, বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

admin admin

গণমিছিলে বড় শোডাউন করে বিএনপি ও জামায়াত’১১ই জানুয়ারি গণঅবস্থান’

প্রকাশ: ২০২২-১২-৩১ ১৪:৫০:৫৮ || আপডেট: ২০২২-১২-৩১ ১৪:৫১:০২

Spread the love

যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল করেছে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোট। এই গণমিছিলে লাখ লাখ নেতাকর্মী অংশ নিয়েছেন। সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও কারাবন্দিদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে গতকাল গণমিছিলের বড় শোডাউন করে বিএনপি। একই দাবিতে গণমিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, এলডিপি, ১২ দলীয় জোট, ১১ দলীয় জোটসহ সরকারবিরোধী দলগুলো। যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচিতে ২/১ টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াই বড় শোডাউন সম্পন্ন করেছেন দলগুলো। তবে রাজধানীর মৌচাক ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন অব্যাহত রাখতে গণমিছিলে অংশ নেয়া দলগুলো আবারো কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। নতুন বছরের ১১ই জানুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশে গণঅবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন বিরোধী জোটের নেতারা। কর্মসূচিকে সরকার বিদায়ের দুই নম্বর সতর্ক বার্তা বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

এদিকে গণমিছিলকে ঘিরে গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকায় ভিড় করেন দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নয়াপল্টন সড়কসহ আশপাশের সড়কে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে।

এ ছাড়া আশপাশের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। জুমার নামাজের পর জনসমুদ্রে পরিণত হয় নয়াপল্টন ও আশপাশের সড়ক। ব্যানার, ফেস্টুন, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী গণমিছিলস্থলে উপস্থিত হন। খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ এবং সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তোলেন তারা। বিকাল সাড়ে তিনটায় গণমিছিলটি বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়। পরে কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক হয়ে মগবাজার গিয়ে শেষ হয়। গণমিছিলের প্রথম অংশ বিকাল সাড়ে চারটায় মগবাজারে পৌঁছায়। একই সময়ে গণমিছিলের শেষ প্রান্ত ছিল মতিঝিল নটরডেম কলেজ এলাকায়। সন্ধ্যা সোয়া ৫টা পর্যন্ত মিছিলের শেষ প্রান্ত নয়াপল্টন অতিক্রম করতে পারেনি। মাগরিবের আজান শেষ হলে গণমিছিলের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এ সময় হাজার হাজার নেতাকর্মী সড়কের ওপর অবস্থান করেন।

বিএনপি’র গণমিছিলের কারণে গতকাল দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, কাকরাইল, শান্তিনগর, মৌচাক, মগবাজারের পুরো সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গণমিছিল ঘিরে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে কঠোর অবস্থানে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কার্যালয়ের আশপাশে সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এদিকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণমিছিল পূর্ব সমাবেশ করে বিএনপি। সমাবেশ থেকে আগামী ১১ই জানুয়ারি যুগপৎ আন্দোলনে দ্বিতীয় দফার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ৩০শে ডিসেম্বর গণমিছিলের মতোই বিএনপি ও সমমনা দল এবং জোটগুলো নিয়ে সারা দেশে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বলে জানায় দলটি।

গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সরকারের বিদায়ের দুই নম্বর সতর্ক বার্তা উচ্চারণ করার জন্য জোট ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ১১ই জানুয়ারি গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের বিশ্বাস- আজকে যারা এই গণমিছিলে যে সকল জোট ও দল আমাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ঢাকায় কর্মসূচি করেছেন, ওই দলগুলো যুগপৎভাবে আগামী ১১ই জানুয়ারি এই গণঅবস্থানের কর্মসূচি দেবেন। আর আমরা আহ্বান জানাই, এই আন্দোলনের সঙ্গে যারা একাত্মতা ঘোষণা করেছেন- আগামীতে এই গণঅবস্থান কর্মসূচিকে সফল করে দ্বিতীয় কর্মসূচি দিয়ে আপনারা এই সরকারের বিদায়ের দুই নম্বর সতর্ক বার্তা উচ্চারণ করবেন। তিনি বলেন, সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি হিসেবে আগামী ১১ই জানুয়ারি ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অবস্থান করবে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। ঢাকায় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। ঢাকার কয়েকটি সড়কে গণমিছিল থেকে বিভাগীয় শহরে একযোগে চার ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। তিনি বলেন, জনগণ বুঝতে পেরেছে- আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। তারা গণতন্ত্রকে ফেরত দেবে না। অর্থনীতিকে ভেঙে দিয়ে লুটপাট করেছে, তারা অর্থনীতিকে মেরামত করতে পারবে না। বিচার বিভাগকে স্বাধীন করতে পারবে না। সমাজের ভারসাম্য আনতে পারবে না। দেশে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন করতে পারবে না। তার জন্য তাদের বিদায় করে দেয়া উচিত। খন্দকার মোশাররফ বলেন, আগামী দিনে জনগণ রাস্তায় নেমে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে সরকারকে বিদায় করবে। তার নমুনা আজকের এই গণমিছিল। আর এ ধরনের স্বৈরাচার নিজেরা ক্ষমতা ছাড়ে না। তাদেরকে বাধ্য করতে হবে। তার জন্য আমাদের নেতাকর্মীরা প্রাণ দিয়েছি, সারা দেশে আমাদের ২৪ হাজার নেতাকর্মীরা আজকে জেলে। কিন্তু আমাদের দমাতে পারেনি। সুতরাং যতই গ্রেপ্তার করা হোক না কেন, রাস্তায় জনগণ নেমে গেছে। আর তাদের থামানো যাবে না। বর্তমান সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে মন্তব্য করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এরা ফ্যাসিস্ট এবং স্বৈরাচার। আর আন্তর্জাতিকভাবে হাইব্রিড সরকার নামে পরিচিত। তাদের সঙ্গে এদেশের জনগণের কোনো সম্পর্ক নাই। তাদের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নাই। এ কারণে গণতন্ত্রকে হত্যা করে অলিখিত বাকশাল চালাচ্ছে। সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় নির্বাচন পর্যন্ত জনগণ ভোট দিতে পারে না। তারা ভোট কেড়ে নিয়েছে এবং ভোট ডাকাতি করেছে। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ বলেন, এই সরকার পাড়ায়-মহল্লায় পাহারা বসিয়ে জনগণের রাজপথে আসা রুখতে পারবে না। সরকার বলে জনগণ আমাদের সঙ্গে নাই। জনগণ আছে কি নাই আমি সরকারকে তাদের যারা গোয়েন্দা সংস্থা, তাদের যারা বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে ঢাকার গণমিছিল দেখার আহ্বান করছি। আওয়ামী লীগ বলছে, পাড়ায় পাড়ায় তারা পাহারা দেবেন, পাহারা দিয়েছেও তবুও এদেশের জনগণকে ঘরে রাখতে পারেন নাই। আগামী দিনে এদেশের জনগণ রাস্তায় নেমে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে আপনাকে (শেখ হাসিনা) বিদায় করবে। এই গণমিছিল তারই নমুনা। জনগণ ভোট দিতে পারলে ‘সরকারের কোনো পাত্তা থাকবে না’ দাবি করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জামানত বাতিল হয়ে যায়, বাজেয়াপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এগুলো কিন্তু সরকারকে আসলে সিগন্যাল দেয়া হচ্ছে।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটের দিকে মগবাজারে গণমিছিল শেষে সমাপনী বক্তব্য দেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, আগামী ১১ই জানুয়ারির জন্য আপনারা প্রস্তুত থাকবেন। আমরা ১০ দফা নিয়ে মাঠে নেমেছি। আসলে দফা একটাই এই সরকারের পদত্যাগ। সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। জনগণের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। ১৯৭২ সাল থেকে যত খুন হয়েছে আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে এর বিচার হবে জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, এই জনগণকে ঠেকিয়ে রাখার ক্ষমতা কারও নাই। লড়াই আমাদের করতে হবে। সেই লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে। মহানগর উত্তর বিএনপি’র সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন ও মহানগর উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বক্তব্য রাখেন। এর আগে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছোট ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও শাহজাহান ওমর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আফরোজা খানম রীতা, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেনজীর আহমেদ টিটো নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়ে আফরোজা আব্বাস ও হেলেনা জেরিন খানের নেতৃত্বে মহিলা দল গণমিছিলের প্রথমে ছিল। সবশেষে ছিল মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। মিছিলে মুক্তিযোদ্ধা দল, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল, উলামা দল, জাসাস, ও ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
সুত্রঃ মানবজমিন।

Logo-orginal