, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

admin admin

কুরআন হাদীছের আলোকে কবরের ভয়াবহ শাস্তি”

প্রকাশ: ২০২১-১২-১৭ ১৪:৩৬:৩১ || আপডেট: ২০২১-১২-১৭ ১৪:৩৬:৩৩

Spread the love

মানুষের মরণের পর বড় ভয়াবহ কঠিন ও জটিল তিনটি স্থান রয়েছে। যেখানে মানুষের কোন সহযোগী থাকবে না। সেখানে মানুষ হবে বড় অসহায় ও নিরুপায়। সেদিন ভুল ধরা পড়লে সংশোধনের কোন পথ থাকবে না। সেদিন মানুষ কত অসহায় হয়ে পড়বে যা ভাষায় ও কলমে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। যেমন নদীর স্রোত একবার চলে গেলে তাকে ফিরে আনা সম্ভব নয়। তেমনি মানুষের শ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে সে ভয়াবহ সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে না। তার একটি ভয়াবহ স্থান হচ্ছে কবর। এ সম্পর্কে অনেক ছহীহ হাদীছ ও কুরআনের আয়াত রয়েছে, যার কিছু নমুনা পেশ করা হ’ল।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَلَوْ تَرَي اِذِ الظَّالِمُوْنَ فِيْ غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلئِكَةُ بَاسِطُوْا اَيْدِيْهِمْ اَخْرِجُوْا اَنْفُسَكُمْ اَلْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُوْنِ بِمَا كُنْتُمْ تَقُوْلُوْنَ عَلى اللهِ غَيْرَ الْحَقِّ وَكُنْتُمْ عَنْ ايَتِهِ تَسْتَكْبِرُوْنَ.

‘হে নবী! আপনি যদি অত্যাচারীদের দেখতেন, যখন তারা মৃত্যুকষ্টে পতিত হয়, ফেরেশ্স্তাগণ তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে বলেন, তোমরা তোমাদের আত্মা বের করে দাও। ফেরেশতাগণ এ সময় বলেন, আজ হ’তে তোমাদেরকে প্রতিফল স্বরূপ অপমানজনক শাস্তি দেওয়া হবে। আর অপমানজনক শাস্তির কারণ হচ্ছে, তোমরা আল্লাহর প্রতি অসত্য আরোপ করতে এবং অহংকার করে তার আয়াত সমূহ এড়িয়ে চলতে’ (আন‘আম ৯৩)। অত্র আয়াতে অত্যাচারীদের মৃত্যু যন্ত্রণার কথা উল্লেখ হয়েছে। মৃত্যুর সময় তাদেরকে অপমান করা হয়, তা স্পষ্ট করা হয়েছে এবং মরণের পর হ’তেই তাদেরকে অপমানজনক শাস্তি দেওয়া হয়। আর মরণের পর হ’তে যে শাস্তি দেয়া হয় তাকেই কবরের শাস্তি বলে। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

فَوَقهُ اللهُ سَيِّئَاتِ مَامَكَرُوْا وَحَاقَ بِالِ فِرْعَوْنَ سُؤَالْعَذَابِ اَلنَّارُ يُعْرَضُوْنَ عَلَيْهَا غُدُوَّا وَّعَشِيًّا.

‘ফেরাউন বংশীয় একজন মুমিনকে আল্লাহ ফেরাউনদের কবল হ’তে রক্ষা করেন। অবশেষে এদেরকে আল্লাহর কঠোর শাস্তি ঘিরে ধরে। আর এ কঠোর শাস্তি তাদের সামনে সকাল-সন্ধ্যা পেশ করা হয়’ (মুমিন ৪৫-৪৬)। অত্র আয়াতে সকাল-সন্ধ্যা যে কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে কবরের শাস্তি। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, سَنُعَذِّبُهُمْ مَّرَّتَيْنِ ثُمَّ يُرَدُّوْنَ اِلى عَذَابٍ عَظِيْمٍ. ‘অচিরেই আমি তাদেরকে বারবার শাস্তি দিব। অতঃপর তারা মহা কঠিন শাস্তির দিকে ফিরে যাবে’ (তাওবা ১০১)। অত্র আয়াতে বারবার শাস্তি বলে কবরের শাস্তি উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ অন্যত্র বলেন,يُثَبِّتُ اللهُ الَّذِينَ آمَنُواْ بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ ‘আল্লাহ পার্থিব জীবনে ও আখেরাতে অবিচল রাখবেন সে সকল লোককে যারা ঈমান এনেছে প্রতিষ্ঠিত বাণীতে’ (ইবরাহীম ২৭)। এ আয়াত কবরের আযাব সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।

