, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

admin admin

তাবুক অভিযানে অনুপস্থিত তিন সাহাবীর তওবা ও আমাদের শিক্ষা

প্রকাশ: ২০২১-১২-০৭ ১২:৫৬:৫৫ || আপডেট: ২০২১-১২-০৭ ১২:৫৬:৫৭

Spread the love

ইসলাম ডেস্কঃ হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের সেনাপতিত্বে যে কয়টি যুদ্ধ বা যুদ্ধাভিযান সংঘটিত হয়, তন্মধ্যে তাবুক যুদ্ধাভিযান ছিল অন্যতম। যদিও প্রতিপক্ষের অনুপস্থিতির কারণে এ যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত সংঘটিত হয় নি। কিন্তু তথাপি যুদ্ধের নির্ধারিত স্থান তাবুক –এ মুসলিম বাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে ও সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সদলবলে যেতে হয়েছিল।

মক্কা বিজয়ের পর এটাই ছিল ইসলামের সর্বশেষ বৃহত্তম যুদ্ধাভিযান। এই অভিযানের জন্য সাহাবায়ে কেরামের কারো শারীরিক অনুপস্থিতির অনুমতিতো ছিলই না, অধিকন্তু প্রত্যেক সাহাবীকে সাধ্যমতো সর্বোচ্চ পরিমাণ আর্থিক সাহায্য দেওয়ার আহবান জানানো হয়েছিল। তাবুক অভিযানের প্রাক্কালে যখন আর্থিক সাহায্য চাওয়া হয়, তখন হযরত ওমর(রা) নিজের সমস্ত অস্থাবর সম্পত্তির অর্ধেক আর হযরত আবু বকর(রা) সমস্ত অস্থাবর সম্পত্তি দান করেছিলেন।

কিন্তু তিনজন সাহাবী এই যুদ্ধে অপ্রত্যাশিতভাবে বিনা ওজরে অনুপস্থিত থাকেন। তারা হলেন কা’ব বিন মালেক, হিলাল ইবনে উমাইয়া ও মুরারা বিন রাবী। এই তিনজন সাহাবী সম্পর্কে অপর কোনো সাহাবীর এমনকি স্বয়ং রাসূল(সা) এরও কখনো কোনো অভিযোগ বা সংশয় ছিল না। তাঁদের নিষ্ঠা ও আন্তরিকতায় কোনো খাদ ছিল না। তথাপি সর্বোচ্চ গুরুত্ববহ এই অভিযানে তারা সম্পূর্ণ বিনা ওজরে অনুপস্থিত ছিলেন। এ সংক্রান্ত বিশদ ঘটনা স্বয়ং হযরত কা’ব ইবনে মালেক বর্ণনা করেছেন। এই বর্ণনা নিম্নরূপঃ

কা’ব বলেনঃ রাসূলুল্লাহ(সা) এর নেতৃত্বে যতগুলো যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, তন্মধ্যে তাবুক ও বদর ছাড়া আর কোনোটিতেই আমি অনুপস্থিত থাকিনি। তবে বদর যুদ্ধে যারা অনুপস্থিত ছিলেন তাদের কাউকে আল্লাহর আক্রোশের সম্মুখীন হতে হয়নি। কেননা বদর যুদ্ধে রাসূল(সা) এর উদ্দেশ্য ছিল কুরাইশদের কাফেলাকে ধাওয়া করা। এরূপ করতে গিয়ে হঠাৎ এক সময় যুদ্ধ বেঁধে যায়। আকাবার রাতে রাসূল(সা) ইসলামের উপর দৃঢ়ভাবে টিকে থাকা এবং ইসলাম ও রাসূল(সা) কে সাহায্য করার জন্য যে ৭০ জন এর কাছ হতে শপথ গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। ঐ রাতটি আমার কাছে যুদ্ধের চেয়েও প্রিয় ছিল।

