, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

admin admin

ইসলামী আন্দোলন ঈমানের অপরিহার্য্য দাবী

প্রকাশ: ২০২১-১২-৩০ ২১:৫৮:৪৩ || আপডেট: ২০২১-১২-৩০ ২১:৫৮:৪৫

Spread the love

ইসলাম ডেস্কঃ সকল প্রশংসা সেই সত্তার যার হাতের মুঠোতে আমাদের জীবন-মৃত্যু। সকল প্রশংসা তাঁরই যিনি আমা্দের অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন, শুকরিয়া প্রকাশ করছি রাব্বুল আলামিনের যিনি আমাদের কলমকে সচল রেখেছেন।
সে রবের কাছে লাখো-কোটি শুকরিয়া যিনি আমাকে মুসলিম বা মুসলমান সম্পর্কে কিছু লেখার জন্য সাহায্য করেছেন, দিয়েছেন জ্ঞান।
অসংখ্য দরুদ ও সালাম বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত, মহান শিক্ষক সাইয়্যিদুল মুরসালিন হযরত মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি, যিনি আল্লাহ্র দীনকে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। যিনি পৃথিবীর ইতিহাসে এক ঘোরতর জাহেলিয়াতের যুগে আবির্ভূত হয়ে ইসলামের দাওয়াতের মাধ্যমে জাহেলিয়াতের পংকিলতায় নিমজ্জিত জাতিকে তাওহিদি চেতনায় উদ্ভাসিত ও আলোকিত করেছেন।
ভুমিকাঃ প্রিয় দ্বীনি ভাইয়েরা” আজকের আলোচ্য বিষয়, ইসলামী আন্দোলন ঈমানের অপরিহার্য্য দাবী’ এই বিষয়ে আমি আপনাদের সম্মুখে কয়েকটি আয়াত, ১টি হাদীস ও ইতিহাসের কয়েকটি ঐতিহাসিক ঘটনা তুলে ধরে, তা থেকে শিক্ষণীয় বিষয় বুকে ধারণ করে বাকী জীবন অতিবাহিত করব ইনশ আল্লাহ ।

ব্যাখ্যাঃ সূরা তাওবার ৭১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,
৯:৭১ وَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتُ بَعۡضُهُمۡ اَوۡلِیَآءُ بَعۡضٍ ۘ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ یُؤۡتُوۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ یُطِیۡعُوۡنَ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ ؕ اُولٰٓئِکَ سَیَرۡحَمُهُمُ اللّٰهُ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ
“মুমিন নর-নারী একে অপরের সহায়ক, তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে বিরত রাখে। নামাজ কায়েম করে এবং যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে, খুব শীঘ্রই আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করবেন এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (৯:৭১)

তারা একে অপরকে সৎকাজের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করে এবং অন্যায় অসৎকাজ থেকে একে অপরকে বিরত রাখে। মূলত ‘আমর্ বিল মা’রুফ ওয়া নাহী আনিল মুনকার’ অর্থাত সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করা এবং অসৎকাজে বিরত রাখা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান।
এই বিধানের কারণে ব্যক্তিগত পর্যায়ের বাইরেও সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের প্রতি দৃষ্টি রাখা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।
কারণ কুসংস্কৃতি, অপসংস্কৃতি এবং কুরুচি বা অশালীনতার ব্যাপারে একজন দ্বীনদার মুসলমান নীরব-নির্লিপ্ত থাকতে পারে না। কারণ সমাজ হচ্ছে একটি নৌকার মত।
নৌকার এক প্রান্তে ফুটো হলে অন্য প্রান্তের আরোহীদের জন্য সমান বিপদ বয়ে আনবে। কাজেই ইসলাম সামাজিক আচার অনুষ্ঠান রীতি-নীতির প্রতি দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দেয়। সমাজ নামক নৌকাটি যেন পাপ পংকিলতায় নিমজ্জিত হয়ে না পড়ে সে দিকে সচেতন দৃষ্টি রাখার জন্য মুমিন মুসলমানদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছ।

