, শনিবার, ৪ মে ২০২৪

admin admin

একটি দলের কারণে ইসলামী দলগুলোর ঐক্য কেয়ামত পর্যন্তও হবে না ৷

প্রকাশ: ২০২২-০৯-১৯ ০২:৩৬:৩৮ || আপডেট: ২০২২-০৯-১৯ ০২:৩৬:৪২

Spread the love

আরটিএম ডেস্কঃ ২০০৫/০৬ সালে ফরিদাবাদ মাদরাসায় আমাদেরকে আবূ দাঊদ শরীফ, প্রথম খণ্ড পড়াতেন, হযরতুল আল্লাম মুফতী আবূ সাঈদ সাহেব হাফিজাহুল্লাহ্ ৷ বছরের মাঝামাঝি সময়ে হুযূর টানা দু’দিন দরসে রাজনৈতিক আলাপ করলেন ৷ আমরা তো অবাক ! কারণ, হুযূর সাধারণত দরসের বাইরে তেমন কথা বলেন না ৷ কিন্তু দু’দিনের হুযূরের সে আলোচনা থেকে অনেক অজানা তথ্য জানা হল ৷

মূল আলোচনা ছিল ইসলামী দলগুলোর ঐক্য নিয়ে ৷ সম্ভবত ২০০৪ সালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে খতীব আল্লামা ওবায়দুল হক রহ. এর সভাপতিত্বে “জাতীয় উলামা-মাশায়েখ সম্মেলন” হয় ৷ উদ্দেশ্য ছিল ইসলামী দলগুলোর ঐক্যের পথ বের করা ৷ সেখানে দেশের খ্যাতনামা শীর্ষ আলেমগণ উপস্থিত ছিলেন ৷ শায়খুল হাদীস, মুফতী আমিনী, চরমোনাই পীর সাহেব রহিমাহুমুল্লাহ্ সকলেই ঐ সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন ৷ (আমি যেহেতু ২০০১ সাল থেকে নিয়মিত পেপার পত্রিকা বিশেষ করে ইনকিলাবের পাঠক ছিলাম ৷ তাই সমকালীন ইসলামী রাজনীতির বাহ্যিক অনেক কিছু তখনও জানতাম, বুঝতাম ৷)
সেদিন উলামা মাশায়েখ সম্মেলনে খতীব ওবায়দুল হক রহ.কে ঐক্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সর্বসম্মত দায়িত্ব প্রদান করা হয় ৷

কিন্তু সে প্রচেষ্টা কে বা কাদের কারণে ব্যর্থ হয় ? উক্ত সংগঠনের প্রধান মুখপাত্র হিসেবে হযরত মুফতী আবূ সাঈদ হাফিজাহুল্লাহ্ এর যবানে তার বিস্তারিত বর্ণনা ছিল ৷

(১) হুযূর বলেন, খতীব সাহেবের প্রতিনিধি হয়ে আমিসহ আলেমদের একটি প্রতিনিধিদল প্রথমে রামপুরা জামিআ কারিমিয়ায় চরমোনাই পীর সাহেবের কাছে যাই ৷ তিনি শর্ত দিলেন, “শায়খ আর আমিনীকে আগে চার দলীয় জোট ছাড়তে হবে ৷”
উপস্থিত আলেমগণ বললেন, হুযূর ঐক্যের বৃহত্তর স্বার্থে শর্ত না দিলে ভাল হয় ৷
পীর সাহেব বললেন, নারী নেতৃত্ব হারাম, না ছাড়লে ঐক্য হবে না ৷
আবূ সাঈদ সাহেব বললেন, হুযূর! গণতন্ত্রও তো হারাম, ঠেকায় পড়ে করছেন না ?
পীর সাহেব চরমোনাই তখন গরম হয়ে বললেন, গণতন্ত্র হারাম আপনাকে কে বলেছে ? গণতন্ত্র সম্পূর্ণ জায়েয ৷

(তখন হুযূর আমাদেরকে বললেন, দেখছেন ! যিনি গণতন্ত্রকে জায়েয বলেন, তিনি আবার নারী নেতৃত্বকে হারাম বলেন, অথচ যে যুক্তিতে গণতন্ত্র জায়েয, ঐ যুক্তিতে তো নারী নেতৃত্বও জায়েয হয় ৷)

পীর সাহেবের অনড় অবস্থান দেখে প্রতিনিধি দল খতীব সাহেবের পরামর্শে শায়খুল হাদীস ও মুফতী আমিনী রহিমাহুমাল্লাহ্ এর কাছে যান ৷ তাঁদের উভয়ের বক্তব্য ছিল, “ঠিক আছে বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে আমরা চার দলীয় জোট ছাড়তে রাজি ৷”

