, রোববার, ৫ মে ২০২৪

admin admin

শরীফরা যদি বিনা দোষে হেরে যান তবে মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে দুদকের।’

প্রকাশ: ২০২২-০২-১৯ ০৯:৩১:৫৩ || আপডেট: ২০২২-০২-১৯ ০৯:৩১:৫৭

Spread the love

মো. শরীফ উদ্দিন দুর্নীতি দমন কমিশনে যোগ দেন ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর। উপসহকারী পরিচালক পদে তার চাকরিজীবন শুরু হয় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ময়মনসিংহে। এর পর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি চাকরিচ্যুত হওয়ার আগে সাড়ে সাত বছরের চাকরিজীবনে তার কর্মস্থল থেকে দেওয়া হয় ছয়টি বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর)। এসব প্রতিবেদনের প্রথম পাঁচটিতেই তাকে ‘উত্তম’ ও ‘অতি উত্তম’ কর্মকর্তা হিসেবে উল্লেখ করেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। প্রতিবেদনে প্রতিস্বাক্ষরকারী কর্মকর্তা কোনো বছর মন্তব্য করেছেন- ‘কাজের প্রতি আগ্রহী ও আন্তরিক’, কোনো বছর- ‘সর্বদা দায়িত্বশীল’, আরেক বছর- ‘সম্ভাবনাময় কর্মকতা’, পরের বছর- ‘দক্ষ কর্মকর্তা’, তার পর- ‘তদন্তকাজে অভিজ্ঞ’। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এসব মন্তব্য করা হয়। পরে বছরেই অনুবেদনকারী কর্মকর্তার মন্তব্যে তিনি হয়ে যান- ‘চলতিমান’। সংবাদ দৈনিক সমকালের ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শরীফ উদ্দিন ২০১৯-২০ সালের দিকেই কক্সবাজারের ভূমি অধিগ্রহণে বড় দুর্নীতি উদ্ঘাটন করেন।

প্রতিবারই পদোন্নতির সুপারিশ করা হলেও শরীফ উদ্দিন তার কর্মজীবনে কখনও পদোন্নতি পাননি। গত বছরের ২১ নভেম্বর তার ব্যাচের ২৯ জনের পদোন্নতি হয়। তিনি বঞ্চিত থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, চাকরিজীবনে একটিও মামলা করেননি এমন কর্মকর্তারাও পদোন্নতি পেয়েছেন।

শরীফের ২০২০ সালের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের দ্বিতীয় খণ্ডের ক্রমিক নম্বর ২০-এ মন্তব্য করা হয়, ‘ঔদ্ধত্যের প্রবণতা রয়েছে’। ক্রমিক নম্বর ২৩-এর কলামে লেখা হয়- ‘সময়নিষ্ঠ নহেন’। যদিও এই মন্তব্য যথার্থ হয়েছে কিনা তার ব্যাখ্যা ও প্রমাণ চেয়ে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়া হয় প্রধান কার্যালয় থেকে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়- বিধান অনুযায়ী, এসিআরে এমন মন্তব্য লিখতে হলে সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাকে আগে মৌখিক বা লিখিতভাবে সংশোধনের পরামর্শ দিতে হয়। সেটি দেওয়া হয়েছিল কিনা তার প্রমাণ চাওয়া হয় চিঠিতে।

শরীফ উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘এসিআরে নেতিবাচক মন্তব্য করা হলেও নিয়ম মানা হয়নি। এমন মন্তব্য লিখতে হলে আগে শোকজ করতে হয়। জবাব সন্তোষজনক না হলে তবেই কোনো কর্মকর্তার এসিআরে নেতিবাচক মূল্যায়ন করা যায়। কিন্তু গত দুই বছর কোনো ঊর্ধ্বতনই এই নিয়ম মানেননি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক মাহমুদ হাসান বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

শরীফ উদ্দিন অভিযোগ করেন, চাকরিজীবনে একটিও মামলা করেননি এমন কর্মকর্তারাও পদোন্নতি পেয়েছেন। সেখানে আমি শুধু চট্টগ্রামে তিন বছর সাত মাস দায়িত্ব পালনের সময় ৫৫টি মামলার সুপারিশ করেছি। ১৫টি মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছি। ১৩৪টি সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ করেছি। আমার মামলায় ২৫ জনের মতো আসামি গ্রেপ্তারও হয়েছে। তার পরও পদোন্নতি হয়নি আমার।’

পদোন্নতির লিখিত পরীক্ষায় ৮৬ নম্বর এবং মৌখিকের ২০ নম্বরের মধ্যে ১৫ নম্বর পান বলে দাবি করেন শরীফ উদ্দীন।

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘একজন উপসহকারী পরিচালক অনেক রাঘববোয়ালের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছিলেন। ঊর্ধ্বতনদের তদবির উপেক্ষা করে দায়ের করেছেন একের পর এক মামলা। এতে ঘরে বাইরে শত্রু বেড়েছে তার। রাষ্ট্রকে ঠিক করতে হবে সাহসী কর্মকর্তার ভবিষ্যৎ। শরীফ যদি কোথাও অন্যায় করেন, তবে তারও বিচার হোক। কিন্তু শরীফরা যদি বিনা দোষে হেরে যান তবে মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে দুদকের।’

Logo-orginal