, বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

admin admin

প্রবাসীরা জেনে নিন’ আপনার যত অধিকারঃ এডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান

প্রকাশ: ২০২১-০৭-২৭ ১০:২২:০৭ || আপডেট: ২০২১-০৭-২৭ ১০:২২:৫৭

Spread the love

জেনে নিন আপনার যত অধিকারঃ

আমাদের অর্থনীতির মূলচালিকা শক্তি হচ্ছেন প্রবাসীরা কারণ আমাদের জিডিপিতে ১০ শতাংশের বেশী অবদান প্রবাসীদের আয় । প্রবাসীদের বলা হয় রেমিটেন্স যোদ্ধা । তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পতাকাবাহী এক একজন এম্বাসেডর তুল্য । তাদের দুঃখ নিয়ে গল্প কাহিনীর শেষ নেই । চরম দুঃখ কষ্ট সহ্য করে তারা দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা পাঠায় । করোনাভাইরাসের প্রভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রবাসীরা ভালো নেই । অনেকে চাকরি হারিয়ে বেকার, আবার কেউ চাকরি থেকেও ঘরবন্দী জীবন-যাপন করছেন । যারা ছোট ব্যবসা করেন তাদেরও কোনো আয় নেই । ফলে প্রতি মাসেই স্বজনদের কাছে অর্থ কম পাঠাচ্ছেন তারা । প্রতিবছর ঈদের সময় রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠান প্রবাসীরা । তবে দুর্যোগের কারণে রেকর্ড পরিমাণ না বাড়লেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সমপরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে । বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, সদ্য সমাপ্ত মে মাসে ১৫০ কোটি ৩৪ লাখ (১.৫ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত এপ্রিল মাসের চেয়ে ৪১ কোটি ৬৬ লাখ ডলার বেশি । গত পুরো অর্থবছরে যত রেমিট্যান্স এসেছিল, চলতি অর্থবছরের এক মাস বাকি থাকতেই এর প্রায় সমান অর্থ পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা । বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত এপ্রিল মাসে প্রবাসীরা ১০৮ কোটি ৬৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন । চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) ১ হাজার ৬৩৬ কোটি ৪০ লাখ (১৬.৩৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা । গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে এই অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৫০৫ কোটি ১০ লাখ (১৫.০৫ বিলিয়ন) ডলার । এ হিসাবে এই সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচক ১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার বা ৮ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়েছে । গত অর্থবছরের পুরো সময়ে (জুলাই-জুন) ১ হাজার ৬৪২ কোটি (১৬.৪২ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা । রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় রপ্তানি আয় কমার পরও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে ।
শ্রম কল্যাণ উইং-
কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশগুলোর নিযুক্তীয় দূতকে বাংলাদেশ হাইকমিশনার ও অন্যান্য দেশে নিয়োজিত রাষ্ট্রদূতদের এম্বাসেডর বলা হয় । বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের দূতাবাস এক খন্ড বাংলাদেশ । দূতাবাস সমূহের প্রধান কাজই হচ্ছে সেখানে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করা এবং প্রবাসীদের যেকোন দুঃখ দুর্দশায় পাশে দাঁড়ানো এবং সহায়তা দেয়া ও তাদের খোঁজ খবর নেয়া । তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া । আমাদের দেশে শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, ভারত, কোরিয়া প্রভৃতি দেশের কোন নাগরিক গ্রেফতার হলে বা বিপদে পড়লে তারা তাদের পরিবার পরিজনকে আইনজীবী নিয়োগ সহ সরকারের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে নানাভাবে সহায়তা করে । সরকারি হিসেব অনুযায়ী বিদেশে বাংলাদেশি কর্মী আছেন ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি । তাদের অধিকার, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রধান দায়িত্ব শ্রম কল্যাণ উইংয়ের। বিশ্বের ১৬৮টি দেশে বাংলাদেশি কর্মীরা গেলেও তাদের সুরক্ষা ও অধিকার রক্ষায় ২৬টি দেশের বাংলাদেশ মিশনে শ্রম কল্যাণ উইং মাত্র ২৯টি । এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদিআরব এবং ইতালিতে দুটি করে শ্রম কল্যাণ উইং আছে। কর্মীদের যথার্থ সেবা, সুরক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিত করতে আরও শ্রম কল্যাণ উইং প্রয়োজন । একইসঙ্গে বিদ্যমান উইংগুলোর জনবলও বাড়ানোর প্রয়োজন ।

