admin
প্রকাশ: ২০২১-১২-২৪ ০৯:১০:৪১ || আপডেট: ২০২১-১২-২৪ ০৯:১০:৪৩
কক্সবাজারে নারী পর্যটককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বৃহস্পতিবার তিনজনকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে র্যাব-১৫।
তাদের মধ্যে একজন শহরের বাহারছড়া এলাকার সন্ত্রাসী আশিক বলে জানা গেছে। এই তিনজনকে আটক করতে অভিযান চলছে।
র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিপিসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ও খোঁজখবর নিয়ে পর্যটক নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
শনাক্ত দুই যুবক হলেন- কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার আশিকুল ইসলাম ও তার প্রতিবেশী ও বন্ধু ইসরাফিল হুদা জয়। অভিযুক্ত অন্য একজন উত্তর বাহাছড়া এলাকার বাবু বলে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত হয়েছে। আশিক গত নভেম্বরে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। ধর্ষণ, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ অন্তত ১৬টি মামলার আসামি তিনি। এছাড়াও আটক করা হয়েছে হোটেল জিয়া গেস্ট ইনের ম্যানেজার রিয়াজুদ্দিন ছোটনকে।
এদিকে এই ঘটনায় আজ সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। ওই পর্যটক নারীকে দুপুরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ওই নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হচ্ছে। গতকাল বুধবার রাতে ওই নারীকে র্যাব একটি রিসোর্ট থেকে উদ্ধার করে। এ সময় ওই রিসোর্টের ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে (২৯) আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে র্যাব।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে সপরিবারে বেড়াতে গিয়ে এক নারী গত বুধবার দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে বুধবার রাতে র্যাবের একটি দল কলাতলী এলাকার একটি রিসোর্ট থেকে তাকে উদ্ধারের কথা জানায়।
এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিপিসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, ওই নারীকে উদ্ধারের পর কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, ওই নারীকে আজ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে। লিখিত অভিযোগ পেলে মামলা হবে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাহীন মো. আবদুর রহমান চৌধুরী জানান, ওই নারীকে ওসিসিতে রাখা হয়েছে। তার পরীক্ষা-নীরিক্ষা চলছে। হাসপাতালে তাকে দুই থেকে তিন দিন রাখা হতে পারে।
ওই নারীর স্বামী বলেন, বুধবার সকালে ঢাকা থেকে স্ত্রী ও আট মাসের সন্তানকে নিয়ে তিনি কক্সবাজার বেড়াতে যান। বিকেলে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ঘুরতে যান। বালুচর দিয়ে হেঁটে পানির দিকে নামার সময় এক যুবকের সঙ্গে তার ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সন্ধ্যায় তার স্ত্রীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানে নিয়ে তিনজন তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। তারপর একটি রিসোর্টে নিয়ে স্ত্রীকে আটকে রাখা হয়। পরে দুর্বৃত্তরা কক্ষের দরজা বাইরে থেকে লক করে চলে যায়। এসব ঘটনা যেন কাউকে না জানানো হয়, সে নিয়ে ভয়ভীতিও দেখানো হয়।
ওই নারী বলেন, এক ব্যক্তির সহায়তায় তিনি দরজার লক খোলেন। তখন তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দেন। সেখান থেকে বলা হয় থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার জন্য। তারপর এক ব্যক্তির সহযোগিতা তিনি কল দেন র্যাব-১৫-তে। র্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে।
এদিকে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মুনিরুল গিয়াস বলেন, ভুক্তভোগী নারীর স্বামী ও সন্তানকে বিকালে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। পুলিশ তাদের কাছ থেকে মামলা রেকর্ডভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
ওসি বলেন, ‘অধিক গুরুত্ব দিয়ে এই মামলা তদন্ত করছে পুলিশ। কিছু সন্দেহজনক তথ্যও পাওয়া গেছে।’
ওই নারী এবং তার স্বামী দুই মাস আগেও একবার শহরের দুই সন্ত্রাসী ফাহিম ও বাবুর নামে থানায় অভিযোগ নিয়ে থানায় এসেছিলেন। অভিযোগের তদন্ত করেছিলেন উপপরিদর্শক রায়হান। এখন ওই নারীর ধর্ষণের অভিযোগটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযুক্ত দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানিয়েছেন, ভুক্তভোগী ওই নারী ‘৯৯৯’ এ কল করেছেন বলে যে তথ্য সাংবাদিকরা দিয়েছেন তা সঠিক নয়।
তিনি বলেন- ‘৯৯৯ এ কল করা হলে তা রেকর্ড থাকে। পুলিশ সেখান থেকে কোন কল পায়নি। এছাড়া ওই নারী ও তার স্বামীও এই ধরণের কোন কথা পুলিশকে বলেনি।
সুত্রঃ দৈনিক সমকাল ।