আসলে সমাজ সংশোধনের ক্ষেত্রে নারী-পু্রুষ উভয়ের ভূমিকা থাকতে হবে। কুরআনের নির্দেশ সৎকাজের আদেশ, অসৎকাজের নিষেধ শুধু পুরুষদের জন্যই প্রযোজ্য নয়। বরং এই নির্দেশ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মুমিন মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য। কাজেই এই আয়াত থেকে বোঝা যায় এই পবিত্র দায়িত্ব পালন, নামাজ কায়েম করা, যাকাত দেয়া আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রদর্শিত পথে চলা ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য।

সূরা তাওবার ৭২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
৯:৭২ وَعَدَ اللّٰهُ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا وَ مَسٰکِنَ طَیِّبَۃً فِیۡ جَنّٰتِ عَدۡنٍ ؕ وَ رِضۡوَانٌ مِّنَ اللّٰهِ اَکۡبَرُ ؕ ذٰلِکَ هُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ
“আল্লাহ ঈমানদার নর-নারীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বেহেশতি উদ্যানের। যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে এবং সেসব উদ্যানে থাকবে পরিচ্ছন্ন থাকার ঘর। বস্তুত এগুলোর মাঝে সবচেয়ে বড় ও সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। এটিই হলো মহান কৃতজ্ঞতা।” (৯:৭২)

এই আয়াতে বেহেশতের সুন্দর মনোরম পরিবেশ ও সেখানে বিদ্যমান নির্মল প্রশান্তির বিবরণ দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে আল্লাহতালা কেবল মুমিনদেরকেই বেহেশতের কুঞ্জ-কাননের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জান্নাত বা বেহেশত একটি চিরন্তন আবাসন এবং সেখানে যারা থাকবে তারাও চিরস্থায়ী হবে। মুমিন মুসলমানরা পৃথিবীতে যা কিছু করে তার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লার সন্তুষ্টি অর্জন।
সুরা সফে আল্লাহ্ সুবহান তায়ালা বলেন,
১০ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا هَلۡ اَدُلُّکُمۡ عَلٰی تِجَارَۃٍ تُنۡجِیۡکُمۡ مِّنۡ عَذَابٍ اَلِیۡمٍ ﴿۱۰﴾
হে ঈমানদারগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসায়ের সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব থেকে রক্ষা করবে?
৬১:১১ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ وَ تُجَاهِدُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ بِاَمۡوَالِکُمۡ وَ اَنۡفُسِکُمۡ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ ﴿ۙ۱۱﴾
তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে।
১২ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ وَ یُدۡخِلۡکُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ وَ مَسٰکِنَ طَیِّبَۃً فِیۡ جَنّٰتِ عَدۡنٍ ؕ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ ﴿ۙ۱۲﴾
তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। আর তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত এবং চিরস্থায়ী

কাজেই বেহেশতের কুঞ্জ-কাননে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির নিদর্শন উপভোগ করবেন এবং তারা সেখানে গর্বিত হবেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এমন একটি উচ্চ অবস্থান যা অর্জনের মাধ্যমে মানুষের পক্ষে প্রকৃত প্রশান্তি লাভ করা সম্ভব।

আল্লাহর সন্তুষ্টি তথা জান্নাত পাওয়ার জন্য ইসলামী আন্দোলনে শামিল থাকতে হবে”
কুরআনে পাকে বলা হয়েছে যে,إِنَّ الَّذِينَ كَذَّبُواْ بِآيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُواْ عَنْهَا لاَ تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَاء وَلاَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ وَكَذَلِكَ نَجْزِي الْمُجْرِمِينَ

নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে এবং এগুলো থেকে অহংকার করেছে, তাদের জন্যে আকাশের দ্বার উম্মুক্ত করা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। যে পর্যন্ত না সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে। আমি এমনিভাবে পাপীদেরকে শাস্তি প্রদান করি। [৭:৪০]

