, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

admin admin

সমাজে যাকাতের গুরুত্ব’

প্রকাশ: ২০২২-০৪-২২ ১৯:২৫:৩৫ || আপডেট: ২০২২-০৪-২২ ১৯:২৫:৩৭

Spread the love

যাকাত কি ?

যাকাত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে প্রতি বছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তি যদি ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত সীমা (নিসাব পরিমাণ) অতিক্রম করে তবে তার নির্দিষ্ট একটি অংশ(২.৫ শতাংশ) আল্লাহকতৃক নির্ধারিত খাতে ব্যয় করাকে যাকাত বলে।

হানাফী মাযহাবে যাকাতের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে-

تمليك المال من فقير مسلم غير هاشمي ولا مولاه، بشرط قطع المنفعة عن المملك من كل وجه لله تعالى.

একমাত্র আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য সম্পূণ মালিকানা সম্পকিত উপকারিতা বিচ্ছিন্ন করার শতে হাশেমী বংশের ও তাদের গোলাম ব্যতীত মুসলিম গরীবকে সম্পদের মালিক বানানোকে যাকাত বলে।দারিদ্র্য বিমোচন করা;

· 3. সমাজে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভারসাম্য তৈরি করা;
4. মুসলমানদের সামগ্রিক শক্তি বৃদ্ধি করা;
5. চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইসহ সবরকম অভাবজনিত অপরাধের মূলোৎপাটন করা;
6. গরীব-ধনীর মাঝে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করা;
7. সম্পদের বরকত ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি। রাসূল (স.) বলেন, ما نقصت صدقة من مال যাকাতের সম্পদ কমে না। অর্থাৎ, হয়তো দৃশ্যতঃ সম্পদের পরিমাণ কমে, কিন্ত আল্লাহ তাআলা এই স্বল্প সম্পদের মাঝেইবেশি সম্পদের কার্যকারী ক্ষমতা দিয়ে দেন।
8.দেশে ধনী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিনিয়োগ এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়;
9.শিল্প- কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়;
10.যাকাত আদায়ে পণ্য উৎপাদন পরিমাণ বাড়ে বিধায় উৎপাদন খরচ কমে । ফলে জিনিসপত্রের দাম কমে যায়। সাধারণ ভোক্তাগণ লাভবান হন;
11.সামাজে বেকার সমস্যা লোপ পায়;
12.ধনী ও দরিদ্র্যের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ কমে যায়;
13.সামাজের শাসক ও শাসিত শ্রেণির মাঝে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়;
14.একজন মুসলিম যাকাত আদায়ের ফলে মানসিক শান্তি ভোগ করেন, যা তাকে হৃদরোগসহ বিভিন্ন প্রকার রোগ ব্যাধি থেকে রক্ষা পায়;
15. দেশের অথনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পায়;
16.যাকাত প্রদানকারী দান ও দয়ার গুণে গুণান্বিত হয়এবং তার অন্তরে অভাবীর প্রতি মায়া-মমতা সৃষ্টি হয়।
17.যাকাত আদায়কারী কৃপণতার ন্যায় অসৎ গুণ থেকে নিজেকে পবিত্র করতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন, خذ من أموالهم صدقة تطهرهم وتزكيهم بها তাদের সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ করো; যেন তুমি সেগুলোকে এর মাধ্যমে পবিত্র ও বরকতময় করতে পার।সর্বোপরি, আল্লাহর বিধান পালন করার মাধ্যমে ইহকাল ও পরকালে তাঁর নৈকট্য লাভ করা যায়।
সামাজিক উন্নয়নে যাকাতের অবদান :

যাকাত অথনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের একটি পরিক্ষীত ইসলামিক ধারণা। যাকাতের মাধ্যমে সামাজিক ও অথনৈতিক ব্যপক উন্নতি সাধিত হতে পারে।

যাকাতের উদ্দেশ্য হলো, সহায়তার মনোভাব পোষণ ও অথনৈতিক সমৃদ্ধি আনায়ন। দারিদ্র্য বিমোচন ও মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ কমিয়ে আনা। আমরা যাকাতের অন্যান্য সকল দিক আলোচনায় না এনে কেবল উল্লিখিত তিন/ চারটি দিক সম্পকে বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাই যে, যাকাত সামাজের জন্য খুবই কল্যাণকর একটি ব্যবস্থা।

