, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

মুহাজির-আনসারদের ত্যাগ ও আমাদের তাচ্ছিলতা’

প্রকাশ: ২০২২-০৯-১২ ১৫:৪৭:০৭ || আপডেট: ২০২২-০৯-১২ ১৭:৫২:৩৯

Spread the love

আলহামদুলিল্লাহ লিল্লাহি রাব্বিল আলেমিন, আচ্ছালামু আলা সাইয়িদল মুরসালিন।

মুসলিম বিশ্বে করুণ এক যুগে অবস্থান করছে, আজকের বিশ্বে মুসলমানদের অবস্থা এতই শোচনীয় যে, বাড়ি – ঘর হারাচ্ছে, দেখার কেউ নেই, গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছে, প্রতিরোধের কেউ নেই, মসজিদ ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, প্রতিবাদ করার মত নেই কোন রাষ্ট্রীয় শক্তি।

অথচ মুসলিম জনগোষ্ঠী, ইসলামী দল ও সংস্থা নিজেদের মধ্যে এত বেশী কলহে লিপ্ত যে, অন্যায়ের প্রতিবাদ দুরে থাক, সঠিক দাওয়াতী কাজ করার মত সময় ও সুযোগ নেই।

নিজেদের মধ্যে এত বেশী মত পার্থক্য তৈরী হয়েছে যে, ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক দল উপদলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত সময় পার করছে।

আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ, নবীদের ইতিহাস ও সাহাবায়ে কেরামের ত্যাগ ও কোরবানীর নজরানা ভুলে গিয়ে ইসলামী দল সমুহের নেতা কর্মীরা ব্যাক্তি পুজায় মগ্ন।

*মুহাজির-আনসারদের ত্যাগ ও এই যুগের মুমিনদের করণীয়।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আনাস বিন মালেকের গৃহে আনছার ও মুহাজিরদের নেতৃস্থানীয় ৯০ জন ব্যক্তির এক আনুষ্ঠানিক বৈঠক আহবান করেন। যেখানে উভয় দলের অর্ধেক অর্ধেক সদস্য উপস্থিত ছিলেন’।[1] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের পরস্পর দু’জনের মধ্যে ইসলামী ভ্রাতৃত্বের (الْمَؤَاخَاةُ الْإِسْلاَمِيَّةُ) বন্ধন স্থাপন করেন এই শর্তে যে, ‘তারা একে অপরের দুঃখ-বেদনার সাথী হবেন এবং মৃত্যুর পরে পরস্পরের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন’। তবে উত্তরাধিকার লাভের শর্তটি ২য় হিজরীতে বদর যুদ্ধের পর অবতীর্ণ আয়াতের মাধ্যমে রহিত হয়ে যায়। যেখানে বলা হয়, وَأُوْلُوا الْأَرْحَامِ بَعْضُهُمْ أَوْلَى بِبَعْضٍ فِيْ كِتَابِ اللهِ إِنَّ اللهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ ‘রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়গণ আল্লাহর কিতাবে পরস্পরের অধিক হকদার। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বিষয়ে অধিক জ্ঞাত’ (আনফাল ৮/৭৫)। এর ফলে উত্তরাধিকার লাভের বিষয়টি রহিত হ’লেও তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ছিল অটুট এবং অনন্য। বিশ্ব ইতিহাসে যার কোন তুলনা নেই। ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের এই ঘটনা ১ম হিজরী সনেই ঘটেছিল মসজিদে নববী নির্মাণকালে অথবা নির্মাণ শেষে। তবে ঠিক কোন তারিখে ঘটেছিল, সেটা সঠিকভাবে জানা যায় না। ইবনু আব্দিল বার্র এটিকে হিজরতের ৫ মাস পরে বলেছেন। ইবনু সা‘দ এটিকে হিজরতের পরে এবং বদর যুদ্ধের পূর্বে বলেছেন (সীরাহ ছহীহাহ ১/২৪৩)। কয়েকটি দৃষ্টান্ত নিম্নে প্রদত্ত হ’ল।-

(১) আব্দুর রহমান বিন ‘আওফ : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুহাজির আব্দুর রহমান বিন ‘আওফকে আনছার সা‘দ বিন রবী‘-এর সাথে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করে দেন। অতঃপর সা‘দ তার মুহাজির ভাইকে বললেন, ‘আনছারদের মধ্যে আমি সর্বাপেক্ষা ধনী। আপনি আমার সম্পদের অর্ধেক গ্রহণ করুন এবং আমার দু’জন স্ত্রীর মধ্যে যাকে আপনি পসন্দ করেন, তাকে আমি তালাক দিয়ে দিব। ইদ্দত শেষে আপনি তাকে বিবাহ করবেন’। আব্দুর রহমান বিন ‘আওফ তার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে দো‘আ করলেন, بَارَكَ اللهُ لَكَ فِى أَهْلِكَ وَمَالِكَ ‘আল্লাহ আপনার পরিবারে ও সম্পদে বরকত দান করুন’! আপনি আমাকে আপনাদের বাজার দেখিয়ে দিন। অতঃপর তাঁকে বনু ক্বায়নুক্বা-র বাজার দেখিয়ে দেওয়া হ’ল। তিনি সেখানে গিয়ে পনীর ও ঘি-এর ব্যবসা শুরু করলেন এবং কিছুদিনের মধ্যে সচ্ছলতা লাভ করলেন। এক সময় তিনি বিয়ে-শাদীও করলেন।[1]

