, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে ওড়না-টুপি নিষিদ্ধের প্রতিবাদে রাস্তায় অবিভাবকরা

প্রকাশ: ২০২০-০১-১৬ ১৪:১৮:২৮ || আপডেট: ২০২০-০১-১৬ ১৪:১৮:২৮

Spread the love

রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে স্কুল ড্রেস কোড থেকে মেয়েদের ওড়না, স্কার্ফ ও ছেলেদের টুপি ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় বিক্ষোভ করেছে অভিভাবক ফোরাম। 

বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির বনশ্রী ক্যাম্পাসের সামনে অভিভাবকরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রকাশ করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির মতিঝিল ক্যাম্পাসেও বিক্ষোভ হয়েছে বলে জানা গেছে।

ড. তোফাজ্জল হোসেন নামের এক অভিভাবক একুশ টিভিকে জানান, ওড়না, স্কার্ফ ও ছেলেদের টুপি নিয়ে যেহেতু অভিভাবকদের কোনো অভিযোগ নেই, সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কেন এমন হটকারী সিদ্ধান্ত নিল। এটা যদি করতেই হতো তাহলে অভিভাবকদের সঙ্গে বসতে পারত। পরামর্শ নিতে পারত, কিন্তু কোনো কিছুকে তোয়াক্কা না করে প্রতিষ্ঠান এমন হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

তিনি বলেন, শুধু তাই নয় বিভিন্ন ধরনের ফি নির্ধারণ ও বাড়ানোর ক্ষেত্রে নিজেরা যা মনে করে তাই করে। ইচ্ছা মতো ফি বাড়িয়ে দেয়। প্রতিষ্ঠানের এমন বাড়াবাড়ি শুধু এই ইস্যুতেই নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ রকম আচরণ করে প্রতিষ্ঠান। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অবিলম্বে ওড়না, স্কার্ফ ও ছেলেদের টুপি ব্যবহারের যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তা তুলে নেয়া হোক। 

এছাড়াও অন্য অভিভাবকরা বলেন, আগে মেয়েদের ড্রেসকোডে মাথায় স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও নতুন প্রণীত ড্রেসকোডে সেখানে স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর ছেলেদের মাথায় টুপি ব্যবহারকেও অঘোষিতভাবে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। শুধু শিক্ষার্থীই নয়, শিক্ষকদের মধ্যেও আগে যারা পাঞ্জাবি পড়ে স্কুলে আসতেন তাদেরকে এখন পাঞ্জাবি পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। তবে কেউ পাঞ্জাবি পড়লেও পাঞ্জাবির উপরে আলাদাভাবে কটি পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বলেন, ছাত্রীদের ড্রেসের মধ্যে সৌন্দর্য বাড়াতে বাড়তি ওড়না নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গভর্নিং বডি। প্রতিষ্ঠানে মুসলিম ছাত্রীসহ হিন্দু-বৌদ্ধ ধর্মের ছাত্রীরা পড়ে। তাছাড়া সবাই ওড়না পরে না। তাই ওড়নার পরিবর্তে হিজাব রাখা হয়েছে। কেউ চাইলে তা পরবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হিজাবেও শরীর ঢাকা যায়, এ জন্য ওড়না জরুরি না। তারপরও কেউ চাইলে পরবে।

অধ্যক্ষের কথার সঙ্গে বাস্তবের প্রতিফলন নেই উল্লেখ করে অভিভাবকরা বলেন, নিরাপত্তাকর্মীরা ছাত্রীদের ওড়না পরে স্কুলে ঢুকতে দিচ্ছে না। অনেকে গেট থেকে ব্যাগে করে ওড়না নিয়ে স্কুলে ঢোকার পর ক্লাসে গিয়ে তা পরলেও শারীরিক শিক্ষাবিষয়ক শিক্ষকরা ক্লাসে গিয়ে এ ‘অপরাধের’ জন্য মেয়েদের বকাঝকা করছেন।

অভিভাবকরা দাবি করে বলেন, বিতর্কিত সিদ্ধান্ত সরকারকে বিব্রত করার হীন প্রয়াসের অংশ। এর পেছনে হাজার হাজার অভিভাবককে খ্যাপিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার হীন প্রয়াস কাজ করছে। স্কুলের চলমান দুর্নীতিগ্রস্ত সিন্ডিকেটকে ব্যবসায়িক ফায়দা দেয়ার হীন উদ্দেশ্য আছে। কেননা, ছাত্রছাত্রীদের নির্দিষ্ট দোকান থেকে নতুন ড্রেস কিনতে হবে। এতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।

গত কয়েকদিন ধরে চলা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবকদের সংগঠন আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অভিভাবক ফোরাম। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আগামী ১৭ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে তারা। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১ জানুয়ারি এই ড্রেস কোড প্রবর্তন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির মূল ক্যাম্পাস ও তিনটি শাখায় প্রায় ২২ হাজার ছাত্রছাত্রী আছে।  এরআগে গত ৩ আগস্ট গভর্নিং বডির বৈঠকে ছাত্রীদের ড্রেস কোড পরিবর্তন করা হয়। এতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীদের জন্য রাখা হয়েছে নেভি ব্লু ফ্রক ও সাদা সালোয়ার। এর সঙ্গে সাদা জুতা ও মোজা বাধ্যতামূলক করে স্কার্ফ ঐচ্ছিক করা হয়েছে।

আগে স্কার্ফের পরিবর্তে ওড়না ছিল। আর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীদের জন্য রাখা হয়েছে নেভি ব্লু কামিজ ও সাদা সালোয়ার। সঙ্গে থাকবে চওড়া ক্রস বেল্ট ওড়না, সাদা জুতা ও মোজা। আগে ক্রস ওড়না বাধ্যতামূলক ছিল। এখন বলা হয়েছে- মাথায় হিজাব ঐচ্ছিক থাকবে। অপরদিকে ছাত্রদের জন্য টুপিকে ঐচ্ছিক করে সাদা শার্ট ও নেভি ব্লু প্যান্ট এবং সাদা জুতা ও মোজা পরতে হবে। সুত্রঃ একুশে টিভি।

Logo-orginal