কল্যাণময় সামজের জন্য শিক্ষা একটি অপরিনহায দিক । যে সমাজে শিক্ষিতের সংখ্যা বেশী সে সমাজের উন্নয়ন ও অগ্রগতিও তত বেশী। আমরা সকলে এও স্বীকার করবো যে, উচ্চ শিক্ষত হতে হলে অথ প্রয়োজন। আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যারা তাদের সন্তানদের শুধু অথাভাবে উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারছেন না। এমতাবস্থায যদি ধনী মানুষগুলো ইসলামী আইন অনুযায়ী তাদের অথরে শরীয়ত নিধারিত অংশ যাকাত হিসেবে সমাজের এই গরীব মানুষগুলোর হাতে যথাযথভাবে আদায় করে তবে সে মানুষগুলো তাদের সন্তানগুলোকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারে।ভবিষ্যতে এ শিক্ষিত মানুষগুলো সমাজের জন্য হয় আশিবার্দ ও কল্যাণকর। কখনোই তারা সামজের জন্য বোঝা হয় না। তারা দেশ ও সমাজের উন্নয়নের জন্য এমন কিছু অবদান রাখতে পারে যা অশিক্ষিত থাকলে কোনভাবেই তাদের দ্বারা সম্ভব হতো না। শুধু তাই নয়, শিক্ষিত হবার ফলে তাদের মধ্যে মানুষ্যত্ববোধ জন্ম নেয়ায় সে সমাজের অনেক অনাচার, অবিচার ও অপরাধ প্রবণতা থেকে মানুষকে বিরত রাখর ফলে সমাজে শান্তির বিস্তার করতে সক্ষম হয়। এভাবে যাকাত আদায়ের মাধ্যমে সমাজ কল্যাণময় হয়ে ওঠে।

যাকাতের একটি খাত হলো, ঋণগ্রস্থ ব্যক্তিকে ঋণ আদায়ের জন্য যাকাত দেয়া। শুধু এই খাতটিেিক নিয়ে ভাবলেও আমরা যাকাতের সামাজিক কল্যাণের দিক কতটা প্রবল তা অনুমান করতে পারি। আমরা সমাজের দিকে তাকালে দেখি, একটা মানুষ সাধারনত তখনই ঋণ গ্রহণ করেন যখন তিনি নিরুপায় থাকেন। এই ্ঋণ পরিশোধের সময় যদি ঋণগ্রস্থ ব্যক্তির পরিশোধের মত টাকা না থাকে তবে কতইনা বিপত্তি ঘটে। ঋণদাতার সাথে তার ওয়াদা ভঙ্গ হয়, তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাধ হয়, তর্ক-বিতর্ক হয়, মনোমালিণ্য হয়, এমনকি মারামারি, কেস-মামলা পর্যন্তও গড়ায়,যা সামাজিক অশান্তি ও অকল্যাণের কারণ। ঐ ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের জন্য যাকাত দেয়া হলে তাদের মধ্যে পরস্পর সমাজবিধ্বংসী মনোমালিন্য হবে না। এর ফলে সামাজিক শান্তি বৃদ্ধি পায়।
এভাবে সামজিক ও অর্থনৈকিতক কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় যাকাতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। কলেবর বৃদ্ধির ভয়ে এখানে দুটো দিক তুলে ধরা হলো –

যাকাত কাকে দিবেন :

যাকাত বন্টনের কিছু নির্দিষ্ট খাত আছে। এই খাতগুলো সরাসরি কোরআনদ্বারা নির্দ্দিষ্ট | এ সম্পক মহান আল্লাহ বলেন,

إنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِنْ اللَّهِ وَاَللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ.মুসলমান ফকির (যার কিছুই নেই)

