, বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

admin admin

জানাযার নামাজের নিয়ম ও মৃত ব্যক্তিকে যেভাবে দাফন করবেন”

প্রকাশ: ২০২১-১০-১৫ ১৪:০৪:১৩ || আপডেট: ২০২১-১০-১৫ ১৪:০৪:১৪

Spread the love

মাইয়েতকে প্রস্তুত করণ

মৃত্যুর আলামত প্রকাশ পেয়েছে এমন ব্যক্তির কাছে হাজির হওয়া এবং তাকে কালিমা لا إِله إِلا الله স্মরণ করিয়ে দেয়া সুন্নত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «তোমরা তোমাদের মৃত্যুগামী ব্যক্তিদেরকে لا إِله إِلا الله তালকীন করো।» [বর্ণনায় মুসলিম]

আর যখনে সে মারা যাবে তখন চোখ বন্ধ করে দেয়া হবে, এবং কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হবে। গোসল, কাফন, জানাযা ও দাফন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেরে ফেলা হবে।

মাইয়েতকে গোসল দেয়া, তৈরি করা ও দাফন করার হুকুম

মাইয়েতকে গোসল দেয়া, কাফন পরানো, বহন করে নেয়া, মাইয়েতের ওপর জানাজার নামাজ পড়া ও মাইয়েতকে দাফন করা ফরজে কিফায়া যদি যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ এ সব কাজ করে নেয়, তবে বাকিরাও দায়িমুক্ত হয়ে যাবে।

মাইয়েতকে গোসল দেয়ার হুকুম

১. মাইয়েতকে গোসল দেয়ার জন্য এমন ব্যক্তিকে বেছে নিতে হবে যে নির্ভরশীল, ইনসাফপূর্ণ, আমানতদার ও গোসল দেয়ার মাসআলা মাসায়েল সম্পর্কে অভিজ্ঞ।

২. মাইয়েত যদি গোসল দেয়ার ব্যাপারে কারও ব্যাপারে উপদেশ দিয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে তাকেই প্রাধান্য দিতে হবে। এরপর আত্মীয়দের মধ্যে নৈকট্যের বিবেচনায় যে এগিয়ে তাকে প্রাধান্য দিতে হবে। অবশ্য মাইতের গোসল বিষয়ক মাসআলা মাসায়েল সম্পর্কে যদি এদের যথেষ্ট জ্ঞান থাকে তবেই কেবল এদেরকে এগিয়ে দেয়া হবে। আর যদি না থাকে তবে যার আছে তাকে এগিয়ে দিতে হবে।

৩. পুরুষ মাইয়েতকে পুরুষরা গোসল দেবে। আর নারী মাইয়েতকে নারীরা। স্বামী ও স্ত্রী উভয়ে একে অন্যকে গোসল দেয়াতে পারবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা রাযি. কে বলেন: «তুমি কি খুশী হবে না, যদি তুমি আগে মারা যাও আর আমি তোমাকে গোসল দিই, কাফন পরাই, তোমার জানাজার নামাজ পড়ি, এরপর তোমাকে দাফন করি।» (বর্ণনায় ইবনে মাজাহ] আর পুরুষ ও নারী উভয়েই সাত বছরের নিচের বাচ্চাদেরকে গোসল দেয়াতে পারবে। কিন্তু কোনো কাফিরকে- মুসলিম নারী অথবা পুরুষ- গোসল দেয়াতে পারবে না। তার জানাজা বহন করতে পারবে না। তাকে কাফন দিতে পারবে না। তার জানাজার নামাজ পড়তে পারবে না। যদি সে পিতা হয় তবুও।

৪. যুদ্ধক্ষেত্রে যারা শহীদ হন তাদেরকে গোসল দেয়া, কাফন পরানো হবে না, এমনকি তাদের উপর জানাজার নামাজও পড়া হবে না। বরং তারা যে কাপড়ে মৃত্যুবরণ করেছেন সে কাপড়েই দাফন করা হবে।

৫. যদি গর্ভপাত হওয়া সন্তান চার মাস বয়সের হয়, তাহলে তাকে গোসল, কাফন ও জানাজা দেয়া হবে; কেননা চার মাস পর সে মানুষে পরিণত হয়েছে বলে ধরা হবে।

