, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

jamil Ahamed jamil Ahamed

রংপুরে দুই হাজার প্রবাসীকে খুঁজছে সেনাবাহিনী

প্রকাশ: ২০২০-০৪-০৩ ১০:১৩:০২ || আপডেট: ২০২০-০৪-০৩ ১০:১৩:০২

Spread the love

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সেনাবাহিনীর কঠোর হওয়ার ঘোষণার পর রংপুরে ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেছে সেনাবাহিনীসহ পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যদের মধ্যে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হোম কোয়ারেন্টিন বিষয়টি নিশ্চিত করতে রংপুরে কঠোর অবস্থানে পুরো আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এতে করে গত দুই দিন সড়কে লোক সমাগম ও যানবাহন দেখা গেলেও বৃহস্পতিবার নগর ছিল অনেকটাই সুনসান। তবে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবির খোলাবাজারে ট্রাকে করে বিক্রি করা খাদ্যপণ্য স্বল্পমূল্যে পেতে ভিড় করেছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। পণ্য কেনার সময় করোনা সংক্রমণ রোধে নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব মানছে না বেশিরভাগ ক্রেতাই।

অন্যদিকে রংপুর বিভাগের আট জেলায় বিদেশফেরত পাঁচ হাজার ২৫৩ জন প্রবাসীর ঠিকানা ও অবস্থান চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। তাদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। এছাড়া শনাক্ত না হওয়া আরও দুই হাজার ২০৩ জনের সন্ধানে মাঠে কাজ করছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রংপুর নগরীর বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর কঠোর অবস্থান। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে পুরো নগরী। দুপুরে শাপলা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, মেডিক্যাল মোড়, কাচারী বাজার, লালবাগ, পার্কের মোড়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশি চেকপোস্ট দেখা গেছে। র‌্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কঠোর তৎপরতায় মহানগরীর সড়ক, মহাসড়ক, বিভিন্ন অলি-গলি অন্যদিনের তুলনায় অনেকটাই ফাঁকা। পুলিশের টহল বেড়েছে অলি-গলির ভিতরেও। এতে কমে গেছে মানুষজনের বাইরে বের হওয়া। প্রত্যেকটি থানা এলাকায় সঙ্গরোধ ও নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে মাইক ও হ্যান্ড মাইক ব্যবহার করে বাড়ি-বাড়ি সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আইন অমান্যকারীদের জেরা করাসহ তাৎক্ষণিক শাস্তিও দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কঠোর তৎপরতায় নগরে ছোট যানবাহন চলাচলও কমে গেছে। জরুরি সেবার গাড়ি ছাড়া দেখা মেলেনি অন্য বাহনগুলো। বাইরের পরিবেশ এমন থাকলে করোনার প্রাদুর্ভাব রোধে সরকারের প্রচেষ্টা ¯^ার্থক হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। আর আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যরা বলেছেন, সরকারি বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের আর ছাড় দেওয়া হবে না। অহেতুক কেউ বাইরে ঘোরাফেরা বা জমায়েতের চেষ্টা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে রংপুর নগরে করোনা সংক্রমণ রোধে নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না খোলাবাজারে ¯^ল্পমূল্যের খাদ্যপণ্য ক্রয়ে। করোনা পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল রাখতে রংপুর মহানগরসহ চার উপজেলাতে ন্যায্যমূল্যে চিনি, ডাল, তেল ও আটা বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। বৃহস্পতিবার নগরীর শাপলা চত্বর, লালবাগ মোড়, প্রেসক্লাব মোড়, কাচারী বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে টিসিবির পণ্য কিনতে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন। এসব স্থানে ট্রাক থোক দূরত্ব নির্ধারণ করে রঙ দিয়ে চিহ্ন দেওয়া রয়েছে। কিন্তু দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে নিয়ম মানছেন না কেউ। একই চিত্র রেলওয়ে স্টেশন বাজার, সিটি বাজার, শালবন, সিও বাজার, সাতমাথা, ও মডার্ণ মোড় এলাকাতেও দেখা গেছে। বাজার মূল্যের চেয়ে টিসিবির বিক্রিত পণ্যের দাম কম হওয়াতে ভিড় রয়েছে সবখানেই।

টিসিবি রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তা সুজাউদ্দৌলা জানান, রংপুর নগরীর ১০টি স্থান ছাড়াও পীরগঞ্জ, পীরগাছা, বদরগঞ্জ ও কাউনিয়াতে একটি করে ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলার বাকি চার উপজেলাতে এই কার্যক্রম শুরু হবে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল কাদের জানান, ন্যায্যমূল্যে খোলাবাজারে ১৮ টাকা দরে নগরীর ১৫টি স্থানে আটা বিক্রি করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ৩০ টাকা কেজি মূল্যে চাল বিক্রির কার্যক্রমও শুরু হবে।

এদিকে রংপুর বিভাগের আট জেলায় বিদেশফেরত পাঁচ হাজার ২৫৩ জন প্রবাসীর ঠিকানা ও অবস্থান চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। তাদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। এছাড়া শনাক্ত না হওয়া আরও দুই হাজার ২০৩ জনের সন্ধানে মাঠে কাজ করছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। বুধবার রাতে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের গত ১ মার্চ থেকে বিদেশ হতে রংপুর বিভাগের আট জেলায় এখন পর্যন্ত সাত হাজার ৪৫৬ জন প্রবাসী দেশে এসেছেন। এর মধ্যে বুধবার পর্যন্ত পাঁচ হাজার ২৫৩ জনের অবস্থান ও ঠিকানা শনাক্ত করা গেছে। বাকিদের শনাক্ত করতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা প্রবাস ফেরতদের দেওয়া ঠিকানায় খোঁজখবর রাখছেন।

গাইবান্ধায় চারজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে উল্লেখ করে সূত্র জানায়, বিভাগে এখন পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনে তিন হাজার ৩৩৬ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে তিনজন ও আইসোলেশনে নয়জন রয়েছেন। এছাড়া হোম কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে দুই হাজার ১১৫ জন।

রংপুর বিভাগের আট জেলায় সরকারি ৬২টি চিকিৎসা কেন্দ্রে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ৫৭৪টি বেড, ৮১৮ জন চিকিৎসক, এক হাজার ৭১১ জন নার্স ও বেসরকারি ৭৯টি চিকিৎসা কেন্দ্রে ৫৩টি বেড, ১৮৮জন চিকিৎসক ও ৩৮৩ নার্স নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া সরকারিভাবে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী সাত হাজার ১৭১টি মজুদ ও চার হাজার ৪৬৫টি বিতরণ এবং বেসরকারিভাবে পাঁচটি মজুদ ও ৫০টি সুরক্ষা সামগ্রী বিতরন করা হয়েছে। সূত্রঃ কালের কন্ঠ ।

Logo-orginal