, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪

admin admin

ইরাকে নির্যাতন করে ঢাকায় মুক্তিপণ আদায়, বাবা জানতে চাই ছেলে বেঁচে আছে কি না?

প্রকাশ: ২০২১-০৮-৩০ ১২:০১:১৫ || আপডেট: ২০২১-০৮-৩০ ১২:০১:১৬

Spread the love

নির্যাতনের শিকার আব্দুল্লাহ হক রাব্বি। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার কারওয়ানবাজারের মাছ বিক্রেতা বাদল মিয়ার সামাজিক যোগাযোগ অ্যাপ ইমোতে গত ৩ আগস্ট একটি ভিডিও ক্লিপ আসে। সেটি চালু করতেই দেখেন, ইরাক প্রবাসী ছেলে আব্দুল্লাহ হক রাব্বিকে (২২) শিকল দিয়ে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করা হচ্ছে। বারবার বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন তিনি। এরপর ছেলের মুঠোফোনের ইমো থেকে কল করে বাদল মিয়াকে বলা হয়, ‘দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ না দিলে আব্দুল্লাহকে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ফেলা হবে।’

শিকল দিয়ে বেঁধে আব্দুল্লাহকে নির্যাতন করেন অপহরণকারীরা। দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি প্রবাসীদের স্বার্থে হুবুহু আরটিএমে তুলে ধরা হল।

দশ লাখ টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই জানালে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় অপহরণকারীরা। একপর্যায়ে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে আব্দুল্লাহকে ছাড়তে রাজি হয় তাঁরা। এরপর দেশের একটি বেসরকারি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে দ্রুত টাকা জমা দিতে বলা হয় বাদল মিয়াকে। ছেলেকে বাঁচাতে উচ্চহারে সুদে ঋণ নিয়ে ৫ আগস্ট পাঁচ লাখ টাকা পাঠান ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। টাকা পাঠালেও ২৫ দিন ধরে ছেলের আর কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না বাদল মিয়া।

মুক্তিপণ দিয়েও ছেলের সন্ধান না পেয়ে বাদল মিয়া গত ২৪ আগস্ট হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তে নেমে ২৫ আগস্ট ফরিদপুরের সদরপুর থেকে রনি মুনসি এবং ঢাকা থেকে শাহনাজ বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শাহনাজ বেগম পেশায় রাজারবাগ প্রশান্তি হাসপাতালের আয়া। তাঁর অ্যাকাউন্টেই পাঁচ লাখ টাকা জমা দেন আব্দুল্লাহর বাবা বাদল মিয়া। গ্রেপ্তারের পরদিন ২৬ আগস্ট দুজনেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

‘এখন আল্লাহর ওপর ভরসা ছাড়া কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। আমার ছেলে বেঁচে আছে কি না, সেটি জানতে চাই।’

বাদল মিয়া; ইরাকে নির্যাতনের শিকার আব্দুল্লাহ হক রাব্বির বাবা।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার দুজন ছাড়া এই চক্রের আরও ছয়জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্য চারজন ইরাকে অবস্থান করছেন। তাঁরা হলেন, ফরিদপুর সদরপুর থানার জহিরুল ইসলাম, হাবিব ফকির, জিয়াউর রহমান ও সুনামগঞ্জের ছাতক থানার শিহাব উদ্দিন। বাংলাদেশে অবস্থানরত চক্রটির অপর দুই সদস্য আতিয়া সুলতানা নিপা ও মুরাদ ফকির পলাতক। নিপা এই চক্রের সদস্য ইরাক প্রবাসী জহিরুল ইসলামের স্ত্রী। মুরাদ ফকির এক মাস আগে ইরাক থেকে দেশে ফেরেন। তিনি জহিরুল ইসলামের চাচাতো ভাই।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মো. শহিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ইরাকে বাংলাদেশি প্রবাসীদের জিম্মি করে নির্মম নির্যাতনকারী একটি চক্রকে শনাক্ত করা হয়েছে। চক্রের সদস্যরা বৈধ নাকি অবৈধভাবে ইরাকে গেছেন এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি (ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো) এবং সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের মাধ্যমে ভুক্তভোগীকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

অপহরণের শিকার তরুণকে উদ্ধারে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি ও দূতাবাসের মাধ্যমে চেষ্টা চলছে। চিহ্নিত হওয়া ৮ সদস্যের মধ্যে দুজন গ্রেপ্তার।
পুলিশের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার হাফিজ আল ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, বাদল মিয়ার কাছ থেকে পাওয়া টাকা চক্রের সদস্যরা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন করেছেন।

এসব নম্বর এবং অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে তদন্ত চলছে। গ্রেপ্তার হাসপাতালের আয়া শাহনাজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসেই অস্বাভাবিক অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এই চক্রটি আরও কয়েকজনকে অপহরণ করে এভাবে মুক্তিপণ আদায় করেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

উচ্চসুদে ঋণ নিয়ে টাকা পাঠান আব্দুল্লাহর বাবা
আব্দুল্লাহর বাবা বাদল মিয়া প্রায় ২৫ বছর ধরে পরিবার নিয়ে হাতিরঝিল থানাধীন তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি এলাকায় বসবাস করেন। তিন সন্তানের জন্ম এই এলাকাতেই। সংসারের অভাব ঘুচাতে চার বছর আগে সাড়ে চার লাখ টাকা খরচ করে ইরাকে যান আব্দুল্লাহ। কুর্দিস্তানে একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করে নিয়মিত দেশে টাকাও পাঠাতেন তিনি। তবে করোনা মহামারিতে রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেলে অর্থ সংকটে পড়েন তিনি। তবে ঈদ উল আজহার আগে রেস্তোরাঁ চালু হওয়ার পর আবারও কাজে ফেরেন আব্দুল্লাহ।

বাদল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ছেলের নির্যাতনের ভিডিও দেখার পর তাঁরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। ঘরে ৫০ হাজার টাকা ছিল। বাকি সাড়ে ৪ লাখ টাকা উচ্চ সুদে ঋণ নেন। প্রতি মাসে সুদই দিতে হবে ২৫ হাজার টাকা করে। এভাবে মুক্তিপণ দিয়েও লাভ হয়নি, ছেলে বেঁচে আছে কিনা জানেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘এখন আল্লাহর ওপর ভরসা ছাড়া কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। আমার ছেলে বেঁচে আছে কি না, সেটি জানতে চাই।’

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই মামলায় আজকের দিন পর্যন্ত মোট ৬ জনের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া ৮ থেকে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Logo-orginal