, বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

admin admin

একজন জীবন্ত শহীদের বিদায়ে অভিভাবক হারাল মজলুম মানবতা।

প্রকাশ: ২০২২-০৯-২৬ ১৯:০৭:১৫ || আপডেট: ২০২২-০৯-২৬ ১৯:০৭:২০

Spread the love

আবুল কাশেমঃ আল্লাহ সুবহান তায়ালার জিম্মায় চলে গেলেন আল্লামা শাঈখ ইউসুফ কারদাভী ( রাহঃ)।

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।

বিশ্বের ইসলামী স্কলার, মুসলমানদের হৃদয়ের স্পন্দন মজলুম মানবতার কন্ঠসর মিশরীয় বংশদ্ভূত আল্লামা শাঈখ ডঃ ইউসুফ কারদাভী আজ সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) কাতারের রাজধানী দোহায় ইন্তেকাল করেন।

শাঈখের দুনিয়ায় আগমন ছিল ৯ সেপ্টেম্বর ১৯২৬ ইং, বিদায়ের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ইং।।

জন্ম স্থান মিশরের সাফাত তুরাব জেলায়।

মিশরীয় নাগরিক আল্লামা কারদাভী কাতারে রাজনৈতিক আশ্রয়ে বসবাস করতেন, মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের ইসলাম বিদ্বেষী রোষানলে পড়ে কাতারের সাবেক আমীর হামাদ আল থানীর আশ্রয়ে দোহায় স্থায়ী বসবাস করতেন।

আরব বিশ্বের ইসলামী আন্দোলনের পুরোধা শাঈখ ডঃ ইউসুফ কারদাভী ছিলেন মিশরের ইখওয়ান আল মুসলেমিনের নীত নির্ধারক।

ইসলামী দুনিয়ার যে কজন প্রভাব বিস্তারকারী পন্ডিত শীর্ষস্থানে অবস্থান করছেন তাদের সাথে কারযাভীর পার্থক্য এখানে যে; তিনি ইসলামের ব্যাখ্যা ও প্রচারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন ‘সেফ জোনে’ আশ্রয় না নিয়ে বরং মানব জীবনের ও বিশ্বসমাজের রাজনীতি , অর্থনীতি , সংস্কৃতি , গণমাধ্যম , শিক্ষা , বিজ্ঞান ও শিল্পকলায় সমানভাবে কাজ করতে ভালোবাসেন । কোরআন ও সুন্নাহর দ্ব্যর্থহীন বক্তব্যগুলোকে যুগোপযোগী ব্যাখ্যার মাধ্যমে সামনে নিয়ে আসার ফলে তার ওপর নির্যাতন ও অপমানের খড়গ হস্ত নেমে এসেছে । তার জীবনে একাধিকবার কারাবরণের ঘটনা ঘটে , স্বৈরশাসন বিরোধী অবস্থানের কারণে মাতৃভূমি ছেড়ে তিনি চলে যেতে বাধ্য হন এবং কাতারে তিন দশকের নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন । যুক্তরাষ্ট্র , যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের কিছু দেশে তিনি নিষিদ্ধ।