তাবুক যুদ্ধের সময় আমি অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী ও স্বচ্ছল অবস্থায় ছিলাম। এ সময় আমার কাছে দুটো সওয়ারী ছিল, যা এর আগে কখনো ছিল না। রাসূল(সা) এর নিয়ম ছিল, যখনই কোনো যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নিতেন, কখনো পরিষ্কারভাবে স্থান, এলাকা বা কো্ন্ দিকে যাওয়া হবে তাও পর্যন্ত জানাতেন না। কিন্তু তাবুক যুদ্ধের সময়টা ছিল ভীষণ গরমের সময়। পথও ছিল দীর্ঘ এবং তার কোথাও গাছপালা, লতাপাতা ও পানি ছিল না আর শত্রুর সংখ্যাও ছিল অত্যধিক। তাই রাসূল(সা) যুদ্ধের সকল প্রয়োজনীয় জ্ঞাতব্য বিষয় স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, যাতে তারা ভালোভাবে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। এ সময় রাসূল(সা) এর সহযোদ্ধার সংখ্যা ছিল বিপুল। তবে তাদের নামধাম লেখার জন্য কোনো খাতাপত্র বা রেজিস্টার ছিল না। এ যুদ্ধ থেকে অনুপস্থিত থাকতে চায়-এমন লোক একজনও ছিল না। তবে সকল সাহাবী এও মনে করতেন যে, কেউ যদি অনুপস্থিত থাকে, তবে আল্লাহর ওহী না আসা পর্যন্ত রাসূল(সা) তা জানতে পারতেন না।

রাসূল(সা) যখন এ যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন, তখন ফল পেকে গিয়েছিল এবং ছায়া খুবই ভালো লাগতো। রাসূল(সা) ও তার সাথী মুসলমানগণ পূর্ণোদ্দমে যুদ্ধের প্রস্তুতি চালাচ্ছিলেন। আমিও প্রতিদিন ভাবতাম প্রস্তুতি নেব। কিন্তু কোনো প্রস্তুতিই নেয়া হতো না। এমনিই দিন কেটে যেত। আমি নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলতাম, আমিতো যেকোন সময় প্রস্তুতি নিতে পারবো। ব্যস্ত হওয়ার দরকার কি? এভাবে দিন গড়িয়ে যেতে থাকে। একদিন ভোরে তিনি মুসলমানদেরকে সাথে নিয়ে চলে গেলেন। তখনো আমার প্রস্তুতি নেয়া হয়নি। আমি মনে মনে বললাম, তারা চলে যায় যাক। আমি পথেই তাদেরকে ধরতে পারবো। তাদের রওনা হয়ে যাওয়ার পরের দিন আমি রওনা হতে চাইলাম। কিন্তু দিনটা কেটে গেলো, আমার রওনা দেয়া হয়ে উঠলো না। পরদিন সকালে আবার ইচ্ছা করলাম। কিন্তু এবারও পারলাম না রওনা দিতে। এভাবে গড়িমসির মধ্য দিয়ে দিনের পর দিন কেটে গেল। ততক্ষণে মুসলিম বাহিনী অনেক দূর চলে গেছে। আমি কয়েকবার বেরিয়ে দ্রুত বেগে তাদেরকে ধরে ফেলার সংকল্প করেও পিছিয়ে গেলাম।

আফসোস তখনও যদি কাজটি সেরে ফেলতাম। কিন্তু আসলে তা বোধ হয় আমার ভাগ্যে ছিল না। রাসূল(সা) ও মুসলমানদের চলে যাওয়ার পর আমি যখন মদীনায় জনসাধারণের মধ্যে বেরুতাম, তখন পথে ঘাটে মুনাফিক ও পিড়াব্যাধিগ্রস্ত লোক ছাড়া আর কাউকে দেখতাম না। এ পরিস্থিতিতে নিজেকে দেখে আমার খুবই দুঃখ লাগতো।

রাসূল(সা) তাবুক যাওয়ার পথে আমার সম্পর্কে কিছুই জিজ্ঞেস করেন নি। তবে তাবুকে পৌছে জিজ্ঞেস করেন যে, কা’বের কি হয়েছে? বনু সালামার এক ব্যক্তি বললোঃ হে রাসূলুল্লাহ! নিজের সম্পদের মায়া ও আত্মাভিমানের কারণে সে আসেনি। মুয়াজ ইবনে জাবাল এ কথা শুনে বললেনঃ “ছি, কি একটা বাজে কথা তুমি বললে! আল্লাহর কসম, তার সম্পর্কে আমরা কখনো কোন খারাপ কথা শুনিনি।” রাসূল(সা) উভয়ের বাক্য বিনিময়ের মধ্যে চুপ করে থাকলেন।

