, শনিবার, ৪ মে ২০২৪

admin admin

শত চেষ্টায় জুটেনি বয়স্ক ভাতা’ যেভাবে চলে বৃদ্ধার সংসার’

প্রকাশ: ২০২২-০১-২২ ২০:০৮:১০ || আপডেট: ২০২২-০১-২২ ২০:০৮:১১

Spread the love

বরগুনা: অভাবের তাড়নায় আগে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করতেন, কিন্তু বয়সের ভারে এখন তা করতে পারেন না। তাই বাধ্য হয়ে বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে ঝুপরি ঘরের পাশে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন সালেহা বেগম (৬৫)। সংবাদ বাংলা নিউজের ।

স্বামী মানিক হাওলাদারকে (৭০) নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জীর্ণশীর্ণ ঘরে বসবাস করছেন। বৃদ্ধ এ দম্পতির বাড়ি বরগুনার তালতলী উপজেলার বরবগী ইউনিয়নের মালিপাড়া গ্রামে।

বাংলানিউজকে তারা বলেন, অভাবের তাড়নায় ঝুপড়ি ঘরের সামনেই একটি চায়ের দোকান দিয়েছেন। প্রতিদিন এক থেকে দেড়শ টাকা বিক্রি হয়, তা দিয়ে সংসার চলে না। গ্রামের অনেকেই নানা রকমের সরকারি বা বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলেও এ পর্যন্ত কিছুই জুটেনি তাদের ভাগ্যে।

সরজমিনে দেখা যায়, বেড়ায় বড় বড় ফুটো, থাকার একমাত্র ঘরটি জরাজীর্ণ। শীতের কনকনে ঠাণ্ডায় নির্ঘুম রাত কাটে তাদের। জরাজীর্ণ ঘরটি যে কোনো সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসলে ভেঙে পড়তে পারে। জীবিকার তাগিদে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে ঝুপরি ঘরে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তারা।

সালেহা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, পাঁচ বছর ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছি, ভারি কোন কাজ করতে পারি না। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটে। ঝুপড়ি ঘরের সামনেই একটি চায়ের দোকান দিয়েছিলাম। গত ১৫ দিন ধরে দোকানের মালামাল কেনার টাকা নেই, দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ভিক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

তিনি আরও বলেন, সমাজের বিত্তবানরা একটু সহযোগিতা করলে কোনমতে দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারব।

এই দম্পতির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের সংসারে তিন ছেলে থাকলেও প্রায় ৫ বছর আগে বড় ছেলে হোসেন হাওলাদার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাকি দুই ছেলে ইয়াসিন ও ইসহাক তাদের পরিবারে অসচ্ছলতার কারণে দিনমজুরের কাজ করছেন। তাদের অভাবের সংসারের টানা পোড়নে বৃদ্ধ মা বাবাকে ভরণ পোষণ দিতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রতিদিন। বড় ছেলের চিকিৎসার জন্য জমিজমা যা ছিল সব বিক্রি করে এখন নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

আপসোস করে সালেহা বেগমের স্বামী মানিক হাওলাদার বলেন, একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে দিনের পর দিন ধরনা দিয়েছেন। তারা শুধু বলেন কিছুদিন পরেই নাম নেওয়া হবে, কিন্তু কত মানুষের নাম নিলো, শুধু আমাদেরটাই নেয়নি।

প্রতিবেশী জেসমিন বেগম জানান, বড় ছেলে হোসেন হাওলাদার ক্যান্সারে মারা যাওয়ার পর খুব কষ্টে দিন কাটছে তাদের। এখন ছোট্ট একটি দোকান দিয়ে চা বিক্রি করছেন, দোকানের মালামাল নেই, আর কেনারও টাকা নেই। সরকারি বা বেসরকারি আর্থিক কোনো সহযোগিতা পেলে তাদের কষ্ট কিছুটা কমতো।

বড়বগী ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য সেলিনা আক্তার (ইভা) বাংলানিউজকে মুঠোফোনে বলেন, মানিক হাওলাদার ও সালেহা বেগম বৃদ্ধ হয়ে গেছে, তেমন কোন কাজ কাজ করতে পারেন না। ওনার ছেলে ছিল তিনটি, একটি ক্যান্সারে মারা গেছে। তারা খুবই মানবতার জীবন যাপন করছেন।

এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাওসার হোসেনকে মুঠোফোনে সরকারি নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Logo-orginal