ইসলামী জীবনব্যবস্থার বিভিন্ন দিকের ভারসাম্যপূর্ণ ব্যাখ্যা, আধুনিক মননের সন্দেহ সংশয় নিরসন এবং মুসলিম উম্মাহর করণীয় নির্দেশ করত সমকালীন বিশ্বে যিনি সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধি অর্জন করেছেন তিনি ড. শায়খ ইউসুফ আল কারযাভী। কুরআন-হাদীসের উপর অগাধ পাণ্ডিত্য, আধুনিক জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় পারদর্শিতা, ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, অসাধারণ লেখনী শক্তি, বক্তব্যের বলিষ্ঠ উপস্থাপনা, বিষয় নির্বাচনে দতা প্রভৃতিতে তিনি ইলমী জগতে তাঁর সমসাময়িক সকল মনীষীকে ছাড়িয়ে গেছেন। শুধু জ্ঞানের জগতেই নয় বরং ইসলামী জীবন বিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও তিনি সমান তৎপর। বার্ধক্যের অমতাকে এড়িয়ে তিনি এখনও তারুণ্যের দীপ্তি ছড়ান ইসলামী পুনর্জাগরণ প্রয়াসী কিশোর-তরুণ-যুবাদের হৃদয়ে।
🌸🌸
জন্ম এবং শিক্ষা জীবনঃ
ইউসুফ আল কারযাভীর জন্ম ১৯২৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। উত্তর মিসরের নীলনদ তীরবর্তী সাফাত তোরাব গ্রামে। এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে পৃথিবীর আলো দেখেন ভাবিকালের এ মহান জ্ঞানতাপস। মাত্র দুই বছর বয়সে শিশু ইউসুফের বাবা ইন্তিকাল করলে চাচার তত্ত্বাবধানে লালিত হন তিনি।
অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী কারযাভীর শিক্ষা সূচনা হয় তানতা নামক এক মফস্বলে। তানতার অবস্থান রাজধানী শহর কায়রো থেকে ৯৪ কি. মি. উত্তরে। মাত্র দশ বছর বয়সে কারযাভী কুরআন মাজীদ হিফয করেন এবং তাজবীদ শাস্ত্রে দতা অর্জন করেন। দীর্ঘ নয় বছর তিনি তানতায় অবস্থিত আজহারী ইনিস্টিটিউট থেকে ধর্র্মীয় শিক্ষা সমাপ্ত করে উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে কায়রো গমন করেন। তিনি বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় আল-আজহারে ইসলামী ধর্মতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে এখান থেকে কৃতিত্বের সাথে স্নাতক শেষ করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি আরবি ভাষা ও সাহিত্যের উপর ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘উসুল আল দ্বীন’ অনুষদ হতে ‘কুরআন-সুন্নাহ সাইন্স’ বিভাগে পুনরায় অনার্স করেন তিনি। অতঃপর ১৯৬০ সালে কুরআনিক স্টাডিজ বিভাগ হতে মাস্টার্স হন। ১৯৭৩ সালে আল-আজহার হতেই তিনি ‘সামাজিক সমস্যা দূরীকরণে যাকাতের ভূমিকা’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। অসামান্য প্রতিভার অধিকারী ইউসুফ আল কারযাভী ছাত্রজীবনেই ছাত্র-শিক্ষক সকলের মধ্যমণিতে পরিণত হন। মাধ্যমিক স্তরে থাকতেই তাঁর শিক্ষকগণ তাকে ‘আল্লামা’ তথা ‘মহান পণ্ডিত’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

বহুমাত্রিক কর্মজীবনঃ
শিক্ষা সমাপনান্তে ইউসুফ আল কারযাভী মিসরের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘Institute of Imams’ এর পরিদর্শক হিসেবে কর্মজীবনে পদার্পণ করেন। কিছুদিন তিনি আওকাফ মন্ত্রণালয়ের ‘বোর্ড অব রিলিজিয়াস এফেয়ার্স’ এ কর্মরত ছিলেন। অতঃপর কারযাভী কাতার গমন করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শরীয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং এ অনুষদের ডিন নিযুক্ত হন।

১৯৯০ পর্যন্ত তিনি এখানে কর্মরত থাকেন এবং একই বছর তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্র’। অতঃপর ১৯৯০ সালে আলজেরিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্টিফিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মনোনীত হয়ে তিনি আলজেরিয়া গমন করেন। সেখানে ১৯৯০-৯১ সাল দু’ বছর কাজ করেন। ১৯৯২ সালে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্র’র ডিরেক্টর হিসেবে পুনরায় কাতার প্রত্যাবর্তন করেন এবং অদ্যাবধি সেখানে কর্মরত আছেন। ইউসুফ আল কারযাভীর কর্মত্রে আঞ্চলিকতা পেরিয়ে আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকা পর্যন্ত বিস্তৃত। তিনি জাতীয়তাবাদের বিপরীতে আন্তর্জাতিকতাবাদের একজন প্রবক্তা। ইউসুফ আল কারযাভী আয়ারল্যান্ড ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা European Council For Fatwa and Research এর প্রধান। তিনি ইসলামিক স্কলারদের বিশ্ববিখ্যাত সংগঠন International Union for Muslim Scholars (IUMS)এরও চেয়ারম্যান। কারযাভী ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (OIC)’র ফিকহ একাডেমি, আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থা রাবেতে আলমে ইসলামীর ফিকহ একাডেমি, রয়াল একাডেমি ফর ইসলামিক কালচার এ রিসার্চ জর্ডান, ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টার অক্সফোর্ড এর সম্মানীত সদস্য। কর্মেেত্রর দিক থেকে বাংলাদেশের সাথেও সম্পৃক্ততা রয়েছে ড. কারযাভীর। তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (IIUC) এর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য।