কা’ব ইবনে মালেক বলেনঃ যখন আমি জানতে পারলাম যে, রাসূল(সা) ফিরে আসছেন, তখন ভাবলাম, এমন কোনো মিথ্যা ওজর বাহানা করা যায় কিনা, যাতে আমি তাঁর অসন্তোষ থেকে রক্ষা পেতে পারি। কিন্তু পরক্ষণেই এসব চিন্তা আমার দূর হয়ে গেল। আমি মনে মনে বললাম যে, মিথ্যে ওজর দিয়ে আমি রেহাই পাব না। কারণ রাসূল(সা) ওহীর মাধ্যমে জেনে ফেলবেন। কাজেই পুরোপুরি সত্য কথা বলবো বলে স্থির করলাম। রাসূল(সা) পরদিন সকালে ফিরে এসে মসজিদে নববীতে বসলে তাবুক যুদ্ধে যারা যায়নি তারা একে একে আসতে লাগলো এবং প্রায় ৮০ জন(মতান্তরে ৮২ জন) নানারকম ওজর বাহানা পেশ করে কসম খেতে লাগলো।

রাসূল(সা) তাদের ওজর মেনে নিলেন, তাদের কাছ হতে পুনরায় বায়য়াত নিলেন, তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেন এবং তাদের গোপন বিষয় আল্লাহর কাছে সোপর্দ করলেন। আমিও তাঁর কাছে এলাম। আমি সালাম দিলে তিনি ঈষৎ ক্রোধ মিশ্রিত মুচকি হাসিসহ জবাব দিলেন। তারপর বসতে বলে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কি হয়েছিল যে তাবুকে যেতে পারলে না? তুমি না সওয়ারী কিনে নিয়েছিলে? আমি বললামঃ জি, সওয়ারী কিনে নিয়েছিলাম।

কিন্তু আল্লাহর কসম, আমি যদি আপনি ছাড়া অন্য কারো সামনে বসতাম, তাহলে তার আক্রোশ হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য মিথ্যা ওজর পেশ করে চলে যেতাম। কারণ কথা বলার দক্ষতা আমারও আছে। কিন্তু আমি জানি, আজ আপনার কাছে মিথ্যা বলে আপনাকে খুশি করা গেলেও আল্লাহ তায়ালা কালই সব ফাঁস করে দিয়ে আপনাকে আমার উপর অসন্তুষ্ট করে দিবেন। আর যদি সত্য বলি, তাতে আপনি অসন্তুষ্ট হলেও আল্লাহর ক্ষমা লাভের আশা আছে। আল্লাহর কসম, আমার না যাওয়ার জন্য কোন ওজর ছিল না। আল্লাহর কসম, আমি এ সময়ে সর্ব প্রকারে সুস্থ, সবল ও সক্ষম ছিলাম। রাসূল(সা) আমার কথা শুনে বললেনঃ কা’ব সত্য কথা বলেছে। বেশ, তুমি এখন যাও। দেখ, আল্লাহ তোমার ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত দেন।

আমি বিদায় নিলাম। বনু সালামার লোকেরাও আমার সাথে চলতে লাগলো। তারা আমাকে বললোঃ“আমরা তো আজ পর্যন্ত তোমার কোন পাপ কাজের কথা শুনিনি। অন্যান্যদের মত তুমিও একটা ওজর পেশ করে দিলেই পারতে। তারপর রাসূল(সা) তোমার জন্য ক্ষমা চাইতেন এবং তাতেই তোমার গোনাহ মাফ হয়ে যেত।” তারা এভাবে আমাকে ক্রমাগত তিরস্কার করতে লাগলো। ফলে এক পর্যায়ে মনে মনে স্থির করে ফেললাম, রাসূল(সা) এর কাছে ফিরে যাই এবং আগে যা বলেছি তা ভুল প্রতিপন্ন করে আসি।

