, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

একজন প্রবাসীর বাস্তব জীবনের গল্প

প্রকাশ: ২০২০-০৮-০২ ০৭:০৬:১৬ || আপডেট: ২০২০-০৮-০২ ০৭:০৬:১৯

Spread the love

জয়নাল আবেদীন জুয়েল,ওমান প্রবাসীঃ আজ থেকে দীর্ঘ সাত বছর আগে ভাগ্য বদলের চেষ্টায় মা বাবা বোনদের ছেড়ে সূদূর প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছিলাম। পরিবারের এক ছেলে হিসেবে বাবা মা চাইতোনা কখনো আমি বিদেশ আসি।

আমার বাবা দীর্ঘ ২৫ বছর যাবত মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে কর্মরত ছিলেন। বাবা এক সময় অসহ্য হয়ে প্রবাস ছেড়ে দেশে চলে আসেন এবং প্রবাসে আর যাবেননা বলে মনস্থির করলেন। আমরা একটি ছোট ঘরে দুটি পরিবার বাস করতাম।আমার জেঠাতো ভাই ছিল দুজন প্রায় আমার সমবয়সী এবং জেঠাতো কোন বোন ছিলনা। আমরা ছিলাম তিন ভাই বোন এবং আমি ছিলাম বোনদের আদরের একমাএ ছোট ভাই। অনেক কষ্ট করে আমার মা আমাদের ভাইবোন তিন জনকে নিয়ে যৌথ পরিবারে বসবাস করতে লাগলেন। এক সময় বাবা বিদেশ থাকা অবস্থায় আলাদা জমি কিনে ঘর বাধল এবং আমরা চলে আসলাম নতুন বাড়িতে। আমার বাবা সবসময় চাইতো আমি যেন লেখা পড়া করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হই। ২০০৫ সালে এসএসসি পাশ করে, গ্রামের একটি কলেজে ভর্তি হই। ২০০৭ সালে ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষায় এক বিষয়ে অকৃতকার্য হই এবং মনস্থির করলাম পড়াশুনা আর করবনা। কিন্তু বাবার অনুরোধ অকৃতকার্য হওয়া বিষয়টি আবার পরীক্ষা দিয়ে ২০০৯ সালে সাইন্স থেকে কৃতকার্য হই। তারপরে এডমিশন নিলাম বিবিএস এ কিন্তু আমি সাইন্সের স্টুডেন্ট হওয়ার কারনে আমার কাছে হিসাববিজ্ঞান অনেক কঠিন হয়ে গেল। তার পর এক বছর পড়ার পর হঠাৎ আমার মাথায় বিদেশ আসার পরিকল্পনা আসলো। বিদেশ যাওয়ার কথাটা পরিবারে মা বাবাকে জানালাম তারা অনিচ্ছা প্রকাশ করলো। তারপর অনেক বুঝিয়ে তাদেরকে আবুধাবিতে যাওয়ার জন্য পার্সপোর্টের কপি সহ ৩০ হাজার টাকা জমা দিই এক প্রতবেশীর কাছে। কয়েকমাস যাওয়ার পর দুবাইয়ের ভিসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় টাকা ফেরত দিয়ে দেয়। তারপর বাড়ির এক চাচাতো ভাইয়ের মামাতো ভাই ওমান থাকে তার মারফতে তার সাথে কথা বলে ভিসার জন্য টাকা জমা দিই। বড়বোনের জামাই তখন সৌদি থাকে উনি অর্ধেক টাকা দেয় ভিসার জন্য, বাকি টাকা মামা,খালু এবং প্রতিবেশী থেকে নিতে হলো। এক বছর পর আমাকে এক ক্লিনার কম্পানির ভিসা দেয় এবং বলা হয় বেতন ১২০ রিয়াল থাকা খাওয়া কম্পানির।তখন আমি ভিসার এগ্রিমেন্ট পেপার হাতে পাইনি বলে ভিসার সত্যতা বেতন সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারিনি। ২০১৩ সালের মার্চের ১৪ তারিখ রাতে ওমান এসে পৌছালাম। আমার স্পন্সর যিনি উনি এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে তার বাসায় নিয়ে যান।এয়ারপোর্ট থেকে যখন তার বাসায় যেতে লাগলাম রাস্তাঘাটের অবস্থা দেখে কিছুতেই আমার বিদেশের মত লাগেনি। ১৭ দিন উনার বাসায় থাকার পর কম্পানির কাছে নিয়ে গেলেন একটি মিনিষ্টারী অফিসে সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম যে বেতন ৮৫ ওমানী রিয়াল খাওয়া নিজের। খবরটা শুনে মাথা ঘুরে উঠলো এত টাকা দিয়ে বিদেশ আসলাম এই টাকা তো আমি দেশে টিউশনি করেও কামাইতাম। যাই হোক কাজ ছিল ক্লিনারের যেহেতু নিজের ইচ্ছায় আসছি মা বাবা কাউকে বলতে পারছিনা। শুরু হলো প্রবাস জীবনের সংগ্রাম সব কিছু ভুলে গিয়ে মনের ভেতর একটাই ভয় কাজ করলো চলে গেলে মা বাবাকে মুখ দেখাবো কি করে? আর তিন লক্ষ টাকা দেনার কি হবে? এগুলো ভেবে কাজ করতে লাগলাম খেয়ে দেয়ে মাসে বাংলার ১২/১৩ হাজার টাকা থাকতো। কোন রকম আস্তে আস্তে দেনার টাকা শোধ করতে লাগলাম।ইতিমধ্যে বোন জামাই সৌদি থেকে একসাথে ভিসা পতাকা না থাকায় সাধারন ক্ষমায় দেশে ফিরে আসলেন। সবার আগে মাসে মাসে বোন জামাইর টাকা শোধ করলাম।

দেখতে দেখতে তিন বছর শেষ হলো অথচ আমার ভিসার টাকা শেষ হলোনা। কোন মতে সাড়ে তিনবছরে ভিসার দেনা শোধ করে প্রথমবারের মত বাংলাদেশ সফরে গেলাম। দুই মাস ছুটি শেষ করে আবার ফিরলাম ভাগ্য বদলোর চেষ্টায়। কিন্তু সাপ্লাই কম্পানিতে ভাগ্যের চাকা সবার ঘুরেনি, তেমনি আমারও ঘুরলোনা। পরিশেষে এখনো ভাগ্যের চাকাকে ঘুরানোর আশায় প্রবাসে বছরের পর বছর পড়ে থাকা এভাবে কেটে গেল আমার প্রবাস জীবনের সাত বছর।

Logo-orginal