, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

দূর্বল ঈমানদাররা আনুগত্য নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে।

প্রকাশ: ২০২২-১২-১৪ ১১:০২:৪৭ || আপডেট: ২০২২-১২-১৪ ১১:০৪:৫৫

Spread the love

আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেন,إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللهِ وَرَسُولِهِ وَإِذَا كَانُوا مَعَهُ عَلَى أَمْرٍ جَامِعٍ لَمْ يَذْهَبُوا حَتَّى يَسْتَأْذِنُوهُ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَأْذِنُونَكَ أُولَئِكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَرَسُولِهِ فَإِذَا اسْتَأْذَنُوكَ لِبَعْضِ شَأْنِهِمْ فَأْذَنْ لِمَنْ شِئْتَ مِنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمُ اللهَ إِنَّ اللهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ- ‘মুমিন তো কেবল তারাই, যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং যখন তারা তার সঙ্গে কোন সমষ্টিগত গুরুত্বপূর্ণ কাজে সাথী হয়, তখন তারা চলে যায় না যতক্ষণ না তার কাছ থেকে অনুমতি নেয়। নিশ্চয়ই যারা তোমার নিকট অনুমতি প্রার্থনা করে, তারাই আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি বিশ্বাসী। অতএব তারা তাদের কোন কাজে তোমার নিকট অনুমতি চাইলে তুমি তাদেরকে অনুমতি দাও যাকে চাও। আর তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (নূর ২৪/৬২)।

অত্র আয়াতে আল্লাহ ও রাসূলের আদেশ-নিষেধ বিনা দ্বিধায় মান্য করার প্রতি তাকীদ করা হয়েছে। যা ব্যতীত ঈমান পূর্ণতা লাভ করবে না (কুরতুবী)। أَمْرٍ جامِعٍ বা ‘সমষ্টিগত গুরুত্বপূর্ণ কাজ’ বলতে আমীর যেটাকে দ্বীনের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ মনে করবেন, সেটাকে বুঝানো হয়েছে (কুরতুবী)। এর মধ্যে সাংগঠনিক শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। উম্মতের সমষ্টিগত কল্যাণের স্বার্থে যখন কোন সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন আমীরের অনুমতি ব্যতীত কেউ সেখান থেকে চলে যেতে পারে না, কপট বিশ্বাসী ও স্বার্থপর সাথীরা ব্যতীত। তারা ঈমানের দাবীদার হ’লেও কখনো পূর্ণ মুমিন নয়। যে ব্যক্তি এটা মেনে চলবে, সেই-ই কেবল পূর্ণ মুমিন হবে (ইবনু কাছীর)।

মাদানী জীবনে ইহূদীদের শঠতা ও মুনাফিকদের কপটতাই ছিল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবনে সবচেয়ে বড় বেদনার বিষয়। একই সাথে এটা ছিল ইসলামের প্রচার ও প্রসারে সবচেয়ে বড় বাধা। ঝুঁকির সময়ে মুনাফিকরা নানা অজুহাতে সরে পড়ত। কিন্তু গণীমত লাভের সহজ সুযোগ পেলে আগে যেয়ে গণীমত দাবী করত। এদের এই সুবিধাবাদী চরিত্র খুবই স্পষ্ট ছিল। যা অত্র সূরায় ইঙ্গিতে বলা হয়েছে।

এছাড়াও সূরা মুনাফিকূন নাযিল হয় এদেরই কারণে। এর মধ্যে মুসলিম উম্মাহর নেতৃবৃন্দের জন্য সতর্কবাণী রয়েছে।

অত্র আয়াতটি إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ দিয়ে শুরু হয়েছে। যার অর্থ ‘তারা ব্যতীত মুমিন নয়’ এর প্রায়োগিক অর্থ তারা ব্যতীত পূর্ণ মুমিন নয়’ (কুরতুবী)।

এখানে মুমিনের তিনটি গুণ বলা হয়েছে। আল্লাহর উপরে বিশ্বাস, তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস এবং নেতার আনুগত্য।

প্রথম দু’টি না থাকলে ঈমানই থাকবে না এবং শেষেরটি না থাকলে ঈমান পূর্ণ হবে না। কারণ নেতার মাধ্যমে সংগঠন পরিচালিত হয়। ফলে তার প্রতি আনুগত্য না থাকলে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়।