প্রবাসীদের অধিকার সুরক্ষায় আইন-
বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, নিরাপদ ও ন্যায়সঙ্গত অভিবাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন, সকল অভিবাসী কর্মী ও তাহাদের পরিবারের সদস্যদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করিবার এবং বাংলাদেশ কর্তৃক অনুসমর্থিত International Convention on the Protection of the Rights of All Migrant Workers and Members of Their Families, 1990 এবং শ্রম ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক অন্যান্য সনদের সহিত সঙ্গতিপূর্ণ করিবার উদ্দেশ্যে Emigration Ordinance, 1982 (Ordinance No. XXIX of 1982) রহিতপূর্বক একটি নূতন আইন প্রণয়ন করা হয় । ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ তার সাধারণ প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সকল অধীকারের সুরক্ষার্তে একটি চুক্তি সম্পাদন করেন । বাংলাদেশে ২০১৩ সালে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন, ২০১৩ পাশ হয় । এর মাধ্যমে Emigration Ordinance,1982 রহিত হয় । বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন, ২০১৩ এর গুরত্বপূর্ণ ধারাগুলো হল-
ধারা ৩ – কর্মী নির্বাচন ও বিদেশে প্রেরণ সংক্রান্ত সকল কার্য সরকার বা তার কর্তৃক ক্ষমতা প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সম্পাদন করবে । ধারা ১৫ – রিক্রটিং এজেন্টের দায়িত্ব কাজের অনুমতি পত্র, বহির্গমনের জন্য ছাড়পত্র, চুক্তি অনুযায়ী কর্মে নিয়োগ, বেতন ও পরিবেশ নিশ্চিত করা । ধারা ২৬ – কোন অভিবাসী কর্মীর বিদেশে যাইবার পূর্বে অভিবাসন প্রক্রিয়া এবং কর্মসংস্থান চুক্তি বা বিদেশে কর্মের পরিবেশ সম্পর্কে অবহিত হইবার এবং বিভিন্ন আইনগত অধিকার সম্পর্কে জানিবার অধিকার থাকিবে । ধারা ২৯ – (১) কোন অভিবাসী কর্মীর বিদেশে আটককৃত কিংবা আটকেপড়া বা বিপদগ্রস্ত কর্মীর দেশে ফিরিয়া আসিবার এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন বা দূতাবাসের নিকট হইতে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাইবার অধিকার থাকিবে । (২) কোন অভিবাসী কর্মীকে দেশে ফেরত আনিবার জন্য কোন অর্থ ব্যয় হইয়া থাকিলে, উক্ত ব্যয়িত অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিকট হইতে আদায় করা যাইবে । (৩) কোন রিক্রুটিং এজেন্টের অবহেলা বা বেআইনি কার্যক্রমের কারণে কোন অভিবাসী কর্মী বিপদগ্রস্ত হইয়া থাকিলে সরকার সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্টকে উক্ত অভিবাসী কর্মীকে দেশে ফিরাইয়া আনিবার খরচ বহন করিবার নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে । (৪) উপ-ধারা (৩) এর অধীন নির্দেশিত অর্থ প্রদান করিতে ব্যর্থ হইলে সরকার সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্টের নিকট হইতে Public Demand Recovery Act, 1913 (Bengal Act No. III of 1913) এর বিধান অনুযায়ী আদায় করিতে পারিবে । ধারা ২৮ – এই আইনের অধীন কোন অপরাধের জন্য ফৌজদারী মামলা দায়েরের অধিকারকে ক্ষুণ্ণ না করিয়া, কোন অভিবাসী কর্মী এই আইনের কোন বিধান বা কর্মসংস্থান চুক্তি লঙ্ঘনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হইলে, ক্ষতিপূরণের জন্য দেওয়ানী মামলা দায়ের করিতে পারিবে।

ধারা ৩১ – কোন ব্যক্তি বা রিক্রুটিং এজেন্ট— (ক) এই আইন বা বিধির বিধান লঙ্ঘন করিয়া অপর কোন ব্যক্তিকে কর্মের উদ্দেশ্যে বিদেশে প্রেরণ বা প্রেরণে সহায়তা করিলে বা চুক্তি করিলে; (খ) কোন ব্যক্তিকে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের মিথ্যা আশ্বাস প্রদান করিয়া কোন অর্থ বা মূল্যবান দ্রব্য গ্রহণ করিলে বা গ্রহণ করিবার চেষ্টা করিলে; (গ) কোন অভিবাসী কর্মীর পাসপোর্ট, ভিসা বা অভিবাসন সংক্রান্ত কাগজপত্র বৈধ কারণ ব্যতীত আটকাইয়া রাখিলে; (ঘ) প্রতারণামূলকভাবে অধিক বেতন-ভাতা ও সুযোগ সুবিধার মিথ্যা আশ্বাস প্রদান করিয়া কোন ব্যক্তিকে অভিবাসন করাইলে বা অভিবাসনের নিমিত্ত চুক্তিবদ্ধ হইতে প্রলুব্ধ করিলে অথবা অন্য কোনভাবে প্রতারণা করিলে; উহা অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ড এবং অন্যূন ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন । ধারা ৩৪ – কোন ব্যক্তি বা রিক্রুটিং এজেন্ট অন্য কোন ব্যক্তিকে বহির্গমনের জন্য নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য কোন স্থান দিয়া বাংলাদেশ হইতে বহির্গমনের ব্যবস্থা করিলে বা সহায়তা করিলে উহা অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ১০ (দশ) বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অন্যূন ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকার অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন । ধারা ৩৭ – কোন কোম্পানী কর্তৃক এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটিত হইলে, উক্ত অপরাধের সহিত প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা রহিযাছে উক্ত কোম্পানীর এইরূপ পরিচালক, নির্বাহী কর্মকর্তা, ব্যবস্থাপক, সচিব, অন্য কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী উক্ত অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন । ধারা ৩৮ – বিচার- 1st class magistrate. ৪ মাসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করবে ।

প্রবাসীদের পুর্নবাসনের জন্য ৭০০ কোটি টাকার তহবিল-
করোনায় উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে দেশে ফেরত আসা প্রবাসীদেরকে নগদ টাকা এবং সুরক্ষা সামগ্রী দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। চলতি মাসের ১ জুন থেকে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ৫ হাজার টাকাসহ প্রত্যেক কর্মীকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, স্যানিটাইজার দেওয়া হয়ম । দেশে লকডাউন চলাকালীন করোনার প্রভাবে ফেরত প্রবাসীকর্মীদের জনপ্রতি ৫ হাজার টাকাসহ সুরক্ষা সামগ্রী বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে ৩১ মে ২০২০ পর্যন্ত বিতরণ করা হয় । ০১ জুন ২০২০ দেশে লকডাউন তুলে নেয়ায় মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নগদ টাকা বিতরণ বন্ধ করা হয় । প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে যারা দেশে ফেরত আসছেন, এমন প্রবাসীদের বাড়ি ফেরার জন্য ৫ হাজার করে টাকা সহায়তা দিয়েছিল মন্ত্রণালয় । এছাড়াও তারা যেনো দেশে ফিরে কিছু করতে পারেন, সেজন্য সহজ শর্তে ও কম সুদে ঋণ দেয়ার পরিকল্পনা করছে মন্ত্রণালয় । বিশেষ করে প্রবাসীদের জন্য শতকরা ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । ইতোমধ্যে ৭০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছেন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, প্রবাসীরা দেশে ফেরত আসার পর যেন কোনো ধরনের আর্থিক কষ্টে কিংবা বেকার জীবনযাপন করতে না হয় ।