ড. কারযাভী অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও গণমাধ্যমকে ইসলাম প্রচারকার্যে ব্যবহারের পথিকৃৎ। ড. কারযাভীর ‘আশ শারীআহ ওয়াল হায়াহ্ (শরীয়ত ও জীবন)’ শিরোনামের টিভি প্রোগ্রামটি বিশ্বের সর্বাধিক দর্শকপ্রিয় অনুষ্ঠানসমূহের একটি। আল জাজীরা টিভি সম্প্রচারিত এ অনুষ্ঠানটির বিশ্বব্যাপী নিয়মিত দর্শক সংখ্যা ৬০ মিলিয়ন (৬ কোটি) বলে অনুমান করা হয়।
তাঁর নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বহুল জনপ্রিয় ওয়েবসাইট Islam Online. তিনি এ ওয়েবসাইটের ধর্মীয় বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।

রাজনৈতিক দর্শন এবং অবস্থানঃ
তিনি সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদের বিপরীতে আল্লামা ইকবালের মতই আন্তর্জাতিকতাবাদের একজন জোরালো সমর্থক।
ড. ইউসুফ আল কারযাভী সমাজ বিচ্ছিন্ন জ্ঞান সাধনায় বিশ্বাস করেন না। জীবনঘনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাধারা স্পষ্ট। তিনি ইসলামকে চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করার পক্ষে একজন বহুমাত্রিক চিন্তাযোদ্ধা । ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থাকে তিনি প্রত্যাখ্যান করেন এবং উদারতাবাদের ছদ্মাবরণে শিথিলতা ও মৌলিক আদর্শচ্যুতি নীতিকে ভ্রান্ত মনে করেন। বরং রাসূলুল্লাহর (সা.) অনুসৃত দ্বীন কায়েমের মধ্যমপন্থী নীতিকে সঠিক ও একমাত্র উপায় বলে মত দেন ড. কারযাভী। নিজেকে তিনি ‘আধুনিক সংস্কারবাদী’ হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন । জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ কে ইসলামপন্থার জন্য সহায়ক বলে তিনি মনে করেন না । জন্মভূমি মিসরের ইখওয়ানুল মুসলিমীনের সাথে তিনি উতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। সাইয়িদ কুতুবের পর তাকে ইখওয়ানের প্রধান তাত্ত্বিক নেতা মনে করা হয়।

আন্তর্জাতিক ইংরেজি সাময়িকী person of the year the Muslim 500 জার্নালের ২০২০ সংখ্যায় ইউসুফ আল কারযাভীকে ৩২ তম মুসলিম প্রভাবশালী ব্যাক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। উক্ত জার্নালের পুর্বের সংখ্যায় তাকে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় এবং বলা হয়-

“Qaradawi is the intellectual leader of the Muslim Brotherhood. He has twice turned down offers to be their leader—in 1976 and 2004—preferring to be free of institutional restrictions.” (ব্রাদারহুডের কেন্দ্রীয় অবস্থানে থেকেও নেতৃত্বের প্রতি তিনি ছিলেন নির্মোহ। এজন্য ১৯৭৬ ও ২০০৪ এ দুই দফায় ব্রাদারহুডের প্রধান নেতৃত্ব গ্রহণের প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দেন)

ড. ইউসুফ আল কারযাভী ছাত্রজীবন থেকেই ইসলামী আন্দোলনে একনিষ্ঠভাবে সক্রিয়। একনিষ্ঠতা ও আপোষহীন ভূমিকার কারণে তিনি ইসলাম বিরোধীদের আক্রোশের টার্গেট হয়েছেন বারবার। ১৯৪৭ সালে কিং ফারুক সরকারের আমলে তিনি প্রথমবার রাজবন্দী হন। ১৯৬১ সালে মাতৃভূমি মিসর ত্যাগ করে কাতার গমনের আগ পর্যন্ত ধর্মনিরপেক্ষ জামাল নাছের সরকার তাকে তিন বার কারাবন্দী করেন। আরব বসন্তের যে উত্তাল ঢেউ মিসরে আছড়ে পড়ে সে বিপ্লবের প্রধান রূপকারদের একজন ড. কারযাভী। ২০১১ সালে গণবিপ্লবে নেতৃত্ব দিতে তিনি মিসর ফিরে আসেন। ১৮ ফেব্রুয়ারী তাহরির স্কয়ারে মুক্তি পাগল বিপ্লবী জনতার সমাবেশে জুমার পুর্বে এক ঐতিহাসিক খুতবা দেন কারযাভী। অতঃপর তার ইমামতিতে জুমার সালাত আদায় করা হয়। মিসর বিপ্লবের সফলতার ক্ষেত্রে তাঁর এ বক্তব্যের অনেকখানি ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়। সামরিক জান্তা আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসির সরকার ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। অবশ্য পরে বিশ্বজনমতের চাপে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় সিসি সরকার।