এমনকি সংগঠন বিপর্যস্ত হয়। আর নেতাদের জন্যও রয়েছে নির্দিষ্ট গুণাবলী। তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় গুণ হ’ল তাকে আল্লাহর বিধান কায়েমের ব্যাপারে আপোষহীন ও দৃঢ়চিত্ত থাকতে হবে। যেমন আল্লাহ বলেন, إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْقُرْآنَ تَنْزِيلًا- فَاصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ وَلاَ تُطِعْ مِنْهُمْ آثِمًا أَوْ كَفُورًا- وَاذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ بُكْرَةً وَّأَصِيلاً- ‘নিশ্চয়ই আমরা তোমার উপর কুরআন নাযিল করেছি পর্যায়ক্রমে’। ‘অতএব তুমি তোমার পালনকর্তার আদেশের অপেক্ষায় ধৈর্য ধারণ কর। আর তুমি ওদের মধ্যকার কোন পাপাচারী কিংবা অবিশ্বাসীর আনুগত্য করবে না’। ‘তুমি সকালে ও সন্ধ্যায় তোমার পালনকর্তার নাম স্মরণ কর’ (দাহর ৭৬/২৩-২৫)। এতে বলে দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহর বিধান কায়েমে গোপনে বা প্রকাশ্যে বাধা দানকারীদের কথা মেনে নেওয়া যাবে না। আর দৃঢ় থাকার জন্য সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে ও তাঁর সাহায্য কামনা করতে হবে। কারণ প্রকাশ্য বিরোধীদের সহজে চেনা যায়। কিন্তু গোপন বিরোধীদের সহজে চেনা যায় না।

অনেক সময় শত্রুদের প্রতারণায় নিজের লোকেরাও নেতাকে মিসগাইড করে। এটা তারা সরল মনে অথবা কোন স্বার্থের চাপে দুর্বল হয়ে করে। সকল অবস্থাতেই নেতাকে আল্লাহর উপর ভরসা করে শক্ত থাকতে হয় এবং আপোষহীন ভাবে আল্লাহর বিধান কায়েমে দৃঢ় থাকতে হয়। তাতে আল্লাহর অদৃশ্য মদদ নেমে আসে। যেমনটি দেখা গেছে হোনায়েন যুদ্ধে শত্রুর বেষ্টনীর মধ্যে পড়ে রাসূল (ছাঃ)-এর মধ্যে। যেমনটি দেখা গেছে ছাহাবীগণের জীবনে বহু স্থানে। দেখা গেছে মুতার যুদ্ধে সম্মিলিত খৃষ্টান বাহিনীর বিরুদ্ধে অমিততেজা তরুণ সেনাপতি আব্দুল্লাহ ইবনু রাওয়াহার মধ্যে।

মুমিন সর্বদা সঠিক পথে পরিচালিত হয় তার দৃঢ় ঈমানের জোরে। যেমন আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ يَهْدِيهِمْ رَبُّهُمْ بِإِيمَانِهِمْ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ- ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম সমূহ সম্পাদন করে, তাদের প্রতিপালক তাদেরকে সুপথ প্রদর্শন করেন তাদের ঈমানের মাধ্যমে নে‘মতপূর্ণ জান্নাত সমূহের দিকে। যেসবের তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়’ (ইউনুস ১০/৯)।

সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সর্বদা ঈমানী পরীক্ষার মধ্য দিয়ে চলতে হয়। এমতাবস্থায় তাদের সাথে যতবেশী দৃঢ়চেতা ঈমানদার সাথী থাকে, ততবেশী তারা নিরাপদ থাকেন। যদি সাথীরা দুর্বলচেতা হয় বা অতি সরল হয়, তাহ’লে তারা বিরোধীদের সহজ শিকারে পরিণত হয়। ফলে নেতার হাযারো সদিচ্ছা তখন কার্যকর হয় না। এমনই অবস্থা হয়েছে যুগে যুগে অদ্যাবধি।

শিক্ষানীয়ঃ ব্যক্তিগত শত্রুতা, পছন্দ-অপছন্দ, না পাওয়ার হতাশা, লোভ লালসা ইত্যাদি মুমিনকে আচ্ছন্ন করতে পারেনা, কারণ, তার যাবতীয় কাজের ফলাফল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উপর নির্ভর করে।

যদি কোন মুমিনের চরিত্রে এমন আচরণ পরিলক্ষিত হয়, তার দ্রুত তওবা-এস্তেগফার করার নিয়তে রাব্বী কারীমের নিকট ধরণা দিতে হবে।
কারণ মুমিনের এমন আচরণে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ইসলাম তথা ইসলামী আন্দোলন, তাই কাল হাশরের ময়দানে কঠিন বাস্তবতা থেকে বাঁচতে এবং নিজের আমল পরিশুদ্ধ রাখতে তওবা করে এই আচরণ পরিহার করতে হবে।

আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের হেদায়েত দান করুন-আমিন।

তথ্যসুত্রঃ ইবনে কাছীর ও মাসিক আত তাহারীক।

*লেখক ও সংকলকঃ আবুল কাশেম।
নির্বাহী পরিচালক আরটিএম মিডিয়া।

Logo-orginal