, শনিবার, ৪ মে ২০২৪

admin admin

অনুপম চরিত্রের অনুসরণীয় মডেল ছিলেন দীর্ঘদিন ডাঃ মুহাম্মদ রফিক’

প্রকাশ: ২০২২-০৭-১৩ ১৩:২১:৪০ || আপডেট: ২০২২-০৭-১৩ ১৩:২৮:৩৪

Spread the love

,মোঃ নজরুল ইসলাম: ডাঃ মুহাম্মদ রফিক ভাইকে স্মরণ করছি-

আমাদের প্রিয় দায়িত্বশীল ছিলেন ডা: মুহাম্মদ রফিক। তিনি ১২ আগষ্ট ২০১৯ সালে পবিত্র ঈদুল আযহার দিনে (১০ জ্বিলহজ্ব ১৪৪০ হিজরী) মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। প্রায় ৬০ বছর হায়াত পেয়েছেন তিনি; কিন্তু, কার্যক্রমের বরকত ঢের বেশি বলা যায়। দলমত নির্বিশেষে সকলের প্রিয় রফিক ভাই যেমন ডাক্তার হিসেবে দক্ষ ছিলেন তেমনি আদর্শের উপরও অবিচল ছিলেন। সাদাসিধে জীবন এবং অনুপম চরিত্রের অনুসরণীয় মডেল ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মেরুদণ্ড ও ঘাড়ব্যাথায় (spinal disk disorder & cervical spondolysis) কষ্ট পেয়েছেন। সকালে গরম পানিসহ নানা কসরত করে (hot water therapy & physical exercise) তিনি যখন কাজে নেমে পড়তেন তখন তাকে মজবুত মানুষই মনে হতো। অন্যের সমস্যা সমাধানের ব্যস্ততার মাঝে হয়তো তিনি নিজের সমস্যা ভুলেই থাকতেন। এভাবে তিনি ছবর ও তাওয়াক্কুলের চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়েই আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেছেন।

আত্মীয়-স্বজনের প্রতি তিনি ছিলেন অত্যন্ত সংবেদনশীল। চট্টগ্রাম মহানগরীর ৩ নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের হাজিরপুল নিবাসী ডা: মুহাম্মদ রফিক এর পিতা আবুল বশর ইন্তেকাল করেছেন ০১ আগষ্ট ১৯৮৬ সালে আর মা তমিজা খাতুন ইন্তেকাল করেছেন ৩০ নভেম্বর ১৯৮৬ সালে। মাতা-পিতাহীন সংসারে তিনিই ছিলেন যোগ্য অভিভাবক যিনি ভাই-বোনসহ আত্মীয়-স্বজনের হক্ব আদায়ে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়েছেন। পাশাপাশি সকলের মাঝে দ্বীনি আন্দোলনের দাওয়াতকেও ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি আত্মীয়-অনাত্মীয় সকলের সমস্যা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন এবং সমাধানের চেষ্টা করতেন। চিকিৎসা সেবা দিয়ে অসংখ্য বনি আদমকে তিনি কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করেছেন। রুগীদের সাথে কথোপকথনেই রুগীরা স্বস্তি অনুভব করতেন। রুগীদের ভক্তি এত বেশি ছিলো যে ডা: রফিককে না দেখালে যেন ট্রিটমেন্ট অসম্পূর্ণই থেকে যেতো; তাই বড় বড় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনও তার সাথে কনসাল্ট করতে হতো। তিনি চিকিৎসা সেবা ও অমায়িক ব্যবহার দিয়েই সবাইকে দ্বীনের দাওয়াত দিতেন।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিকতার সাথে শরয়ী ফায়সালার সুন্দর সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করতেন-এক্ষেত্রে তিনি আল্লামা তকি ওসমানীকে অনুসরণ করে লেখালেখিও করতেন। মানুষের উপকারে যেমনভাবে তিনি নিজেকে বিলিয়ে দিতেন, তেমনি সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখতেন। ব্যক্তিগত জীবনে আল্লাহর হক্ব ও বান্দাহগণের হক্ব আদায়ে যেমনভাবে তৎপর থাকতেন, তেমনিভাবে দ্বীন কায়েমের আন্দোলনেও যথাসাধ্য ভূমিকা রাখতেন। ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারী হিসেবে এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারী হিসেবে তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। নৈশ ইবাদত, শিক্ষা বৈঠকসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচিতে ডা: রফিক ভাইয়ের হৃদয়গ্রাহী দারসুল কুরআন এবং আলোচনা শুনার সুযোগ হয়েছে। ‘ইসলামী আন্দোলন ঈমানের অপরিহার্য দাবী’, ‘আনুগত্য, পরামর্শ, মুহাসাবা’, ‘আল্লাহর সাথে সম্পর্ক’, ‘সাহাবায়ে কিরামের জীবন ও আমরা’ ইত্যাদি আলোচনাই তিনি করতেন। সব ধরণের দ্বীনি খেদমতের তুলনায় জিহাদ তথা ইসলামী আন্দোলনের মর্যাদা যে বেশি তা বুঝানোর লক্ষ্যে তিনি নীচের আয়াতটি প্রায় কোড করতেন:
اَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَـآجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَـرَامِ كَمَنْ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَجَاهَدَ فِىْ سَبِيْلِ اللّٰهِ‌ ؕ لَا يَسْتَوٗنَ عِنْدَ اللّٰهِ ‌ؕ وَ اللّٰهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظّٰلِمِيْنَ‌ۘ•
“হাজীদের জন্য পানি সরবরাহ এবং মসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে তোমরা কি তাদের পুণ্যের সমজ্ঞান কর, যারা আল্লাহ্ ও আখিরাতে ঈমান আনে এবং আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করে ? আল্লাহ্‌র নিকট উহারা সমতুল্য নয়। আল্লাহ্ জালিম সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না।” (সূরা নং ৯ আত-তাওবা, আয়াত নং ১৯)

তিনি ছিলেন অনুপম চরিত্রের অনন্য একজন মানুষ। এরকম বহুমুখী যোগ্যতার তাক্বওয়াবান ব্যক্তিত্বের অভাব পূরণ হবার নয়। আল্লাহ্ তাঁকে মাফ করে দিন, জান্নাতুল ফিরদাউসে আ’লা মকান দান করুন। বিধবা স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে সহ পরিবার পরিজনকে ছবরে জামিল নসীব করুন, উত্তম রিজিকের ব্যবস্থা করে দিন এবং আদর্শের উপর অবিচল রাখুন। আমিন ইয়া রব। আমিন।
লেখক: পরিবেশ বিজ্ঞানী, রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব।

Logo-orginal