(২) এবার প্রতিনিধি দল আবার রামপুরা কারিমিয়ায় পীর সাহেব চরমোনাইয়ের কাছে এসে জানান যে, তাঁরা উভয়ে ঐক্যের স্বার্থে চারদল ছাড়তে রাজি আছেন ৷

পীর সাহেব চরমোনাই রহ. তখন নতুন শর্ত দিলেন যে, “ঐক্য হতে হলে নেতৃত্ব ইসলামী শাসনতন্ত্রের হাতে থাকতে হবে ৷” সবাই যতই বুঝালেন, সবাই মিলে যাকে আমীর বানাবে, তিনিই আমীর হবেন, কিন্তু পীর সাহেব এ শর্তেও অনড় ৷

প্রতিনিধিদল আবার গেলেন শায়খুল হাদীস রহ. এর কাছে ৷ গিয়ে পীর সাহেবের শর্ত জানালেন ৷ সবাইকে অবাক করে দিয়ে শায়খুল হাদীস রহ. বললেন, “ঐক্যের স্বার্থে ফজলুল করীম সাহেবকে আমীর মানতে আমার অসুবিধা নাই, আপনারা আমিনীর কাছে যান ৷”

সবাই আমিনী রহ. এর কাছে গেলে তিনিও শায়খের কথায় একমত পোষণ করেন ৷

(৩) এবার প্রতিনিধিদল আবার কারিমিয়ায় পীর সাহেবের কাছে এসে শায়খ ও আমিনীর অনাপত্তি জানালে পীর চরমোনাই এবার নতুন শর্ত দেন ৷ “ঐক্য হলে আমিনী মহাসচিব হতে পারবে না ৷”
সবাই ঐক্যের স্বার্থে এমন শর্ত না দেয়ার অনুরোধ করলেও তিনি সাফ জানিয়ে দেন ৷ আমিনী মহাসচিব হলে ঐক্য হবে না ৷
এবার প্রতিনিধিদল শায়খের কাছে গেলে তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যানের পদ আমি ছেড়ে দিতে পারব ৷ কিন্তু আমিনী মহাসচিব হবে না, এ কথা আমি বলতে পারব না ৷”

প্রতিনিধিদল সে প্রস্তাব নিয়ে আর মরহুম আমিনী রহ. এর কাছে যাননি ৷

সে সময়ের ঐক্য প্রচেষ্টা এভাবেই তাদের কারণে ব্যর্থ হয় ৷

ঐ সময় দাওরায়ে হাদীসের ক্লাসে আমার সহপাঠি হিসাবে আল্লামা মুফতী আবূ সাঈদ হাফিজাহুল্লাহ্ এর বক্তব্যগুলো সরাসরি শুনেছেন, ততকালীন গাজীপুর জেলা ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের জেলা সভাপতি, পরবর্তীতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজীপুর জেলা সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়রপ্রার্থী জনাব মাওলানা নাসির উদ্দীন ভাই ৷

নাসির ভাইয়ের চেহারা ঐ দু’দিন একদম কালো ছিল ৷ কিন্তু হুযূরের কোন কথার ভুল ধরতে দেখিনি ৷

(যেহেতু ১৪ বছর পর লিখেছি তাই, আমার লেখায় কোন ভুল তথ্য থাকলে আশা করি নাসির ভাই শোধরে দিবেন)

ইদানিং আবার ঐক্য নিয়ে মাঠ গরম ৷ অবাস্তব ও অবান্তর সব ঐক্যের মূলনীতি নামক মূলানীতিতে একরাশ ক্ষোভ, ঘৃণা, অহংকার আর নেতৃত্বের লোভই ফুটে উঠেছে ৷ এসব প্রশস্ত দিল ও বিচক্ষণতাপূর্ণ কোন রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় বহন করে না ৷

তাই আমি হলফ করে বললেও আশা করি হানেছ হবো না ৷ ১৯৯৯/২০০১ থেকে যা দেখে আসতেছি, ঐ দলের সাথে অন্য ইসলামী দলগুলোর ঐক্য কেয়ামত পর্যন্তও হবে না ৷

{{{ সত্যতা যাচাই করা লাগলে
আলহামদুলিল্লাহ আমাদের মাঝে
আল্লামা মুফতী আবু সাঈদ সাহেব হুজুর এখনো জীবিত আছেন }}}

পোস্টঃ মুফতি হেদায়েতুল্লাহ ভাইয়ের টাইম লাইন থেকে সংগৃহীত।

Logo-orginal