عَنْ اَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْل الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ الْعَبْدَ اِذَا وُضِعَ فِيْ قَبْرِهِ وَتَوَلَّي عَنْهُ اَصْحَابُهُ اِنَّهُ لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ اَتَاهُ مَلَكَانِ فَيَقْعُدَانِهِ فَيَقُوْلَانِ مَاكُنْتَ تَقُوْلُ فِيْ هذَا الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ فَاَمَّا الْمُؤْمِنُ فَيَقُوْلُ اَشْهَدُ اَنَّهُ عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُهُ فَيُقَالُ لَهُ اُنْظُرْ اِلَي مَقْعَدِكَ مِنَ النَّارِ قَدَ اَبْدَلَكَ اللهُ بِهِ مَقْعَدًا مِّنَ الْجَنَّةِ فَيَرَاهُمَا جَمِيْعًا وَاَمَّا الْمُنَافِقُ وَالْكَافِرُفَيُقَالُ لَهُ مَاكُنْتَ تَقُوْلُ فِيْ هَذَا الرَّجُلِ فَيَقُوْلُ لَااَدْرِيْ كُنْتُ اَقُوْلُ مَايَقُوْلُ النَّاسُ فَيُقَالُ لَهُ لَادَرَيْتُ وَلَاتَلَيْتَ وَيُضْرَبُ بِمَطَارِقِ مِنْ حَدِيْدٍ ضَرْبَةً فَيَصِيْحُ صَيْحَةً يَسْمَعُهَا مَنْ يَلِيْهِ غَيْرَ الثَّقَلَيْنِ.

আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, যখন মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা হয় এবং তার সঙ্গীগণ সেখান হ’তে ফিরতে থাকে, তখন সে তাদের পায়ের শব্দ শুনতে পায়। তাদের ফিরে যেতে না যেতেই তার নিকট দু’জন ফেরেশতা চলে আসেন এবং তাকে উঠিয়ে বসান। তার পর নবী করিম (সা.) -এর প্রতি ইশারা করে জিজ্ঞেস করেন তুমি দুনিয়াতে এ ব্যক্তি সম্পর্কে কি ধারণা করতে? মুমিন ব্যক্তি তখন বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর দাস এবং তাঁর রাসূল। তখন তাকে বলা হয়, এই দেখে লও জাহান্নামে তোমার স্থান কেমন জঘন্য ছিল। আল্লাহ তোমার সেই স্থানকে জান্নাতের সাথে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তখন সে উভয় স্থান দেখে এবং খুশি হয়। কিন্তু মৃতু ব্যক্তি যদি মুনাফিক বা কাফের হয় তখন তাকে বলা হয়, দুনিয়াতে তুমি এ ব্যক্তি সর্ম্পকে কি ধারণা করতে? তখন সে বলে আমি বলতে পারি না। মানুষ যা বলত আমিও তাই বলতাম, (প্রকৃত সত্য কি ছিল তা আমার জানা নেই)। তখন তাকে বলা হয়, তুমি তোমার বিবেক দ্বারা বুঝার চেষ্টা করনি কেন? আল্লাহর কিতাব পড়ে বোঝার চেষ্টা করনি কেন? অতঃপর তাকে লোহার হাতুড়ি দ্বারা এমনভাবে পিটাতে শুরু করে। পিটানির চোটে সে হাউমাউ করে বিকটভাবে চিৎকার করতে থাকে। আর এত জোরে চিৎকার করে যে, মানুষ ও জিন ব্যতীত সব কিছুই তার চিৎকার শুনতে পায় (বুখারী, মুসলিম, বাংলা মিশকাত হা/১১৯)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মরণের পর মানুষ প্রশ্নের মুখামুখি হবে। প্রশ্নগুলি কি হবে তা নবী করিম(সা.) স্পষ্ট বলে দিয়েছেন এবং তার উত্তরও বলে দিয়েছেন। কবরে যথাযথ উত্তর দিতে না পারলে তার পরিণাম হবে বড় ভয়াবহ। হাতুড়ি দ্বারা কঠিনভাবে পিটানো হবে। তখন সে বিকট শব্দ করে চিৎকার করতে থাকবে। মানুষ এবং জিন ছাড়া জীব-জন্তু, কীট-পতঙ্গ ও জড় বস্ত্ত সব কিছুই শুনতে পায়।