২:২১৪ اَمۡ حَسِبۡتُمۡ اَنۡ تَدۡخُلُوا الۡجَنَّۃَ وَ لَمَّا یَاۡتِکُمۡ مَّثَلُ الَّذِیۡنَ خَلَوۡا مِنۡ قَبۡلِکُمۡ ؕ مَسَّتۡهُمُ الۡبَاۡسَآءُ وَ الضَّرَّآءُ وَ زُلۡزِلُوۡا حَتّٰی یَقُوۡلَ الرَّسُوۡلُ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَهٗ مَتٰی نَصۡرُ اللّٰهِ ؕ اَلَاۤ اِنَّ نَصۡرَ اللّٰهِ قَرِیۡبٌ ﴿۲۱۴﴾
নাকি তোমরা ভেবেছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ এখনো তোমাদের নিকট তাদের মত কিছু আসেনি, যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে। তাদেরকে স্পর্শ করেছিল কষ্ট ও দুর্দশা এবং তারা কম্পিত হয়েছিল। এমনকি রাসূল ও তার সাথি মুমিনগণ বলছিল, ‘কখন আল্লাহর সাহায্য (আসবে)’? জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী।
এতক্ষণ আপনাদের সম্মুখে আলোচিত কুরআনের আয়াত ও ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনায় স্পষ্ট যে, ইসলামী দল তথা আন্দোলনে নিজেকে শরীক রাখতে হবে, যেমনটি রেখেছিল নবী (আ;) ও সাহাবায়ে আজমায়েইন।

#ইসলামী আন্দোলন না করার পরিনাম:
এই সূরার ৩৮ ও ৩৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
৯:৩৮ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَا لَکُمۡ اِذَا قِیۡلَ لَکُمُ انۡفِرُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ اثَّاقَلۡتُمۡ اِلَی الۡاَرۡضِ ؕ اَرَضِیۡتُمۡ بِالۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا مِنَ الۡاٰخِرَۃِ ۚ فَمَا مَتَاعُ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا فِی الۡاٰخِرَۃِ اِلَّا قَلِیۡلٌ

“হে মুমিনগণ! তোমাদের কি হয়েছে যে, যখন তোমাদেরকে আল্লাহর পথে অভিযানে বের হতে বলা হয় তখন তোমরা ভারাক্রান্ত হয়ে ভূতলে ঝুঁকে পড়? তোমরা কি পরকালের পরিবর্তে পার্থিব জীবনে পরিতুষ্ট হয়েছ? পরকালের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগ্য উপকরণ অত্যন্ত নগণ্য।” (৯:৩৮)

৯:৩৯ اِلَّا تَنۡفِرُوۡا یُعَذِّبۡکُمۡ عَذَابًا اَلِیۡمًا ۬ۙ وَّ یَسۡتَبۡدِلۡ قَوۡمًا غَیۡرَکُمۡ وَ لَا تَضُرُّوۡهُ شَیۡئًا ؕ وَ اللّٰهُ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ “যদি তোমরা অভিযানে বের না হও তবে তিনি তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। তোমরা তার কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান।” (৯:৩৯)

প্রিয় ভাইয়েরা” আজ বিশ্ব জুড়ে মুসলমানদের চিৎকারে ভারী হয়ে উঠেছে, ফিলিস্তান থেকে কাস্মীর, মিয়ানমার থেকে সিরিয়া, ইয়েমেন থেকে আসাম আর ত্রিপুরা, মুসলিম মানবতা আজ ধুঁকে ধুঁকে দিনযাপন করছে ।
জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাদের বাড়ি ঘর, জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে মসজিদ – মাদ্রাসা’ এমন পরিস্থিতিতেও নিশ্চুপ আরব বিশ্ব এবং মুসলমান নেতৃত্ব।

মুলত ইসলামের নুর দুনিয়া থেকে নিভিয়ে দিতে পরিকল্পিত ভাবে নির্যাতন করে বাড়ি ঘর থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদ করছে ভারতের রাম সরকার ।
দুনিয়ায় বিদ্যামান আল্লাহর দুশমান ইহুদী – মুশরিকরা মাস্টার প্লান করে মুসলিম বিশ্বে দন্ধ বাঁধিয়ে তাদের মধ্যে ফাটল জিইয়ে রেখে মুসলমান জনগোষ্ঠিকে মানব ইতিহাসে নিকৃষ্ট জাতিতে পরিণত করেছে ।
এক দেশে মুসলমানদের রক্ত না শুকাইতে, অন্য দেশে ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে যায়, সেই কায়দায় ভারতের রাম সরকার আসাম ও ত্রিপুরার মুসলমানদের টার্গেট করেছে ।