৬. মাইয়েতকে যে পানি দিয়ে গোসল দেয়া হবে তা পবিত্র ও বৈধ হতে হবে। আর গোসল দিতে হবে পর্দা দেয়া কোনো জায়গায়। গোসল দেয়ার সাথে যারা জড়িত নয় তাদের সেখানে উপস্থিত থাকা উচিত নয়

মাইয়েতকে গোসল দেয়ার পদ্ধতি

১. গোসল দেয়ার চকিতে মাইয়েতকে রাখা হবে। এরপর তার গুপ্তস্থান ঢেকে দেয়া হবে। তাকে কাপড়-চোপড়মুক্ত করা হবে। তাকে কোনো কক্ষে বা পর্দা দেয়া জায়গায় দৃষ্টির আড়ালে রাখা হবে।

২. গোসল দেয়ার সময় একটি কাপড়খণ্ড হাতে পেঁচিয়ে নেয়া গোসল দাতার জন্য মুস্তাহাব।

৩. গোসল দাতা মাইয়েতের মাথা উঠিয়ে বসার কাছাকাছি অবস্থায় রাখবে, এরপর তার পেটে হাত বুলাবে ও চাপ দেবে। এরপর সামনের ও পিছনের লজ্জাস্থান পরিষ্কার করবে এবং কোনো নাপাকি থেকে থাকলে তা পরিষ্কার করবে।

৪. গোসল দেয়ার নিয়ত করবে ও বিসমিল্লাহ বলবে।

৫. গোসলদাতা নামাজের অজুর ন্যায় মাইয়েতকে অজু করাবে। তবে কুলি করানো ও নাকে পানি দেয়ার সময় মুখ ও নাক মাসেহ করলেই চলবে।

১. মাইয়েতের মাথা ও দাঁড়ি বড়ইয়ের পাতাবিশিষ্ট পানি অথবা সাবান দিযে ধৌত করবে।

২. ডান দিক আগে ধৌত করবে, পরে বাম দিক ধৌত করবে। এরপর শরীরের বাকি অংশ ধৌত করবে।

৩. সর্বশেষ বার মাইয়েতের শরীর ধৌত করার সময় কর্পূর ব্যবহার করবে।

৪. মাইয়েতের শরীরের পানি মুছে ফেলা হবে।

৫. মাইয়েতের নখ, বগল ও নাভির নিচের চুল পরিষ্কার করা হবে

সতর্কতা

মাইয়েতের শরীর একবার ধৌত করা ওয়াজিব, যদি একবারেই পরিষ্কার হয়ে যায়। তবে মুস্তাহাব হলো তিনবার ধোয়া যদিও তিনবারের পূর্বেই পরিষ্কার হয়ে যায়।

যদি পানির অভাবে মাইয়েতকে গোসল দেয়া সম্ভব না হয়, অথবা পুড়ে যাওয়া অথবা অন্যকোনো কারণে গোসল দেয়ার অবস্থা না থাকে, তাহলে মাটি দিয়ে তাইয়াম্মুম করিয়ে দেবে।

গোসল দাতার জন্য মুস্তাহাব হলো গোসল দেয়ার পর নিজে গোসল করে নেয়া।

মাইয়েতকে কাফন পরানো

১. পুরুষের ক্ষেত্রে সুন্নত হলো তিনটি সাদা লিফাফা বা কাপড়খণ্ড দিয়ে মাইয়েতকে কাফন দেয়া। কাফন কটনের তৈরি এমন কাপড় দিয়ে দিতে হবে যার ভেতর দিয়ে মাইয়েতের শরীর দেখা যায় না। যা মাইয়েতের সমস্ত শরীর ঢেকে রাখে। তবে এ ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন করা হবে না।

নারীর ক্ষেত্রে সুন্নত হলো কটন দিয়ে তৈরি পাঁচটি কাপড় খণ্ডে কাফন দেয়া। আর তা হলো একটি ইযার তথা কোমড় থেকে পা পর্যন্তের জন্য বস্ত্রখণ্ড। মুখ ঢাকার একটি বস্ত্রখণ্ড। একটি জামা ও দুটি লিফাফা অর্থাৎ সমস্ত শরীর পেঁচানোর জন্য বস্ত্রখণ্ড।

