, বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

admin admin

আইনের জগতের এক উজ্বল নক্ষত্রের বিদায়”

প্রকাশ: ২০২৩-০১-০১ ০৯:৫৮:১৭ || আপডেট: ২০২৩-০১-০১ ০৯:৫৮:২১

Spread the love

ব্যারিস্টার হামিদ হোসাইন আজাদ, লন্ডনঃ আইনের জগতের এক উজ্বল নক্ষত্রের বিদায়: জাতি ন্যায় প্রতিষ্টায় নিবেদিত এক অকোতোভয় সৈনিককে হারাল।

অত্যন্ত বেদনা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে এ পোষ্ট লিখছি। আজ আমাদের জীবন থেকে আরো একটি বছর চলে গেল। সাধারনতঃ এ দিনে আমি বিগত বছরের পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতের জন্য কি পূঁজি পেলাম তা নিয়ে লিখে থাকি। কিন্তু আজ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে সে নিয়ম ভংগ করে আমার এক প্রিয় মানুষের বিদায় ও আমাদের জীবনে তার প্রভাব নিয়ে লিখতে হচ্ছে।

ইন্না লিলল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। শুরুতেই মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করছি, হে রাব্বুল আলামিন, আপনি খন্দকার মাহবুব সাহেবকে আপনার প্রিয় বান্দাদের মধ্যে শামিল করূন, তার ভুল ত্রুটি মাফ করে দিন, তার নেক ও কল্যানকর কাজগুলোকে কবুল করুন এবং তাকে আপনার জান্নাতে উঁচ্চ মর্যাদা দান করুন, আমীন।

পেশাগত ও দাওয়াহ মিশনের কারনে সারাবিশ্বের আনাচে কানাচে প্রায় একশোর কাছাকাছি দেশ সফর করতে হয়েছে। মানবিক পেশার কারনে সেসব দেশের উপর থেকে নীচ পর্যন্ত সকল পর্যায়ের মানুষের সাথে মিশার সুযোগ হয়েছে, আলহামদুলিন্নাহ। সেসব মানুষের মধ্যে খন্দকার মাহবুব সাহেব আমার দেখা হাতে গুনা কয়েকজন সেরা মানুষের একজন।

মাহবুব সাহেবের সাথে আমার প্রথম সাক্ষাত হয় লন্ডনে যখন তিনি একটি সেমিনারে অংশ নিতে এসেছিলেন। তাঁর বিনয়, মহানুভবতা এবং সত্যের প্রতি অনুরাগের কারনে প্রথম সাক্ষাতেই ওনার সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠে। পেশার দিক থেকে যদিও তিনি আমার অফিসিয়াল সিনিয়র তথা মেন্টর ছিলেন, কিন্তু প্রথম দিন থেকে আমার সাথে তাঁর আত্মিক সম্পর্কটা বড ভাই -ছোট ভাইয়ের সম্পর্কে পরিণত হয়, যদিও তিনি আমাকে কেন জানি তুমি বলে সম্বোদন করতে রাজি হনননি, তবুও আমি ওনাকে অন্তর থেকে বড ভাইয়ের মতই জানতাম, সম্মান ও শ্রদ্বা প্রদর্শন করতাম। ওনার লন্ডন সফরের বেশ কিছুদিন পর আমি যখন বাংলাদেশে যাই খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য, তিনি তখন বার কাউন্সিলের সভাপতি।।তাঁকে ফোন করতেই বল্লেন কখন বাসায় আসছেন।সময়ের স্বল্পতা এবং ব্যস্ততার কারনে আমার choice ছিল খুবই সীমিত। ওনার ডাইরির সাথে আমার ডাইরি মিলানো বড্ড কঠিন হচ্ছিল, কেননা পরের দিন আমার ফ্লাইট। সারা দিন আমরা দুজনের ব্যস্ত দিন। সন্দ্ব্যাবেলা যে সময়টা আমার জন্য suitable সে সময়ে ওনার বার কাউন্সিলের একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে ওনার বক্তব্য রাখার কথা। আমি ভাবলাম (এবং যতটুকু মনে পড়ে বল্লামও) তাহলে কোর্টে গিয়েই এক ফাঁকে দেখা করে নেই। তিনি বল্লেন না বাসায়ই আসতে হবে, নচেৎ আপনার আপাতও mind করবেন। তিনি বল্লেন, no problem, আমি আমার Programme সংক্ষিপ্ত করে আগেই বাসায় চলে আসব। যেমন কথা তেমন কাজ, আমি বাসায় পৌঁছে দেখি আমি যাওয়ার আগেই উনি হাজির। এর পর ওনারা দুজনই আপন ভাই এবং বোনের মত আমাকে যে স্নেহপূর্ণ আথিথেয়তা করেছেন তা জীবনে ভুলার মত নয়। এত উঁচু মাপের আইনজ্ঞ ও সারা দেশের আইনজীবীদের প্রধান নেতা হওয়া সত্বেও ওনার মধ্যে কখনও মহুর্তের জন্যও অহংকার বা বডত্বের লেশমাত্র দেখিনি। ওনার বিনয় এবং উদারতা ওনাকে মনুষ্যত্বের শীর্ষ পর্যায়ে পৌছে দিয়েছে।

বিনয় এবং উদারতার পাশাপাশি ওনার যে কটি গুন মাহবুব সাহেবকে আমার দেখা মানুষদের শীর্ষ তালিকায় স্থান দিয়েছে তা হচ্ছে, আল্লাহর সাহায্যের প্রতি অবিচল বিশ্বাস, সত্য ও ন্যায়ের প্রতি অনুরাগ, পাহাড়সম সাহস, উচুমানের পেশাগত দক্ষতাসহ আদর্শস্থানীয় পেশাদারিত্ব, বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞা এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রতি প্রগাঢ শ্রদ্বা।

খন্দকার মাহবুব সাহেবের মত একজন প্রতিতযশা আইনজীবি ও জনহিতৈশী নেতাকে হারিয়ে জাতি এক অপূরনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হল।

মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসের মেহমান হিসেবে কবুল করুন এবং তাঁর পরিবার এবং নিকটাত্নীয়দের এ কঠিন সময়ে উত্তম ধৈর্য অবলম্বনের তৌফিক দান করুন, আমীন।

#লেখকের সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট থেকে সংগৃহীত।

Logo-orginal