তাইতো আল্লাহ সুবহান তায়ালা সুরা নিসার ৭৫ নাম্বার আয়াতে বলেছেন যে, ৪. আন-নিসা
৪:৭৫ وَ مَا لَکُمۡ لَا تُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ الۡمُسۡتَضۡعَفِیۡنَ مِنَ الرِّجَالِ وَ النِّسَآءِ وَ الۡوِلۡدَانِ الَّذِیۡنَ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اَخۡرِجۡنَا مِنۡ هٰذِهِ الۡقَرۡیَۃِ الظَّالِمِ اَهۡلُهَا ۚ وَ اجۡعَلۡ لَّنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ وَلِیًّا ۚۙ وَّ اجۡعَلۡ لَّنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ نَصِیۡرًا ﴿ؕ۷۵﴾
আর তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ না! অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা বলছে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করুন এ জনপদ থেকে যার অধিবাসীরা যালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী।
বদর যুদ্ধের প্রাক্কালে রাসুল (সঃ) এর
নবম হিজরীতে হঠাত খবর আসলো যে, রোমক বাহিনী মদীনা আক্রমণের জন্য অগ্রসর হচ্ছে। খবর পাওয়ার পর আল্লাহর নবী মুসলিম বাহিনীকেও প্রস্তুত করলেন। কিন্তু গ্রীষ্মের খরতাপ ও ফসল ওঠানোর মওসুম ঘনিয়ে আসার কারণে মুসলমানদের অনেকেই মুনাফিকদের প্ররোচনায় যুদ্ধে না গিয়ে মদিনায় থেকে যাওয়ার বাহানা খুঁজতে থাকেন। তাদেরকে ভর্তসনা করে এই আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা কি পরকালের কথা ভুলে গেছ? পার্থিব জীবনই তোমাদের কাছে প্রধান হয়ে গেছে? জেনে রাখা উচিত পরকালের নেয়ামতের তুলনায় পার্থিব সহায়-সম্পদ অত্যন্ত নগন্য। তবে তোমরা যদি যুদ্ধে যাওয়া থেকে বিরত তাহলেও আল্লাহর দ্বীন পরাজিত হবে না। এ ক্ষেত্রে আল্লাহ তোমাদের পরিবর্তে অন্য কাউকে বেছে নেবেন। তিনি তার নবী ও ধর্মকে হেফাজত করার ক্ষমতা রাখেন এবং তিনি তোমাদের কারো মুখাপেক্ষীও নন।

প্রিয় ভাইয়েরা আমার” আপনাদের কেন শপথ নিতে হবে জানেন? বদর যুদ্ধের আগের দিন বিশ্বনবী মোহাম্মদ (সঃ) সাহাবায়ে – কেরামকে উদ্দেশ্য যুদ্ধ পুর্ব ভাষণে নবীর হাতে হাত রেখে শপথ নিলেন, যাতে যুদ্ধের মাঠ থেকে কেহ পলায়ন না করে, অথচ’ যাদের নিকট থেকে শপথ নেওয়া হয়েছে, তারা আল্লাহ – রাসুলের (সঃ) এর ভালবাসায় নিজ মাতৃভূমি মক্কায় ধন সম্পদ, মা বাবা, স্ত্রী – সন্তান রেখে মদীনায় হিজরত করে ছিলেন ।
এমন ত্যাগ ও কুরবানীর নজির পেশ করা সাহবায়ে কেরামের আদলে আমাদেরকেও শপথ নিতে হবে, কারণ আমরা দেশ, সমাজের নিকট আল্লাহ’র বিধান তুলে ধরার চেষ্টা করি এবং মুসলমানদের আল্লাহর দিকে আহ্বান করি ।
৬১:১০ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا هَلۡ اَدُلُّکُمۡ عَلٰی تِجَارَۃٍ تُنۡجِیۡکُمۡ مِّنۡ عَذَابٍ اَلِیۡمٍ ﴿۱۰﴾
হে ঈমানদারগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসায়ের সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব থেকে রক্ষা করবে?
৬১:১১ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ وَ تُجَاهِدُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ بِاَمۡوَالِکُمۡ وَ اَنۡفُسِکُمۡ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ
তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে।

এ দুই আয়াতের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো হচ্ছে,

এক. জিহাদের ময়দান ত্যাগ করলে পৃথিবীতে চরম লাঞ্ছনার পাশাপাশি পরকালে চরম শাস্তি পেতে হবে। এটি মনে করা যাবে না যে, জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে গেলে জীবনে সুখ-শান্তি ফিরে আসবে।

