, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

admin admin

হজ ও কুরবানীর ইতিহাস

প্রকাশ: ২০২২-০৭-০৮ ১৯:৩৭:৪৯ || আপডেট: ২০২২-০৭-০৮ ১৯:৩৭:৫১

Spread the love

ابِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
وَ اِذۡ بَوَّاۡنَا لِاِبۡرٰهِیۡمَ مَکَانَ الۡبَیۡتِ اَنۡ لَّا تُشۡرِکۡ بِیۡ شَیۡئًا وَّ طَهِّرۡ بَیۡتِیَ لِلطَّآئِفِیۡنَ وَ الۡقَآئِمِیۡنَ وَ الرُّکَّعِ السُّجُوۡ
وَ اَذِّنۡ فِی النَّاسِ بِالۡحَجِّ یَاۡتُوۡکَ رِجَالًا وَّ عَلٰی کُلِّ ضَامِرٍ یَّاۡتِیۡنَ مِنۡ کُلِّ فَجٍّ عَمِیۡقٍ
আর স্মরণ কর, যখন আমি ইবরাহীমকে সে ঘরের (বায়তুল্লাহ্র) স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, ‘আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না এবং আমার ঘরকে পাক সাফ রাখবে তাওয়াফকারী, রুকূ-সিজদা ও দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কারীর জন্য’।
‘আর মানুষের নিকট হজ্জের ঘোষণা দাও; তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে চড়ে দূর পথ পাড়ি দিয়ে’। সুরা হজ ২৬-২৭, আল-বায়ান
হজ্জ:
وَ اَتِمُّوا الۡحَجَّ وَ الۡعُمۡرَۃَ لِلّٰهِ ؕ
আল্লাহকে খুশি করার জন্য যখন তোমরা হজ্জ ও উমরার নিয়্যাত কর তখন তা পুরা কর। [সূরা বাকারা: ১৯৬]
اَلۡحَجُّ اَشۡهُرٌ مَّعۡلُوۡمٰتٌ ۚ فَمَنۡ فَرَضَ فِیۡهِنَّ الۡحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَ لَا فُسُوۡقَ ۙ وَ لَا جِدَالَ فِی الۡحَجِّ ؕ وَ مَا تَفۡعَلُوۡا مِنۡ خَیۡرٍ یَّعۡلَمۡهُ اللّٰهُ ؕؔ وَ تَزَوَّدُوۡا فَاِنَّ خَیۡرَ الزَّادِ التَّقۡوٰی ۫ وَ اتَّقُوۡنِ یٰۤاُولِی الۡاَلۡبَابِ
যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট মাসগুলোর মধ্যে হজ্জের নিয়্যাত করে সে যেন কোনো অশ্লীল কার্যকলাপ, রক্তপাত ও কোনো ঝগড়া-ঝাটিতে লিপ্ত না হয়। [সূরা বাকারা: ১৯৭]
মানুষের ওপর আল্লাহর এ অধিকার আছে যে, যে ব্যক্তি (আল্লাহর) ঘরে পৌঁছার ক্ষমতা রাখে সে যেন হজ্জ পালন করে। [সূরা আলে ইমরান: ৯৭]
فِیۡهِ اٰیٰتٌۢ بَیِّنٰتٌ مَّقَامُ اِبۡرٰهِیۡمَ ۬ۚ وَ مَنۡ دَخَلَهٗ کَانَ اٰمِنًا ؕ وَ لِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡهِ سَبِیۡلًا ؕ وَ مَنۡ کَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ عَنِ الۡ ٰلَمِیۡنَ
তাতে রয়েছে স্পষ্ট নির্দশনসমূহ, মাকামে ইবরাহীম। আর যে তাতে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ হয়ে যাবে এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী। আল-বায়ান
কুরবানী
وَنَادَيْنَاهُ أَن يَا إِبْرَاهِيمُ
তখন আমি তাকে ডেকে বললামঃ হে ইব্রাহীম,
قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا ۚ إِنَّا كَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ
তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।
إِنَّ هَـٰذَا لَهُوَ الْبَلَاءُ الْمُبِينُ
নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা।
وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ
আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু।
وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الْآخِرِينَ
আমি তার জন্যে এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি যে,
سَلَامٌ عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ
ইব্রাহীমের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক।
كَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ
এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। আয়াত ১০৪-১১০ আস সাফাত।
(হে রাসূল) বলুন: ’নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সবই সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যে নিবেদিত। তার কোন শরীক নেই।’ [সূরা আন‘আম: ১৬২-৬৩]

