জানতে ফোন করা হয় বান্দরবানের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকির হোসেন মজুমদারকে। অপর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি নিজে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘স্যার খুব ব্যস্ত। রাতের আগে ফ্রি হবেন না।’ এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এসপি বান্দরবান’ ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ইনবক্সে বার্তা পাঠানো হলেও অপর প্রান্ত থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। এ কারণে জি কে শামীম সিন্ডিকেটের কাছ থেকে জমি ও ভবন গ্রহণ এবং জমি রেজিস্ট্রেশনে নিজের নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে পুলিশ সুপারের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Logo-orginal