দুই. আল্লাহর নির্দেশ পালন বা প্রত্যাখ্যানে আল্লাহর কোনো ক্ষতি বা লাভ নেই। কারণ, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। আমরাই তার আদেশ পালন করে লাভবান হতে পারি।

নফস কি একটি নাকি তিনটি? কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ﴿يَٰٓأَيَّتُهَا ٱلنَّفۡسُ ٱلۡمُطۡمَئِنَّةُ٢٧﴾ [الفجر: ٢٧] “হে প্রশান্ত আত্মা!” [সূরা আল-ফাজর, আয়াত: ২৭] ﴿وَلَآ أُقۡسِمُ بِٱلنَّفۡسِ ٱللَّوَّامَةِ٢﴾ [القيامة: ٢] “আমি আরো কসম করছি আত্ম-ভৎর্সনাকারী আত্মার!” [সূরা আল-কিয়ামা, আয়াত: ২] ﴿إِنَّ ٱلنَّفۡسَ لَأَمَّارَةُۢ بِٱلسُّوٓءِ﴾ [يوسف: ٥٢] “নিশ্চয় নাফস মন্দ কজের নির্দেশ দিয়ে থাকে।” [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৫২] তাহলে নফস কি মুতমাইন্না, লাওয়ামাহ ও আম্মারাহ তিন রকমের?
উত্তর: নফস মূলত একটি, তবে এর অনেক সিফাত তথা গুণ রয়েছে। ফলে নফসের গুণের হিসেবে এক একটি নাম দেওয়া হয়েছে। একে মুতমাইন্না (مطمئنة) বলা হয়েছে, যেহেতু সে তার রবের ইবাদত ও ভালোবাসায় মুতমাইন্ন তথা প্রশান্ত। আবার একে লাওয়ামাহ(لوامة) বলা হয়েছে, কেননা সে ব্যক্তির বাড়াবাড়িতে তাকে ভর্ৎসনা করে। আবার একে আম্মারাহ(أمّارة) বলা হয়েছে, যেহেতু সে অন্যায় কাজের আদেশ দেয়। বস্তুত অন্যায় কাজের নির্দেশ দেওয়াই হলো নফসের প্রকৃতি, তবে আল্লাহ যাকে তাওফিক দান করেন, যাকে হিদায়াতের ওপর স্থির রাখেন এবং সাহায্য করেন তার কথা আলাদা।

আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদের নফসগুলোকে নফসে মুতমাইন্না(مطمئنة) করে দেন এবং আমাদেরকে তাঁর ইবাদত ও ভালোবাসায় অন্তর্ভুক্ত করেন। আমীন।।

প্রিয় ভাইয়েরা”
সবশেষে আল্লাহ’র সেই অসাধারণ বানী আপনাদের মন – মননে গেঁথে রাখার বিনীত আহ্বান জানাচ্ছি, সুরা তওবায় আল্লাহ তায়ালা বলেন,
৯:১০৯ اَفَمَنۡ اَسَّسَ بُنۡیَانَهٗ عَلٰی تَقۡوٰی مِنَ اللّٰهِ وَ رِضۡوَانٍ خَیۡرٌ اَمۡ مَّنۡ اَسَّسَ بُنۡیَانَهٗ عَلٰی شَفَا جُرُفٍ هَارٍ فَانۡهَارَ بِهٖ فِیۡ نَارِ جَهَنَّمَ ؕ وَ اللّٰهُ لَا یَهۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ
যে তার গৃহের ভিত্তি আল্লাহর তাকওয়া ও সন্তুষ্টির উপর প্রতিষ্ঠা করল, সে কি উত্তম না ঐ ব্যক্তি যে তার গৃহের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছে এক গর্তের পতনোন্মুখ কিনারায়? অতঃপর তাকে নিয়ে তা ধসে পড়ল জাহান্নামের আগুনে। আর আল্লাহ যালিম কওমকে হিদায়াত দেন না। আল-বায়ান

আল্লাহ্‌ তায়ালা আমাদের কবুল করুন, আজকের আসা বসা আলোচনা সব কিছুর ভুলত্রুটি ক্ষমা করে, হাশরের ময়দানের সেই কঠিন সময়ে নাজাতের উছিলা বানিয়ে দিন, আমিন।

লেখক ও সংকলকঃ আবুল কাশেম, প্রবাসী ।

Logo-orginal