(২) খেজুর বাগান ভাগ করে দেবার প্রস্তাব : হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আনছারগণ একদিন রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে এসে আবেদন করলেন যে, আপনি আমাদের খেজুর বাগানগুলি আমাদের ও মুহাজির ভাইগণের মধ্যে সমানভাবে বণ্টন করে দিন’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এতে অসম্মতি জ্ঞাপন করলেন। তখন তারা বললেন, তবে এমন করুন যে, মুহাজির ভাইগণ আমাদের কাজ করে দিবেন এবং আমরা তাদের ফলের অংশ দিব’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এতে সম্মত হ’লেন (বুখারী হা/৩৭৮২)।

(৩) জমি বণ্টনের প্রস্তাব : বাহরায়েন এলাকা বিজিত হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেখানকার পতিত জমিগুলি আনছারদের অনুকূলে বরাদ্দ দিতে চাইলে তারা আপত্তি করে বললেন, আমাদের মুহাজির ভাইদের উক্ত পরিমাণ জমি দেওয়ার পরে আমাদের দিবেন। তার পূর্বে নয়।

উপরোক্ত ৩টি দৃষ্টান্ত আমলে নিলে, আমাদের ঈমান আমলে কখনো স্বার্থপরতা থাকতে পারবেনা, না পাওয়ার বেদনা কখনো মুমিনের দিলকে কলুষিত করতে পারেনা।

নির্দিষ্ট দিকে ধাবিত না হয়ে, দৌড়াতে হবে ক্ষমার আর জান্নাতের দিকে, কারণ ক্ষমা, ত্যাগ ও কুরবানীর শেষ মঞ্জিল রবের সন্তুষ্টি।

শিক্ষনীয়ঃ
আল্লাহর ও রাসুল (সাঃ) এর প্রতি আনুগত্য ও ভালবাসার এই উজ্জল দৃষ্টান্ত এই যুগে আশা করা বোকামী, তবে দুনিয়া জুড়ে কিছু মুত্তাকী অবশ্য আছে, যাদের কারণে এই দুনিয়াতে আল্লাহর রহমত এখনো বিরাজমান।

হিসাবের কঠিনতম দিন হবে হাশরের ময়দান, সেদিন আল্লাহর সম্মূখে যাতে লজ্জিত হতে না হয়, সেজন্য সবকিছুর উর্ধ্বে উঠে নিজেকে তৈরী করতে হবে মাবুদের চাহিদা অনুসারে।

৬:১৬২ قُلۡ اِنَّ صَلَاتِیۡ وَ نُسُکِیۡ وَ مَحۡیَایَ وَ مَمَاتِیۡ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۶۲﴾ۙقل ان صلاتی و نسکی و محیای و مماتی لله رب العلمین ﴿۱۶۲﴾ۙ
বল, আমার নামায, আমার যাবতীয় ‘ইবাদাত, আমার জীবন, আমার মরণ (সব কিছুই) বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই (নিবেদিত)।

অতএব, আমাদের বেশী বেশী নফল নামাজ আদায় করে আত্মসমালোচনা করা উচিৎ যে, *জীবনে কয়বার আল্লাহর দরবারে চোখের পানি ফেলেছি?

*রবের দাওয়াতী পয়গাম কয়জনের নিকট পৌঁছাতে পেরেছি?

*আমার দাওয়াতে কয়জন আল্লাহ’র বান্দাহ কুরআন শিখেছে?

*আমার দাওয়াতে কয়জন আল্লাহ’র বান্দাহ মসজিদ মুখি হয়েছে।

তথ্যসুত্রঃ
[1]. যাদুল মা‘আদ ৩/৫৬; বুখারী হা/৭৩৪০; সীরাহ ছহীহাহ ১/২৪৪।

[2] আনছারদের এই অসাধারণ ত্যাগ ও মহত্ত্বের প্রশংসা করে আল্লাহ আয়াত নাযিল করেন (হাশর ৫৯/৯)। যা ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে।

[1]. বুখারী হা/৩৭৮০-৮১ ‘ছাহাবীগণের মর্যাদা’ অধ্যায়, ৩৩ অনুচ্ছেদ ও হা/২৬৩০ ‘হেবা’ অধ্যায়, ৩৫ অনুচ্ছেদ।

[2]. বুখারী হা/২৩৭৬ ‘জমি সেচ করা’ অধ্যায়, ১৪ অনুচ্ছেদ।
[3] আনসার মুহাজিরদের ভ্রাতৃত্বের নমুনাঃ ডঃ আসাদুল্লাহ গালিব।
*লেখক ও সংকলকঃ আবুল কাশেম।

Logo-orginal