আমি প্রত্যেক উম্মাতের জন্য কুরবানীর বিধান নির্ধারণ করে দিয়েছি যাতে তারা ওই পশুদের জবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। আর তোমাদের প্রতিপালক তো এক আল্লাহই, তোমরা তাঁরই অনুগত হও। [সূরা হজ্জ: ৩৪]

(কুরবানীর পশুর) রক্ত ও গোশত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না বরং তোমাদের তাকওয়াই শুধু পৌঁছে থাকে। [সূরা হজ্জ: ৩৭]

মনে রেখো, এ ছিল এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তাকে সুযোগ দিলাম এক মহান কোরবানির। পুরো বিষয়টি স্মরণীয় করে রাখলাম প্রজন্মের পর প্রজন্মে। ইব্রাহিমের প্রতি সালাম। এভাবেই আমি সৎকর্র্মশীলদের পুরস্কৃত করি। (সূরা সাফফাত, আয়াত ১০৬-১১০)
আল্লাহর নবী হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও হযরত ইসমাইল (আ.) আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে উদ্যত হলে গায়েবি আওয়াজ আসে, হে ইব্রাহিম! তোমাকে স্বপ্নে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তা একনিষ্ঠ চিত্তে বাস্তবায়ন করেছ এবং কোনো ধরনের অবহেলা প্রদর্শন করোনি।
আল্লাহ তায়ালা ইসমাইলকে জবেহ করার যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা ছিল হযরত ইব্রাহিমের জন্য একটি পরীক্ষা; হযরত ইব্রাহিমের হাতে ইসমাইলের রক্ত ঝরুক তা আল্লাহ চাননি। এই পরীক্ষার মাধ্যমে মহান আল্লাহ দেখতে চেয়েছেন তাঁর নির্দেশ পালন করতে গিয়ে হযরত ইব্রাহিম (আ.) সন্তানের মায়া ত্যাগ করতে পারেন কিনা।
কাজেই যখন পিতা ও পুত্র আল্লাহর নির্দেশ পালনে নিজেদের একনিষ্ঠ প্রস্তুতি প্রদর্শন করলেন তখন আল্লাহ তায়ালা ইসমাইলের পরিবর্তে একটি বড় আকৃতির মেষ জবেহ করার জন্য হযরত ইব্রাহিম (আ.) কে নির্দেশ দেন। পিতা-পুত্রের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার এই ঘটনা আল্লাহ তায়ালা এতটাই পছন্দ করেন যে, তিনি এই ঘটনাকে ইব্রাহিম (আ.)’র সুন্নত হিসেবে কিয়ামত পর্যন্ত চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেন। প্রতি বছর হজের মওসুমে যারা আল্লাহর ঘর জিয়ারত করতে যান তারা মিনা’র ময়দানে হযরত ইব্রাহিম ও হযরত ইসমাইলের স্মরণে আল্লাহর রাস্তায় একটি পশু কুরবানি করেন।

এই ঘটনাটি থেকে কয়েকটি শিক্ষণীয় দিক হচ্ছে: ১। সন্তানের প্রতি পিতার মায়া ত্যাগ করা ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে মানব জাতির জন্য সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা; যে পরীক্ষায় হযরত ইব্রাহিম ও ইসমাইল আলাইহিমুস সালাম সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন । ২। আল্লাহর রাস্তায় পশু কুরবানি করা হযরত ইব্রাহিম (আ.)’র সুন্নত যা প্রতি বছর মক্কাসহ মুসলিম দেশগুলোর আনাচে কানাচে পালন করা হয়। ৩- আল্লাহ তায়ালা নিজের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এই সুন্নত জারি রাখার মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীর বুকে হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর সুনাম ও সুখ্যাতি ধরে রাখবেন।