ড. কারযাভী শুধুমাত্র মিসর নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিচালিত ইসলামী পুনর্জাগরণ আন্দোলনের একজন উপদেষ্টা, পর্যালোচনাকারী এবং তাত্ত্বিক ও আধ্যাত্মিক নেতা। তিনি ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, মিন্দানাও সহ বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের জোরালো সমর্থক।

রাজনৈতিক ফতোয়াঃ
মুসলিম বিশ্বে জেঁকে বসা স্বৈরশাসনের অবসানকল্পে আরব বসন্তকে তিনি জোরালোভাবে সমর্থন করেন। এমনকি কর্নেল গাদ্দাফিকে হত্যার ফতোয়াও জারি করেন। সিরিয়ায় আসাদের শাসনকে তিনি অবৈধ ঘোষণা করেন। হাফেজ ডক্টর মুহাম্মদ মুরসি অপসারণের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন মুরসিকে সমর্থন করা ছিল জরুরী।
দেশদ্রোহীকে সমর্থনে প্রদেয় শায়খুল আজহার এর বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন এ সম্পর্কে দি মুসলিম ফাইভ হান্ড্রেড জার্নালে প্রকাশিত কারযাভী অধ্যায়ে বলা হয়, “Qaradawi vocally supported the ‘Arab Spring’ movements issuing fatwas for the killing of Colonel Gaddafi, and fatwas against the Asad regime in Syria. He also issued a fatwa condemning the overthrow of Morsi, saying that it was an obligation to continue to support Morsi. He advised Al-Sisi to remain neutral and protect the legitimate rule of government. Finally, he criticised the Sheikh AlAzhar for supporting a rebellion against the ruler of a country”.
বেশিরভাগ ধর্মীয় পণ্ডিত যেখানে রাজনীতিকে পাশ কেটে যান সেখানে কোন প্রকার রাখ-ঢাক না রেখেই কোরআন সুন্নাহ এবং সমসাময়িক বাস্তবতাকে সামনে রেখে তিনি সুস্পষ্ট কথা বলেন এবং এটা কে তিনি বলেন “সিয়াসি ফিক্বহ্”।
স্বৈরশাসনের স্পষ্ট বিরোধিতা: মুসলিম বিশ্বে স্বৈরতান্ত্রিক দমনমূলক শাসন নীতির সমালোচনা করে কারযাভী বলেন , যতদিন পর্যন্ত আমাদের দেশগুলোতে বলপূর্বক শাসন চলবে, স্বাধীন ব্যক্তিদের ডিটেনশন ক্যাম্প ও জেলখানায় নিক্ষেপ করা হবে, শাসকেরা লাঠি হাতে দেশ শাসন করবে, বিচারকদেরকে একের পর এক গ্রেফতার, কারারুদ্ধ ও অত্যাচার করা হবে এবং রাজনৈতিক দল গঠন ও সংবাদমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে; ততদিন পর্যন্ত আমাদের জাতি পশ্চাৎপদতার বেড়াজালে বন্দি থাকবে। স্বাধীন মানুষের নেতৃত্বেই একটি জাতির জন্ম হয়। তারাই জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। কিন্তু আমরা যদি দাসত্বের শেকলে আবদ্ধ থাকি, তাহলে এই জাতি প্রয়োজনীয় সময়ে কিছুই করতে পারবে না। জাতি সবসময়েই পেছনে পড়ে থাকবে।
🌸🌸
আল-কারযাভীর দৃষ্টিতে ইসলামপন্থাঃ