শিশুকে এক কাপড়ে কাফন দেয়া হবে, তবে তিন কাপড়ে দেয়াও বৈধ। আর ছোট মেয়েকে একটি জামা ও দুটি লিফাফায় কাফন দেয়া হবে।

২. কাফনের তিন লিফাফা এনে তাতে ধুপের ধোঁয়া দেয়া। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «তোমরা যদি মাইয়েতকে সুগন্ধিযুক্ত ধোঁয়া দাও তবে তিনবার দাও। [বর্ণনায় ইবনে হিব্বান]

৩. লিফাফাগুলো একটার ওপর অন্যটা পেঁচানো হবে। একটি পেঁচানোর পর তার ওপর আম্বর, কর্পূর ও মিসক ইত্যাদির সুগন্ধি দেয়া হবে। তবে যদি মাইয়েত হজ্ব অথবা উমরার ইহরামে থাকে তাহলে তার কাপড়ে ধুপের ধোঁয়া দেয়া হবে না। কিন্তু মাইয়েতের শরীরে কোনো সুগন্ধি লাগানো হবে না। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «তোমরা তাকে সুগন্ধি স্পর্শ করিও না»। [বর্ণনায় বুখারী](বর্ণনায় বুখারী)

৪. মাইয়েতকে লিফাফাসমূহের উপরে শোয়ানো হবে। এরপর বাম দিক থেকে প্রথম লিফাফার উপরের দিক ডান দিকে এনে ফেলতে হবে। এরপর ডান দিক থেকে একই রূপে প্রথম লিফাফার অংশ বাম দিকে এনে ফেলবে। একইরূপে দ্বিতীয় ও তৃতীয় লিফাফাটি পেঁচাবে। এরপর মাথার কাছে অতিরিক্ত অংশ রাখবে এবং তা বেঁধে দেবে, যাতে বিক্ষিপ্ত না হয়ে যায়। অবশ্য দাফনের সময় তা আবার খুলে দিতে হবে।

ওয়াজিব হলো সমস্ত শরীর ঢেকে দেয়া। কিন্তু যদি সমস্ত শরীর ঢাকার মতো কাপড় না থাকে, তাহলে প্রথমে মাথা ঢাকবে, এরপর শরীরে যতদূর দেয়া যায় দেবে। আর পায়ের উপর ইযখির দিয়ে দেবে। ইযখির হলো সুগন্ধিযুক্ত একপ্রকার উদ্ভিদ। [বর্ণনায় বুখারী]

যে ব্যক্তি মুহরিম অবস্থায় মারা গেল, ইহরামের যে কাপড়ে সে মারা গিয়েছে, সে কাপড়েই তাকে দাফন করা হবে। পুরুষ মুহরিমের মাথা ঢাকা হবে না; কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «তোমরা তাকে পানি ও বড়ই পাতা দিয়ে গোসল করাও। তাকে দুই কাপড়ে কাফন দাও। আর তাকে সুগন্ধিযুক্ত করো না। মাথায় কাপড় আবৃত করো না; কেননা কেয়ামতের ময়দানে সে তালবিয়ারত অবস্থায় উঠবে।» (বর্ণনায় বুখারী)মাইয়তেকে লফিাফাসমূহরে উপরে শোয়ানো হব।ে এরপর বাম দকি থকেে প্রথম লফিাফার উপররে দকি ডান দকিে এনে ফলেতে হব।ে এরপর ডান দকি থকেে একই রূপে প্রথম লফিাফার অংশ বাম দকিে এনে ফলেব।ে একইরূপে দ্বতিীয় ও তৃতীয় লফিাফাটি পঁেচাব।ে এরপর মাথার কাছে অতরিক্তি অংশ রাখবে এবং তা বঁেধে দবে,ে যাতে বক্ষিপ্তি না হয়ে যায়। অবশ্য দাফনরে সময় তা আবার খুলে দতিে হব।ে

৫. ওয়াজবি হলো সমস্ত শরীর ঢকেে দয়ো। কন্তিু যদি সমস্ত শরীর ঢাকার মতো কাপড় না থাক,ে তাহলে প্রথমে মাথা ঢাকব,ে এরপর শরীরে যতদূর দয়ো যায় দবে।ে আর পায়রে উপর ইযখরি দয়িে দবে। ইযখরি হলো সুগন্ধযিুক্ত একপ্রকার উদ্ভদি।