মুসলমান মিসকীন (যার নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই)
যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী (যার অন্য জীবিকা নেই)
(অমুসলিমদের) মন জয় করার জন্য
ক্রীতদাস (মুক্তির উদ্দেশ্যে)
ধনী সম্পদশালী ব্যক্তি যার সম্পদের তুলনায় ঋণ বেশী
(স্বদেশে ধনী হলেও বিদেশে) আল্লাহর পথে জেহাদে রত ব্যক্তি
মুসাফির (যিনি ভ্রমণকালে অভাবে পতিত)|
যাকাত আদায়ে আমাদের দেশের প্রচলিত পদ্ধতি হলো-
১. যাকাত সাধারনত ব্যক্তি নিজে আদায় করেন। সরকার যাকাত আদায়ে উৎসাহিত যেমন করেন না তেমনি নিরোৎসাহিতও করেন না।
২. আমাদের দেশের ধনী ব্যক্তিরা সাধারণত অলাভজনক ও টেকসই নয় এমন পদ্ধতিতে যাকাত আদায় করেন। কিছু শাড়ি বা লুঙ্গি দিয়ে যাকাত আদায় করেন।
৩. অনেকে যাকাতের শাড়ি লুঙ্গি বিতরণের মাধ্যমে নিজের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর একটা ব্যবস্থা করেন, যা ইসলামী আইনে একটি অপরাধ ও অগ্রহণযোগ্য দিক।
যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে এসব পদ্ধতির ফলে যাকাতের যে সুফল ও উকারিতার কথা ইতঃপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে সেসব উপকারিতা থেকে সমাজ বঞ্চিত হচ্ছে।
যাকাত আদায়ের উত্তম পদ্ধতি :
সত্যিকার অর্থে ইসলাম যে সুফল কায়েমের জন্য যাকাত ফরয করেছে তা পেতে হলে আমাদের যাকাত আদায়ে সঠিক পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। কয়েকটি দিক নিচে তুলে ধরা হলো।
১. যাকাত আদায় করবে মুলত: রাষ্ট্র বা সরকার। দেশের সরকার সংসদে আইন পাশ করে আয়কর আদায়ের মতো বাধ্যতামূলকভাবে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকদের জন্য যাকাত বাধ্যতামূলক করে দিবেন। সূরা তওবাতে আল্লাহ সেদিকে ইঙ্গিত করে বলেন-

خَذُ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تَطَهِّرُهُمْ وَتُزْكِّهِمْ : التورة : 103

তাদের ধন–সম্পদ থেকে যাকাত উসুল করে তাদেরকে পবিত্র এবং পরিচ্ছন্ন করে দাও।[6]

“ তুমি তাদের ধনীদের থেকে যাকাত আদায় অত:পর তাদের গরীবদের মাঝে তা বিতরণ করবে।”
যাকাত আদায়ের পর সরকার যদি দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য ১০/১৫ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে এগুতে থাকে বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনা বাংলাদেশের ধ্বনী মানুষের টাকা দিয়েই সম্ভব। বিদেশ নির্ভরতার তেমন কোন প্রয়োজন হবে না।
২. যাকাত আদায়ের দ্বিতীয় যে দিকটি বাস্তবায়ন হওয়া উচিৎ তা হলো, ব্যক্তিগত পর্যায়ে যাকাত দিলেও একজন অভাবী এতটুকুন যাকাত দেয়া উচিৎ যাতে তার বর্তমান সমস্যার সমাধানই হবে না বরং তিনি তার ভবিষ্যৎ চলার একটি পথ বের করতে পারবেন। দারিদ্র্যের ছোবল থেকে তাকে বের হবার মতো যাকাত প্রদান করা। যেমন, একজন বেকারকে একটি তরকারীর দোকান দেবার মতো অর্থ দেয়া। একজন রিক্সাওয়ালাকে রিক্সা ক্রয়ের মতো অর্থ প্রদান ইত্যাদি। প্রচলিত শাড়ি আর লুঙ্গি দেয়ার প্রবণতা কমিয়ে আনা।
৩. যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে লোক দেখানো ও নির্বাচনী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেড়িয়ে আসা। কারণ, দেখানো ইবাদত করা হলো রিয়া। আর রিয়া হলো ইসলামের দৃষ্টিতে শিরক। অতএব ইবাদত করতে গিয়ে যদি শিরক হয় তা কী জীবনের জন্য কল্যাণকর হতে পারে?
৪. যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে সর্বাাধিক গুরুত্ব আরোপ করা উচিৎ সমাজের দারিদ্রপীড়িত ঐসব মানুষকে যারা টাকার অভাবে লেখাপড়া করতে পারেন না। আপনার যাকাত সহায়তা পেয়ে একটি ছেলে/মেয়ে শিক্ষিত হয়ে বেড়ে ওঠে তার আলোয় সমাজ আলোকিত হবে। আলোকিত হবে দেশ ও রাষ্ট্র । সঠিক শিক্ষা পেলে আলোকিত হবে ধর্ম ও ইসলাম।
আল্লাহ আমাদের সকলকে উত্তম পদ্ধতিতে সমাজের কলাণে যাকাত আদায় করার তৌফিক দান করুন।
#ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ।

Logo-orginal