সহসা আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলামঃ আচ্ছা, আমার মত অকপটে সত্য বলে ভুল স্বীকার করতে তোমরা কি আর কাউকে দেখেছ? তারা বললোঃহ্যাঁ, হিলাল বিন উমাইয়া ও মুরারা বিন রবীও তোমার মতই কথা বলেছে। এই দুজনকে আমি ভালোভাবে জানতাম। তারা ছিলেন খুবই সৎলোক এবং বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী। তাদের দু’জনের কথা শুনে আমি আমার পূর্বের বক্তব্যে অবিচল থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। এদিকে রাসূল(সা) তাবুকে অনুপস্থিত থাকা লোকদের মধ্যে আমাদের তিনজনের সাথে কথা বলা সকল মুসলমানের জন্য নিষিদ্ধ করে দিলেন। তাই লোকেরা আমাদেরকে বয়কট করে চললো। যেন আমরা তাদের একেবারেই অচেনা মানুষ। দুনিয়াটাই যেন আমার কাছে বদলে গেল। এভাবে পঞ্চাশ দিন কেটে গেল। অন্য দু’জন তো ঘরেই বসে রইলো এবং কান্নাকাটি করতে লাগলো।

কিন্তু আমি বাইরে বেরুতাম এবং মসজিদে নববীতে নামায আদায় করতাম ও বাজারে ঘুরতাম। কিন্তু কেউ আমার সাথে কথা বলতো না। আমি রাসূল(সা) এর কাছে যেতাম। তিনি নামাযের পর মজলিসে বসলে সেখানেও তাকে সালাম দিতাম, আর দেখতাম, সালামের জবাবে তার ঠোঁট নড়তো কিনা। আমি তাঁর কাছে দাঁড়িয়ে নামায পড়তাম। আমি বাঁকা দৃষ্টিতে তাঁকে দেখতাম আমি নামায পড়ার সময় তিনি আমার দিকে তাকাতেন, আর আমি তাকালেই মুখ ফিরিয়ে নিতেন। এ অবস্থায় অনেকদিন কেটে গেল। ক্রমে আমি অস্থির ও দিশেহারা হয়ে পড়লাম। একদিন আমার অতি প্রিয় চাচাতো ভাই আবু কাতাদাহকে সালাম করলাম। কিন্তু সে সালামের জবাব পর্যন্ত দিল না। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ হে আবু কাতাদাহ! আমি যে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলকে ভালোবাসি, তা কি তুমি স্বীকার কর না? সে একথার কোন জবাব দিল না। দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসা করলেও জবাব দিল না। তৃতীয়বার আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে শুধু বললোঃ আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলই(সা) ভালো জানেন। আমার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আমি তার কাছ হতে ফিরে এলাম। এই সময় একদিন মদীনার বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম।

এই সময় সিরিয়ার একজন খৃস্টান কৃষক মদীনার বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রি করতে এসেছিল। সে লোকজনের কাছে আমার ঠিকানা সন্ধান করছিল। লোকেরা আমাকে দেখিয়ে দিলে সে গাসসানের রাজার একটি চিঠি আমার হাতে দিল। চিঠিতে রাজা লিখেছেঃ আমি জানতে পেরেছি যে, আপনার নেতা আপনাকে খুব কষ্ট দিচ্ছেন। অথচ আল্লাহ আপনাকে লাঞ্ছনা ও অবমাননার যোগ্য রাখেন নি। আপনি আমাদের এখানে চলে আসুন। আমরা আপনাকে সম্মানের সাথে রাখবো। চিঠিটা পড়ার সাথে সাথে আমি মনে মনে বললাম, এ আর এক পরীক্ষা। আমি তৎক্ষণাত তা চুলোর মধ্যে নিক্ষেপ করলাম।

এভাবে চল্লিশ দিন কেটে গেল রাসূল(সা) এর এক দূত আমার কাছে এসে বললোঃ রাসূল(সা) তোমাকে তোমার স্ত্রী হতে পৃথক হয়ে যাবার আদেশ দিয়েছেন। আমি বললামঃ ওকে তালাক দেব নাকি? দূত বললেনঃ না, তালাক দিতে হবে না, তবে তার কাছে যাবে না। আমার অন্য দু’জন সাথীকেও একই হুকুম দেয়া হল। আমি আমার স্ত্রীকে বললামঃ তুমি বাপের বাড়ীতে চলে যাও এবং আল্লাহর ফয়সালা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। হিলাল ইবনে উমাইয়ার স্ত্রী রাসূল(সা) এর কাছে এসে বললেনঃ হে রাসূল! আমার স্বামী বুড়ো হয়ে গেছে। তার কোন ভৃত্য নেই। আমি যদি তার দৈনন্দিন কাজকর্ম করে তার সেবা করে দেই, তাতে কি আপত্তি আছে? রাসূল(সা) বললেন, আপত্তি নেই। তবে সে যেন তোমার কাছে না আসে। আমাকেও কেউ কেউ বললো যে, তুমি রাসূল(সা) এর কাছে গিয়ে স্ত্রীর জন্য অনুমতি নিয়ে এসো। আমি বললামঃ না, আমি কোন অনুমতি আনতে যাব না। জানি না তিনি কি ভাববেন। কারণ হিলাল বিন উমাইয়া বুড়ো, আর আমি যুবক।