৬. যে ব্যক্তি মুহরমি অবস্থায় মারা গলে, ইহরামরে যে কাপড়ে সে মারা গয়িছে,ে সে কাপড়ইে তাকে দাফন করা হব।ে পুরুষ মুহরমিরে মাথা ঢাকা হবে না; কনেনা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেনে,«তোমরা তাকে পানি ও বড়ই পাতা দয়িে গোসল করাও। তাকে দুই কাপড়ে কাফন দাও। আর তাকে সুগন্ধযিুক্ত করো না। মাথায় কাপড় আবৃত করো না; কনেনা কয়োমতরে ময়দানে সে তালবয়িারত অবস্থায় উঠব।েটার ওপর অন্যটা পঁেচানো হব।ে একটি পঁেচানোর পর তার ওপর আম্বর, র্কপূর ও মসিক ইত্যাদরি সুগন্ধি দয়ো হব।ে তবে যদি মাইয়তে হজ্ব অথবা উমরার ইহরামে থাকে তাহলে তার কাপড়ে ধুপরে ধোঁয়া দয়ো হবে না। কন্তিু মাইয়তেরে শরীরে কোনো সুগন্ধি লাগানো হবে না। হাদীসে এসছে,ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেনে,«তোমরা তাকে সুগন্ধি র্স্পশ করওি না»।

৪. মাইয়তেকে লফিাফাসমূহরে উপরে শোয়ানো হব।ে এরপর বাম দকি থকেে প্রথম লফিাফার উপররে দকি ডান দকিে এনে ফলেতে হব।ে এরপর ডান দকি থকেে একই রূপে প্রথম লফিাফার অংশ বাম দকিে এনে ফলেব।ে একইরূপে দ্বতিীয় ও তৃতীয় লফিাফাটি পঁেচাব।ে এরপর মাথার কাছে অতরিক্তি অংশ রাখবে এবং তা বঁেধে দবে,ে যাতে বক্ষিপ্তি না হয়ে»(বর্ণনায় বুখারী)

জানাজার নামাজজানাজার নামাজের আরকান

১. সক্ষম ব্যক্তিদের দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া।

২. চার তাকবীর

৩. সূরা ফাতিহা পড়া৪. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ পড়া।

৫. মাইয়েতের জন্য দুআ করা

৬. সালাম ফেরানো

জানাজার নামাজের সুন্নত

৭. কিরাতের পূর্বে বিসমিল্লাহ বলা।

৮. নিজের জন্য ও মুসলমানদের জন্য দুআ করা।

৯. গোপনে কিরাত পড়া।

১০. কাতার বাড়িয়ে দেয়া। কমপক্ষে তিন কাতার করা।

জানাজার নামাজের পদ্ধতি

১. ইমাম মাইয়েতের বুক বরাবর দাঁড়াবে, মাইয়েত পুরুষ হোক বা নারী। আর মুকতাদীরা তার পেছনে দাঁড়াবে অন্যান্য নামাজের মতোই। এরপর চার তাকবীর দেবে নিম্নবর্ণিতভাবে:

২. প্রথম তাকবীর তথা তাকবীরে তাহরিমা দেয়ার পর সূরা ফাতিহা পড়বে।

৩. দ্বিতীয় তাকবীর দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ পড়বে, অন্যান্য নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদের পর যে দরুদ পড়া হয় সে দরুদ পড়বে।

৪. তৃতীয় তাকবীর দিয়ে মাইয়েতের জন্য, নিজের জন্য ও মুসলমানদের জন্য দুআ করবে। বলবে:

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا ، وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيرِنَا وَكَبِيرِنَا ، وَأُنْثَانَا وَذَكَرِنَا ، اللَّهُمَّ مَنْ تَوَفَّيْتَ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الإِيمَانِ ، وَمَنْ أَحْيَيْتَهُ فَأَحْيِهِ عَلَى الإِسْلامِ ، اللَّهُمَّ لا تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ ، وَلا تُضِلَّنَا بَعْدَهُ 

আর যদি মাইয়েত নারী হয়, তাহলে শেষ দুটি বাক্যের সর্বনাম পরিবর্তন করে বলবে :(বর্ণনায় মুসলিম)

