, সোমবার, ৬ মে ২০২৪

admin admin

প্রবাস থেকে হুন্ডিতে টাকা প্রেরণ, ২৩০ ব্যাংক হিসাব জব্দ।

প্রকাশ: ২০২২-১১-১৭ ১৯:৪০:৫২ || আপডেট: ২০২২-১১-১৭ ১৯:৪১:২০

Spread the love

ডিজিটাল হুন্ডি ঠেকাতে এবার ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে অর্থ পাচার প্রতিরোধে সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ। ডিলার ও এজেন্টশিপ বাতিল, সিআইডিতে তথ্য প্রেরণের পর এবার কিছু সুবিধাভোগী এমএফএস অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পেয়েছে এমন সন্দেহভাজন ২৩০ এমএফএস হিসাব প্রথমবারের মতো গতকাল ফ্রিজ করেছে বিএফআইইউ। অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের পাশাপাশি আগামীতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হুন্ডি ঠেকাতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, বিএফআইইউ সব ব্যাংক ও এমএফএস প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে এ ধরনের লেনদেন শনাক্ত করছে। আগামীতে অবৈধ উপায়ে অর্থ পাঠাবে না এমন শর্তে ২৩০টি হিসাব আবার সচল করা হবে। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো হবে। এরপরও হুন্ডি প্রমাণিত হলে পুরো অর্থ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে। একই সঙ্গে সুবিধাভোগীর বিরুদ্ধে মামলাসহ বিভিন্ন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিএফআইইউ এর আগে কয়েক লাখ এজেন্টের তথ্য বিশ্নেষণ করে হুন্ডির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সারাদেশের ৫ হাজার ৪১৯ এমএফএসকে চিহ্নিত করে। এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো এসব এজেন্টশিপ বাতিল করে। পরে এ তালিকা দেওয়া হয় বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিাইডি)। এর ভিত্তিতে সিআইডি ইতোমধ্যে ৫টি মামলা করেছে। এ ছাড়া কয়েকজন ব্যক্তিকে আটক করেছে। সংস্থাটি ওই তালিকার ভিত্তিতে আরও যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
বিএফআইইউর তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ সংগ্রহ করে একটি চক্র।
এরপর প্রবাসীর সুবিধাভোগীর বিকাশ, নগদ, রকেটসহ বিভিন্ন এমএফএস নম্বর এখানকার এজেন্টকে দেওয়া হয়। এরপর এজেন্ট নির্ধারিত পরিমাণ টাকা তাৎক্ষণিকভাবে সুবিধাভোগীর নম্বরে পৌঁছে দেয়। এ উপায়ে অর্থ এলে বৈদেশিক মুদ্রা বাইরেই থেকে যায়। দেশের বাইরে সংগ্রহ করা ওই অর্থ পরে অর্থ পাচারকারীরা বেশি দামে কিনে নেয়।

গত রোববার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডিদের এক বৈঠকে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেন, ১২ টাকা কেজি দরে কমলার এলসি খোলা হয়েছে। ১৮ টাকা কেজিতে আপেল, খেজুরের এলসি হয়েছে ২০ টাকায়। মার্সিডিজ বেঞ্জ আনা হচ্ছে ২০ লাখ টাকা দর দেখিয়ে। কর ফাঁকি দিতে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের (দর কম দেখিয়ে) পণ্য আমদানি হচ্ছে। বাকি অর্থ পাচারের মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে। ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ বাইরে পাচার করা হচ্ছে। এ ধরনের তৎপরতা বন্ধের জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

সংশ্নিষ্টরা জানান, ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে অর্থ আনা আইনত অপরাধ। কিন্তু প্রবাসীদের একটি অংশ সুবিধাভোগীর কাছে অর্থ পৌঁছানোর সহজ মাধ্যম হিসেবে হুন্ডিকে বেছে নেয়। এ কারণে দেশের বাইরে শ্রমিক যাওয়া বাড়লেও রেমিট্যান্স কমছে। অথচ এক বছর আগের তুলনায় এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠিয়ে প্রতি ডলারে ২২ টাকার মতো বেশি পাচ্ছেন। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে গড়ে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল। তবে সেপ্টেম্বরে কমে ১৫৪ কোটি ডলারে নামে। অক্টোবরে আরও কমে ১৫৩ কোটি ডলারের নিচে নেমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের এ সময়ে প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় চাপ বাড়ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে।

রেমিট্যান্স কমা ও বিশ্ববাজারে বেশিরভাগ পণ্যের দরবৃদ্ধির ফলে আমদানি দায় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে বেশিরভাগ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৫৮৭ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। গত অর্থবছর বিক্রি করে ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার। এভাবে ডলার বিক্রির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। গতকাল দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেমেছে ৩৪ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের আগস্টে যেখানে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে ছিল। অবশ্য আইএমএফের মানদণ্ড বিবেচনায় দেশের রিজার্ভ এখন ২৫ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার। এমন বাস্তবতায় আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ অন্যান্য সংস্থা থেকেও ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার।

হুন্ডি প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কতা :হুন্ডির বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সতর্ক করেছে। সেখানে বলা হয়, প্রবাসী বাংলাদেশি ও তাদের প্রিয়জনদের জানানো যাচ্ছে যে, কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে (হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পথে) পাঠানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের উদ্দেশে বলেছে, ‘দেশের বাইরে অর্জিত মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা হুন্ডি বা অন্য কোনো পথে না পাঠিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠান। দেশ গড়ায় মূল্যবান অবদান রাখুন। আপনার প্রিয়জনকে ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ রাখুন।’
উৎসঃ দৈনিক সমকাল।

Logo-orginal