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক RAND Corporation air ‘Civil democratic Islam: partners resources and strategies ‘ রিপোর্ট সম্পর্কে টিভি টকশোতে পশ্চিমাদের রাজনৈতিক ইসলাম ও গণতান্ত্রিক ইসলাম ধারণার বিরোধিতা করে ইউসুফ আল কারযাভী বলেন , ইসলাম হচ্ছে একটি সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থা । ইসলাম শূরা পদ্ধতির উপর প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল, পরমত সহিষ্ণুতা, নারী অধিকার , দারিদ্র্যের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং সামাজিক ন্যায়বিচার এর উপর প্রতিষ্ঠিত এই জীবন ও রাষ্ট্র দর্শন ।
RAND corporation এর প্রতিবেদনে উল্লেখিত ইসলামী চারটি ধারা ঐতিহ্যবাদী/traditionalist , চরমপন্থী/extremist , ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী /secularist, আধুনিকতাবাদী/modernist , বিষয়ে তিনি বলেন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী মার্কসবাদী জাতীয়তাবাদী এরা কোনোক্রমেই ইসলামপন্থী নয় , তারা মুসলিম হতে পারে কিন্তু মুসলিম ইসলামপন্থীদের মধ্যে ব্যাপক তফাৎ রয়েছে ।
🌸🌸
গণতন্ত্রের ব্যাপারে দৃষ্টি ভঙ্গিঃ
ডঃ ইউসুফ আল-কারযাভী তাঁর Priorities of the Islamic Movement in the coming phase’ গ্রন্থের ‘The Movement and the Political Freedom and Democracy’ শীর্ষক আলোচনায় গণতন্ত্র সম্পর্কে বলেন, “Democracy is not seen as a danger anymore only when the majority of people are Muslim according to the tenets of Islamic Awakening. Off course, such a people would not be expected to pass a legislation that contradicts Islam and its incontestable principles and conclusive rules.”
“যখন অধিকাংশ জনগণ ইসলামের সামগ্রিক পুনর্জাগরণে অনুপ্রাণিত হয়ে উঠতে সক্ষম হবে তখন গণতন্ত্র সর্বোতভাবে ভীতিপ্রদ ব্যবস্থা নয়। নিঃসন্দেহে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, এ সমস্ত মানুষজন ইসলামের প্রশ্নাতীত এবং চূড়ান্ত নীতিমালার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কোন আইন পাশ করবে । “
পশ্চিমা সভ্যতা সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি : আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, অতীতে আমরা জাহেলী যুগের রীতিনীতি প্রচলিত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতাম। আর এখন আমরা পশ্চিমা সংস্কৃতি নিয়ে বিচলিত। বৈশ্বিক সংস্কৃতি তথা বিশ্বায়নের অজুহাতে পাশ্চাত্য তাদের সংস্কৃতি, মতাদর্শ ও দর্শন আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। শায়খ ইউসুফ মনে করেন, আধুনিক সভ্যতা প্রশ্নাতীতভাবেই পশ্চিমা, কিন্তু এটিই একমাত্র কাম্য কিংবা সম্ভাব্য আধুনিক সভ্যতা নয়।”