نْ عَبْدِاللهِ بْنْ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلّى
عَنْ اِبْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هذا الّذِيْ تَحَرَّكَ لَهُ الْعَرْشُ وَفُتِحَتْ لَهُ اَبْوَابُ السَّمَاءِ وَشَهِدَهُ سَبْعُوْنَ اَلْفًا مِنَ الْمَلائكةِ لَقدْ ضَمّ ضَمّةً ثُمّ فُرِجَ عَنْهُ.

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, সা‘দ (রা.) মৃত্যুবরণ করলে রাসূল (সা.) বলেন, সা‘দ এমন ব্যক্তি যার মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেঁপেছিল, যার জন্য আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয়েছিল এবং যার জানাযাতে সত্তর হাজার ফেরেশতা উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু এমন ব্যক্তির কবরও সংকীর্ণ করা হয়েছিল। অবশ্য পরে তা প্রশস্ত করা হয়েছিল (নাসাঈ, মিশকাত হা/১৩৬)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, ভাল মানুষের কবরও সংকীর্ণ হ’তে পারে।

عَنْ اَسْمَاءِ بِنْتِ اَبِيْ بَكْرٍ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ اُوْحِيَ اِلَيَّ اِنَّكُمْ تُفْتَنُوْنَ فِي القْبْرِ قَرِيْبًا مِنْ فِتْنَةِ الدّجَّاِل.

আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, তাঁকে অহীর মাধ্যমে বলা হয়েছে যে, দাজ্জালের ফেতনার মতই তোমাদেরকে কবরের ফিতনার মুখোমুখি করা হবে (নাসাঈ, মিশকাত হা/১৩৭)। দাজ্জালের ফিতনা যেমন বিপদজনক তেমনি বিপদজনক হচ্ছে কবরের ফেতনা।

عَنْ اَسْمَاءِ بِنْتِ اَبِيْ بَكْرٍ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطِيْبًا فَذَكَرَ فِتْنَةَ القَبْرِ الّتِيْ يُفْتَنُ فِيْهَا الْمَرْءُ فَلَمّا ذَكَرَ ذلِكَ ضَجّ الْمُسْلِمُوْنَ ضَجَّةً.

আবু বকর (রা.) -এর মেয়ে আসমা (রাঃ) বলেন, নবী করীম(সা.) একদিন আমাদের মাঝে খুৎবা দিলেন। তাতে কবরের আলচনা করলেন। কবরের ফেৎনার কথা শুনে মুসলমানগণ চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন (বুখারী, মিশকাত হা/১৩৭)। মানুষের সামনে কবরের আলোচনা হওয়া উচিত। কবরের শাস্তি ও ফেতনার ভয়ে কান্নাকাটি করা উচিত।

عَنْ اَبِي هُريرةَ قال قَالَ رَسُوْلُ اللهِ اَكْثِرُوْا مِنْ ذِكْرِهَاذمِ اللّذَّاتِ الْمَوْتِ.

