, বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

admin admin

আসামে মুসলমানদের উচ্ছেদে বাংলাদেশের করনীয়’

প্রকাশ: ২০২১-০৯-২৭ ২০:৪২:২৯ || আপডেট: ২০২১-০৯-২৭ ২০:৪২:৩০

Spread the love

আবুল কাশেম, আরটিএম ডেস্কঃ ভারতের আসামের দরং জেলার ধলপুর হিলস ও সিপাহঝাড় এলাকায় প্রায় ৭৭ হাজার বিঘা জমি দখল করে বিশাল একটি শিবমন্দির কমপ্লেক্স বানানোর লক্ষ্যে রাজ্য সরকার সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে বেশ কয়েক মাস ধরেই।

সেই অভিযানের সবশেষ ধাপে গত সোমবার ওই অঞ্চলের বাসিন্দা প্রায় আটশো পরিবারের বেশ কয়েক হাজার মানুষকে তাদের ভিটে থেকে উচ্ছেদ করে সেই জমি খালি করিয়ে দেওয়া হয়।

তার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দরংয়ে উচ্ছেদ-বিরোধী কমিটির জমায়েতে পুলিশ গুলি চালালে অনেকে হতাহত হয়েছেন।

কথিত একজন ফটো সাংবাদিক যেভাবে লাশের উপর নৃত্য করে নির্যাতন করেছে, তাতে সাম্প্রদায়িক উস্কানি কতই নির্মম, তার প্রতিচ্ছবি আবারো দেখলো বিশ্ব মানবতা ।

আসামে মুসলিম উচ্ছেদে নীরব কেন বিশ্ব ?

আসামের মুসলমানদের পরিকল্পিত ভাবে উচ্ছেদ করার বিশয়ে সেপ্টম্বরের ১০ তারিখে সাংবাদিক আনিস আলমগীর ভাইয়ের সময় উপযোগী একটি লেখা পড়েছিলাম, তিনি লিখেছেন যে, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি বলে যে প্রক্রিয়ায় রাখাইন ছাড়া করেছে, ঠিক সেই প্রক্রিয়ায় আসাম থেকে মুসলমানদের তাড়ানোর প্রক্রিয়া সবে আরম্ভ করেছে ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার।

ভারত সরকারও ঠিক একই রকম কৌশল অবলম্বন করে নাগরিকপঞ্জির আড়ালে আসামে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ১৯ লাখ ছয় হাজার ৬৫৭ অসমীর নাগরিকত্ব বাতিল করেছে। গত ৩১ আগস্ট ২০১৯ সরকার যেই ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স-এনআরসি প্রকাশ করেছে, তাতে ১৯ লাখের মধ্যে ৬ লাখ মুসলমান। দুই লাখ গোর্খাসহ অন্যরা। বাকি ১১ লাখ বাঙালি হিন্দু।

নাগরিকপঞ্জিতে যাদের নাম ওঠেনি তাদের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে আসামের গোয়ালপাড়ায় প্রথম এক্সক্লুসিভ ডিটেনশন সেন্টার নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। এই নির্মাণে খরচ হচ্ছে ৪৫ কোটি রুপি। আরও ১১টি ডিটেনশন সেন্টার নাকি তৈরি করা হবে।

দ্রুত নাগরিকপঞ্জির বিষয়টি শেষ করার জন্য কয়েক শত ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে যাদের নাগরিকত্ব প্রমাণিত হবে না তাদের এসব ক্যাম্পগুলোতে রাখা হবে। এ পর্যন্ত আসামের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালগুলো এক লাখ মানুষকে বিদেশি ঘোষণা করেছে। ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা যথেচ্ছভাবে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। সঠিকভাবে আবেদনকারীর আবেদন শুনছেন না।

নাগরিকপঞ্জির তালিকা থেকে বাদপড়া হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুধু নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না মুসলমানদের। শেষ পর্যন্ত হয়তো ছয় লাখ মুসলমানকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হবে। সম্ভবত ১১ লাখ হিন্দু এবং ২ লাখ অন্যান্য জাতি-ধর্মের লোকদের আসামে থাকতে দেবে না অসমীরা। হয়তো তারা ভারতের অন্যত্র গিয়ে বসতি করবে। এর আগেও আন্দামান-নিকোবরের মতো দণ্ডকারণ্যে বহু বাঙালির বসতির ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