প্রবাসে দেয়ালবিহীন কারাগারে বাংলাদেশিদের কষ্টের জীবন-
ঘাম, রক্ত, এমনকি জীবন দিয়েও পরিবার ও দেশের ভাগ্য পরিবর্তনে ভূমিকা রাখেন তাঁরা ৷ ১৯৭৬ থেকে বাংলাদেশি রেমিটেন্স যোদ্ধারা বিভিন্ন দেশে কাজ করতে গিয়েছেন ৷ ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় বাংলাদেশিদের বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে ৷ এর পাশাপাশি প্রবাসে নির্যাতনও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে ৷ প্রায় নিয়মিতই আসছে মৃত্যুর খবর ৷ পরিবারে সুদিন ফেরানোর আশায় বিদেশে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরছেন অনেকে ৷ প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড সূত্র থেকে জানা যায়, গত এক দশকে বিদেশ থেকে ২২ হাজার ৬৫১ জনের লাশ ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে বাংলাদেশে এসেছে ৷ অধিকাংশেরই মৃত্যুর কারণ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, হৃদরোগ, কর্মক্ষেত্র বা সড়ক দুর্ঘটনা কিংবা ক্যানসারের মতো জটিল কোনো রোগ৷প্রবাসে একা থাকা, নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা, খারাপ পরিবেশে কাজ করা ইত্যাদি কারণে হৃদরোগ বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বয়স ৩৫ হওয়ার আগেই অনেকের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিচ্ছে ৷ গড়ে প্রতি মাসে (১০০-১৫০) জন ফিরে লাশ হয়ে । গত কয়েক বছরে নারীদের বিদেশ গমনও বেড়েছে ৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৭৮৯ জন বাংলাদেশি শ্রম অভিবাসীর মধ্যে ৭ লাখ ২৭৮ জন নারী রয়েছেন । বিদেশে অবস্থানরত এই নারী শ্রমিকদের অধিকাংশই যৌন হেনস্তার শিকার হচ্ছেন । সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশে নারী নির্যাতনের হার অনেক বেশি । তাদের বৈদ্যুতিক শক, সিগারেটের আগুন দিয়ে ছেঁকাসহ অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে হয় । নারী শ্রমিকদের অনেকে আবার আফ্রিকা হয়ে সুদান যাচ্ছেন। তাদের প্রথমে ট্যুরিস্ট ভিসায় সুদানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । এরপর সেখান থেকে লিবিয়ায় পাচার করে দেয়া হচ্ছে । বিদেশে অবস্থানরত নারী শ্রমিকদের বড় অংশকেই নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে । শারীরিক নির্যাতন, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না দেয়া, কর্মঘণ্টা বেশি, ফোন ব্যবহারের সুযোগ না থাকার চিত্র প্রতিনিয়ত সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে । বাংলাদেশি নারী কর্মীদের পূর্ণ নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কূটনীতি শক্তিশালী নয় বলে গণমাধ্যম ও মিডিয়াতে উঠে এসেছে । জিরো মাইগ্রেশনে নারী শ্রমিকরা এখন বিদেশ যেতে পারছেন । কিন্তু জিরো মাইগ্রেশনে নারী শ্রমিক পাঠানো সর্বমহলে প্রশংসিত হলেও প্রত্যেক নারী কর্মী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোতে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা দালালি দিতে বাধ্য হচ্ছেন । বিদেশে তাঁদের জীবন আরো কঠিন ৷ অভিবাসী নারী শ্রমিকরা বিদেশের মাটিতে অধিক বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে পরবর্তী সময়ে কম বেতন দেয়া, ঠিকমতো বেতন না দেয়া, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে না দেয়া, পর্যাপ্ত খাবার ও বিশ্রামের সুযোগ না দেয়া, ওয়ার্ক পারমিট আটকে রাখা, দীর্ঘ সময় কাজ করতে বাধ্য করা এবং দেশে ফিরে আসতে চাইলে স্বজনদের কাছে রিক্রুটিং এজেন্সি বা দালালদের মুক্তিপণ দাবিসহ নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন । দৈনিক ১৮/২০ ঘণ্টা কাজ করেও অনেকে প্রাপ্য পারিশ্রমিক পান না ৷ শারীরিক, মানসিক নির্যাতন তো আছেই, যৌন নিপীড়নের পাশাপাশি ধর্ষণের শিকারও হন অনেকে ৷ নিয়োগকর্তা স্বজনহীন পরিবেশে অসহায়ত্বের সুযোগে নারীদের দেহ ব্যবসায় বাধ্য করছেন, এমন খবরও নতুন কিছু নয় ৷ ধর্ষণসহ নানা ধরনের নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে শত শত বাংলাদেশী নারী গৃহকর্মি দেশে ফেরত আসেছে । গত কয়েকবছরে শত শত বাংলাদেশী নারী গৃহকর্মির মৃতদেহ দেশে আনা হয় । তাদের মধ্যে বেশির ভাগই মধ্যপ্রাচ্যের নির্যাতনের অভিযোগ তুলে আত্মহত্যা করেছেন । তবুও ভাগ্যান্বেষণে দেশ ছাড়তে হয় ৷ তারপরও বৃদ্ধ বাবা-মা, বেকার, ঋণগ্রস্ত স্বামী বা প্রিয় সন্তানের জন্য বহু দূরের অচেনা দেশে যেতেই হয় ৷ সেখানে চুক্তির বাইরে এত অতিরিক্ত কাজের জন্য বাড়তি পারিশ্রমিক চাইলেও বিপদ সেসব নারীদের ৷ মালিক তখন রেগেমেগে বলত, “মেরে লাশ ফেলে দেব পাহাড়ে৷”