বিরুদ্ধবাদীদের কঠোর সমালোচনাঃ
ইউসুফ আল কারযাভী কে পশ্চিমা বিশ্বে একজন সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। চরমপন্থী মুসলিমদের কাছেও তিনি ঘৃণিত। স্বৈরতান্ত্রিক অগণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা এবং দেশে দেশে ইসলামী গণবিপ্লবের প্রতি নৈতিক সমর্থন , গণতন্ত্রকামী মানসিকতার কারণে বিপরীত মতাবলম্বীদের কঠোর সমালোচনার মুখোমুখি হন ডঃ ইউসুফ আল কারযাভী ।

২০০৪ সালে তেইশটি দেশের প্রায় আড়াই হাজার মুসলিম বুদ্ধিজীবী একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করে। সেখানে ‘সন্ত্রাসবাদী ধর্মতাত্ত্বিক’দেরকে বিচারের মুখোমুখী করার জন্যে তারা জাতিসংঘের নিকট আহ্বান জানায়। এই পিটিশনে ইউসুফ আল কারযাভীর নাম রয়েছে এবং তাকে ‘sheiks of death’-এর একজন হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
গণমাধ্যমে ইসলাম প্রচারে তার ভূমিকা: ড. কারযাভী অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও গণমাধ্যমকে ইসলাম প্রচারকার্যে ব্যবহারের পথিকৃৎ। ড. কারযাভীর ‘আশ শারীআহ ওয়াল হায়াহ্’ (শরীয়ত ও জীবন) শিরোনামের টিভি প্রোগ্রামটি বিশ্বের সর্বাধিক দর্শকপ্রিয় অনুষ্ঠানসমূহের একটি। আল জাজিরা টিভি সম্প্রচারিত এ অনুষ্ঠানটির বিশ্বব্যাপী নিয়মিত দর্শক সংখ্যা ৬০ মিলিয়ন (৬ কোটি) বলে অনুমান করা হয়। গণমাধ্যম মাত্রই ‘ক্ষতিকর’ তিনি এমনটা মনে করেন না। বরং অনেকক্ষেত্রেই জনসাধারণের কল্যাণে মিডিয়াকে ব্যবহার করা যায় বলে তিনি মনে করেন। এ বিষয়ে প্রদত্ত এক ফতোয়ায় তিনি বলেছেন:
“টিভি, রেডিও, ম্যাগাজিন এবং সংবাদপত্র বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে। এই মাধ্যমগুলো ভালো বা মন্দ, আইনসঙ্গত কিংবা আইনবিরুদ্ধ , আমরা এ রকম কোনো সংকীর্ণ অর্থ আরোপ করতে পারি না। এটি নির্ভর করছে এ সকল মাধ্যম কী উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে, প্রচারিত অনুষ্ঠানের মান কেমন, কী তথ্য তুলে ধরছে – এসবের উপর। যেমন, একটি অস্ত্র কেউ আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে, আবার কেউ কোনো অন্যায় কাজেও ব্যবহার করতে পারে। … সংক্ষেপে আমি বলতে পারি, টিভি এবং অন্যান্য সকল মিডিয়া ভালো-মন্দ এবং ন্যায়-অন্যায় – উভয়ই তুলে ধরতে পারে। এক্ষেত্রে মুসলমানদের কর্তব্য হচ্ছে পরিস্থিতি বুঝে নিজের বিচার-বিবেচনা অনুযায়ী কাজ করা। টেলিভিশনে যখন ভালো কিছু কিংবা ইসলামসম্মত কোনো আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান প্রচার করা হয় তখন কোনো মুসলিম তা দেখতে পারে। অন্যথায় টিভি বন্ধ করে রাখতে পারে।” গণমাধ্যম সম্পর্কে তিনি শুধুমাত্র এই মত প্রকাশ করেই তার দায়িত্ব শেষ করেননি; বরং গণমাধ্যমে তিনি সরব বিচরণ করে দেখিয়েছেন কিভাবে গণমাধ্যমের কল্যাণে বিভ্রান্তিকর পৃথিবীতে ইসলামের সঠিক ও প্রকৃত বার্তা পৌঁছানো সম্ভব ।
১৯৭০ সালে কাতারে প্রথম বেতার কেন্দ্র খোলা হলে কারযাভী তখনই এর মাধ্যমে ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রচার শুরু করেন। কিছুদিন পর কাতারে টেলিভিশন সম্প্রচার শুরু হলে সেখানেও তিনি একই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। শুক্রবার ও রমজানে এই টেলিভিশনে সম্প্রচারিত বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে কাতার থেকে আল জাজিরা স্যাটেলাইট টেলিভিশন সম্প্রচার শুরু করে। আর ১৯৯৬ সালেই কারযাভী সেখানে ‘শরীয়াহ ও জীবন’ শীর্ষক একটি সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান শুরু করেন। এই অনুষ্ঠানটিও ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে। নব্বই দশকের শেষ দিকে কারযাভী দুটি ওয়েবসাইট চালু করেন। ১৯৯৭ সালে www.qaradawi.net এবং ১৯৯৯ সালে www.islamonline.net চালু করেন।