যখন নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ হতে যাচ্ছিল তার আগে বাংলাদেশ সফর করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর। সফরকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, আসামের নাগরিকপঞ্জির বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অথচ আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকায় ১৯ লাখ লোক বাদ পড়ার একদিন পরেই রাজ্যটির অর্থমন্ত্রী বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, ‘১৪-১৫ লাখ বিদেশিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশকে তাদের এই ১৪-১৫ লাখ লোককে ফিরিয়ে নিতে বলা হবে।’ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

অন্যদিকে এনআরসি প্রকাশের পর এ নিয়ে তুমুল আলোচনা সমালোচনার মধ্যে দুই দিনের সফরে ৮ সেপ্টেম্বর আসাম সফর করেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। সেখানে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, প্রত্যেক অবৈধ অভিবাসীকে ভারত থেকে বের করে দেবে কেন্দ্রীয় সরকার।

ভারত সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আসামের অর্থমন্ত্রীসহ বিজেপি নেতাদের একজনের এক কথা শোনার পরও অত্যন্ত আশ্চর্য লাগছে বাংলাদেশ সরকারের নীরবতা দেখে। আসামের অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের পরই ঢাকাস্থ ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে কড়া প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। কড়া প্রতিবাদ না করলে ১৫ লাখ না হোক, ৬ লাখ মুসলমানকে একসময় রোহিঙ্গাদের মতো বাংলাদেশে ঠেলে দেবে ভারত। বাংলাদেশকে এখন থেকে সতর্ক হতে হবে আসামের নাগরিকত্বহীন মানুষদের নিয়ে। বিজেপি সভাপতি এর আগে বিভিন্ন জনসভায় আসামের কথিত অবৈধ অভিবাসীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কথা বললেও আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের আগে এই বক্তৃতায় তাদের কোন দেশে পাঠাবেন তা মুখে আনেননি।

ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বানানো আর আরএসএসের এজেন্ডা নিয়ে বিজেপি সরকার অগ্রসর হচ্ছে। অমিত শাহ কাজ করছেন আর নরেন্দ্র মোদি প্রলেপ দিচ্ছেন। এই জুটি কিন্তু অটল বিহারি বাজপেয়ি আর লালকৃষ্ণ আদভানি জুটির মতো নয়। গুজরাটে এরা ক্ষমতায় থাকতেই ২০০২ সালে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় প্রায় ২ হাজার মানুষ মারা গেছে। মনে রাখতে হবে, এরা আরও বহুদিন ধরে ভারতের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকবে। কারণ, বিরোধী দলগুলো মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সত্য অভিযোগ তোলার পরও ভারতীয় ভোটাররা সেসব কানে নেয়নি। মোদি সরকারের চাক্ষুষ ব্যর্থতা তারা উপেক্ষা করে হিন্দুত্বের আফিম খেয়ে বুঁদ হয়ে আছে।

এশিয়া মহাদেশের নামকরা বেশ কজন সাংবাদিক বার বার বলেছেন যে, হিন্দুত্বের আফিম দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা বিজেপির রক্তচক্ষু মুসলিম নিধনের শেষ কোথায় ?

প্রশ্ন উঠেছে, শত বছেরর জম্মভুমি ছেড়ে কোথায় যাবে ভিটেবাড়ী হারা মুসলিম সম্প্রদায়, কেন প্রতিবাদ গর্জে উঠছেনা খোদ ভারতের সর্ব্দলীয় রাজনৈতিক মোর্চা থেকে ?

ধর্ম নিরেপক্ষ দেশের দাবীদার ভারতের এমন কান্ডে চুপ পুরো বিশ্ব, মুসলিম বিশ্বের তেমন প্রতিবাদ পরিলক্ষিত হচ্ছেনা, তাহলে কি হবে এসব অসহায় মানুষের, এদের কি রোহিঙ্গাদের মত জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, যদি তাই হয়, তাহলে বাংলাদেশের উচিৎ হবে, বিষয়টি জাতিসঙ্ঘ সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট তুলে ধরা এবং ভারতের অমানবিক কর্ম বন্ধের যথাযত ব্যবস্থা গ্রহন করা, কারণ আরেকটি শর্নাথীর ঢল বহন করা বাংলাদেশের জন্য আত্নহত্যার শামিল হবে ।

বাংলাদেশ সরকারের জন্য বিষয়টি বড়ই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, হিন্দুস বান্ধব বিজেপি সরকারের উপর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে মুসলিমদের উপর নিপীড়ন বন্ধ করা ।

Logo-orginal