দেশের বিমানবন্দরে প্রবাসীরা হয়রানির শিকার-
বিমানবন্দরে প্রবাসীদের কামলা বলে অপমান করা এবং মালপত্র নিয়ে হয়রানির শিকার হতে হয় । প্রবাসীরা কি চাই ? বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সুন্দর ব্যবহার ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা । দেশের বিমানবন্দরগুলোতে মানবাধিকার আইনজীবী নিয়োগ করা অত্যন্ত জরুরী । প্রবাসীরা দেশের বিমানবন্দরে অবস্থানকালে তাদের যেকোন দুঃখ দুর্দশায় সকল ধরণের আইনী সহায়তা পাবে নিয়োগকৃত আইনজীবীদের নিকট থেকে, এতে করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা যে হয়রানির শিকার হয় তা লাঘব করা সম্ভব হবে প্রয়োজনীয় আইনী সহায়তার মাধ্যমে । প্রবাসী পরিবারকে আইনি সহায়তা, চিকিৎসা, ব্যাংক, শিক্ষা ও সামাজিকতায় অগ্রাধিকার দেওয়া । দুঃখের বিষয় সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে ন্যূনতম সেবা পাওয়া যায় না। প্রবাসীদের প্রতি দেশ ও সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে । সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমা ও মা বাবার দোয়া বা আশীর্বাদে প্রবাসীরা অনেক বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পায় । বাংলাদেশের সৈনিকরা যেমন দেশরক্ষার অতন্ত্র প্রহরী; ঠিক তেমনি প্রবাসীরাও দেশ উন্নতির চাবিকাঠি । সৈনিকরা যদি অধিকার পায় তাহলে প্রবাসীরা কেন নয় । প্রবাসীরা সৈনিকের চেয়ে কোন অংশে কম নয় । প্রতিটি প্রবাসী এক একটি জীবন যুদ্ধের সৈনিক । কেউ না হেঁসে অন্যের হাঁসি পেতে ভালোবাসে ! আবার কেউ না খেয়ে অন্যকে খাওয়ানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যায় ! আবার কেউ অন্যের সুখের জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে দেয় ।

ভোটাধিকার থেকে আজও বঞ্চিত প্রবাসীরা-
আমরা মুখে মুখে অনেক কথা বলি৷ কিন্তু বাস্তবে তাঁরা নানা রকমের হয়রানির শিকার হন ৷ তাঁরা যাওয়ার সময় পাসপোর্ট করা থেকে শুরু করে বিমানবন্দর, দূতাবাস – সবখানেই হয়রানির শিকার হন৷ আবার আসার সময়ও একই ধরনের হয়রানির শিকার হন৷ এমনকি প্রবাসীদের ভোটাধিকারও এখন পর্যন্ত দেয়া হয়নি ৷

লাশ পাঠাতে চাঁদা তুলতে হয়-
আমাদের প্রবাসীদের ‘কমন’ অভিযোগ হলো যে, তাঁরা যখন বিদেশে কোনো বিপদে পড়েন, আইনগত ঝামেলায় পড়েন বা কোনো কারণে আহত ও অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন তাঁরা আমাদের দূতাবাসগুলোর কোনো সহায়তাই নাকি পান না ৷ দূতাবাসগুলো তাঁদের পাশে না থাকায় ঐসব দেশের কর্তৃপক্ষও তাঁদের সম্মান বা মর্যাদা দেয় না ৷ যে ২৯টি ‘লেবার উইং’ রয়েছে সেগুলোতে আছে প্রচুর কর্মকর্তা সংকট ৷ কয়েকজন কর্মকর্তা নিয়ে এত প্রবাসী কর্মীকে সার্ভিস দেয়া সম্ভব নয়৷‘‘প্রবাসীরা মারা গেলে লাশ দেশে পাঠানোর জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয় ৷ এমন কি প্রবাসীরা কখনো কখনো চাঁদা তুলেও লাশ দেশে পাঠান ৷ অথচ আমাদের দূতাবাসগুলো খবরও রাখে না ৷
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক-
২০১৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে প্রবাসে মারা যাওয়া কর্মীর প্রত্যেক পরিবার আর্থিক অনুদান হিসেবে পাচ্ছে ৩ লাখ টাকা ৷ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল থেকে পাওয়া ৯৫ কোটি টাকা এবং সরকারের কাছ থেকে পাওয়া পাঁচ কোটি টাকাসহ মোট ১০০ কোটি টাকার তহবিল নিয়ে ২০১০ সালের ১২ অক্টোবর প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় ৷ এর উদ্দেশ্য হলো, বিদেশ যাওয়ার জন্য এবং প্রবসীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ঋণ দেয়া৷বাংলাদেশ সরকার ১৯৯০ সালে অভিবাসী কর্মীদের সেবা কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিএমইটি-র অধীনে এই ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড প্রতিষ্ঠা করে ৷ উচ্চ পর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত পরিচালনা বোর্ডের মাধ্যমে এই তহবিল পরিচালিত হয় ৷ ‘‘এই ব্যাংকটি করা হয়েছিল যারা বৈধভাবে বিদেশে কাজের জন্য যাবেন এবং যারা ফিরে আসবেন তাদের ঋণ সহায়তা দেয়ার জন্য ৷ তথ্যসুত্রে জানা যায়, এই ব্যাংক আসলে প্রবাসীদের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে ৷ কিন্তু এই ব্যাংক গড়ে উঠেছে প্রবাসীদের টাকায় ৷ তাদের কোটি টাকা এখানে আছে ৷ প্রবাসীদের প্রশ্ন হলো, রাষ্ট্র কেন এই টাকা দেবে না? শুধু তাই নয়, এখান থেকে প্রবাসীরা তাদের চাহিদামতো ঋণও পান না ৷” প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক একজন কর্মীকে বিদেশে যেতে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা ঋণ দেয় ৷ কিন্তু ঐ টাকায় বিদেশ যাওয়া হয় না ৷ আবার ঋণ নিতে গ্যারান্টারসহ কাগজপত্রের নানা জটিলতাও রয়েছে ৷ তার ওপর সুদের হারও কম নয় ৷ অভিযোগ আছে, প্রসেসিংসহ গ্যারান্টার জোগাড় করতে যে খরচ হয়, তা বাদ দিলে টাকা তেমন থাকে না ৷ তাই তাদের জন্য বিনা সুদে বা নামমাত্র সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা উচিত ৷ বিদেশে মারা গেলে প্রবাসীর পরিবারকে যে তিন লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা তা পান না ৷ প্রত্যেক কর্মীকে বিদেশে যেতে হলে প্রবাসী কল্যাণ তহবিলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখতে হয় ৷ সেই টাকা থেকেই যারা মারা যান, তাঁদের জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় ৷ অর্থাৎ কর্মীদের জমানো টাকাই কর্মীদের দেয়া হয় ৷ বিদেশে গিয়ে প্রবাসীরা যখন বিপদে পড়েন, তখন কোনো সহায়তা পান না ৷ কিন্তু একজন কর্মীকে বিদেশ পাঠানোর আগে সবকিছু কনফার্ম করে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএমইটি ৷ তারপর যদি সেই কর্মী ঠিকমতো বেতন না পান, তাকে যদি নিয়োগকারী খেতে না দেন, তখন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সহায়তা পাওয়ার অধিকার রাখে ৷ আমাদের প্রবাসী কর্মীরা বৈধপথে অর্থ পাঠাতে গিয়েও ঠকেন ৷ কারণ, ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠালে এক ডলারে প্রচলিত রেটের চেয়ে তারা চার-পাঁচ টাকা কম পান ৷ এ ব্যাপারে তাদের আরো ভালো রেট দেয়ার উদ্যোগ নেয়া প্রয়েজন ৷ আর জমিজমা বিক্রি করে বিদেশ গিয়ে অর্থ উপার্জন করে দেশে ফিরে এলেও ঐ জমি কিন্তু টাকা দিয়েও ফেরত পাওয়ার কেনো উপায় নেই ৷ এই ব্যাপারেও একটা নীতিমালা প্রয়োজন, নয়তো প্রবাসীরা ধীরে ধীরে ভূমিহীন হয়ে পড়বেন ৷

