, শনিবার, ৪ মে ২০২৪

admin admin

যে কারণে ৬ টুকরা করা হয় সৌদিপ্রবাসীর স্ত্রী জ্যোৎস্নাকে’

প্রকাশ: ২০২২-০২-২০ ১১:০৫:০৫ || আপডেট: ২০২২-০২-২০ ১১:০৭:০২

Spread the love

স্বামী বিদেশে থাকায় পরিবারের সবকিছুই সামাল দিতে হয় গৃহবধূ শাহানা পারভিন জ্যোৎস্নাকে (৩৪)। তাই গত বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলেও ওষুধ কেনার কথা বলে ঘর থেকে বের হন তিনি। দীর্ঘক্ষণ ঘরে না ফেরায় অনেক খোঁজাখুঁজির পরও স্বজনদের সন্দেহ হয় ফার্মেসির মালিকের ওপর। পরের দিন বৃহস্পতিবার তার বাসায় খোঁজ নিতে গেলে জানতে পারেন পরিবার নিয়ে ভোরে পালিয়েছেন ফার্মেসি মালিক। এরপর সন্দেহ আরও বেড়ে গেলে ফার্মেসির তালা ভাঙলে জ্যোৎস্নার ৬ টুকরো খণ্ডিত মরদেহ পাওয়া যায়।

ঘটনাটি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের। এ ঘটনায় নিহতের ভাই হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর অভিযুক্ত ফার্মেসির মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপ অভিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এরপরেই হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।

শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি জানায়, জোৎস্না কিছুদিন ধরে শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সমস্যার কথা স্থানীয় ফার্মেসি মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপকে জানালে তিনি তাকে ফার্মেসিতে যেতে বলেন। এরপর ফার্মেসিতে গেলে পালাক্রমে ধর্ষণের শিকার হন জোৎস্না। ধর্ষণের কথা সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার কথা বললে জিতেশসহ তিনজন জোৎস্নাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ফল কাটার ছুরি দিয়ে মরদেহ ৬ টুকরা করে।

সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর পয়েন্টের ব্যারিস্টার মির্জা আবদুল মতিন মার্কেটের অভি মেডিকেল হল নামের একটি ওষুধের দোকান থেকে জোৎস্নার ৬ টুকরা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

তিনি বলেন, জোৎস্না ২০১৩ সাল থেকে পৌর শহরের নিজ বাসায় দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে থাকেন। তার স্বামী ছরকু মিয়া দীর্ঘদিন ধরে সৌদিপ্রবাসী। পরিবারের সদস্যদের ওষুধ কেনার সুবাদে ফার্মেসি মালিকের সঙ্গে জোৎস্নার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। জোৎস্না কিছুদিন ধরে শারীরিক গোপন সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জিতেশ জোৎস্নার মায়ের প্রেসার মাপার জন্য তাদের বাড়িতে যায়। তখন জোৎস্না তার গোপন সমস্যার কথা জিতেশকে জানালে সে তাকে ফার্মেসিতে যেতে বলে। ওইদিন বিকেলে জোৎস্না দোকানে গেলে দোকানে কাস্টমার রয়েছে বলে তাকে অপেক্ষা করতে বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। এদিকে রাত গভীর হলে জোৎস্নার বাসায় যাওয়ার অস্থিরতা বেড়ে যায়। তখন ওই ফার্মেসির মধ্যে জোৎস্নাকে একটি ঘুমের ওষুধ খেতে দেয় জিতেশ। এতে তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তখন জিতেশ তার দুই সহযোগী অনজিৎ চন্দ্র গোপ ও অসীত গোপকে নিয়ে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে। এরপর রাত গভীর হলে আশপাশের দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তখন জিতেশ ও তার দুই সহযোগী এনার্জি ড্রিংকস পান করে জোৎস্নাকে জোরপূর্বক সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে।

সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ধর্ষণের বিষয়টি জোৎস্না তার পরিবারকে জানাবে বলে জানান। তখন জিতেশ ও তার সহযোগীরা জোৎস্নার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মুখে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

মুক্তা ধর বলেন, পরে ওই ফার্মেসিতে থাকা ফল কাটার ছুরি দিয়ে জোৎস্নার দুই হাত, দুই পা ও বুক-পেটসহ ৬ টুকরা করে। এরপর দোকানে থাকা ওষুধের কার্টন দিয়ে খণ্ডিত অংশগুলো ঢেকে রেখে তারা ফার্মেসি তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে ওই মরদেহের খণ্ডিত অংশ পাশের একটি মাছের খামারে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু ভোর হয়ে যাওয়ায় ও লোকজন চলে আসায় তারা সেই কাজটি করতে পারেনি।

এই ঘটনার পর সিআইডির এলআইসি শাখার একাধিক দল আসামিদের গ্রেফতারে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়। শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ভাটারা থানার নুরেরচালা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জিতেশকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জগন্নাথপুর থানার পৌর এলাকায় অভিযান চালিয়ে অনজিৎ ও অসীত গোপকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সুত্রঃ আরটিভি নিউজ।

Logo-orginal