বিজ্ঞান চর্চায় তার দৃষ্টিভঙ্গিঃ
ইসলাম ও বিজ্ঞানের সামঞ্জস্যতার ব্যাপারে যে কোনো সন্দেহ নেই, তা তিনি বিভিন্ন ফতোয়ায় তুলে ধরেছেন। যেমন তিনি লিখেছেন,
ইসলাম বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও গবেষণাকে স্বাগত জানায়। ইসলামের ইতিহাসের কোথাও ইসলাম ও বিজ্ঞানের মাঝে বিরোধের কোনো প্রমান পাওয়া যায় না। প্রকৃতপক্ষে, ইসলামের দৃষ্টিতে, বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় উন্নতি অর্জন করা জাতির জন্যে ফরজে কেফায়া বা সামষ্টিক কর্তব্য। তবে এই অগ্রগতি অবশ্যই ধর্মবিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক হবে না।
🌸🌸
স্বীকৃতি ও সম্মাননাঃ
হাফেজ ইউসুফ আবদুল্লাহ ১৪১১ হিজরীতে ইসলামী অর্থনীতিতে অবদান রাখায় ব্যাংক ফয়সল পুরষ্কার লাভ করেন। ১৪১৩ হিজরীতে ইসলামী শিক্ষায় অবদানের জন্য মুসলিম বিশ্বের নোবেল খ্যাত কিং ফয়সাল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন । ১৯৯৭ সালে ব্রুনাই সরকার তাকে ‘হাসান বাকলি’ পুরষ্কারে ভূষিত করে।
এছাড়াও তার বৈচিত্র্যময় পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি নিম্মোক্ত পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হন ।
আন্তর্জাতিক সম্মাননাঃ
১) কিং ফয়সাল ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ।
২) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পদক, মালয়েশিয়া
৩) আন্তর্জাতিক পবিত্র কোরআন সম্মাননা পুরস্কার, দুবাই ।
৪) সুলতান হাসান আল বলকিয়াহ সম্মাননা, ব্রুনাই ।
৫) আল ওয়াইস পদক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ।
৬) জর্ডানের মেডেল অফ ইন্ডিপেন্ডেন্স ।
তিনি হচ্ছেন বর্তমান মুসলিম বিশ্বের সবথেকে শক্তিমান লেখক ও চিন্তক।

সাহিত্যচর্চা ও গবেষণাঃ
ড. ইউসুফ আল কারযাভী অনন্য সাধারণ লেখনীর গুণে আলোকিত। অসামান্য পাণ্ডিত্য ও চমৎকার উপস্থাপনা পদ্ধতির কারণে তার সাহিত্য সম্ভার বিশ্বব্যাপী বহুল পঠিত। তিনি যে বিষয়ে কলম চালনা করেন সে বিষয়টির কোন দিক তাঁর আলোচনার বাইরে থাকে না। তাঁর রচনা উচ্চ স্তরের তথ্য ও তত্ত্ব সমৃদ্ধ, কিন্তু তা তথ্যের ভারে রসহীন নয়, বরং অত্যন্ত সাবলীল। তিনি তাঁর মত কারও উপর চাপিয়ে দেন না, কিন্তু এত জোরালো যৌক্তিকতা ও দলিলের সাহায্যে স্বীয় মত প্রতিষ্ঠা করেন যে, তাঁর সাথে দ্বিমতের অবকাশ খুব কমই থাকে। তার গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ১২০টি। প্রধান প্রধান সাহিত্য সৃষ্টিগুলো বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
বাংলায় অনূদিত ড. কারযাভীর বইসমূহ হলোঃ
১. ইসলামে হালাল হারামের বিধান
২.ইসলামের যাকাত বিধান (১ম ও ২য় খণ্ড)
৩. ইসলাম ও শিল্পকলা
৪. ইসলামী শরীয়তের বাস্তবায়ন
৫. আধুনিক যুগ : ইসলাম কৌশল ও কর্মসূচী
৬.ইসলামী পুনর্জাগরণ : সমস্যা ও সম্ভাবনা
৭. দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলাম
৮. জেরুজালেম : বিশ্ব মুসলিম সমস্যা
৯. ফতোয়া
১০. ঈমান ও সুখ
১১. মুমিন জীবনে সময়ঃ মুসলিম মানসে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ভাবনা।
১২. মুমিন জীবনে পরিবারঃ একটি সুস্থ ও সুন্দর পরিবার গঠনে ইসলামি রূপরেখা।
১৩. ইসলামের ব্যাপকতা
১৪. আলিম ও স্বৈরশাসক
১৫. উমর ইবনে আবদুল আজিজ ( জীবনী)
১৬. সুন্নাহর সান্নিধ্যে
১৭. বুদ্ধিদীপ্ত জাগরণের প্রত্যাশায়
১৮. ইসলামের বিজয় অবশ্যম্ভাবী
১৯. ইসলাম ও চরমপন্থা
২০. ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থাঃ তত্ত্ব ও প্রয়োগ
২১. ইসলামে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা
২২. ইসলামে এবাদতের পরিধি
২৩. উপেক্ষা ও উগ্রতার বেড়াজালে ইসলাম।
ড. কারযাভী শুধুমাত্র গবেষণা প্রবন্ধ লিখেই ক্ষান্ত হননি। তিনি একজন স্বনামধন্য আরবি কবিও। তাঁর অসংখ্য কবিতায় সুরারোপ করে শিল্পীরা গান হিসেবে পরিবেশন করেছে। নিজস্ব কাব্য বৈশিষ্ট্যের কারণে তিনি কবি মহলে আলোচিত।

