, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

আল্লামা মাহবুবুল আলম সিদ্দিকী : চিরবিদায় একজন বহুমুখী প্রতিভাবান শিক্ষাবিদের।

প্রকাশ: ২০২২-১২-২৫ ০৯:০৬:০৫ || আপডেট: ২০২২-১২-২৫ ০৯:০৬:০৭

Spread the love

মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন,চট্টগ্রামঃ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম কামিল মাদরাসার প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ, বিশিষ্ট মুফাসসির, মুহাদ্দিস ও আরবি ভাষাবিদ আল্লামা মাহবুবুল আলম সিদ্দিকী গত ১৪ই ডিসেম্বর ২০২২ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় চট্টগ্রাম নগরীর নিজ বাস ভবনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সান্নিধ্যে চলে গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহ পাক তাঁকে আন্বিয়া, সোলাহা ও শুহাদার সাথে জান্নাতুল ফেরদাউসের আলা ইল্লিয়িনে মর্যাদাপূর্ণ স্থান নসীব করুন। ওফাতকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। এই প্রবীণ আলেম দীর্ঘ দিন ধরে খাদ্যনালীর সমস্যায় ভুগছিলেন। মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা চট্টগ্রাম নগরীর চন্দনপুরা দারুল উলুম কামিল মাদরাসার মাঠে গত ১৫ই ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. সাইয়্যেদ আবু নোমানের ইমামতিতে অনুষ্ঠিত হয় । একই দিন বিকেল ৩টায় মিরসরাই মুরাদপুর ইউনিয়নের নিজ গ্রামে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মিরসরাই উপজেলার ডোমখালী গ্রামে মাওলানা মাহবুবুল আলম সিদ্দিকী ০১ মার্চ ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সামসুল আলম মাতার নাম আসমা খাতুন। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর সীতাকুণ্ড আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন এবং সেখানে ১৯৭৩ সালে দাখিল পরীক্ষায় ১ম বিভাগে এবং ১৯৭৫ সালে আলিম পরীক্ষায় ১ম বিভাগে ২৭ তম স্থান অধিকারে পাশ করেন। এরপর তিনি নাজিরহাট জামিয়া মিল্লিয়া আহমদিয়া কামিল মাদরসা হতে ১৯৭৭ সালে ১ম বিভাগে ২য় স্থান অধিকার করে ফাজিল এবং ১৯৭৯ সালে ১ম বিভাগে ২য় স্থান অধিকার কামিল (আল হাদীস) পাশ করেন। অতঃপর উচ্চ শিক্ষা লাভের উদ্যেশ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৮৪ সালে বি.এ (অনার্স) ১ম শ্রেণিতে ১ম স্থান অধিকার অর্জন করেন।
মাওলানা মাহবুবুল আলম সিদ্দিকী ১৯৭৯ সালের ১লা অক্টোবর রাঙ্গুনিয়া আলমশাহপাড়া আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা পেশা শুরু করেন। ১৯৮১ পর্যন্ত ওই মাদরাসায় মুহাদ্দিস পদে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৮২ সালের ১ জানুয়ারি হাটহাজারী কাটিরহাট মুফিদুল ইসলাম ফাজিল মাদরাসায় উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। ১৯৮৮ সালের আগস্ট মাসে তিনি উম্মুল মাদারিসখ্যাত চট্টগ্রাম দারুল উলুম মাদরাসার মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৬ সালে একই মাদরাসার উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেয়াদে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মাওলানা মাহবুবুল আলম সিদ্দিকী একাধারে একজন বিজ্ঞ আলেম, মুহাদ্দিস, মুহাক্কিক, ফকিহ ও যুগশ্রেষ্ঠ আলেম। বর্তমান সময়ে তার মতো যোগ্য আলেম দেশে খুঁজে পাওয়া বিরল। তিনি ছিলেন আলেম সমাজের মধ্যে অতুলনীয় ও প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব।দ্বীনের খেদমতে তার বহুমুখী অবদান ও ত্যাগ অবিস্বরণীয়।ইসলামের সঠিক ও মূলধারাকে তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত করতে আজীবন প্রয়াস চালিয়েছেন।
মাওলানা মাহবুবুল আলম সিদ্দিকী ১৯৮৯ সালে কাইয়ুম সাহেব হুজুর বাড়ি মিরশ্বরাইর সাহের খালী মাওলানা আব্দুল কাইয়ুমের মেয়ে তাহেরা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ০২ ছেলে ০১ মেয়ের জনক। বড় ছেলে ইন্জিনিয়ার রাকিবুল হাসান সহকারী ইন্জিনিয়ার, এলজিইডি, নোয়াখালীতে কর্মরত আছেন। ছোট ছেলে মর্তুজা হাসান রাহী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ তে অধ্যয়নরত আছেন। কন্যা সাইয়েদা জিগার একজন ডাক্তার।
মরহুমের সাথে আমার পরিচয় দারুল উলুম কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ড. এটিএম আবু তাহের হুজুরের মাধ্যমে। আব্বা হুজুর মাদরাসা-ই- আলিয়া ঢাকার সাবেক মুহাদ্দিস ও সিলেট সরকারি আলিয়ার সাবেক অধ্যক্ষ হাদীস বিশারদ আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ) এর বিশেষ কাজে প্রায় সময় মাদরাসায় আসা যাওয়া করতাম। বেশীরভাগ সময় মরহুমের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ আলোচনা হতো। হাদীস বিশারদের সন্তান হিসেবে তিনি আমাকে খুবই ভালোবাসতেন। আমাকে সব সময় “আপনি” বলে সম্বোধন করতেন। আর আব্বা হুজুরকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। তিনি প্রকৃতপক্ষে একজন খাঁটি ও একনিষ্ঠ দ্বীন প্রচারক ছিলেন। তিনি সোস্যাইল মিডিয়াকে দ্বীন প্রচারের একটি সবচাইতে বড় প্লাটফর্ম হিসেবে মনে করতেন। ফেইসবুকে তিনি দ্বীনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লেখালেখি করতেন। আমার যে কোন লেখায় তিনি যৌক্তিক এবং সাবলীল ভাষায় অনেক দরদ মাখা মন নিয়ে ইতিবাচক মূল্যবান মন্তব্য করতেন এবং পরামর্শ দিতেন। ইতিহাসে তিনি অস্লান ও বিরল ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবেন। তিনি এমন একজন মানুষ , যাঁর জ্ঞানের পরিধি সুবিস্তৃত ও সুবিশাল। শিক্ষক সমাজে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সম্মানিত ও শ্রদ্ধাভাজন একজন আদর্শ শিক্ষক। ছাত্র সমাজের কাছে একজন প্রাণপ্রিয় মান্যবর উস্তাদ।

লেখক: কলামিস্ট।
প্রচার ও প্রকাশনা সচিব, বাংলাদেশ মুসলমান ইতিহাস সমিতি।

Logo-orginal