হুন্ডি সিন্ডিকেটেই সর্বনাশ-
হুন্ডি কিংবা মানি লন্ডারিং উভয়ই অপরাধ । হুন্ডি চক্র দেশে ও বিদেশে উভয় ক্ষেত্রেই সক্রিয় । দেশের হুন্ডি চক্র এখন অপ্রতিরোধ্য । চক্রটি প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করছে । পাচারের টাকায় সিঙ্গাপুর, কানাডা, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দুবাইসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হোটেল, মোটেল, ব্যবসায়িক লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার, আবাসিক ভবন, ফ্ল্যাট কিনছেন । কোথাও কোথাও পুরো মার্কেটও কিনে ফেলেছেন এই চক্রের সদস্যরা । দেশের হুন্ডি চক্র এখন অপ্রতিরোধ্য । হুন্ডিতে মূলত এজেন্টের মাধ্যমে টাকা লেনদেন হয় । এটি পুরোপুরি চলে বিশ্বাসের ওপর । এখানে কোনো কাগজপত্রের লেনদেন হয় না । এ প্রক্রিয়ায় টাকা পাচার করা হলে পাচারকারীদের শনাক্ত করা খুবই কঠিন । হুন্ডিওয়ালা যদি টাকা মেরে দেয় তখন প্রবাসী ভাইদের তাদের বিরুদ্ধে প্রদেক্ষেপ নেয়ার কোন সুযোগ নেই । এছাড়া হুন্ডির মাধ্যমে টাকা স্থানান্তরে খরচ কম । এ কারণেই পাচারকারীরা হুন্ডিকেই পছন্দ করে বেশি । শুধু বাংলাদেশ থেকে টাকা যায় না, টাকা আসেও হুন্ডির মাধ্যমে । বৈধপথে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা থাকায় প্রবাসী শ্রমিকরাও হুন্ডির আশ্রয় নিয়ে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, রাজনীতিবিদসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন পাচারকারীর তালিকায় । হুন্ডি কারবারি হিসেবে চিহ্নিত এমন প্রায় ২০০ জনের একটি তালিকা ধরে তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) । সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা অর্থে তিন হাজারের বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন । এ ছাড়া বিদেশ থেকে হুন্ডি হয়ে আসছে রেমিট্যান্সের বিপুল পরিমাণ অর্থ । একইভাবে রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে । ব্যবসায়ীরা দেদার অর্থ পাচার করছেন আমদানি-রপ্তানির আড়ালে; আমদানি পণ্যের দাম বেশি দেখিয়ে আর রপ্তানি পণ্যের দাম কম দেখিয়ে । এজেন্টের কাছে রেমিট্যান্সের অর্থ জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের আত্মীয়স্বজনের ঠিকানায় হুন্ডির টাকা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে । এই অর্থ বৈধপথে রেমিট্যান্স হিসেবে এলে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যেমন শক্তিশালী হতো । তেমনি এই অর্থকে বিনিয়োগে আনা সম্ভব হতো । হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচারকারী এবং যারা বিদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্সের অর্থ পাঠান তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে । পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে কারসাজি করে যে অর্থ পাচার হয় সেই অর্থের অঙ্কটা উদ্বেগজনক । আর পাচার করা অর্থের বেশির ভাগই কানাডা, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দুবাই চলে যাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিদেশি বিনিয়োগ উন্মুক্ত করে দেওয়ায় পাচারকারীরা টাকা পাচারে ওইসব দেশকে বেছে নিচ্ছে । সরকারি মুদ্রানীতি অনুসরণ না করে এভাবে অর্থ স্থানান্তরের কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সরকারি প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে । যেকোনো উপায়ে হোক অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে । অর্থ পাচার বন্ধ করতে না পারলে বিনিয়োগ বাড়ানো দুরূহ হবে । এ জন্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে আরও নিবিড় তদারকি প্রয়োজন । বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সামগ্রিক কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন ।
প্রবাসীদের আইনগত সহায়তায়-
প্রবাসীদের আইনগত সহায়তা দেওয়ার জন্য দু’টি হট লাইন সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এই নম্বর দু’টি হলো ০১৭৯৯০৯০০১১ এবং ০১৭৯৯০৯০০২২ । এই নম্বর দু’টিতে ডায়াল করে প্রবাসীরা তাদের যে কোনো ধরনের আইনি সহায়তা পাবেন । এই বিপুল সংখ্যক মানুষদের আইনগত বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার মতো উল্লেখযোগ্য কোনো ফোরাম নেই । তাই প্রবাসীদের মাঝে আইনগত কোনো ধারণাও নেই । ফলে প্রবাস জীবনে তারা নানা শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হন । আর এ সমস্যার দূর করতে এই সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে । জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ইউএনডিপি’র জাস্টিস সেক্টের ফ্যাসেলিটি প্রকল্পের অর্থায়নে এই সার্ভিসটি চালু হয়েছে । যার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করবে আইনগত সহায়তা সংস্থা । এই সার্ভিসের আয়োতায় একজন অভিজ্ঞ আইনজীবি ফোন কলের মাধ্যমে প্রবাসীদের যে কোনো ধরনের আইন বিষয়ক নানা তথ্য ও সহযোগিতা সেবা দেবেন ।
‘লিগাল’ এবং ‘মিডিয়া’ উইং এর প্রয়োজনীতা-
‘‘প্রবাসীদের আইনি সুরক্ষা এবং নানা ঘটনায় তাঁদের সহায়তা দেয়া এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ ৷ এজন্য যেখানে আমাদের কর্মীরা বেশি আছেন, আমরা সেসব দেশের দূতাবাসে ‘লিগাল’ এবং ‘মিডিয়া উইং’ খোলা অত্যন্ত জরুরী ৷ কারণ, ‘লেবার উইং’ দিয়ে সব কিছু করা সম্ভব নয় ৷ আমাদের প্রবাসী কর্মীরা ঐসব দেশের আইন সম্পর্কে জানেন না ৷ তাদের কাছে জরুরি তথ্যও থাকে না ৷ ফলে তারা আইনি সুরক্ষা পান না ৷ অনেক ক্ষেত্রে হয়রনিরও শিকার হন৷ আমাদের দেশ থেকে কর্মী পাঠানো হয় এমওইউ-এর মাধ্যমে ৷ তাই নানা ধরনের আইনি অধিকার অনেক সময় আদায় করা সম্ভব হয় না ৷ আমাদের দেশ থেকে চেষ্টা করেও ‘লেবার রিসিভিং কান্ট্রি’গুলোকে আমরা আইনের আওতায় আনতে পারিনি ৷ তাই প্রস্তাব হচ্ছে, দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে কর্মী পাঠানো ৷ এটা সম্ভব হলে অনেক সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে ৷ সরকার সম্প্রতি দুবাইতে নিরাপদ অভিবাসনের জন্য ‘হোম’ করার কাজ শুরু করেছে ৷ বিশেষ করে ‘ডমেস্টিক ওয়ার্কার’ বা গৃহকর্মীদের জন্য ৷ বলা বাহুল্য, গৃহকর্মী হিসেবে যাওয়া নারীরা সবচেয়ে বেশি ‘অ্যাবিউজড’ হচ্ছেন ৷”
দালালচক্র থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ষা করতে হবে-
