, রোববার, ৫ মে ২০২৪

admin admin

প্রবাসে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের করুন অবস্থা” দেশের অর্থনীতিতে অশনিসংকেত

প্রকাশ: ২০২০-০৩-৩১ ০৯:৪৮:৪৪ || আপডেট: ২০২০-০৩-৩১ ০৯:৪৮:৪৪

Spread the love

করোনার প্রভাবে রফতানি আয়ের পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। বলা চলে দীর্ঘ দিন ধরে দেশের অর্থনীতিতে একমাত্র রেমিট্যান্স সূচকই কার্যত সচল ছিল। প্রতি মাসেই গড়ে ১৫ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি ছিল রেমিট্যান্স প্রবাহে। কিন্তু করোনায় সেই রেমিট্যান্স প্রবাহেও ভাটা পড়ে গেছে। শ্রমিকরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় বলা চলে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে রেমিট্যান্স। সামনের দিনগুলোতে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরো ভয়াবহ আকারে কমে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।

ব্যাংকারদের শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) সভাপতি ও ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার বলেন, করোনায় বিশ্বব্যাপী মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। শ্রমিকদের কোনো কাজ নেই। এ কারণে বলা চলে রেমিট্যান্স আসা প্রায় বন্ধ। খুব সামান্যই আসছে। অবস্থার উন্নতি না হলে সামনে পুরোপুরিই বন্ধ হয়ে যাবে।
পূবালী ব্যাংকের এমডি মো: আব্দুল হালিম চৌধুরী গতকাল সোমবার নয়া দিগন্তকে জানান, শ্রমের প্রধান বাজার মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালিসহ প্রায় সব দেশেই করোনার মহামারী চলছে। এ কারণে শ্রমিকরা বেকার বসে আছেন। কাজ না থাকায় তাদের আয়ও বন্ধ। এ কারণে দেশে থাকা পরিবার-পরিজনের কাছে অর্থ পাঠাতে পারছেন না তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, গত ফেব্রুয়ারির আগে প্রায় প্রতি মাসেই গড়ে ১৫ শতাংশের ওপরে রেমিট্যান্স আসত। বিশেষ করে রেমিট্যান্সের ওপরে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার পর রেমিট্যান্স প্রবাহ আরো বেড়ে যায়। সেই রেমিট্যান্স প্রবাহ গত ফেব্রুয়ারির হিসাবে কমে ১০ শতাংশে নেমে গেছে। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ। চলতি মার্চ মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহের অবস্থা আরো খারাপ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে আসে ১২ দশমিক ৩৫ শতাংশ। দেশের প্রায় এক কোটি মানুষ বিদেশে অবস্থান করছেন। এদের বড় একটি অংশ মধ্যপ্রাচ্য থাকেন। আর ইতালিতে বৈধ-অবৈধভাবে থাকেন প্রায় আড়াই লাখ। কিন্তু করোনায় কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বেশির ভাগ মানুষ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
মালয়েশিয়া থেকে নজরুল ইসলাম নামে এক প্রবাসী জানান, তারা মূলত গত তিন সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ। ঘর হতে বের হতে পারছেন না। কোম্পানির পক্ষ থেকে চাল, ডালসহ কিছু তরিতরকারি দিয়ে গেছেন। এগুলো খেয়েই তারা ঘরের মধ্যে দিন যাপন করছেন। কাজ নেই। দেশ থেকে ঋণ করে মালয়েশিয়া এসেছেন। এভাবে কাজহীন বসে থাকলে ঋণ কিভাবে পরিশোধ করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

নজরুল ইসলামের মতো আরো অনেকেই আছেন যারা বেকার। দেশে কোনো কাজ করতে না পেরে জীবন-জীবিকার তাগিদে রুহুল আমিন নামক ব্যক্তি বিজনেস ভিসায় আরব আমিরাতের দুবাই গেছেন গত জানুয়ারি মাসে। উদ্দেশ্য ছিল সেখানে ছোট আকারে কিছু ব্যবসা-বাণিজ্য করবেন। যৌথ মালিকানায় একটি কোম্পানিও করেছেন। কিন্তু করোনাভাইরাসে দুবাই এখন লকডাউন অবস্থায়। ব্যবসা-বাণিজ্য দূরের কথা, ঘরে বসে পুঁজি ভেঙে খাচ্ছেন।

মধ্যপ্রাচ্যসহ অনেক দেশেই বাংলাদেশীরা আছেন যারা চুক্তিভিত্তিক কাজ করছেন। তারা দৈনিকভিত্তিতে কাজ করতেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে এখন পুরোপুরি বেকার। অনেকেরই ভিসা নবায়ন করতে না পারায় অবৈধ হয়ে পড়েছেন। পুলিশের ভয়ে এখন তারা চিকিৎসা পর্যন্ত নিতে পারছেন না ইতালি থেকে শাহজাহান নামের এক ছোট ব্যবসায়ী জানান। তিনি বিভিন্ন দোকানে ফুল সরবরাহ করে থাকেন। এভাবেই বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।

ব্যাংকাররা জানান, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একমাত্র সচল রাস্তা ছিল রেমিট্যান্স। রফতানি আয় দীর্ঘ দিন ধরে খারাপ অবস্থানে রয়েছে। এখন রফতানি আয় কমতে কমতে গত জানুয়ারি মাসে প্রায় ২ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে রেমিট্যান্সই ছিল একমাত্র ভরসা। এখন রেমিট্যান্সের অবস্থাও জেরবার। এই অবস্থার কোনো উন্নতি না হলে রেমিট্যান্সও ভয়াবহভাবে কমে যাবে। এর সরাসরি প্রভাবে চলতি হিসাবের ভারসাম্যসহ সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্য ঋণাত্মক হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের বিষয়ে সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ থাকতে হবে, যাতে তারা সহায়সম্বল হারিয়ে দেশে ফিরে না আসে।
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত।

Logo-orginal