পারিবারিক জীবনঃ
ব্যক্তিগত জীবনে ড. কারযাভী সহজ-সরল, ব্যক্তিত্ববান ও দায়িত্বশীল মানুষ। পারিবারিক জীবনে তিনি একজন আদর্শ স্বামী ও পিতা। তিন পুত্র ও চার কন্যা সন্তানের জনক তিনি। সন্তানদেরকে সুশিক্ষা ও আদর্শবান করে গড়তে অত্যন্ত যত্নবান একজন অভিভাবক ড. কারযাভী।

তাঁর সন্তানদের মধ্যে তিনজন ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রিধারী এবং দুইজন দেশ-বিদেশে ব্যাপক পরিচিত। তাদের একজন কন্যা ইলহাম কারযাভী আন্তর্জাতিক মানের নিউকিয়ার বিজ্ঞানী এবং পুত্র আব্দুর রহমান কারযাভী বিখ্যাত কবি ও মিসরীয় রাজনীতিক।

প্রাণবন্ত বয়ষ্ক তরুণঃ
ড. ইউসুফ আল কারযাভীর মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। কিন্তু ইসলামী সমাজ-বিনির্মাণের স্বপ্নে তিনি কান্তিহীন, সতেজ ও প্রাণবন্ত তরুণের মতই সচল। জ্ঞানের রাজ্যে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী, ত্যাগের ক্ষেত্রে অগ্রগামী এবং ব্যক্তিত্বের দিক দিয়ে বিরল।

এ মহান মনীষী ইসলাম ও মুসলমানদের ভালোবাসায় নিজেকে উজাড় করে দিয়ে গেছেন মুসলিম বিশ্বকে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আরব বিশ্বের বেশকটি মুসলিম দেশ তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।

অথচ, মুসলিম বিশ্বের মজলুম মানবতার জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। যে সকল মুসলিম দেশ আলেম-ওলামাদের প্রতি নির্মম অত্যাচার চালিয়েছে এবং কারাগারে বন্ধী করে রেখেছে, তাদের মুক্তির জন্য আমৃত্যু চেষ্টা সংগ্রাম করেছেন শাঈখ ডঃ ইউসুফ কারদাভী (রাহঃ)।

পবিত্র কুরআনের ২ টি আয়াত পেশ করে লেখাটি সমাপ্ত করছি-
যে ব্যক্তি রাতের বেলায় বিনয়ের সাথে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে (আল্লাহর ইবাদত করে), পরকালের (শাস্তির) ভয় করে এবং তার রবের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে, (হে নবী!) আপনি বলে দিন, যারা (আল্লাহ তাআলা কে) জানে আর যারা জানে না, তারা কি এক সমান হতে পারে? (আসলে) প্রজ্ঞাবান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে থাকে।

(হে নবী!) আপনি বলুন, হে আমার বান্দারা, যারা ঈমান এনেছ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। (জেনে রাখ) যারা পৃথিবীতে কোন কল্যাণকর কাজ করবে তাদের জন্য (পরকালে) রয়েছে মহাকল্যাণ। আল্লাহর জমিন অনেক অনেক প্রশস্ত; উপরন্তু ধৈর্যশীলদের জন্য পরকালে রয়েছে অপরিমিত পুরস্কার।
🌸সূরা জুমার: ৯-১০🌸

পরিশেষে, আরশের মালিকের নিকট দোয়া করি, মরহুম আল্লামাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান বানিয়ে নিন। #আমিন।

তথ্যসুত্রঃ ডঃ ইউসুফ কারদাভীর জীবনী।

*মিশরীয় শাসকের রোষানলে ইসলামী নেতৃত্ব।

*ইন্টারনেট থেকে।

Logo-orginal