, শনিবার, ৪ মে ২০২৪

admin admin

বঙ্গবন্ধুর সাথে নিজের তুলনা কেন করলেন সাবেক পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

প্রকাশ: ২০২২-১১-০৫ ১৫:৫১:৩০ || আপডেট: ২০২২-১১-০৫ ১৫:৫১:৫৬

Spread the love

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তেহরিক ই ইনসাফ দলের নেতা ইমরান খানের সাম্প্রতিক এক বক্তব্য ব্যাপক আলোচনা ও কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে।

গত শুক্রবার থেকে ইমরান খান তার দলের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক নিয়ে এক লং মার্চ শুরু করেছিলেন – যা পাকিস্তানের বিভিন্ন শহর ঘুরে রাজধানী ইসলামাবাদে এসে শেষ হবার কথা।

এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার লাহোরের কাছে ওয়াজিরাবাদে তার ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে – যাতে তিনি পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। এখন তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সংবাদমাধ্যমের মনোযোগ এখন এই গুলিবর্ষণের ঘটনার দিকেই – কিন্তু দুদিন আগে এক জনসমাবেশে ইমরান খান যে মন্তব্য করেন তাও পাকিস্তানের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।

শেখ মুজিবের সাথে নিজের সংগ্রামের তুলনা দিলেন ইমরান খান
গুজরানওয়ালার ওই সমাবেশে ইমরান খান তার ভাষায় “প্রকৃত মুক্তির” এই আন্দোলনকে তুলনা করেছিলেন ১৯৭০-৭১ সালে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের আন্দোলনের সাথে।

এখানে তিনি এমন কিছু কথা বলেছেন যা পর্যবেক্ষকদের মতে পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের মুখে সাম্প্রতিককালে শোনা যায়নি।

ইমরান খান বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙে গিয়েছিল কারণ একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট পেলেও তাদের ক্ষমতায় যাবার অধিকার দেয়া হয়নি।

“একজন চতুর ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদ তৎকালীন নির্বাচনে বিজয়ী বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের (আওয়ামী লীগ) বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছিল – যার ফলে দেশ দু-টুকরো হয়ে যায়” – সেই সময়কার পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা ও পরবর্তীকালের প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত জুলফিকার আলি ভুট্টোর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন ইমরান খান।

নিজের দল পিটিআইকে আওয়ামী লীগের সাথে তুলনা করে ইমরান খান বলেন, তার পার্টিই “বৃহত্তম এবং একক ফেডারেল দল”, কিন্তু তবু সরকার তাকে নতুন নির্বাচনের সুযোগ দিচ্ছে না।

“সবাই জানে যে মুজিবুর রহমান এবং তার দল ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জিতেছিল। কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে একজন চতুর রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগ ও সামরিক বাহিনীকে সংঘাতের পথে ঠেলে দেন… আর এখন নওয়াজ শরিফ এবং আসিফ জারদারি একই রকম ভুমিকা পালন করছে, তারা চেষ্টা করছে এস্টাব্লিশমেন্টের সাথে মিলে ষড়যন্ত্র করে পিটিআইয়ের ক্ষমতায় ফেরার পথ আটকে দিতে” – বলেন ইমরান খান।

এ কথা শোনা গেল এমন একজন পাকিস্তানি রাজনীতিবিদের মুখে – যার নিজের সম্পর্কেই একসময় বলা হতো যে দেশটির ক্ষমতাধর সামরিক বাহিনীর প্রচ্ছন্ন আশীর্বাদ নিয়েই তিনি রাজনীতিতে এসেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।

তার সরকারকে সমালোচকরা বলতেন “হাইব্রিড” সরকার। এমনকি পরে সেই “সুসম্পর্ক খারাপ হবার” জল্পনাও ছিল দুনিয়াজোড়া সংবাদমাধ্যমে বড় খবর।

কী ঘটেছিল ১৯৭০এর নির্বাচনে
ইমরান খান যে নির্বাচনের কথা বলছেন তা হয়েছিল ১৯৭০ সালের ৭ই ডিসেম্বর। পাকিস্তানের পূর্ব ও পশ্চিমাংশে মোট ৩০০টি আসনে ভোটাভুটি হয়েছিল।

নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টিতে জয়ী হয়। জুলফিকার আলি ভুট্টোর পিপিপি পশ্চিম পাকিস্তানে জয়ী হয় ৮১টি আসনে।

ফলে সেই নির্বাচনে শুধু পূর্ববঙ্গে নয়, গোটা পাকিস্তানেই সার্বিকভাবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যায় আওয়ামী লীগ।

কিন্তু তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এবং মি. ভুট্টো নানা কৌশল করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় যেতে দেননি। ফলে বাঙালিদের তীব্র বিক্ষোভ স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয় – ৯ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের পর আত্মপ্রকাশ ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের।
উৎসঃ বিবিসি বাংলা।

Logo-orginal