প্রবাসীরাই পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু ইকোনমিক জোন, পায়রা বন্দর, কর্ণফুলী টানেলের মত বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সরকারকে সাহস দিয়েছেন । ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবাসী শ্রমিকরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৬ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার । শ্রমিকদের আয় দেশের অর্থনীতির জন্য বড় অবদান । যেকোনো মূল্যে দালালচক্রের হাত থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ষা করতে হবে।দালালদের দৌরাত্ম্যে যেমন নষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশিদের জন্য সম্ভাবনাময় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার, তেমনি রয়েছে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অভাবও । প্রবাসে কিছু অসাধু বাংলাদেশিদের কারণে শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে । আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে অন্যান্য দেশ । কিন্তু প্রয়োজনীয় উদ্যোগ বাস্তবায়ন ও প্রবাসী দালালচক্রের কারণে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ । দালালচক্রের ব্যাপারে সরকার কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করলে বিশ্ববাজারে অবৈধ অভিবাসী কমবে । তাছাড়া কারিগরি জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ দিয়ে জনশক্তি পাঠালে সুপার শপ, গ্রোসারি শপ, ক্যাফেসহ এই খাতে ভালো অবস্থানে যেতে পারবে বাংলাদেশিরা । হাড় ভাঙা পরিশ্রমের জন্য বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদাই বেশি দেশটির সব সেক্টরে । অবকাঠামো উন্নয়ন উন্নত বিশ্বের মতো হওয়া স্বত্ত্বেও বিশ্বের অনেক দেশে এখনও নির্মাণ সেক্টরে কর্মযজ্ঞ চলছে । যেখানে ভিয়েতনাম ও নেপালসহ অন্য দেশের নাগরিকরা বিদেশ যেতে শুধুমাত্র প্লেনের টিকিটের টাকা খরচ হয়, সেখানে বাংলাদেশিদের আসতে খরচ হয় ৩ থেকে ৭ লক্ষ টাকা । এরপরও বৈধভাবে শ্রমিক যেতে পারছে না । যদি দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করে শ্রমিকদের পাঠানোর ক্ষেত্রে খরচ কমানোর ব্যবস্থা করে সেক্ষেত্রে বিশ্বের শ্রমবাজার আমাদেরও প্রভাব বাড়বে । তবে সবার আগে অবৈধ পথে যাওয়া বন্ধ করতে হবে ।
ফেসবুকে প্রতারণার ফাঁদ, টাকা হারাচ্ছেন প্রবাসীরা-
দেশের বাইরে বিকাশের কোনো এজেন্ট বা বুথ নেই এবং বিকাশ রিসেলার বলে কিছু নেই । ফেসবুকে ইংরেজিতে বিকাশ রিসেলার ও বিকাশ লিখে সার্চ দিয়ে অনেক অ্যাকাউন্টের দেখা মেলে । যারা বাড়তি লোভের স্বপ্ন দেখিয়ে মুখরোচক নানা বিজ্ঞাপন আকারে পোস্ট দিয়ে প্রবাসীদের আকৃষ্ট করেছে । তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তারা হোয়াটসঅ্যাপ বা ইমো নম্বর দেয় । তবে হোয়াটসঅ্যাপে বাংলাদেশি নম্বর দেখলে তারা এ বিষয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনাগ্রহ দেখায় । তবে মধ্য প্রাচ্যের কোনো দেশের প্রবাসী পরিচয় দিলে বা দেশের বাইরের নম্বর হলে তাদের আগ্রহের কমতি থাকে না । বিকাশের নিবন্ধিত গ্রাহকরা দুটি উপায়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স গ্রহণ করতে পারবেন । একটা হচ্ছে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে, অন্যটি হচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংকের আওতাভুক্ত নির্ধারিত ও অনুমোদিত একচেঞ্জ হাউজ থেকে। তবে কিছু অসাধু ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং চক্র বিদেশে নিজেদের বিকাশ এজেন্ট/রিসেলার পরিচয় দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবৈধ মাধ্যম ব্যবহার করে টাকা পাঠাতে প্ররোচিত করছে । বিকাশের সাথে এইসব ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পর্ক নেই এবং অনুমোদনও নেই । এইসব অসাধু ব্যাক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে আটটি দেশের বাংলাদেশের দূতাবাসে চিঠি দিয়েছে বিকাশ । বিকাশের লোগো যেন কেউ অননুমোদিতভাবে ব্যবহার করতে না পারে সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সিঙ্গাপুর এবং মালয়শিয়ায় বাংলাদেশের নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতগণকে সংশ্লিষ্ট দেশের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে । এ ছাড়া কেউ যেন অবৈধভাবে বিকাশের লোগো ব্যাবহার করতে না পারে সেইজন্য ওইসব দেশে লোগো নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেন কেউ বিকাশের লোগোর অপব্যবহার করলে আইনগতভাবে মোকাবেলা করা যায় । এজন্য বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য আইনি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে । যেসব আসাধু ব্যাক্তি এবং প্রতিষ্ঠান অনুমোদনহীনভাবে বিকাশ লোগো ব্যবহার করে প্রতারণা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ করা হয়েছে । পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই ধরনের প্রতারণা সম্পর্কে সচেতন করতে এবং বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহিত করতে বিকাশ বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার পাশাপাশি নিজস্ব ওয়েবসাইট, ফেসবুক এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে । এ ছাড়াও বিকাশ নিয়মিতভাবে বিকাশ সন্দেহজনক লেনদেন সংক্রান্ত রিপোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের সেন্ট্রাল ফিনান্সিয়াল ইনটিলেজেন্স ইউনিটকে অবহিত করে । ফেসবুক অ্যাকাউন্টগুলো নিজেদের নম্বর ব্যবহার করে এ ধরনের কাজ করছে। এ বিষয়ে বিকাশ ওইসব নম্বর বা ফেসবুক অ্যাকাউন্টগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে । বিকাশ নিয়মিতভাবে সন্দেহজনক লেনদেন মনিটর করে । কোন ধরনের সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ পেলে ওই নম্বরগুলো বিকাশ একাউন্ট হলে বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বাংলাদশ ব্যাংকে সেন্ট্রাল ফিনান্সিয়াল ইনটিলেজেন্স ইউনিটকে অবহিত করা হয় ।
বিদেশগামী ভাইদের প্রতি সতর্ক বার্তা-
১) বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীদের জন্য এখন দিল্লি থেকে সকল ধরনের সেনজেন ভিজিট/বিজনেস ভিসা ইস্যু বন্ধ রয়েছে । ২) সেনজেন দেশ সমূহের মধ্যে যেসব দেশের এম্বাসী ঢাকায় নাই, সেসব দেশের দিল্লিস্থ এম্বাসী শুধু মাত্র দীর্ঘ মেয়াদী ভিসার আবেদন (৯০ দিনের বেশি, যেমনঃ চাকুরী বা স্টুডেন্ট ভিসা) গ্রহণ করেন ও ভিসা ইস্যু করেন । ৩) ৯০ দিনের কম মেয়াদের ভিসার আবেদন (যেমনঃ ভিজিট বা বিজনেস ভিসা) ঢাকাস্থ তাদের প্রতিনিধি বা অথরাইজড এম্বাসী গ্রহণ করে ও ভিসা ইস্যু করে থাকে। যেমনঃ পোল্যান্ড এর চাকুরী বা স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন পত্র পোল্যান্ড এম্বাসী, দিল্লিতে সাবমিট করতে হয় । কিন্ত, পোল্যান্ডের ভিজিট ভিসার আবেদন ঢাকায় সুইডেন এম্বাসীতে সাবমিট করতে হয় । এই বিষয় গুলি সংশ্লিস্ট দেশ সমূহের ওয়েব সাইটে দেওয়া আছে। ৪) আবার অনেকে বিভিন্ন প্রতারকদের প্ররোচনায় পড়ে ঢাকায় এম্বাসী থাকার পরেও দিল্লিতে যান ফাইল সাবমিট করতে, যেটা মস্ত বড় বোকামি । উল্লেখ্য, দিল্লিতে একটি শক্তিশালী প্রতারক চক্র vfs এর কতিপয় অসাধু চাকুরীজীবিদের সহযোগিতায় পাসপোর্টে নকল ভিসা লাগিয়ে দেয়। তাদের সাথে মিলে এদেশের কিছু টাউট বাটপার সহজ সরল মানুষকে রঙিন সপ্নে আবিস্ট করে তাদের সব পুঁজি লুটে নেয়। এতে ধবংস হয় একটি জীবন, একটি পরিবার, নেমে আসে করুণ পরিণতি । ৫) সাধারন আবেদনকারীগণ ভাবেন, তিনি নিজে সরাসরি ফাইল জমা দিয়েছেন (vfs এ), ফিংগার প্রিণ্ট দিয়েছেন, নিজেই সিলগালা দিয়ে আটকানো ফাইল রিসিভ করেছেন, সুতরাং ভিসা জেনুইন, এটাই ধরে নেয় । এবং প্রতারকদের চাপের মুখে টাকা প্রদান করেন । এভাবেই প্রতারণার শিকার হন শত শত মানুষ । এদেরকে সাহায্য করে কিছু অসাধু হুন্ডি ব্যাবসায়ী ।
৬) বতমানে দিল্লিতে গ্রীস, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, জার্মান এম্বাসীতে সেনজেন ভিজিট ভিসার সাবমিশনের নামে ব্যাপক প্রতারনা চলছে ।