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, তোমরা এমন এক জিনিস খুব বেশি বেশি স্মরণ কর, যা মানুষের জীবনের স্বাদকে ধ্বংস করে দেয়, আর তা হচ্ছে মরণ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/১৬০৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪২৫৮, হাদীছ ছহীহ)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতিয়মাণ হয় যে, মানুষের সবচেয়ে স্মরণীয় কথা হচ্ছে মরণ। আর মরণই মানুষের জীবনের সব আশা-আকাঙ্ক্ষাকে শেষ করে দেয়।

عَنْ اِبْنِ عُمَرَ أَنَّهُ قَالَ كُنْتُ مَعَ رَسُوْلِ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَاءَهُ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ فَسَلَّمَ عَلَي النَّبِيِّ ثُمَّ قَالَ يَارَسُوْلَ اللهِ اَيُّ الْمُؤْمِنِيْنَ اَفْضَلُ قَالَ اَحْسَنُهُمْ خُلُقًا قَالَ اَيُّ الْمُؤْمِنِيْنَ اَكْيَسُ قَالَ اَكْثَرُهُمْ لِلْمَوْتِ ذِكْرًا وَاَحْسَنُهُمْ لَمَا بَعْدَهُ اِسْتِعْدَادًا اُولئِكَ الْاَكْيَاسُ.

ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমি রাসূল(সা.) -এর সাথে ছিলাম। হঠাৎ আনছারদের একজন লোক আসলেন। সে নবী করীম(সা.) -কে সালাম করলেন, অতঃপর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল(সা.) ! সবচেয়ে উত্তম মমিন কে? নবী করীম(সা.) বললেন, চরিত্রে যে সবচেয়ে ভাল। তারপর লোকটি জিজ্ঞেস করলেন, সবচেয়ে বুদ্ধিমান মুমিন কে? রাসূল(সা.) বললেন যে, সবচেয়ে বেশি মরণকে স্মরণ করতে পারে আর মরণের পরবর্তী জীবনের জন্য সবচেয়ে সুন্দর প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে পারে। তারাই সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান (ইবনে মাজাহ, হাদীছ হাসান হা/৪২৫৯)। অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, মরণকে যারা বেশী বেশি স্মরণ করে তারাই বেশী বুদ্ধিমান এবং তারাই পরবর্তী জীবনে বেশি সফলতা অর্জন করতে পারবে।

عَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّهُ مَرَّ بِقَبْرَيْنِ يُعَذَّبَانِ فَقَالَ اِنّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ وَمَايُعَذَّبَانِ فِيْ كَبِيْرٍ اَمَّا اَحَدُهُمَا فَكَانَ لَايَسْتَتِرُ مِنَ الْبَوْلِ وَاَمّا الْاخَرُ فَكَانَ يَمْشِيْ بِالنَّمِيْمَةِ.

ইবনে আববাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম(সা.) এমন দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যে কবর দু’টিতে শাস্তি হচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, কবরে এ দু’ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে অথচ তাদের বড় পাপের জন্য শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। তাদের একজন পেশাব থেকে সর্তকতা অবলম্বন করত না আর অপরজন চোগলক্ষোরী করে বেড়াত (বুখারী হা/১৩৬১)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পেশাব হ’তে সতর্ক না থাকলে কবরে শাস্তি হবে।

قَالَ اِبْنُ عُمَرَ اَطْلَعَ النّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلى اَهْلِ الْقَلِيْبِ فَقَالَ وَجَدْتُمْ مَاوَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًا فَقِيْلَ لَهُ تَدْعُوْ اَمْوَاتًا فقالَ مَا اَنْتُمْ بِاَسْمَعَ مِنْهُمْ وَلكِنْ لَايُوْجِيْبُوْنَ.