 اللَّهُمَّ لا تَحْرِمْنَا أَجْرَها ، وَلا تُضِلَّنَا بَعْدَها

মাইয়েত যদি শিশু হয়, গর্ভপাতজনিত শিশু হয়, তাহলে বলবে,(বর্ণনায় বুখারী)

اللهم اجعله ذخراً لوالديه، وفَرَطاً، وأجراً، وشفيعاً مجاباً

৫. চতুর্থ তাকবীর দিয়ে সামান্য সময়ের জন্য চুপ থাকবে। এরপর ডানে-বামে সালাম দেবে।

মাইয়েতকে বহন করা, মাইয়েতের সাথে যাওয়া এবং দাফন করা

জানাজার নামাজ শেষ হলে সুন্নত হলো মাইয়েতকে বহন করে কবরে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়া। আর যে ব্যক্তি জানাজার সাথে যাবে তার জন্য মুস্তাহাব হলো জানাজা বহনে শরীক হওয়া। আর যে মাইয়েতকে কবরে প্রবেশ করাবে, তার জন্য সুন্নত হলো بسم الله، وعلى ملة رسول الله বলা। কবরে ডান পাঁজরের উপর কাঁত করে কিবলামুখী করে মাইয়েতকে রাখা। এরপর কাফনের বাঁধ খুলে দেয়া। এরপর লাহদ কবর হলে তাঁর ফাঁক বন্দ করে দেয়া।

যে দাফন কর্মে উপস্থিত হবে, তার জন্য সুন্নত হলো দুই হাতের চুল্লি মাটি দিয়ে ভরে নেয়া এবং তা তিনবার কবরে নিক্ষেপ করা। এরপর মাটি দিয়ে কবর ঢেকে দেয়া। সমতল থেকে কবর এক বিঘত পরিমাণ উঁচু করে দেয়া। এরপর কবরের ওপর কঙ্কর কিংবা পাথর রাখা। পানির ছিটা দেওয়া। কবরের এক দিকে অথবা উভয় দিকে বড় পাথর রাখাতে কোনো অসুবিধা নেই। যাতে তা কবরের আলামত হিসেবে থেকে যায়|

তাযিয়া

মৃত ব্যক্তির পরিবার পরিজনকে তাযিয়া বা সহমর্মিতা জানানো সুন্নত; কেননা তাদের হৃদয় জুড়ানো, তাদের বিপদ হালকা করা এবং ধৈর্যধারণের প্রতি উৎসাহ দেয়ার জন্য এটি একটি মাধ্যম।

,لله ما أخذ، وله ما أعطى، وكل شيء عنده بأجل مسمى

(দেয়া-নেয়া আল্লাহর অধিকারভূক্ত। আর আল্লাহর কাছে প্রতিটি বিষয়ই সুনিদিষ্ট সময়ের সাথে বাঁধা।»(বর্ণনায় বুখারী)

কবর যিয়ারত

পুরুষদের জন্য মৃত্যু থেকে উপদেশ গ্রহণ ও মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করার উদ্দেশ্যে কবর যিয়ারত করা সুন্নত। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত থেকে নিষেধ করেছি, এখন তোমরা যিয়ারত করো; কেননা তা তোমাদেরকে পরকাল স্মরণ করিয়ে দেয়।»(বর্ণনায় মুসলিম)

ঈদের দিন কবরস্থান যিয়ারত করা

কবরস্থান যিয়ারতের জন্য ঈদের দিনকে নির্দিষ্ট করা এবং এটাকে শরীয়তসম্মত মনে করা বিদআত। কেননা এ কাজের পক্ষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোনো হাদীস আসেনি।

কবর যিয়ারতের সময় যেসব দুআর কথা এসেছে তন্মধ্যে কয়েকটি হলো নিম্নরূপ:

السلام عليكم دار قوم مؤمنين، وإِنا إِن شاء الله بكم لاحقون

«আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, মুমিন সম্প্রদায়ের আবাস স্থল। আমরা আপনাদের সাথে যুক্ত হব ইনশাআল্লাহ।» (বর্ণনায় মুসলিম)

السلام على أهل الديار من المؤمنين والمسلمين، ويرحم الله المستقدمين منا والمستأخرين، وإِنا إِن شاء الله بكم للاحقون

আপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক হে অত্র জায়গায় বসবাসকারী মুমিন-মুসলিমগণ। আর আল্লাহ তাআলা রহম করুন যারা পূর্বে গত হয়েছেন এবং যারা পববর্তীতে গত হয়েছেন। আমরা আপনাদের সাথে যুক্ত হব, ইনশাআল্লাহ। আমাদের জন্য ও আপনাদের জন্য আল্লাহর দরবারে পরিত্রাণ কামনা করি। [বর্ণনায় মুসলিম]

أسأل الله لنا ولكم العافية

,আল্লাহর কাছে আমাদরে জন্য এবং আপনাদরে জন্য পরত্রিাণ র্প্রাথনা কর।ি»(বর্ণনায় মুসলিম)

১. কবরে বাতি জ্বালানো : ইবনে আব্বাস রাযি.বর্ণনা করে বলেন: «কবর যিয়ারতকারী নারী এবং যারা কবরকে মসজিদে পরিণত করে এবং যারা কবরে বাতি জ্বালায় তাদের সবার উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লানত করেছেন।» (বর্ণনায় তিরমিযী)

২. বরকত হবে ধারণা করে কবরের কোনোকিছু স্পর্শ করা, কবরের চার পাশে তাওয়াফ করা, মাইয়েতের কাছে কোনোকিছু চাওয়া ইত্যাদি শিরক যদি এ বিশ্বাস থাকে যে এ কবর কোনো উপকার বা অপকার করতে সক্ষম; কেননা উপকার বা অপকার করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই রাখেন। ইরশাদ হয়েছে

(قُل لَّآ أَمۡلِكُ لِنَفۡسِي نَفۡعٗا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُۚ ّ)

{বল, «আমি আমার নিজের কোন উপকার ও ক্ষতির ক্ষমতা রাখি না, তবে আল্লাহ যা চান।} [সূরা আল আরাফ:১৮৮]

৩. মসজিদে দাফন করা বা কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করা অথবা কবর সামনে রেখে নামাজ আদায় করা: হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «আল্লাহ তাআলা ইহুদী ও নাসারাদেরকে লানত করেছেন; কেননা তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে।»(বর্ণনায় বুখারী)

জানাজার কিছু আহকাম

১. যে ব্যক্তি জানাজার নামাজ পেল না, সে কবরের কাছে দাফনের পূর্বে বা পরে জানাজার নামাজ পড়তে পারবে। যে নারী মসজিদ পরিষ্কার করত সে যখন মারা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কবরের উপর জানাজার নামাজ পড়েছেন।

২. মাইয়েতের পরিবারের জন্য খাবার তৈরি করা মুস্তাহাব। কেননা তাদের উপর পতিত বিপদই তাদেরকে ব্যস্ত রাখে। বর্ণনায় এসেছে যে, জাফর পরিবারের কেউ মারা গেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,«তোমরা আলে জাফরের জন্য খাবার তৈরি করো; কেননা তাদেরকে ব্যস্ত রাখে এমন একটি বিষয় তাদের উপর পতিত হয়েছে।»(বর্ণনায় আবু দাউদ)- মাইয়েতের জন্য কাঁদা যাবে তবে তা হতে হবে আওয়াজ উঁচু না করে, মাইয়েতের প্রশংসকীর্তন না করে এবং বিরক্তিভাব প্রকাশ না করে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছেলে ইবরাহীম যখন মারা যান, তখন তিনি বলেছেন,

৩. «নিশ্চয় চোখ অশ্রুসিক্ত হয়, অন্তর ভারাক্রান্ত হয়, তবে আল্লাহ যাতে খুশি হবেন না এমন কথা আমরা বলি না। আর হে ইবরাহীম, নিশ্চয় আমরা তোমার বিচ্ছেদে চিন্তাগ্রস্ত।»
(বর্ণনায় বুখারী)

৪. জিহাদের ময়দানে যিনি শহীদ হন তিনি যে পোশাকে শহীদ হন সে পোশাকেই তাকে দাফন করা হবে। তাঁকে গোসল দেয়া হবে না এবং তার জানাজার নামাজও পড়া হবে না। হাদীসে এসেছে, কবর যিয়ারতের সময় যদি কবরবাসীদের জন্য রহমত, মাগফিরাত ইত্যাদির দুআ করা হয় তবে তা জায়েয হবে।

সংকলনে: আবুল কাশেম।

Logo-orginal