বিদেশ গমনে ইচছুক ভাইদের কাছে সবিনয় অনুরোধ-
১) সেনজেন ভিজিট ভিসার জন্য দিল্লিতে যাবেন না । ২) সঠিক নাম, ঠিকানা, অফিস, নিশ্চিত না হয়ে, ডিড ডকুমেন্টস ছাড়া, জামিনদার ছাড়া, রাস্তা-ঘাটে, রেস্টুরেন্টে মিটিং করে কাউকে আপনার ফাইল প্রসেসিং করতে দিবেন না, বিশেষ করে আপনার মূল পাসপোর্ট, কাগজপত্র, টাকা দিবেন না । দিলে আপনি ব্ল্যাকমেইলের শিকার হবেন । ৩) ইউরোপের কোন দেশেই চাকুরী ভিসার জন্য মেডিকেল টেস্ট লাগে না । শুধু মাত্র ইনসুরেনস লাগে তা ও আবার প্রসেসিং এর শেষ দিকে, এম্বাসী সাবমিশনের সময়। অথচ কিছু ব্যক্তি গ্রাহকের কাছে ফাইল নিয়েই বলে মেডিকেল টেস্ট করেন! সুতরাং, সাবধান । সফল ভাবে আপনার ফাইল প্রসেসিং এর কোন সামথ্যই এদের নেই । আসল উদ্দেশ্য, মেডিকেল বানিজ্য! ৪) বেশি তাড়াহুড়ো করে ভিজিট ভিসায় না গিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী চাকুরী ভিসায় যান যা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য সহায়ক ।