মুসলিম মিল্লাতের পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ.) একের পর উৎসর্গের জন্য আল্লাহর বন্ধুত্ব তথা খলিলুল্লাহ উপাধীতে মনোনীত হন। শতবর্ষ বয়সের পর আল্লাহ তায়ালা তাঁকে যে সন্তান দান করেছিলেন, তিনি আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে তাঁর সে কলিজার টুকরা হযরত ইসমাইল (আ.) এর কোরবানির সূত্র ধরে আজও সেই কোরবানি প্রচলিত আছে।

হযরত ইব্রাহীম (আ.) নমরুদ ও তার সাঙ্গো-পাঙ্গের অত্যাচারে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে তাঁর স্ত্রী হযরত সারাকে সঙ্গে নিয়ে শাম দেশে হিজরত করলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে সেখানকার বাদশাহ ছিল জালিম ও ভীষণ বদলোক। বাদশাহর লোকেরা হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও তাঁর সুন্দরী স্ত্রী হযরত সারার আগমনের সংবাদ বাদশাহর দরবারে পৌঁছে দিলে বাদশাহ তাদেরকে ধরে নিয়ে আসতে বলে।

বাদশাহর লোকেরা হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও তাঁর স্ত্রী সারাকে বাদশাহর দরবারে হাজির করে। বাদশাহ হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর কাছে জানতে চায় তার সঙ্গে স্ত্রী লোকটি কে? ইব্রাহীম (আ.) চিন্তা করলেন, স্ত্রী বললে হয়তো বা তাঁকে মেরে ফেলতে পারে।

তাই তিনি বললেন, সে আমার দ্বীনি বোন। বাদশাহ হযরত ইব্রাহীম (আ.) কে বন্দী করে, আর হযরত সারাকে বাদশাহর বদস্বভাব চরিতার্থ করার জন্যে রেখে দেয়। বাদশাহর কু-প্রস্তাবে হযরত সারা রাজি না হলে বাদশাহ তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়।

অতঃপর হযরত সারা দু’রাকাত নামাজ আদায় করার অনুমতি চাইলে বাদশাহ তাঁকে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করতে দেয়। হযরত সারা নামাজ শেষে আল্লাহ দরবারে ফরিয়াদ করেন- যেন আল্লাহ তায়ালা তাঁর সতীত্ব রক্ষা করেন। এরই মধ্যে বাদশাহ অত্যন্ত অসুস্থ ও দুর্বল হয়ে পড়ে।

অবস্থা খারাপ দেখে আর বাদশাহর মৃত্যুর জন্য তার লোকেরা হযরত সারাকে দায়ী করবে এই ভেবে হযরত সারা বাদশাহর সুস্থতার জন্য দোয়া করেন। একে একে তিন বার একই ঘটনা ঘটলে বাদশাহ হযরত সারার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। হযরত সারার সতীত্ব দেখে আর এক সতী নারী হযরত হাজেরাকে তাঁর দাসী হিসেবে দিয়ে তাঁদেরকে বিদায় করে দেয় বাদশাহ।

হযরত সারা ও হযরত ইব্রাহীম (আ.) মুক্ত হয়ে সে দেশে বসবাস শুরু করেন। হযরত সারা তাঁর দাসী হযরত হাজেরাকে হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর সঙ্গে বিয়ে দেন। কারণ হযরত সারার বয়স তখন ৯০ বছর আর হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর বয়স তখন ১০০ বছর। তাদের বিয়ের দীর্ঘ সময় পার হলেও তখনও হযরত সারা মা হতে পারেননি।
তিনি ভাবলেন, শেষ বয়সে যদি আল্লাহ তায়ালা মেহেরবানি করে তাঁর স্বামী হযরত ইব্রাহীম (আ.)কে কোন সন্তান দান করেন। আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানিতে এই হযরত হাজেরার গর্ভেই হযরত ইসমাইল (আ.)-এর জন্ম হয়।

হযরত ইসমাইল (আ.) এর জন্মের পর হযরত ইব্রাহীম (আ.) তাঁর স্ত্রী হযরত হাজেরা ও কলিজার টুকরা ছেলেকে আল্লাহতায়ালার নির্দেশে কাবা ঘরের নিকটবর্তী সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের পাদদেশে নির্জন স্থানে সামান্য খেজুর ও এক মসক পানিসহ রেখে আসেন। হযরত ইব্রাহীম (আ.) যখন তাদের এ অবস্থায় রেখে স্থান ত্যাগ করছিলেন, তখন হযরত হাজেরা প্রশ্ন করছিলেন আপনি আমাদের এ নির্জন স্থানে রেখে চলে যাচ্ছেন? হযরত ইব্রাহীম (আ.) ক্ষীণকণ্ঠে জবাব দিয়েছিলেন, হ্যাঁ।

