, শনিবার, ৪ মে ২০২৪

admin admin

বিদেশগামীদের সাথে অভিনব প্রতরণা’ ময়লার ঝুড়ির রহস্য ফাঁস”

প্রকাশ: ২০২১-১১-১৩ ১০:৫১:০৮ || আপডেট: ২০২১-১১-১৩ ১০:৫১:০৯

Spread the love

প্রতিদিন অফিস পরিস্কার করার সময় ময়লার ঝুড়ির দিকে বিশেষ মনোযোগ দেয় মফিজুল হক টুটুল। সেখানে থাকা কাগজপত্র অফিসের বিবেচনায় পরিত্যক্ত হলেও তার কাছে খুবই মূল্যবান। গোপনে সংগ্রহ করা কাগজগুলো সে সরবরাহ করে তার দুই সহযোগীর কাছে। তারা কাগজপত্র ঘেঁটে ফোন নম্বর বের করে পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন দেয় পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের। এরপর তথ্য যাচাইয়ের নামে প্রত্যেকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় নূ্যনতম ৫০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। এভাবে প্রতি মাসে তাদের আয় গড়ে লাখ টাকা!

ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে সম্প্রতি এই চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। জিজ্ঞাসাবাদে তারা প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে। তাদের মধ্যে টুটুল ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে মালি ও ঝাড়ূদার হিসেবে কর্মরত ছিল। অন্য দু’জন হলো- শিক্ষার্থী রাসেল হোসেন ইমন ও পাসপোর্ট অফিসের দালাল জুয়েল আহমেদ।

ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুনায়েদ আলম সরকার সমকালকে বলেন, পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা ব্যক্তিদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে থাকে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। প্রতারকরা বিভিন্ন উপায়ে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে এসবি কর্মকর্তা পরিচয়ে কথা বলে। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য তারা ফরমে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আবেদনকারীর নাম-ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য জানায়। এতে অনেকেই তাদের দাবি করা অর্থ দিয়ে দিতেন।

তদন্ত সংশ্নিষ্টরা জানান, পঞ্চম শ্রেণি পাস করা টুটুল মাস্টাররোলে ঝাড়ূদার হিসেবে কাজ করার সুবাদে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের বিভিন্ন শাখায় তার যাতায়াত ছিল। ময়লার ঝুড়ি থেকে পরিত্যক্ত কাগজ সংগ্রহ ছাড়াও সে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন স্থানে জমা আবেদন ফরমের ছবি তুলে রাখত। আবার কখনও তাকে কোনো নথি ফটোকপি করতে দেওয়া হলে সেগুলোর কপি নিজের কাছে রেখে দিত। পরে সেগুলো দিত দুই সহযোগীকে। তারা সেখান থেকে পাসপোর্ট প্রত্যাশীর নম্বর নিয়ে কল করত। তথ্য যাচাই করে পজিটিভ বা ইতিবাচক রিপোর্ট দেওয়ার নামে আবেদনকারীর আর্থিক অবস্থা বুঝে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা চাইত। নইলে নেগেটিভ রিপোর্ট দেওয়া হবে এবং পাসপোর্ট হবে না বলে হুমকিও দেওয়া হতো। এভাবে গত তিন-চার মাসে তারা প্রায় ৩০০ পাসপোর্ট প্রত্যাশীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তারের পর জুয়েলের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে গত পাঁচ মাসে তিন লাখ ছয় হাজার ৪০০ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। একইভাবে রাসেলের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে এক মাসে ২৬ হাজার ৫৬০ টাকা নেওয়ার তথ্য মিলেছে। এ ছাড়া অন্যান্য উপায়েও তারা টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই দু’জন প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া টাকার একটি অংশ টুটুলকে দিত। সাধারণত প্রত্যেক আবেদনকারীর তথ্য সরবরাহের জন্য তাকে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দেওয়া হতো। বাকি টাকা দু’জন ভাগ করে নিত। গত ৮ নভেম্বর রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। তাদের কাছে ছয়টি মোবাইল ফোন ও ১১টি সিমকার্ড ছাড়াও মোবাইল ফোনে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের বেশ কিছু কাগজপত্রের ছবি পাওয়া গেছে।

মাহে আলম নামে এক ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের জানান, এসবির সাব-ইন্সপেক্টর পরিচয়ে টাকা চাওয়ায় তিনি তা দিয়ে দেন। কিন্তু পরে আবারও এসবি কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন পেয়ে তিনি দ্বিধায় পড়েন। পরে সেই কর্মকর্তা যখন তার বাসায় গিয়ে তথ্য যাচাই করেন, তখন তিনি বুঝতে পারেন আগে প্রতারকের খপ্পরে পড়েছিলেন।

ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা আবেদন ফরম জমা দেওয়ার পর তা প্রক্রিয়াকরণের সময় কিছু কাগজ ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেওয়া হয়। এর ফলে সুযোগ পায় প্রতারকরা। এ জন্য পরিত্যক্ত কাগজ একেবারে নষ্ট করে ফেলতে হবে। সেই সঙ্গে আবেদনকারীর তথ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে কেউ প্রতারণার চেষ্টা করলে পুলিশকে জানানোর পরামর্শ দেন কর্মকর্তারা।

Logo-orginal