দেশে ৩৮টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলছে বাংলাদেশ ৷ এছাড়া ৪২টি জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের মাধ্যমে বিদেশগামী কর্মীদের রেজিস্ট্রেশন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং প্রবাসী ও প্রত্যাগত কর্মীদের কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে ৷ ‘রুপকল্প-২০২১’ সামনে রেখে ইতিমধ্যে বিএমইটি বিদেশগামী কর্মীদের কেন্দ্রীয়ভাবে ডাটাবেজ সংরক্ষণ, অনলাইন রেজিস্ট্রেশন, অন-লাইন অভিযোগ ব্যবস্থাপনাসহ ভুয়া ভিসায় বিদেশগমন রোধ করতে প্রত্যেক বিদেশগামী কর্মীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট সম্বলিত ‘স্মার্ট কার্ড’-এর মাধ্যমে বহির্গমণ ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে৷প্রবাসে বাংলাদেশি কর্মী মৃত্যুবরণ করলে বিমানবন্দর থেকে লাশ গ্রহণের সময় মৃতের পরিবারকে লাশ পরিবহণ ও দাফন হিসেবে ৩৫ হাজার টাকার চেকের মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য দেয়া হচ্ছে বর্তমানে ৷ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে এই চেক প্রদান করা হয় ৷ বিদেশে বৈধভাবে যাওয়া মৃত কর্মীর পরিবারকে ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড’ থেকে দেওয়া হয় আর্থিক অনুদানও ৷ থাকে ৷ সরকার ১৯৭৬ সালে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) প্রতিষ্ঠা করে ৷ এ সংস্থার উদ্দেশ্যে হলো, দেশের অভ্যন্তরীণ জনশক্তির চাহিদা পূরণসহ বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ৷ বিএমইটি বৈদেশিক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দেশের জনশক্তির যথাযথ ব্যবহার সংক্রান্ত কৌশল ও সামগ্রিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে৷ বিএমইটির অধীনে ৪২টি জেলাকর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, চারটি বিভাগীয় কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, ৪৭টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, চারটি ইনস্টিটিউট অফ মেরিন টেকনোলজি ও তিনটি শিক্ষানবিশ প্রশিক্ষণ অফিস আছে ৷ উপরে প্রবাসীদের নানা সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হল । আশা রাখি দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি এইসব প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধাদের সকল সংকট নিরসনে সরকার সুযোগ্য ভূমিকা রাখতে এগিয়ে আসবে ।

লেখকঃ আইনজীবী, কলামিস্ট, মানবাধিকার ও সুশাসনকর্মী।

Logo-orginal