আবারও হযরত হাজেরা প্রশ্ন করলেন এটা কি আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ ? হযরত ইব্রাহীম (আ.) আবারও জবাব দিয়েছিলেন, হ্যাঁ। হযরত হাজেরা আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করে তাঁর শিশু সন্তানকে নিয়ে সেখানে অবস্থান করলেন।

হযরত হাজেরা ও তাঁর সন্তানের খাদ্য ও পানীয় যখন শেষ হয়ে গেল হাজেরা তখন খাদ্য ও পানির সন্ধানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। শিশু পুত্রের কান্নায় বার বার এভাবে খাবার ও পানির সন্ধানে দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলেন। হঠাৎ তিনি দেখলেন, শিশু পুত্র ইসমাইলের পায়ের গোড়ালির আঘাতে মাটি ফেটে পানির ফোয়ারা প্রবাহিত হচ্ছে।

এ সেই ফোয়ারা বা কূপ যা বর্তমানে জমজম নামে বিশ্ব মুসলিমের কাছে পরিচিত। সুপেয় পানীয় হিসেবে পান করে পরিতৃপ্ত হন মুসলমানরা। তাও কাবাকে কেন্দ্র করে ও হযরত ইসমাইল (আ.) এর উছিলায় আল্লাহ তায়ালার করুণায় সৃষ্টি হয়েছে। যা আজও হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।

হাজেরা তাঁর মসক পূর্ণ করে নিলেন আর নিজে ও শিশু পুত্রকে তৃপ্তির সঙ্গে পানি পান করালেন। হযরত হাজেরার সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে ক্রমাগত ৭ বার দৌড়াদৌড়ি করার কারণে সে ঘটনাকে কেন্দ্র করে আল্লাহ তায়ালা হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের জন্যে সাফা মারওয়া পাহাড়ে ৭ বার দৌড়াদৌড়ি করার বিধান জারি করেছেন।

হযরত ইসমাইল (আ.) এর যখন হাঁটাচলা ও খেলাধূলা করার বয়স তখন হযরত ইব্রাহীম (আ.)কে স্বপ্নে আদেশ করা হলো, তুমি তোমার প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে কোরবানি করো। ইব্রাহীম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে ১০টি উট কোরবানি করলেন। পুনরায় তিনি আবারও একই স্বপ্ন দেখলেন। অতঃপর ইব্রাহীম (আ.) আবারও ১০০টি উট কোরবানি করলেন। আবারও তিনি একই স্বপ্ন দেখে ভাবলেন, আমার কাছেতো এ মুহূর্তে আমার কলিজার টুকরা প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.) ছাড়া আর তেমন কোনো প্রিয় বস্তু নেই।

ইসমাইল (আ.) যখন পিতার সঙ্গে হাঁটা- চলার উপযোগী হলো তখন ইব্রাহীম (আ.) বললেন, হে আমার পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে কোরবানি করছি। সুতরাং তোমার মতামত কি? হযরত ইসমাইল (আ.) বললেন, হে আমার পিতা! আপনি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছেন তা পালন করুন। আপনি আমাকে আল্লাহর মেহেরবানিতে ধৈর্যশীলদের একজন পাবেন।

অতঃপর যখন তাঁরা দু’জন একমত হলেন আর তখন আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছার সামনে আত্মসমর্পণ করলেন। ইব্রাহীম (আ.) ইসমাইল (আ.)কে জবাই করার জন্যে কাত করে শুইয়ে দিলেন, তখন আল্লাহর নির্দেশে ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে গেল। নিশ্চয়ই এটি ছিল ইব্রাহীম ও ইসমাইলের জন্যে একটা পরীক্ষা।

অতঃপর মানুষের জন্যে এ কোরবানির বিধান চালু হয়ে গেল। যা আজও মুসলিম সমাজে অত্যন্ত ভাব গাম্ভির্যের সঙ্গে পালন হয়ে আসছে।