এভাবে আরো দশটি দিন কেটে গেল একদিন আমি ফজরের নামায পড়ে অত্যন্ত বিষন্ন মনে বসেছিলাম। সহসা কে একজন চিৎকার করে বলতে বলতে ছুটে আসতে লাগলোঃ ক্বাব ইবনে মালেক! সুসংবাদ গ্রহণ কর। আমি তৎক্ষণাত সেজদায় পড়ে গেলাম। আমি বুঝতে পারলাম, আমাদের মুসিবত কেটে গেছে। রাসূলুল্লাহ(সা) ঐদিন ফজরের নামাজের পর ঘোষণা দিয়েছেন যে, আল্লাহ আমাদের তাওবা কবুল করে নিয়েছেন। লোকেরা দলে দলে এসে আমাকে অভিনন্দন জানাতে লাগলো। এরপর আমি রাসূল(সা) এর সাথে সাক্ষাত করতে গেলাম।

আমি দেখলাম, তিনিও আমার সুসংবাদে আনন্দিত। আমি বললামঃ হে রাসূলুল্লাহ(সা)! আমার তওবা কবুলের জন্য শুকরিয়া স্বরূপ আমার সমস্ত ধনসম্পদ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পথে সদকা করে দিতে চাই। রাসূল(সা) বললেনঃ সব নয়, কিছু অংশ নিজের জন্য রেখে দাও। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ এবার আমাকে সত্য কথা বলার কারণে ক্ষমা করেছেন। কাজেই এরপর বাকী জীবন আমি সর্বদা সত্য কথাই বলতে থাকবো। আল্লাহ যেন আমাকে মিথ্যা থেকে রক্ষা করেন।

শিক্ষাঃ (১) এই ঘটনার সবচেয়ে বড় শিক্ষা এই যে, ইসলামী আন্দোলনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সত্য কথা বলার নীতিতে অটল থাকতে হবে। চাই তাতে যত কঠিন পরীক্ষাই আসুকনা কেন। (২)আল্লাহ মোনাফেকদেরকে পরীক্ষার সম্মুখীন করেন না বরং মুমিনদেরকেই কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করেন। এই তিন মুমিন ব্যতীত বাকী ৮২ জন মিথ্যা অজুহাত পেশ করলেও তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করা হয়নি। কারণ তারা ছিল মুনাফিক। তাই আল্লাহ তাদেরকে পরিশুদ্ধ করতে চান নি।

(৩) ইসলামী সংগঠনের নেতৃত্বের অধিকার রয়েছে কুরআন হাদীসের সীমার মধ্যে নিষ্ঠাবান কর্মীদেরকে পরিশুদ্ধ করার জন্য পরীক্ষার সম্মুখীন করা বা ‍গুরুতর ভুল কাজের জন্য শাস্তি দেওয়া। এ সব ক্ষেত্রে আনুগত্যের পরিচয় দিয়ে এবং কোন দিক থেকে কুপ্ররোচণা এলে তা উপেক্ষা করে পরীক্ষায় কৃতকার্য হবার চেষ্টা করতে হবে।

(৪) ইসলামী আন্দোলনের কোন পর্যায়ে কারো কোন সাফল্য বা কৃতিত্ব প্রমাণিত হলে তার জন্য যাতে অন্তরে গর্ব বা অহমিকার সৃষ্টি না হয় সেজন্য সম্ভব হলে সদকা করা উত্তম। আর সেই সাথে তওবা ইসতিগফারও অব্যাহত রাখা উচিত। (৫) অলসতা ও সিদ্ধান্তহীনতা এই তিনজন মুজাহিদের জীবনে চরম সংকট সৃষ্টি করেছিল। কাজেই অলসতা, গড়িমসি ও সিদ্ধান্তহীনতা সর্বোতভাবে পরিত্যাজ্য।
#গুরত্বপুর্ণ লেখাটি নেট থেকে সংগৃহীত ।

Logo-orginal