, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

ফেনীতে পৈশাচিক নির্যাতনের পর প্রবাসীর স্ত্রী অমিকে এবার এসিড দিয়ে ঝলসে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা’

প্রকাশ: ২০২১-০৯-০৬ ১৪:৩৪:২০ || আপডেট: ২০২১-০৯-০৬ ১৪:৩৪:২২

Spread the love

পৈশাচিক নির্যাতনের পর সাপ দিয়ে অপচিকিৎসা করানো ফেনীর ফুলগাজীর সেই গৃহবধূ খালেদা ইসলাম অমি (২৬)কে এবার এসিড দিয়ে ঝলসে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রোববার সন্ধ্যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এ আগে দুপুরে গৃহবধূর বাবার বাড়ি ফুলগাজী উপজেলার দরবারপুর ইউনিয়নের পূর্ব দরবারপুর গ্রামের সেকান্দরপুর মৌলভী বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পর সন্ধ্যায় অভিযুক্ত আবদুল্লাহ আল মিনারকে পুলিশ ও তারেক মজুমদারকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছেন ফুলগাজী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবু তাহের।

আহত খালেদা ইসলাম অমি পরশুরাম উপজেলার সাতকুচিয়া গ্রামের চৌধুরী বাড়ির আবুল হাসেমের ছেলে স্পেন প্রবাসী লিখন খানের স্ত্রী।

আহত অমির বোন শারমিন আক্তার জানান, রোববার সকালে তাদের মা শাহেন আরা বেগমসহ তিনি ফেনী শহরের ট্রাংক রোডের সচেতন নাগরিক সমাজের আয়োজনে নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ প্রতিরোধে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে। মানববন্ধন শেষে বাড়ি ফোর পথে খবর পান বাড়িতে অসুস্থ অমিকে জানালা দিয়ে দুর্বৃত্তরা এসিড নিক্ষেপ করেছে। খবর পেয়ে দ্রুত অমিকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গত আগস্ট মাসে শশুর বাড়িতে নির্যাতনের পর অনেকটা বাকরুদ্ধ অমি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কাগজে লিখে তার স্বজনদের জানায়, দুপুরের দিকে তারেক ও মিনার ঘরের জানালা দিয়ে তার উপরে এডিস ছুরে মারে।

হামলাকারী তারেক সম্পর্কে অমির ফুফাতো দেবর ও অপরজন মিনার স্বামীর ভাগ্নে হয়।

ফেনী জেনারেল হাসাপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) তৌহিদুল ইসলাম বাবু জানান, এসিডে অমির মুখ, গলা ও হাতের কিছু অংশ ঝলসে গেছে। জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

ফুলগাজী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবু তাহের জানায়, গৃহবধূ অমিকে এসিডে ঝলসে যাওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ সুপার খোন্দকার নূরুন্নবী তাকে দেখতে দ্রুত ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ছুটে যান। এ ঘটনার অমির মা শাহেন আরা বেগম বাদী হয়ে রাতে তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ মামলার অনত্যম আসামি আবদুল্লাহ আল মিনারকে গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে র‌্যাব-৭ ফেনী ক্যাম্পের কোম্পানী অধিনায়ক, উপ-পরিচালক, স্কোয়াড্রন লীডার আব্দুল্লাহ আল জাবের ইমরান জানান, গৃহবধূ অমিকে এসিড মেরে ঝলসে দেয়ার মামলায় এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি তারেক মজুমদারকে (২৪) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। রাতে তাকে ফুলগাজী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এর আগে গত ৭মফ আগস্ট রাতে গৃহবধূ খালেদা ইসলাম অমিকে শ্বশুর পরশুরামে সাপে দংশনের পর ফের সাপ দিয়ে অপচিকিৎসা ও পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি গৃহবধূর ননদ ও তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছিলো পুলিশ। গত ২১শে আগস্ট চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকা থেকে ননদ হাসিনা আক্তার ও তার স্বামী আবুল কাশেমকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে কারা কারাগারে রয়েছে।

খালেদা ইসলাম অমি’র মা শাহেন আরা বেগম জানান, ৫ বছর পূর্বে ২০১৬ সালে পারিবারিকভাবে অমি ও লিখনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য অমির শাশুড়ি খাইরুন নেছা, দেবর মো. রাসেল, বোন নুর নাহার, হাছিনা ও সামছুন নাহার, বোনের স্বামী আবুল কাশেম, ভাগিনা মোহাম্মদ হোসেন মিলে গৃহবধূ অমিকে নানাভাবে নির্যাতন করতো। গত ৭ই আগস্ট রাতে অমিকে একটি বিষধর সাপ দংশন করে।

অমি মৃত্যুর যন্ত্রণায় ছটফট করলেও তাকে সেসময় কোন চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। পরদিন ৮ই আগস্ট বিকেলে পাশের এলাকার একজন সাপুড়ে এনে (ওঝা) পুনরায় সাপ দিয়ে অপচিকিৎসার নামে অমিকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে। সাপকে অমির শরীরে ছেড়ে দিয়ে পানি ঢেলে নির্যাতনের ভিডিও ও ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পরদিন ৯ই আগস্ট অমিকে শ্বশুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শে গুরুতর অসুস্থ্য অমিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে ৮দিন চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ্য হলে গত ১৭ই আগস্ট অমিকে ফুলগাজীর বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। গত ২৬ আগস্ট উন্নত চিকিৎসার জন্য অমিকে ফের ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত কয়েক দিন আগে অমি বাবার বাড়ি ফিরে আসে। অমিকে নির্যাতনের ঘটনায় গত ২০ আগস্ট ফুলগাজী থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
সুত্রঃ মানবজমিন।

Logo-orginal