ইবনে ওমর (রা.) বলেন, বদরের যুদ্ধে নিহত কাফিরদের যারা কালীব নামক এক গর্তে পড়েছিল, তাদের দিকে ঝুকে দেখে নবী করীম(সা.) বললেন, তোমাদের সাথে তোমাদের প্রতিপালক যে ওয়াদা করেছিলেন, তা তোমরা বাস্তবে পেয়েছো তো? (তারা ছিল ৪৪ জন) তখন ছাহাবীগণ নবী কারীম (সা.) -কে বললেন, আপনি মৃতদের ডেকে কথা বলছেন, ওরা কি আপনার কথা শুনতে পায়? নবী করীম (সা.) বললেন, তোমরা তাদের চেয়ে অধিক বেশি শুনতে পাও না। তারাই তোমাদের চেয়ে বেশী শুনতে পাচ্ছে! তবে তারা জবাব দিতে পারছে না (বাংলা বুখারী ২য় খন্ড, ই: ফা: হা/১৩৭০)। অত্র হাদীছ প্রমাণ করে যে, নবী করীম (সা.) বদরের যুদ্ধে নিহত কাফিরদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, তোমরা মরণের পর যে শাস্তি ভোগ করছ এ শাস্তির কথাই আমি তোমাদের বলতাম। এ শাস্তির ব্যাপারেই আল্লাহ সতর্ক করেছিলেন। যা তোমরা অস্বীকার করেছিলে। আর এটা হচ্ছে কবরের শাস্তি। জাহান্নাম-জান্নাতের বিষয়টি বিচারের পর।

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ الّنبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إنَّهُمْ لَيَعْلَمُوْنَ الْانَ اِنّ مَا كُنْتُ اَقُوْلُ لَهُمْ حَقٌّ.

আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী করীম(সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই তারা এখন ভালভাবে জানতে ও বুঝতে পেরেছে যে, কবরের শাস্তি প্রসঙ্গে আমি তাদের যা বলতাম, তা বাস্তব ও চূড়ান্ত সত্য (বাংলা বুখারী ২য় খন্ড ই: ফা: হা/১৩৭১)।

عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُوْ وَيَقُوْلُ اللهُمَّ إنِّىْ اَعُوْذُبِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ عَذَابِ النَّارِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ.

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী করীম (সা.) কবরের শাস্তি হ’তে পরিত্রাণ চেয়ে প্রার্থনা করতেন- হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট কবরের শাস্তি হ’তে পরিত্রাণ চাই, জাহান্নামের শাস্তি হ’তে আশ্রয় চাই, জীবন ও মরণের ফেতনা হ’তে পরিত্রাণ চাই এবং দাজ্জালের ফেতনা হ’তে পরিত্রাণ চাই (বুখারী হা/১৩৭৭)। হাদীছে বুঝা যায় যে, নবী করীম (সা.) কবরের শাস্তি হ’তে নিয়মিত পরিত্রাণ চাইতেন। এজন্য সকল মানুষের জরুরী কর্তব্য হচ্ছে, কবরের শাস্তি হ’তে পরিত্রাণ চাওয়া (বাংলা বুখারী হা/১৩৮৫)। তারপর অত্র হাদীছে যেসব শাস্তির কথা রয়েছে তা কবরেও হ’তে থাকে।

قال رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ يَقْتُلْهُ بَطْنُهُ فَلَنْ يُّعَذَّب فِىْ قَبْرِهِ.

রাসূল (সা.) বলেন, যারা পেটের অসুখে মারা যায় তাদের কবরের শাস্তি হবে না (নাসাঈ হা/২০৫২; হাদীছ ছহীহ)।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَمُوْتُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ اَوْلَيْلَةَ الْجُمْعَةِ اِلَّا وَقَاهُ اللهُ فِتْنَةَ الْقَبْرِ.

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে কোন মুসলমান জুম’আর রাতে অথবা জুম’আর দিনে যদি মারা যায়, তা’হলে আল্লাহ তাকে কবরের শাস্তি হ’তে রক্ষা করেন (আহমাদ, মিশকাত হা/১৩৬৭, হাদীছ ছহীহ)। কবরের শাস্তি চূড়ান্ত যা অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণ হয়। জুম’আর দিন কোন মুসলমান মারা গেলে তাকে কবরের শাস্তি হ’তে রক্ষা করা হয়।
#আল্লাহ তা’য়ালা মুল লেখককে উত্তম জাযা দিন।
#লেখাটি হাদীদবিডি.কম থেকে সংগৃহীত।

Logo-orginal