ত্যাগের সু- মহান ও অনুপম দৃষ্টান্তকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় রাসুল মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মতের উপর পশু কোরবানি ওয়াজিব করে দিয়েছেন। উম্মতে মুহাম্মদির কোরবানি হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর কোরবানিকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

ইব্রাহীম (আঃ) এর গোটা জীবন ছিল কোরবানি তথা অতুলনীয় আত্নোৎসর্গ ও আত্নত্যাগের মহিমায় উজ্জল। প্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আঃ) কে কোরবানি করা ছিল ইব্রাহীম (আঃ) এর জীবনের অসংখ্য কোরবানির চরম ও শ্রেষ্টতম ঘটনা। তাদের স্মরণ পশু কোরবানির এ বিধান রোজ কেয়ামতের আগ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

হে নবী! কিতাবিগণকে আদমের দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের ঘটনা ভালো করে বর্ণনা করো। তারা যখন কোরবানি করেছিল, তখন একজনের কোরবানি কবুল হলো। কিন্তু অন্যজনের কোরবানি কবুল হলো না। ক্ষিপ্ত হয়ে সে বলল, আমি তোমাকে খুন করবো। অপরজন বলল, প্রভু তো শুধু আল্লাহ-সচেতনদের কোরবানিই কবুল করেন। (সূরা মায়েদা, আয়াত-২৭)

কুরবানি সম্পর্কে পবিত্র কুরানের কয়েকটি আয়াতঃ

‘হে নবী! ওদের বলুন, আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ-আমার সবকিছুই বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। তিনি একক ও অদ্বিতীয়। এ আদেশই আমি পেয়েছি। আমি সমর্পিতদের মধ্যে প্রথম।’ (সূরা আনআম, আয়াত ১৬২-১৬৩)

আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যে কোরবানিকে ইবাদতের অংশ করেছি। যাতে জীবনোপকরণ হিসেবে যে গবাদি পশু তাদেরকে দেয়া হয়েছে, তা জবাই করার সময় তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে আর সব সময় যেন মনে রাখে একমাত্র আল্লাহই তাদের উপাস্য। অতএব তাঁর কাছেই পুরোপুরি সমর্পিত হও। আর সুসংবাদ দাও সমর্পিত বিনয়াবনতদের, আল্লাহর নাম নেয়া হলেই যাদের অন্তর কেঁপে ওঠে, যারা বিপদে ধৈর্যধারণ করে, নামাজ কায়েম করে আর আমার প্রদত্ত জীবনোপকরণ থেকে দান করে। (সূরা হজ, আয়াত ৩৪-৩৫)

কোরবানির পশুকে আল্লাহ তাঁর মহিমার প্রতীক করেছেন। তোমাদের জন্যে এতে রয়েছে বিপুল কল্যাণ। অতএব এগুলোকে সারিবদ্ধভাবে বাঁধা অবস্থায় এদের জবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো। এরপর এরা যখন জমিনে লুটিয়ে পড়ে, তখন তা থেকে মাংস সংগ্রহ করে তোমরা খাও এবং কেউ চাক না চাক সবাইকে খাওয়াও। এভাবেই আমি গবাদি পশুগুলোকে তোমাদের প্রয়োজনের অধীন করে দিয়েছি, যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় করো। (সূরা হজ, আয়াত ৩৬)

কিন্তু মনে রেখো কোরবানির মাংস বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, আল্লাহর কাছে পৌঁছায় শুধু তোমাদের নিষ্ঠাপূর্ণ আল্লাহ-সচেতনতা। এই লক্ষ্যেই কোরবানির পশুগুলোকে তোমাদের অধীন করে দেয়া হয়েছে। অতএব আল্লাহ তোমাদের সৎপথ প্রদর্শনের মাধ্যমে যে কল্যাণ দিয়েছেন, সেজন্যে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো। হে নবী! আপনি সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দিন যে, আল্লাহ বিশ্বাসীদের রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না। (সূরা হজ, আয়াত ৩৭-৩৮)
সঙ্কলন ও লেখকঃ আবুল কাশেম।
Email: kashem5416@gmail.com

Logo-orginal