, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

admin admin

সিনহা হত্যা মামলার রায়ে প্রদীপ ও লিয়াকত আলীর ফাঁসির আদেশ’

প্রকাশ: ২০২২-০১-৩১ ১৬:৪৪:৫৩ || আপডেট: ২০২২-০১-৩১ ১৬:৪৪:৫৬

Spread the love

কক্সবাজারঃ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও মো. লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। আজ কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল এ রায় ঘোষণা করেন।

সোমবার রায় ঘোষণার নির্ধারিত দিন সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজার জেলা আদালতের সামনে দুটি ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়ান ৩০ থেকে ৪০ জন; যারা কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ও হয়রানির শিকার পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন৷

‘সর্বস্তরের জনগণ টেকনাফ’, সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি- কক্সবাজার জেলা শাখার ব্যানারে ওই মানববন্ধনে দাঁড়ানো কারো কারো হাতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতদের ছবি রয়েছে৷

‘ওসি প্রদীপের ফাঁসি চাই’ স্লোগানসহ তারা সিনহা হত্যার ন্যায়বিচার দাবি করছিলেন৷ ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে সিনহাকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ ঘটনার প্রায় সাড়ে চার মাস পর ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ১৫ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন৷

২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর টেকনাফ থানায় যোগ দেন প্রদীপ৷ তার আগে তিনি একই জেলার মহেশখালী উপজেলার ওসি ছিলেন৷

মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, টেকনাফে আসার পর থেকেই তিনি মাদক নির্মূলের আড়ালে ‘সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা’ করছিলেন৷ ইয়াবা ব্যবসায়ী ছাড়াও স্থানীয় আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নিরীহ পরিবারকে টার্গেট করে, তাদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে, অনেককে ‘ক্রসফায়ারে দিয়ে এবং ‘ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে’ টাকা আদায়ের ‘নির্মম নেশা’ পেয়ে বসেছিল তাকে৷

ভ্রমণবিষয়ক তথ্যচিত্র নির্মাণে কক্সবাজারে যাওয়া সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান ও তার সঙ্গীরা টেকনাফের নিরীহ মানুষের উপর ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ‘অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়নের কাহিনী’ জেনে গিয়েছিলেন৷ প্রদীপের অত্যাচারের শিকার কিছু মানুষের সাক্ষাতকারও তারা নিয়েছিলেন৷

বিষয়টি নিয়ে প্রদীপের সঙ্গে সিনহা এবং তার সঙ্গীদের কথাও হয়৷ বিপদ আঁচ করতে পেরে প্রদীপের পরিকল্পনায় শামলাপুর চেকপোস্টে সিনহাকে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে এ মামলায়৷ সিনহা হত্যার পর আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে গিয়ে সব বিষয় খতিয়ে দেখে৷ তাদের প্রতিবেদনেও বলা হয়, টেকনাফ থানায় ওসি প্রদীপের ৩৩ মাসের সময়কালে ১০৬টি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ১৭৪ ব্যক্তি নিহত হন৷ নিহতদের মধ্যে একজন ছিলেন টেকনাফের ডেইল পাড়ার বাসিন্দা আব্দুল আজিজ (২০)৷ যিনি পেশায় ছিলেন রিকশাচালক৷ ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর সকালে স্থানীয় সোনাইয়া সওদাগরের দোকানে নাস্তা করছিলেন আজিজ৷ সেখান থেকেই তাকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ৷ পরিবার টাকা দেওয়ার পরও তাকে ‘ক্রসফায়ার’ দেওয়া হয়৷

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০০১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তিন হাজার ৩৬৪ জন৷ বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এ ধরনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছিল ২০০৫-০৬ সালে৷ ২০০৫ সালে ৩৭৭ জন এবং ২০০৬ সালে ৩৬২ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন৷ তবে আরেক মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের হিসাবে দুই দশকে এমন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা চার হাজারের বেশি৷

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০০১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তিন হাজার ৩৬৪ জন৷ বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এ ধরনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছিল ২০০৫-০৬ সালে৷ ২০০৫ সালে ৩৭৭ জন এবং ২০০৬ সালে ৩৬২ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন৷ তবে আরেক মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের হিসাবে দুই দশকে এমন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা চার হাজারের বেশি৷

সোমবার সকালে আদালতের সামনে মানববন্ধনে আজিজের ছবি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার মা হালিমা খাতুন৷ কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ৷ ওসি প্রদীপ ১০ লাখ টাকা চেয়েছিল৷ ভিটাবাড়ি বন্ধক রেখে ছয় লাখ টাকা দিই৷ তারপরেও দুদিন পর আমার ছেলেকে ক্রসফায়ার দেয়৷ আমার এখন বাড়িঘরও নেই, ছেলেও নেই৷’’

হালিমা খাতুনের দুই ছেলে আর এক মেয়ের মধ্যে আবদুল আজিজ ছিলেন দ্বিতীয়৷

টেকনাফের হ্নীলা এলাকার বাসিন্দা মুরাদ হাসান চৌধুরী জাতীয়তাবাদী যুবদল করেন৷ ২০১৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর পুলিশ তাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়৷ মুরাদ হাসানের দাবি, তার কয়েক দিন আগে দলীয় এক সমাবেশে তিনি পুলিশের ‘মাদকবিরোধী অভিযানের নামে হয়রানির’ বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার কারণেই তাকে ধরে নিয়ে যায়৷ মানববন্ধনে তিনি বলেন, ‘‘আমাকে ধরে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হয়৷ ১১টি মামলা দেওয়া হয়৷ ১৪ মাস কারা ভোগের পর আমি জামিনে মুক্তি পাই৷’’

টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা হাম জালাল বলেন, ‘‘২০১৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর আমার
ভাই ইউসুফ জালাল বাহাদুরকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ৷ এক কোটি টাকা চাঁদা চেয়েছিল৷ টাকা দিতে না পারায় একদিন পর রাতে ক্রসফায়ার দেয়৷ পরে ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি আমাকে আটক করে৷ চার মাস পর হাই কোর্ট থেকে জামিন নিই৷ ওসি প্রদীপ টেকনাফের নিরীহ মানুষকে মাদক নির্মূল অভিযানের নামে ক্রসফায়ার, নির্যাতন, চাঁদাবাজি সব করেছে৷ আমরা তার ফাঁসি চাই৷’’

প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করা সংবাদকর্মী ফরিদুল মোস্তফা খান বলেন, ‘‘ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় আমাকে ঢাকা থেকে তুলে আনা হয়৷ টেকনাফ থানায় অকথ্য নির্যাতন করা হয়৷ ছয়টি মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে ১১ মাস জেল খাটায়৷ আজ ওসি প্রদীপের ফাঁসির রায় শুনতে আদালতে এসেছি৷ আমি তার ফাঁসি চাই৷’’

সুত্রঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

Logo-orginal